Image description

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হায়দার হোসেন। গানে গানে দেশ, সমাজ ও মানুষের কথা বলেন। তার কণ্ঠের অনেক গান এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। বর্তমানে ব্যস্ততা ও নতুন গান নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

যুগান্তর: আপনার গাওয়া ‘৩০ বছর পরও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি’ শিরোনামে একটি বেশ জনপ্রিয়। গানটি কোন ভাবনা থেকে গেয়েছেন?

হায়দার হোসেন: বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। ৭১-এ যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ হয়েছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্যই ছিল সবার জন্য সমান অধিকার, ধনী-গরিবের বৈষম্যহীন সমাজ, বাক-স্বাধীনতার অধিকার, নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার। আমরা কি এই দেশে সবার সমান অধিকার দেখেছি? ধনী-গরিবের বৈষম্য কমতে দেখেছি? আমরা কতটুকুই বা বাক-স্বাধীনতা পেয়েছি? এসবের উত্তর খুঁজতেই এ গান। ভালো করে লক্ষ করলে দেখবেন গানের প্রথম তিনটি লাইনেই পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছে। এবং প্রথম চারটি প্রশ্ন পঞ্চম প্রশ্নের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রথম চারটি প্রশ্নের উত্তর যদি সন্তোষজনক হতো তাহলে কখনো পঞ্চম প্রশ্নটি আসত না। অর্থাৎ যা দেখার কথা তা যদি দেখা যেত, যা শোনার কথা তা যদি শোনা যেত, যা ভাবার কথা তা যদি ভাবা হতো, যা বলার কথা তা যদি বলা হতো তাহলে কি গানটি লিখা হতো?

যুগান্তর: আগে তো হতাশা ছিল। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এখন কী মনে হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা পেয়েছেন?

হায়দার হোসেন: আসলে দীর্ঘ বছরের ঘুণে ধরা সমাজ একদিনেই পরিবর্তন হবে না। এর জন্য সময় দিতে হবে। এখন কতটা বাক-স্বাধীনতা পেয়েছি, এর উত্তর সরাসরি এভাবে দেওয়াও যাবে না। দেখুন, ক্ষমতার চেয়ারের হয়তো পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গায় লোক তো সেই পুরোনোই রয়ে গেছে। তাই, সবকিছুর জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

যুগান্তর: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনপরবর্তী আপনার ‘বিজয় উল্লাস’ শিরোনামের একটি গান প্রকাশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?

হায়দার হোসেন: অনেক জীবনের বিনিময়ে নতুন দেশ পেয়েছে ছাত্র-জনতা। শাসকের সঙ্গে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনে আজ আমরা উচ্ছ্বসিত। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে দেশ নিয়ে যে উল্লাস, আনন্দ চলছে এই আনন্দকে ধরে রাখতে হবে। এ আনন্দকে ধরে রাখতে আমাদের অনেক কাজ এখনো বাকি। ‘বিজয় উল্লাস’ গানটি সে কথাই বলছে।

যুগান্তর: এখন আর আগের মতো নিয়মিত গান করছেন না। কারণ কী?

হায়দার হোসেন: গান আমার প্যাশন, এর বাইরে কিছু নয়। শখেই গান গাই। তা ছাড়া একটি গান লেখা, সুর করা ও গাওয়ার পর যদি সেটি আমাকেই প্রমোট করতে হয়, সেটা আসলে মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি, নিজের গান নিজে প্রোমোট করা শিল্পীর কাজ নয়। এটা আমি পারি না। প্রমোট করবে মিডিয়া। আমার পক্ষে মিডিয়ার কাছে গিয়ে বসে থাকাও সম্ভব নয়। এ ছাড়া এখন গান করা আরও মুশকিল। গান করলেই নাকি এখন ভিডিও করতে হয়। এসব আমি করতে চাইনি, মনে হয়েছে গান নিয়ে এত ঝামেলা কে করবে, তাই নিজে থেকেই একটু নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া।

যুগান্তর: ঈদে কী নতুন কোনো গান আসছে?

হায়দার হোসেন: গান-বাজনা নিয়ে আমার কখনোই তেমন ব্যস্ততা ছিল না। তাই আয়োজন করে গান করা হয় না। তবে আর টিভি কিছু গান গাওয়ার কথা বলেছিল। তাদের জন্য সাতটি গান রেকর্ড করেছিলাম। শুনেছি এগুলোর মধ্যে ছয়টি এ ঈদে প্রচার করা হবে। কবে করবে সেটাও আমি জানি না। তাদের অনুরোধেই গানগুলো করা। নিজে থেকে এখন আর গান গাইতে ইচ্ছা করে না।

যুগান্তর: গানগুলোতে কী ধরনের বার্তা দিয়েছেন?

হায়দার হোসেন: এখনই সেগুলো নিয়ে আসলে কিছু বলতে চাই না। আর বড় কথা হচ্ছে সব আমার মনেও থাকে না, অনেক আগেই রেকর্ড করেছি। তবে এটুকু বলতে পারি, বর্তমান প্রজন্মের জন্য কিছু মেসেজ রয়েছে গানগুলোতে। আশাকরি প্রচারে এলে সবাই শুনলেই বুঝতে পারবেন।

যুগান্তর: বর্তমানে কীভাবে সময় কাটছে তাহলে?

হায়দার হোসেন: গানের বাইরেও আমার অন্যান্য কাজ আছে, তা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই।