Image description

 

হঠাৎ করেই ইন্ডাস্ট্রি ও এলাকাবাসীর কাছে ‘দানবীর’ হিসেবে পরিচিত অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বিরুদ্ধে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন আপন তিন বোন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিপজল এটাকে ‘মিথ্যা অপবাদ’ দাবি করে লিখেছেন- ‘আল্লাহই সবকিছুর উত্তম বিচারক’। 
 
আজ সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিপজল নাতিদীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে এই মন্তব্য করেন। সেখানেই তিনি বোনদের অভিযোগকে ‘মিথ্যা অপবাদ’ বলে দাবি করেন। অপরদিকে ভক্ত ও এলাকাবাসীরা বোনদের এমন দাবিকে দেখছেন ‘প্ররোচনা’ হিসেবে।
 
এরআগে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও নির্মাতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলসহ পরিবারের তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রাখা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জানমালের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করেছেন একই পরিবারের চার বোন।
 
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে গণমাধ্যমের সামনে এসে তারা জানান, ৪০ বছর ধরে তারা বাবার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্য অংশ পাচ্ছেন না, অথচ বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের মাধ্যমে শুধু সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে।
 
বোনদের দাবি, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়েরা সম্পূর্ণ সম্পত্তি নিজেদের দখলে রেখে ভোগ করছেন। কিন্তু বোনদের অংশ তারা কখনোই বুঝে দেননি। বহু বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা আদালতে আশ্রয় নেন। তাদের দাবিমতে, আদালত তাদের পক্ষে স্টে অর্ডার বা নির্দেশনা দিয়েছেন। 

 
বোনেরা গণমাধ্যমকে বলেন,আমার বাবা মারা গেছেন ৪০ বছর। এই সময়ের মধ্যে একদিনও আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সম্পত্তির বিষয়ে আমাদের সাথে বসেনি। শুধু বলেছে, দিচ্ছি, দিয়েই দেব, কিন্তু কখনও দেয়নি। এখন জানতে পারছি আমাদের সম্পত্তি নাকি গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
 
এক বোন বলেন, তার সন্তান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সে সময় ভাইদের কেউই সাহায্য করেননি বা পাশে দাঁড়াননি। বোনদের দাবি,আমরা আদালতের রায় পেয়েছি, তবু ভয়ে কার্যকর করতে পারছি না। আদালতে যাওয়ার পর তারা তাদের অধিকারের পক্ষে আদেশ পেয়েছেন। তবে আদেশ কার্যকর করা যে সহজ নয় তারা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। তাদের দাবি, সম্পত্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হুমকি-ধমকি আরও বেড়ে গেছে।
 
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবে মনোয়ার হোসেন ডিপজল অস্বস্তিতে পড়েন। নিজের ভক্ত ও দেশবাসীর কাছে বোনদের আনা অভিযোগ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
 
ডিপজল লিখেন- সম্মানিত দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম।
 
সম্প্রতি আমার কিছু বোন আমাকে নিয়ে যে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে, তার বিষয়ে আমি আপনাদের সামনে কিছু বাস্তবতা তুলে ধরতে চাই।
 
প্রথমেই পরিষ্কার করে বলতে চাই-এই বক্তব্য দেওয়ার উদ্দেশ্য কাউকে অসম্মান করা নয়। বরং আমার প্রতি ছড়ানো ভুল ধারণা ও মিথ্যা অপবাদের বিষয়ে সত্য তুলে ধরা। মামলার আইনি জবাব আমি আইন অনুযায়ী দেবো, ইনশা আল্লাহ।
 
আমার বোনদের আমি সবসময় সম্মান, ভালোবাসা ও সাধ্যমতো সহযোগিতা করে এসেছি এ কথা আমার এলাকার মানুষ ও আশেপাশের পরিচিত সবাই জানেন।
 
একজন বোন ক্যামেরার সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, তাঁর অসুস্থ সন্তানের খোঁজ কেউ নেয়নি। অথচ, তাঁর সন্তানের চিকিৎসার জন্য আল্লাহর দেওয়া সামর্থ্য অনুযায়ী আমি আমার পক্ষ থেকে একটি বড় অংকের সহায়তা করেছি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা ভারতে পর্যন্ত করেছি। আজ ক্যামেরার সামনে তিনি যেন সব ভুলে গেলেন! পর্দায় অভিনয় আমি করি, বাস্তব জীবনে নয়। যদি জানতাম কোনোদিন বাস্তব জীবনে এমন অভিনয়ের সম্মুখীন হতে হবে, তাহলে হয়তো প্রতিটি কাজের প্রমাণ রেখে দিতাম।
 
আরেক বোন বলেছেন, ১১ বছর ধরে নাকি আমার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ মাত্র দুই মাস আগেই তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ সাহায্য করা হয়েছে। আমার সাধ্যের মধ্যে সবসময়ই আমি তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এতো কিছু লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।
 
৩৫ বছর পর আজ হঠাৎ তারা কেন এবং কার প্ররোচনায় এমন মিথ্যা বলছে-এ প্রশ্ন আমারও আছে। যদি সত্যিই কোনো দাবি থাকত, ভালোবাসার সম্পর্ক ধরে সরাসরি বললেই আমি তাদের ২/৩ গুণ বেশি দিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলাম। আমি ডিপজল-আমার সাধ্যের মধ্যে কাউকে ফিরিয়ে দেই না আল্লাহর রহমতে, আর তারা তো আমার আপন ভাইবোন।
 
যে বোন পর্দা করেন বলে প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমি আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করেছি, সেই বোনের মুখেই আজ এমন কথা শুনতে হলো—এটা সত্যিই কষ্টের।
 
আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করছি-মামলার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আদালতেই সত্য প্রকাশ পাবে, ইন শা আল্লাহ।
 
যদি আইন অনুযায়ী তারা মালিক হোন, তবে তাদের প্রাপ্য অংশ অবশ্যই তারা পাবেন এবং আমার প্রিয় বোনদের বলছি-তোমরা জানো আমি খুব অসুস্থ। জীবনে যতটুকু পেরেছি, আমি তোমাদের জন্য করেছি আল্লাহর রহমতে; যদি আল্লাহ আরো সময় দিতেন, হয়তো আরও করতাম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন আচরণ সত্যিই কষ্টদায়ক।
 
সম্মান দেওয়ার ও সম্মান রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহই সবকিছুর উত্তম বিচারক।
 
আজকালের খবর