অনেক দিন আগের এক কলামে লিখেছিলাম এই সত্যি কাহিনীটি। পুনরুক্তির জন্য সহৃদয় পাঠকের ক্ষমা পাবো, আশা করি। আমার ছোটবেলায় আমাদেরই এলাকায় ঘটেছিল ব্যাপারটা। চৌধুরী জমিদারদের বাড়িতে বিয়ে। সাত গ্রামের মানুষকে জিয়াফতে দাওয়াত দেয়া হয়েছে ঢোল পিটিয়ে। সাধারণ মানুষ প্রায়ই অর্ধভুক্ত-অভুক্ত থাকে। অন্যরাও আগের দিন থেকে না খেয়ে ছিল। চৌধুরী বাড়ির জিয়াফত। পেট ভরে ভালো-মন্দ মণ্ডা-মেঠাই খাবে।
ভোরে ভোরেই বেরিয়ে পড়েছিল সবাই। আগে আগে গেলে, সামনের কোনো কাতারে বসতে পারলে খাবারটা তাড়াতাড়ি পাবে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। জিয়াফতের খাবার আর আসে না। জমিদারের পেয়াদা-চাকরেরা কয়েকবার এসে ভরসা দিয়ে গেছে। খাবার ‘এই এলো, এই এলো’। বিকেল ৩টার দিকে সামনের কাতারগুলোতে চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেল। বকের মতো গলা উঁচু করে তাকিয়ে রইল সবাই। একেবারে পেছনের দিকে যারা বসেছিল তারা উঠে দাঁড়াল। ভেতর-বাড়ি থেকে কয়েকজন চাকর বড় বড় ট্রে হাতে এগিয়ে আসছে বৈকি! চাপা উত্তেজনা প্রকাশ্য রূপ দিলো।
চাকরেরা একেকজন একেক কাতারের ধারে এসে দাঁড়াল। কায়দা করে ধীরে ধীরে ট্রের ঢাকনাগুলো উঠাল তারা। কাছাকাছি যারা ছিল, তাদের মুখচোখ চুপসে গেল। ট্রেতে থরে থরে সাজানো দস্তার তৈরি ছোট ছোট পিরিচে এক টুকরো করে খুবই পাতলা করে কাটা পেয়ারা। কেউ কেউ এক ঢোকেই গিলে ফেলল। জানতে চাইল, আসল খাবার কখন আসবে। হো হো করে হাসল চাকরগুলো। বলল, আসল খাবার আবার কী! এই তো হলো জিয়াফত। ক্ষুধায় পেট সবারই খালি, একেবারে মহাশূন্যের মতো। দাঁড়িয়ে ওঠার শক্তিও যেন নেই কারো। তবুও ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল একে-দুয়ে সবাই। ধীর পায়ে বাড়ির পথ ধরল। বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে যেন সে রকমেরই পরিহাস করছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাকযোগ্যতা টেন্ডার ডাকা হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। কথা ছিল, নির্মাণকাজ শুরু হবে ২০১১ সালের গোড়ায়। মূল কাঠামো তৈরি শেষ হবে ২০১৩ সালে, আর সেতু নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে ২০১৫ সালে। আনুমানিক ব্যয় ৩০০ কোটি ডলারের মধ্যে ১৫০ কোটি দিতে রাজি হয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বাকি অর্থ দেয়ার কথা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এজেন্সি (জাইকা) আর ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের। কাজ ২০১১ সালেই আটকে যায়। একটি কানাডীয় কোম্পানিকে চুক্তি দেয়া হয়েছিল নির্মাণকাজের চুক্তি কাকে দেয়া হবে, স্থির করতে। কিন্তু চুক্তি দেয়ার আগেই বিশ্বব্যাংক কানাডীয় কোম্পানির মধ্যে দুর্নীতির সন্ধান পায়। আবিষ্কার হয় যে, বাংলাদেশের কোনো কোনো মন্ত্রী এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কোনো কোনো শীর্ষ ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা সে দুর্নীতি থেকে উপকৃত হয়েছেন।
সেতু দুর্নীতির সাতকাহন
দুর্নীতির সেসব অভিযোগ সম্বন্ধে উপযুক্ত তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তিদান পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ ব্যাংকের দেখাদেখি অন্য দাতা দেশ-সংস্থাও পুঁজির অর্থ আটকে দেয়। সমস্যা দেখা দেয় এ কারণে যে, বাংলাদেশ সরকার গোড়ায় কোনো প্রকার তদন্ত করতেই অস্বীকার করে। অনেক ধানাইপানাই, দরকষাকষি ও বিলম্বের পর কোনো কোনো অভিযুক্ত সম্বন্ধে তদন্ত করতে তাদের নতজানু দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেয়, কিন্তু প্রধান অভিযুক্ত যোগাযোগমন্ত্রী ও অন্য কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত অস্বীকার করেছে। এখন অবশ্যি আমরা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উক্তি থেকে জানতে পেরেছি, এই সরকার ঘুষ নেয়াকে অন্যায় বলে মনে করে না। এদিকে, কিস্তিতে কিস্তিতে সব অভিযুক্তকেই নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছে দুদক। অর্থাৎ ধরে নেয়া যেতে পারে, সংশ্লিষ্টদের ঘুষ নেয়ার পরোক্ষ অনুমতি সরকারই দিয়েছিল এবং এটাও সত্যি হতে পারে, কোনো কোনো মন্ত্রী অন্য কারো পক্ষে প্রক্সিতেও ঘুষ নিয়েছেন।
সরকার ২০১২ সালে ঘোষণা করে, প্রিয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং তাদের শাস্তি দেয়ার শর্তে বিশ্বব্যাংকের ঋণ তারা নেবে না। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংকের সাহায্যের অনুরোধ প্রত্যাহার করা হয়। অনেক রকমের পরস্পরবিরোধী সমাধানের কথা সরকার বলেছে বিভিন্ন সময়ে। নিজস্ব তহবিল থেকেই ২০১২ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর আশ্বাস দেয়া হয়েছিল দেশের মানুষকে। একটি প্রস্তাব ছিল, দেশবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে সে অর্থেই সেতু নির্মিত হবে। আরো ঘোষণা দেয়া হয়, চাঁদার টাকা জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের চাঁদাবাজির মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। তুঘলকি সরকার এরপর ঘোষণা দেয়, সরকার রাজস্ব খাত থেকেই সেতু নির্মাণ করবে। সেতুর নামে যে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছিল, সে টাকার হিসাব চাওয়ার কথা কারো মনে আসেনি। তার পরেই আবার প্রধানমন্ত্রী পুঁজির সন্ধানে জাপান ও চীনসহ কতগুলো দেশে গেলেন এবং সরকারের গোয়েবলসরা এই বলে ঢাক পেটাতে থাকেন, সবাই পদ্মা সেতুর মূলধন দিতে আগ্রহী। মনে হলো, যেন অপরিসীম অর্থদানের আবেদন নিয়ে বিদেশীরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বাইরে লাইন দিয়ে আছেন। শেষ পর্যন্ত চীনের কাছ থেকে সাহায্যদানের ও সেতু নির্মাণের পাকা প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে মনে হয়।
গত বছর মন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে দেশবাসীকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, একমাত্র তারাই পদ্মা সেতু তৈরি করতে সক্ষম। সুতরাং সেতু তৈরির জন্য তাদের ভোট দিয়ে আরেক মেয়াদের জন্য গদি দেয়া দেশবাসীর কর্তব্য। ভোট কেউ তাদের দেয়নি কিন্তু তারা লাঠি-রাইফেলের জোরে গদি দখল করে আছেন। মনে রাখতে হবে, এই গদি দখল মৌরুসী পাট্টা তো নয়ই, ইজারাস্বত্বও নয়। দেশের মানুষ আশা করে, শিগগিরই এই সরকারকে বিদায় করা যাবে। সেতু তৈরির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আর ধোঁকা দেয়া কিংবা ব্ল্যাকমেইল করা যাবে না। অবশ্যি সরকারের পরিকল্পনা ভিন্ন। তারা আশা করে চিরস্থায়ীভাবে গদি দখল করে থাকতে পারবে।
তারা কি সত্য কথা বলছেন?
কিন্তু এই গদি দখলেরও এক বছর পুরো হতে চলল। সেতু তৈরির কাজ কতটুকু এগিয়েছে? দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রীদের অসত্য বলার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মুহিত বললেন, যারা বলে যে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়নি, তারা ‘স্টুপিড’। অর্থাৎ যারা স্টুপিড হতে চায় না তাদের স্বীকার করে নিতে হবেÑ সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। তার কয়েক দিন পরেই কিন্তু সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, (সেতু তৈরির স্থানের উপযুক্ততা যাচাইয়ের জন্য) মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। গদির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার কারণে মন্ত্রীরা যে সকাল-সন্ধ্যা বাজে বকছেন, সেটা সবাই লক্ষ করেছেন। দেখা যাচ্ছে, যে ওবায়দুল কাদেরকে এক কালে সৎ ও বুদ্ধিমান মনে করা হতো, তিনিও এখন স্মৃতিভ্রষ্টতার ব্যাধিতে ভুগছেন। সম্প্রতি তিনি আরো বলেছেন, মাটি পরীক্ষার কাজের জন্য একটি চীনা সংস্থার সাথে চুক্তিতে সই করা হয়েছে এবং আগামী বছর মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনায় যে বছর সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা, সে বছর মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হবে মাত্র। সে জন্য সম্পূর্ণরূপে সরকার দায়ী।
ভূমধ্যসাগরীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে, বিশেষ করে দুর্গম পার্বত্য পথে একটি দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। ভারী বোঝাসহ গাড়ি টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট একটা গাধা। লম্বা লাঠির আগায় বাঁধা একটি গাজর ঝুলছে গাধার চোখের কয়েক ইঞ্চি সামনে। গাধা ভাবছে, আর কয়েক পা এগোলেই রসালো আর সুস্বাদু গাজরটা সে খেতে পারবে। স্বভাবসুলভ কুড়েমি আর পথের কান্তি সত্ত্বেও গাধা কোনোমতে হেঁটে চলেছে। এভাবে বহু দূরের পথও পেরিয়ে যাচ্ছে সে। এই সরকারের মন্ত্রীরা সম্ভবত বাংলাদেশের মানুষকে ওই রকম বোকা ভাবেন। সেতু হচ্ছে-হবে বলে মানুষকে তারা বোকা বানাবার চেষ্টা করছেন, যাতে সরকারকে বিদায় করার জন্য তারা অস্থির হয়ে না পড়ে, যেন তারা আন্দোলন করতে পথে না নামে।
আরেকটি বিরাট ভাঁওতা হলো, প্রকল্প-প্রকল্প খেলা। সরকারি কর্মকর্তাদের কথা বিশ্বাস করতে হলে বলতে হবে, উন্নয়নের সুনামি বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। আসল ব্যাপারটা খতিয়ে দেখলে আমার ছোটবেলায় শোনা সেই পুঁথির পঙ্ক্তি মনে এসে যায় Ñ ‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল/কিছু দূরে গিয়া মর্দ রওয়ানা হইল/লাখে লাখে সৈন্য মারে কাতারে কাতার/শুমার করিয়া দেখে চল্লিশ হাজার।’ মন্ত্রীদের বয়ানে দেশের সর্বত্র এখানে ফাই-ওভার হচ্ছে, ওখানে আন্ডারপাস। এখানে-সেখানে মেট্রো রেল। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কাজ শুরু হলেও শিগগিরই মুখথুবড়ে পড়ছে। একবার থেমে গেলে আবার শুরু হওয়ার নাম-নিশানা নেই।
এই সরকারের আমলে কত সেতুর, কত প্রকল্পের যে ভিত্তিস্থাপন হয়েছে আর কত প্রকল্পের সূচনা, তার কোনো শুমার নেই। এখন আবার ভিত্তিস্থাপনকে ‘উদ্বোধন’ বলে জাহির করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ভিত্তিস্থাপন আর প্রকল্পের উদ্বোধনের মধ্যে যে গোটা নির্মাণ কাজটার ফাঁক থেকে যাচ্ছে, সেটাকে বেমালুম ভুলিয়ে দিতে চাইছে অতি চালাকেরা। বাংলাদেশের মানুষকে তারা ভূমধ্যসাগর তীরের অথবা দক্ষিণ আমেরিকার গাধাগুলোর মতো গাজর দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চায়। তারা ভুলে যাচ্ছে যে, একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে শুধু বাংলাদেশেরই নয়, কোনো দেশের মানুষকেই দুটো-একটা স্থাপনা দেখিয়ে চোখঠারা যাবে না। বিগত শতকেও যায়নি। হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে আইয়ুব খান আর এরশাদরা উন্নয়নের দোহাই দিয়ে গণরোষ থেকে পরিত্রাণ পাননি। উন্নয়ন যে গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না, সব দেশের মানুষই এখন সেটা বোঝে।
প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে পর্যটনে যাচ্ছেন। খবর দেয়া হচ্ছে, তিনি আরো বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ করতে অমুক দেশের সরকারকে অনুরোধ করছেন। মাত্র সেদিন সৌদি সরকারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ নিয়ে মিডিয়ায় ঢাক পেটানো হয়েছে। কিন্তু অনুরোধ করার অর্থ এই নয় যে, সে অনুরোধ রক্ষা করা হবে। উপসাগরীয় দেশগুলো ইসলামবিরোধী কিছু পদক্ষেপ এবং মুসলিম বিশ্ববিরোধী পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে বর্তমান সরকারের ওপর বিরাগ। সেসব নীতি পরিবর্তিত হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ করবে বলে মনে হয় না। রেমিট্যান্স আসা ধীরে ধীরে কমে যাবে। এমনকি, প্রধানমন্ত্রীর শত অনুরোধেও চিঁড়ে না-ও ভিজতে পারে।
উন্নয়ন গণতন্ত্রের বিকল্প নয়
