শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে টিএসসি–সংলগ্ন মেট্রোরেলের পিলারে থাকা শেখ হাসিনার গ্রাফিতি (‘ঘৃণাস্তম্ভ’) মুছে ফেলা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে রাজু ভাস্কর্যের পাশের ‘ঘৃণাস্তম্ভের’ সামনে জড়ো হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের অনুমতি নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে জেনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একই সঙ্গে তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সন্ধ্যায় টিএসসি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়। অসংখ্য শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি তোলেন। ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘ঘৃণাস্তম্ভ মুছলি কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগান দেন।
কে এই সাইফুদ্দীন আহমদ?
জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে বর্তমান প্রক্টরকে। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৮ সালে সাইফুদ্দীন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি অধ্যয়ন এবং লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পদটির মূল কাজ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার একমাসের মাথায় গত ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে (এফ এইচ হল) চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনারও ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘৃণাসূচক গ্রাফিতি মুছে ফেলার দায়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয় ও ভিসি সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অনুষ্ঠানে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। ফলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া ‘ভিসি’ হয়ে উঠছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে সাদা দলের বিএনপিপন্থি সিনিয়র এক অধ্যাপক বলেন, সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ অনেক জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে দেওয়া হয়েছে। অথচ তার নেই কোনো অ্যাকাডেমিক বড় কোনো ডিগ্রি। এখন তিনি ছায়া ‘ভিসি’ হয়ে উঠছেন। বর্তমানে এক উপদেষ্টার (ছাত্র) লবিংয়ে তিনি এই পদে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি।