বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের রাজনীতির চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী তিনি। তবে রাজপথের কঠোর আন্দোলন আর রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যস্ততার বাইরেও তার একটি অন্য জীবন রয়েছে। সেখানে রয়েছে সংস্কৃতি, সংগীত, পঠন আর খেলাধুলার প্রতি গভীর অনুরাগ।
রাজনীতির পর্দার আড়ালের সেই বিনোদনমুখী ও সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।
রাষ্ট্র পরিচালনার সময় শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি বেগম জিয়ার অনুরাগ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন (১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬) তিনি নিয়মিতভাবে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। চলচ্চিত্রকে ‘সমাজের দর্পণ’ হিসেবে অভিহিত করে এই শিল্পের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন সময় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তার উপস্থিতিতে দেশের অভিনয়শিল্পীরা সবসময়ই নতুন প্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বেগম খালেদা জিয়া সংগীতের একনিষ্ঠ অনুরাগী। জানা যায়, তিনি ধ্রুপদী সংগীত এবং রবীন্দ্রসংগীত শুনতে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। ব্যস্ততার মাঝেও সময় পেলে সুরের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে নিতেন।
তাঁর পারিবারিক ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজনদের মতে, রুচিশীল গানের প্রতি তাঁর এই ভালোলাগা দীর্ঘদিনের।
ক্রিকেট উন্মাদনায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতো তিনিও শামিল হন সমানতালে। জাতীয় ক্রিকেট দলের বড় কোনো ম্যাচ মানেই গ্যালারিতে বেগম জিয়ার সরব উপস্থিতি। সাদা শাড়ি পরে হাতে পতাকা নিয়ে ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করার দৃশ্য এখনো মানুষের মনে গেঁথে আছে বেশ আপনভাবে। টাইগারদের সাফল্যের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া বা তাদের পাশে দাঁড়ানোকে তিনি সবসময় কর্তব্য বলে মনে করেছেন।
পড়ালেখার প্রতি তার ঝোঁক কারো অজানা নয়। অবসরে বেগম জিয়া প্রচুর বই পড়তেন। বিশেষ করে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী এবং রাজনৈতিক ইতিহাস তাঁর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়ার মাধ্যমে নিজেকে সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে আপডেট রাখতেই তিনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রসারে এবং দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জাসাস’-কে তিনি সব সময়ই গুরুত্ব দিয়েছেন। সংগঠনের বিভিন্ন আয়োজনে সশরীরে উপস্থিত থেকে শিল্পীদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। দেশপ্রেমকে উপজীব্য করে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে তাঁর দিকনির্দেশনা ছিল প্রধান শক্তি।
দুই ঈদসহ বিশেষ উৎসবগুলোতে বেগম জিয়ার বাসভবন হয়ে উঠতো রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলা। কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সঙ্গে তাঁর এই সৌজন্য বিনিময় অনুষ্ঠানগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক বিনোদন হিসেবেও কাজ করতো। এ ছাড়া টেলিভিশনের খবরের পাশাপাশি তথ্যচিত্র ও গঠনমূলক টক শো দেখেও তিনি সময় কাটাতেন।
রাজনীতির কঠোর ময়দানে আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত হলেও, শিল্প ও সংস্কৃতির এই পরিশীলিত দিকগুলো বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্বকে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা।
তথ্যসূত্র : সংবাদপত্রের আর্কাইভ ও ঘনিষ্ঠজনদের স্মৃতিচারণা