
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পিপিপির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সিন্ধু চুক্তি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতকে। তিনি বলেছেন, সিন্ধু আমাদের। আর আমাদেরই থাকবে। হয় সিন্ধুর পানি বইবে, নয় ওদের রক্ত বইবে। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার পরই ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর বিভিন্ন ফ্রন্টে শুক্রবার রাতেও ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। খবর এনডিটিভি, হিন্দুস্থান টাইমসের।
পিপিপির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সিন্ধু চুক্তি নিয়ে শনিবার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘পহেলগাঁও কাণ্ডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত অভিযোগ তুলছে। সঙ্গে নিজের দুর্বলতা ঢাকতে মোদি মিথ্যা অভিযোগ সাজাচ্ছেন, আর মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন। তিনি এককভাবেই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যে চুক্তিতে ভারত মেনেও নিয়েছে যে সিন্ধু পাকিস্তানের। বিলাওয়াল বলেন, এখানে সুক্কুরে সিন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে আমি ভারতকে বলতে চাই, সিন্ধু আমাদের। আর আমাদেরই থাকবে। হয় সিন্ধুর পানি বইবে, নয় ওদের রক্ত বইবে।’
ভারতের জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাটিলও সিন্ধুর পানি নিয়ে দিল্লির কড়া অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে মোদি সরকারের নেওয়া ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ন্যায্য এবং জাতীয় স্বার্থে। আমরা নিশ্চিত করব যে সিন্ধু নদীর এক ফোঁটাও জল পাকিস্তানে যাতে না যায়।
এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবারও পাকিস্তানি সেনারাই শুরুতে গুলি করা শুরু করে। ভারতীয় সেনারা এর পালটা জবাব দিয়েছে। তবে গোলাগুলির ঘটনায় ভারতের পক্ষে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবারের ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল বলে ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ভারতও সেদিনই এর জবাব দিয়েছিল বলে আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল।
এদিকে পহেলগাঁওয়ের হামলা নিয়ে ‘নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ’ তদন্ত প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পাকিস্তান রাজি আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। শনিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কাকুলে সেনা ক্যাডেটদের পাসিং-আউট প্যারেড অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি পহেলগাঁওয়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তা এই চিরস্থায়ী দোষারোপ পালার আরও একটা উদাহরণ। যে ধারায় অবশ্যই ইতি টানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল দেশ হিসাবে পাকিস্তান যে ভূমিকা পালন করে এসেছে, সেটা বজায় রেখেই যে কোনো নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং ভরসাযোগ্য তদন্ত প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে ইসলামাবাদ তৈরি আছে।’
কাশ্মীরে চলছে দমন অভিযান : পহেলগাঁও হামলার পর শুধু কড়া নিরাপত্তা নয়, ভূস্বর্গে শুরু হয়েছে সন্ত্রাস দমন অভিযান। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মিলিয়ে একের পর এক কথিত সন্ত্রাসীদের বাড়ি কাশ্মীরের বুক থেকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। চলছে বিভিন্ন জায়গায় ধরপাকড়। কুলগামের মাতালাম এলাকায় সন্ত্রাসীখ্যাত জাহিদ আহমেদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলওয়ামার মুরান এলাকায় সন্ত্রাসী আহসান উল হকের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাড়িটিকে ধূলিস্যাৎ করা হয়। কাশ্মীরের শোঁপিয়ার চোটিপোরা গ্রামে লস্কর কমান্ডার শাহিদ আহমেদ কুত্তের দোতলা বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যত এই গোটা বাড়ি ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে।
এছাড়াও পুলওয়ামার কাচিপোরায় হ্যারিস আহমেদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু এই ৫ সন্ত্রাসীই নয়। এর আগে, উপত্যকায় সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত আদিল হোসেন ঠোকর ও আসিফ শেখের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এক সন্ত্রাসীর বোন দাবি করেছেন, তাদের বাড়ির সবাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তারপর বাড়ি খালি করে তা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়।