
বাংলা চলচ্চিত্রের অনবদ্য এক নাম মান্না। সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর ঢাকাই সিনেমার হাল একাই ধরেছিলেন এই তারকা। সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন- সব ঘরানার সিনেমা দিয়ে দর্শকের মন জয় করে নেওয়া প্রয়াত এ অভিনেতা এখনও ভক্তদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তার ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। আরটিভির পক্ষ থেকে এই নায়কের প্রতি শ্রদ্ধা। মৃত্যুর এতবছর পরেও জনপ্রিয়তার এতটুকু ঘাটতি হয়নি নায়ক মান্নার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে তা বেশ বোঝা যায়।
ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন মান্না। একসময় বড় পর্দায় চিত্রনায়ক মান্নার সিনেমা মানেই ছিল হলভর্তি দর্শক আর সফল ব্যবসা। মান্নার মৃত্যুর পর দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন সেভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। বলতে গেলে তার অভাব পূরণ হয়নি সেভাবে। মান্নার শুন্যতা আজও স্পষ্ট ঢাকাই সিনেমায়।
এদিকে প্রয়াত এই নায়কের জীবনী নিয়ে তৈরি হতে পারে অনেক সিনেমা- এমনটা নির্মাতারা অকপটেই স্বীকার করেন। সেই ভাবনা থেকেই মান্নার জীবনকাহিনি নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেছেন তার স্ত্রী শেলী মান্না। নায়কের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে চলমান মামলার কার্যক্রম শেষ হলেই সিনেমার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
শেলী মান্ন বলেন, অনেক দিন ধরেই মান্নার জীবন নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যে একটা রাফ চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি আদালতের রায়ের জন্য। যেহেতু তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে, তাই শেষটা জানার অপেক্ষায় আছি। শেষটা জানা গেলেই সম্পূর্ণ হবে চিত্রনাট্য, তৈরি করতে পারব একটা কমপ্লিট সিনেমা।
প্রতি বছরের মতো এবারও নায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবার আর ভক্তদের পক্ষ থেকে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। শেলী মান্না বলেন, মৃত্যুবার্ষিকী তো বেদনাদায়ক ব্যাপার। এখানে উৎসবের কোনো বিষয় নেই। প্রতিবছরের মতো এবারও পারিবারিকভাবে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে তার ভক্তরাও মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ঢালিউডের এই মহাতারকা। মান্নার পরিবারের দাবি, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মামলা এখনো চলমান।
১৯৮৪ সালে তিনি এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে আসেন। নায়করাজ রাজ্জাক মান্নাকে প্রথম চলচ্চিত্রে সুযোগ করে দেন। ‘তওবা’র মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তওবা’ হলেও তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম ‘পাগলী’। তবে দর্শক নজরে পড়েন ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
মান্না অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান, আব্বাজান, বীর সৈনিক, শান্ত কেনো মাস্তান, বসিরা, খল নায়ক, রংবাজ বাদশা, সুলতান, ভাইয়া, টপ সম্রাট, চাঁদাবাজ, ঢাকাইয়া মাস্তান, মাস্তানের ওপর মাস্তান, বিগবস, মান্না ভাই, টপ টেরর, জনতার বাদশা, রাজপথের রাজা, এতিম রাজা, টোকাই রংবাজ, ভিলেন, নায়ক, সন্ত্রাসী মুন্না, জুম্মান কসাই, আমি জেল থেকে বলছি, কাবুলিওয়ালা ইত্যাদি।
মান্না তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন।