
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি, তবে যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে তখন ভাবনার বিষয়। কারণ কখনও এটা হতে পারে একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা—যার নাম অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত এক ধরনের জটিল ও অনিয়ন্ত্রিত চিন্তা ও আচরণের মধ্যে পড়ে যান, যেগুলো তারা ইচ্ছা করেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
অনেকের মধ্যে হাত ধোয়ার তীব্র বাতিক, প্রতিদিন বিছানার চাদর পরিবর্তন, কিংবা বাসার জিনিসপত্র সামান্য এলোমেলো হলেই উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনকি পরিচ্ছন্ন একটি ঘরেও যদি কিছু তার মান অনুযায়ী না থাকে, তাহলেও তারা সেটাকে অপরিষ্কার ভাবতে শুরু করেন এবং তখনই কাজ শুরু হয় তাদের ‘সব ঠিক’ করার। এই আচরণ হয়তো তার কাছে স্বাভাবিক, কিন্তু চারপাশের মানুষদের জন্য তা অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওসিডি কেবলমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা ব্যক্তি ও তার আশপাশের মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবাঞ্ছিত চিন্তা, উদ্বেগ ও এক ধরনের মানসিক চাপে থাকেন যা থেকে বের হওয়া তাদের পক্ষে কঠিন।
ওসিডির লক্ষণ: বিশেষজ্ঞরা ওসিডির বেশ কিছু লক্ষণ সামনে এনেছেন। এগুলো হলো:
- অহেতুক ভয়—নিজে বা অন্য কারও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এমন ভীতিকর চিন্তা।
- সবসময় মনে হওয়া, শরীর বা জিনিসপত্রে জীবাণু লেগে আছে।
- যৌনতা বা নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে অস্বস্তিকর ও অনিচ্ছাকৃত চিন্তা।
- একই কাজ বারবার করা—যেমন গ্যাস বন্ধ আছে কি না, দরজা তালা দেওয়া হয়েছে কি না বারবার যাচাই করা।
- জীবাণুভীতির কারণে ঘন ঘন হাত ধোয়া বা জিনিসপত্র পরিষ্কার করা।
এইসব কাজ সাধারণত স্বেচ্ছায় করা হয় না বরং এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থেকে করা হয়, যেটা থামাতে ব্যক্তি নিজেও হিমশিম খান। অনেক সময় দিনভর এই চিন্তাগুলোর কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলেন এবং তার পারিবারিক ও পেশাগত সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওসিডি কেবলমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় নয়। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা ব্যক্তি ও তার আশপাশের মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: অনেকেই এসব লক্ষণকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা না নিলে ওসিডি দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদি আপনার এই অবসেশন বা কমপালসিভ আচরণগুলো দৈনন্দিন জীবন, কাজ, ঘুম কিংবা সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে—তবে দেরি না করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ওসিডি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই পরিচ্ছন্নতার অতিরিক্ত বাতিককে ছোট করে না দেখে, তা কখন মানসিক সমস্যা হয়ে উঠছে—সে বিষয়ে সচেতন হওয়াটাই জরুরি।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক