বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর হামলার ঘটনা হতবাক করেছে সবাইকে। বান্দ্রার মতো অভিজাত এলাকায় ‘ছোট নবাব’-এর ওপর এ হামলার খবরে উদ্বিগ্ন পুরো চলচ্চিত্রজগৎ ও তাঁর ভক্তরা। বড় তারকা দম্পতির বাড়িতেই এ হামলা মুম্বাইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় অভিনেতাকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এখন বিপদমুক্ত।
হামলার সঙ্গে সঙ্গেই জোর তদন্তে নেমে পড়েছে মুম্বাই পুলিশ। ইতিমধ্যেই ৩৫টি পৃথক দল গঠন করে তদন্তের কাজ শুরু করেছে তারা। এ মামলায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়েছে। আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফ-কারিনার বাসার এক পরিচারিকাকে পুলিশ স্টেশনে তলব করা হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে পুরো ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। জানা গেছে, পুরো ঘটনা ছিল ৩০ মিনিটের। হামলার দুই ঘণ্টা আগে বাড়িতে কারও প্রবেশের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ, এমনকি সিসিটিভি ফুটেজেও কারও প্রবেশের দৃশ্য ধরা পড়েনি এ সময়ে।
প্রাথমিক সন্দেহে পুলিশ জানিয়েছে, অভিনেতার বাড়িতে চুরি করার জন্যই প্রবেশ করেছিল এক বা একাধিক দুর্বৃত্ত। এমনকি অভিনেতার ভবনের সব প্রবেশপথ ও বাড়ির নকশা সম্পর্কে আগে থেকেই জানা ছিল তাদের। ‘ফায়ারস্পেস’ দিয়ে সাইফ-কারিনার বাড়িতে তারা প্রবেশ করে। এরপর ভবনের পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে অভিনেতা যেখানে থাকেন, সেখানে পৌঁছায় দুর্বৃত্তরা।
বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে তৈমুর আর জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনুপ্রবেশকারীকে। প্রথমে একজনকে অভিনেতার ছোট ছেলে জেহর ঘরে দেখা যায়। জেহর আয়া এলিয়ামা ফিলিপ জানান, তিনি দিবাগত রাত দুইটার দিকে অনুপ্রবেশকারীকে দেখতে পান এবং তার মুখোমুখি হন।
তার কথায়, ‘বাথরুমের দরজা খোলা এবং আলো জ্বলতে দেখে আমি ধরে নিয়েছিলাম হয়তো কারিনা কাপুর। তবে এরপরই কিছু একটা সমস্যা টের পাই, বিষয়টি দেখতে যখন এগিয়ে যাই, তখন একজন লোককে বাথরুম থেকে বেরিয়ে তৈমুর এবং জেহর ঘরে প্রবেশ করতে দেখি।’
৫৬ বছর বয়সী গৃহকর্মী আরও জানান, তিনি যখন ওই লোকের মুখোমুখি হন, তখন তার কাছে এক কোটি রুপি দাবি করা হয়। ওই দুর্বৃত্তকে তাড়ানোর চেষ্টার সময় তিনি আহত হন। একই ঘরে থাকা আরেক গৃহকর্মী জুনু তখন সাইফের ঘরে ছুটে যান এবং অভিনেতাকে জাগিয়ে তোলেন। এরপর অভিনেতা অনুপ্রবেশকারীদের মুখোমুখি হলে তাঁকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় গীতা নামের বাড়ির আরেক গৃহকর্মী সাইফকে অনুপ্রবেশকারীকে পরাস্ত করতে এবং তাকে একটি ঘরে আটকে রাখতে সাহায্য করেন। এরপর সবাই বাড়ির ওপরের তলায় চলে যান, কিন্তু ততক্ষণে অনুপ্রবেশকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সূত্রের মতে, ষষ্ঠ তলার সিসিটিভি ক্যামেরায় তার পালানোর দৃশ্য ধরা পড়ে। তবে এরপর তার আর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, এমনকি লবি এলাকার সিসিটিভিতেও তাকে দেখা যায়নি। পুলিশের সন্দেহ, ‘ফায়ারস্পেস’ ব্যবহার করে নিচতলায় পৌঁছে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় সে। পুরো ঘটনার স্থায়িত্ব ৩০ মিনিটের।
মেরুদণ্ডে একটিসহ ছয়টি আঘাতের কারণে রক্তে ভাসছিল সাইফ। এমন সময়ে কোনো গাড়ি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকায় তাড়াহুড়ো করে সাইফকে অটোরিকশায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বড় পুত্র ইব্রাহিম। অভিনেতার বাড়ি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরেই হাসপাতাল।