মানুষকে ‘হাইকোর্ট দেখানো’র প্রবণতা ইদানীং ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল উপদেষ্টা নিযুক্ত হয়েছেন এবং তিনি কোনো পারিশ্রমিক পাবেন না।’ খুবই ভালো কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসঙ্ঘে গিয়েছিলেন ডাক-তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল উপদেষ্টাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়ে থাকলে দেয়া হয়েছে সিদ্দিকীরই দফতরের বাজেট থেকে। অর্থাৎ তারই এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানা থাকার কথা। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তিনি আল্লাহ-রাসূল সা: আর ইসলামকে খিস্তিখেউড় করলেন এবং আরো বললেন যে, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতনের কাছাকাছি মাইনে দেয়া হয়; তাও বিদেশী মুদ্রায়। অথচ কাউকে বিদেশী মুদ্রায় পারিশ্রমিক দেয়া হয়ে থাকলে সেটা মুদ্রা পাচার ও মানিলন্ডারিংয়ের পর্যায়ে পড়ে। তা খুবই গুরুতর অপরাধ। সে রকমের অভিযোগই প্রধানত খালেদা জিয়ার ছেলেদের বিরুদ্ধে করেছে এই সরকার।
কথা ও কাজের মধ্যকার ব্যবধানের আর প্রশ্নের এখানেই শেষ নয়। ছয় বছর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার অল্প দিনের মধ্যেই খবর পাওয়া যায় যে, জয় বিভিন্ন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা ও তেল কোম্পানিসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সাথে দেখা করেছেন এবং তাদের ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা’ পরিচয়ের কলিং কার্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই জয়কে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রায় বছর দুয়েক তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন। মাত্র গত সপ্তাহে যদি তাকে বিনা পারিশ্রমিকে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে গত ছয় বছর তিনি কি ভুয়া পরিচয় দিয়েছেন? তিনি নাকি কোনো আর্থিক আনুকূল্যই নেননি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে?
এ দিকে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার ঔদ্ধত্য অনেক বেড়ে গেছে। চুনোপুঁটি মন্ত্রীরাও এখন মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন। এত দিন ভয় দেখাচ্ছিল ক্যাডারেরা। বাংলাদেশে অমুককে কবর দেয়া যাবে না, তমুকের জানাজা হবে না। পিয়াস করিম ও অন্য সত্যভাষীদের লাশ শহীদ মিনারে নেয়া যাবে না। এখন হুমকি নিয়ে ময়দানে নেমেছেন মন্ত্রীরা। কারোই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, তারা মহা দুশ্চিন্তায় আছেন। চাকরি আর বেশি দিন নেই। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিসহ বহু অপকর্ম করেছেন অনেকে। ‘হিসাব দেয়ার এসেছে সময়। গদি গেলে সেসবের তদন্ত হবেই এবং তখন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদের। তা ছাড়া বহু অত্যাচার আর নির্যাতন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা আদালতের বিচারের মুখ চেয়ে থাকবেন। তবে অনেকের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেও যেতে পারে। ধারণা করা যায়, দুশ্চিন্তায় রাতে মন্ত্রীদের ঘুম হয় না। বিনিদ্র রজনী জেগে তারা মকশো করেন সকালে ওঠে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কী গালিগালাজ করবেন। এক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যারা জয় বাংলা স্লোগান দেবে না, তাদের বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হবে না। এক কালের গডফাদার খ্যাত আরেক মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে দেশছাড়া করতে হবে।’ যেন বাংলাদেশ তাদের বাপের সম্পত্তি। আল্লাহ যাদের ধ্বংস করতে চান তাদের আগে উন্মাদ করে দেন। আর বাংলা প্রবাদেও আছে, ‘অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে উড়ে যাবে’।
পরলোকে মাহমুদ হাসান
বিবিসি বাংলা বিভাগের পুরনো শ্রোতাদের জন্য এখানে একটা শোকসংবাদ। আশির দশকে বিবিসির একজন জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপাঠক মাহমুদ হাসান অস্ট্রেলিয়ায় তার কন্যার বাড়িতে প্রাণ ত্যাগ করেছেন বলে আমরা বিলম্বে লন্ডনে খবর পেয়েছি। সদালাপী মাহমুদ হাসানের জন্ম গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায়। দেশ ভাগের সময় পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে তিনি ইউরোপে চলে যান। তার গোটা কর্মজীবন কেটেছে ইউরোপে। পদ্য ও গদ্যে অনেক লিখেছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (নাইন-ইলেভেন) নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আলকায়েদার সন্ত্রাসী হামলার পর ইঙ্গ-মার্কিন নীতির সমালোচনা করে ‘বিগিনিং অব দ্য এন্ড অব ওয়েস্টার্ন সিভিলিজেশন’ (পশ্চিমি সভ্যতার সমাপ্তির সূচনা) নামে ঢাকা থেকে ইংরেজিতে একখানি বই প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
লন্ডন, ২৫.১১.১৪
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন