বেশ কিছুকাল থেকে ভাবছি ‘মান’ ও ‘সম্মান’Ñ এই দুটো শব্দ বাংলা অভিধান থেকে মুছে ফেলা হয়েছে কি না। তবে কিছু দিন ধরে পত্রিকার পৃষ্ঠায় পড়ছি প্রধানমন্ত্রীর অবমাননা কিংবা মানহানির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর-তার বিরুদ্ধে আদালতে পাইকারি হারে মামলা হচ্ছে। অর্থাৎ শব্দ দুটোকে এখনো ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়নি। কেউ কেউ ভাবছে সম্মানীত ব্যক্তি এখনো কিছু অবশিষ্ট আছেন, অন্তত থাকা উচিত।
ছোটবেলায় বাড়িতে গুরুজনেরা এবং স্কুলে শিক্ষকেরা এই সম্মান দেয়া-নেয়ার ব্যাপারটা জোর দিয়ে শেখাতেন। তাদের শিক্ষার আসল বক্তব্যটা ছিল ‘যিনি জ্ঞানে কিংবা অভিজ্ঞতায় বড় তাকে সম্মান দিতে শেখো। তা হলে এক দিন তুমিও সম্মান পাওয়ার উপযোগী হবে। স্কুলের নিচু কাসে একটি ছেলে এক গুণীজন সম্বন্ধে ‘সে’ এবং ‘বলেছে’ ইত্যাদি ভাষায় রচনা লিখেছিল। মাস্টার মশায় ওকে গোটা কাসের সামনে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, ‘কার সম্বন্ধে লিখেছিস তুই? সে লোকটা তোর বাড়ির চাকর নাকি?’ বাড়ির কাজের লোকদেরও যারা বয়সে বড় ছিল তাদেরও আপনি করে বলতে শেখাতেন আমার বাবা-মা।
দেশের বিদগ্ধ কারো কারো সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয়। তার থেকে যতটুকু বুঝতে পারছি বাংলাদেশে এখন প্রকৃত পুঁথিগত কিংবা নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয় না। সন্তানদের ওপর পিতামাতার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে গেছে বলা চলে। সন্তানেরা জানে কষ্ট করে লেখাপড়া শিক্ষার প্রয়োজন নেই; আওয়ামী লীগের ক্যাডারভুক্ত হলেই টাকা-পয়সা ও প্রভাবের অভাব থাকবে না, আর টাকা দিলেই রাজনীতিকদের মালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু-একটি সার্টিফিকেট সহজেই কেনা যাবে। বাবা-মাও বুঝে গেছেন সন্তান যখন ক্যাডারভুক্ত হয়ে গুণ্ডা-গার্দি করবে, তখন তাদের আদব-কায়দা শেখানোর চেষ্টা অরণ্যে রোদন হবে।
আমাদের দিনে আরেকটা রোল-মডেল ছিল। সমাজের যারা মাথা ছিলেন আর যারা রাজনীতি করতেন নম্রতা, বিনয় ও সম্ভ্রম প্রায় সময়ই তাদের মধ্যে লক্ষ করা যেত। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ জাতীয় নেতাদের কাছে থেকে জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সাধারণ মানুষও দেখা করতে এলে তারা সৌজন্যের সাথে তাদের সাথে কথা বলতেন। ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত উর্দু পড়েছি। নেতাদের আচরণ থেকে ‘বড়োঁ কা দেমাগ ভি বড়া হোতা হ্যায়’ প্রবাদটার সার্থকতা নেতাদের মধ্যে দেখে খুশি হয়েছি। আরো একটি বিষয় লক্ষ করেছি। তারা সবাই অত্যন্ত বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেনÑ আধুনিককালে যাকে বলা হয় ক্যারিশমা।
আর এখন কী দেখছি? রাজনৈতিক নেতা এবং মন্ত্রী যারা হচ্ছেন মুখে কিংবা আচরণে এতটুকু ভদ্রতা কিংবা সৌজন্য নেই তাদের মধ্যে। বর্ণাঢ্যতা কিংবা ক্যারিশমার তো প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষা কিংবা অভিজ্ঞতার যোগ্যতা তাদের নেই। পদোন্নতি কিংবা আধিপত্যের আশায় কটুকাটব্য আর খিস্তি-খেউড়ের প্রতিযোগিতা পড়ে যায় তাদের মধ্যেÑ যেন জন্মের সময় মা তাদের মুখে মধুর পরিবর্তে দিয়েছিলেন ধুতুরার বিষ। দিনরাত টেলিভিশনে এবং সভা-সমিতিতে এসব গালিগালাজ শুনছে ছেলেমেয়েরা। মা-বাবার শিক্ষার বিরুদ্ধে একটা স্বাভাবিক প্রতিরোধ তাদের মনে গড়ে ওঠে।
জাতীয় লজ্জা ও অপমান
আশা করি বুঝতে পারছেন অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের কথা মনে করেই কিছু কথার অবতারণা করেছি। এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সাথে আমার কখনো পরিচয় হয়নি। কিন্তু মিডিয়া থেকে তার অনেক মন্তব্য ও অভিমত জানতে পেরেছি এবং জেনে উপকৃত হয়েছি। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এবং তাদের পরগাছারা এই জ্ঞানী-গুণী ও সম্মানিত শিক্ষাবিদকে নিয়ে যা করেছে, তার জন্য পুরো জাতি লজ্জিত ও অপমান বোধ করছে। একই সাথে বিশ্ববাসীকে আমরা জাতীয় বৈশিষ্ট্যের যে পরিচয় দিয়েছি সেটা মোটেই গৌরব করার মতো নয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় গরিমার অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত। ৬২ বছর আগে মাতৃভাষা সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রপ্রীতির তাড়নায় আমরা ভাষা আন্দোলন করেছিলাম। অন্তত চারজন ছাত্র সে বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মদান করেছিলেন। তাদের স্মৃতিকে এবং নিজেদের আত্মগরিমাকে অমর করে রাখার লক্ষ্যে আমরা শহীদ মিনার গড়েছিলাম। তখন থেকে কোন জাতীয় সংগ্রামকে সমুন্নত করার অথবা কোনো বিদেহি জাতীয় বীরকে শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে জাতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হতে চায়। অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমের মরদেহ সবার শ্রদ্ধানিবেদনের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনারে স্থাপন করার প্রস্তাবও উঠেছিল সে কারণে।
মনে হচ্ছে শ্রদ্ধা গৌরব আর গরিমার ভাষা যারা বোঝে না, শহীদ মিনারকে তারা ছিনতাই করে নিয়েছে। দেশে যারা এখন ক্ষমতার আসন জুড়ে বসে আছে ইংরেজি অভিধানে তাদের বলতে হবে ‘স্কোয়াটার’Ñ জবর দখলকারী। ভোট দিয়ে দেশের মানুষ তাদের ক্ষমতার আসনে বসায়নি, গুণ্ডা-গার্দির জোরে তারা গদি দখল করেছে, আর দিবারাত্রি দেশে ও বিদেশে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গলা ফাটাচ্ছে। অবৈধ ক্ষমতা পোক্ত করার আশায় তারা একে একে দেশের সব অনুশাসন ও প্রতিষ্ঠানকে দখল করে নিচ্ছে ও ধ্বংস করছে।
শহীদ মিনারকেও তারা এখন ছিনতাই করে নিয়েছে মনে হয়। অথচ বর্তমান শাসক দলের বিশেষ কোনো দাবি কিংবা অধিকার নেই ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের ওপর। এসব খবর আমি নিজে ছেপেছি পত্রিকার পাতায় : অমর একুশের দিনে আইন ভঙ্গ করে আত্মাহুতি দানের ঘোরতর বিরোধিতা করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন বলাবলি হচ্ছিল যে পাকিস্তান সরকার শিগগিরই পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার নির্বাচন দিতে যাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ছিল যে তারাই জয়ী হবে এবং গদি পাবে। সরকার ও পুলিশের সাথে বিবাদ করে তারা নির্বাচনের সম্ভাবনা ভণ্ডুল করে দিতে চায়নি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে কোনো কারাগারের জানালা থেকে কোনো চিরকুট বর্ষিত হয়নি। আসলে আওয়ামী লীগ কোনো আদর্শের দল নয়, তারা গদির দল। একাত্তরেও তারা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তারা গা বাঁচিয়েছে, কিন্তু এ দেশটাকে তারা এখন পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করে।
পিতার পরিচয়ে সন্তানের বিচার হতে পারে না
ড. পিয়াস করিমের বিরুদ্ধে তাদের আক্রোশের আসল কারণ কারো বুঝতে বাকি নেই। বিশেষজ্ঞের চোখ দিয়ে তিনি সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করতেন টেলিভিশনের টকশোতে। তাতে সরকারের অসত্য কথাবার্তা আর দুর্নীতি ও হত্যাকাণ্ডের মুখোশ ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল। অর্থাৎ তারা আর ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখাতে’ পারছিল না। পিয়াস করিম এখন গত হয়েছেন। তার কণ্ঠে এখন আর প্রতিবাদ নিঃসৃত হওয়ার ভয় নেই। এ সুযোগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার এবং তার পিতার চরিত্র হনন করে গায়ের ঝাল মেটাচ্ছেন। এবং তারা ভ্রান্ত আশা করছেন এভাবে দেশের মানুষের মনে পিয়াস করিমের অতীতের বিশ্লেষণ ও মন্তব্যগুলোর যে স্মৃতি গেড়ে আছে সে স্মৃতিও তারা মুছে ফেলতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ ওয়ালাদের বক্তব্য : পিয়াস করিমের বাবা একাত্তরে পাকিস্তানিদের গঠিত শান্তি কমিটির স্থানীয়পর্যায়ের নেতা ছিলেন। সে অভিযোগ সত্যি হলেও প্রশ্ন ওঠে, ব্যক্তির পরিচয় কি বাপের পরিচয় দিয়ে হয়? গুজরাটের গ্রামীণ রেলস্টেশনের চা ভেণ্ডারের পুত্র নরেন্দ্র মোদিকে আজ আর চা-ওয়ালা বলে অবজ্ঞা দেখানোর হিম্মৎ আওয়ামী লীগ নেতাদের হবে? আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা নিজেদের রবীন্দ্রনাথের আদর্শের ধারক ও বাহক বলে দাবি করতে চান। রবীন্দ্রনাথও কি তার ‘ফুল বলে’ গানটিতে লিখে যাননি, ‘জন্ম নিয়েছি ধূলিতে, দয়া করে দাও ভুলিতে, দাও ভুলিতে’?
তা হলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে (যে শহীদ মিনার কারো বাবার সম্পত্তি নয়) পিয়াস করিমের শবদেহ জনসাধারণে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণ রাখার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ক্রুসেড ঘোষণা কেন? এবং মনে রাখতে হবে, অতীতেও মৃতদের স্মৃতিকে বহুবার অপমানিত করেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, শেখ মুজিবুর রহমানের সমমর্যাদার আওয়ামী লীগ নেতা, তাজউদ্দীন আহমদের এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের মন্ত্রী এবং একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদের জন্য বাংলাদেশের রাজধানীতে জানাজার নামাজ আদায় করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। একবারও কি তাদের মনে হয়েছে, যে ব্যক্তি জীবিত কিংবা মৃত অন্যদের শ্রদ্ধা দেখাতে জানে না শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতা তার নেই?
গতকালের হিরো আজকের ভিলেন
একাত্তরে অধ্যাপক পিয়াস করিম ও তার পিতার ভূমিকার সঠিক বৃত্তান্ত দিয়েছেন সরকারের আইনমন্ত্রী (এবং মুজিব হত্যা মামলার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি) আনিসুল হক। তিনি বলেছেন পিয়াস করিমের পিতাও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। একাত্তরে পিয়াস করিম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করছিলেন বলে পাকিস্তানিরা তাকে গ্রেফতার করে। তারপর তার মুক্তিপণ হিসেবে তার পিতাকে শান্তিকমিটিতে যোগ দিতে বাধ্য করে। এই সত্যটি প্রকাশের কারণে শেখ হাসিনার সরকারের মূল্যবান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আওয়ামী ওয়ালারা যে তাণ্ডব শুরু করেছে (অবশ্যই সরকারের সায় নিয়ে) তাকে রীতিমতো কুৎসিত ও অশ্লীল না বলে উপায় নেই।
আমি যত দূর জানি আনিসুল হকের বংশগত আনুগত্য আওয়ামী লীগের প্রতি। আজ তিনি রাজাকার হয়ে গেলেন! এবং এখনো কেউ ভুলে যায়নি যে মাত্র কিছু দিন আগেই মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এবং শেখ হাসিনার সর্বশেষ বৈধ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার মার্শাল এ করিম খোন্দকারের বিরুদ্ধেও অনুরূপ কুৎসিত আন্দোলন হয়েছে, তাকেও রাজাকার বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে। কী অপরাধ ছিল এয়ার মার্শাল করিম খোন্দকারের? তিনি তার স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি।
একই কথা শেখ মুজিবুর রহমানের অতি ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ (তার কন্যা শারমিন আহমদের রচনা অনুযায়ী) আরো অনেকে বলে গেছেন, এমনকি আমি নিজেও বহুবার প্রমাণ ইত্যাদিসহ লিখেছি। তাহলে কি এ কথা না বলে উপায় আছে যে আওয়ামী লীগ মোটেও আদর্শভিত্তিক দল নয়, এ দলের ভিত্তি সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং দলটি টিকে আছে শুধু গদির লোভে এবং গদির কল্যাণে?
লতিফ সিদ্দিকী ভাগ্যবান
এর বিপরীতে এখন তুলনা করা যাক হাসিনার সরকারের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গকে। এই মন্ত্রী সম্বন্ধে বহু অভিযোগ প্রকাশ্যেই আলোচিত হয়েছে। মন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালীন বহু দুর্নীতি ও অনিয়মিত কাজ তিনি করেছেন। কিন্তু সেসব কারণে তার চাকরি যায়নি, এমনকি নতজানু দুদকও কোনো তদন্ত করেনি তার বিরুদ্ধে। এমনকি নিউ ইয়র্ক সফরে প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়ভাজন ১৮৫ জন সফরসঙ্গীরও অন্যতম ছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। কিন্তু তিনি এবং আরো বেশি করে সরকার এখন বিপদে পড়েছেন এই সফরের কারণে। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীর এক ঘরোয়া বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের মহানবী সা:, ইসলামের পাঁচ খুঁটি কালেমার অন্যতম হজ এবং তাবলিগ সম্বন্ধে বহু অবমাননাকর ও কটূক্তি করেছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর এসব কদর্য উক্তি বাংলাদেশে তো বটেই বিশ্বব্যাপী ঈমানদার মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ হয়েছে কি আওয়ামী লীগ থেকে? কোনো মিছিল হয়েছে প্রতিবাদে? কেউ তার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে?Ñ যেমন এখন প্রতিবাদ হচ্ছে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে? এমনকি লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রী পদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য পদ এবং এ দলের সদস্য পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে? সরকার উদ্যোগী হয়ে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো চেষ্টা হয়েছে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে? মহানবী সা: ও ইসলামের অপমান এবং বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা দূষণীয় নয়, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা এবং স্বাধীনতা ঘোষণার মিথ্যা দাবি অস্বীকার করা চরম অপরাধ!
অব্যাহতির আসল কারণ
অনেক ধানাইপানাই ও কালক্ষেপণ করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে ‘অব্যাহতি’ দেয়া হয়েছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মন্ত্রী পদে বহাল থাকেন ‘প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টি’ অনুযায়ী, তার মন্ত্রী থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ইচ্ছা করলে যেকোনো মুহূর্তে তিনি লতিফ সিদ্দিকীকে বরখাস্ত করতে পারতেন। রাষ্ট্রপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা প্রকৃত কারণ ছিল না। তা ছাড়া বর্তমানে যেসব রুচিহীন ব্যক্তিত্বের অধিকারীরা মন্ত্রী পদ ‘অলঙ্কৃত’ করছেন তাদের দায়দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রুচিতে কুলাবে কি না আমার সন্দেহ আছে।
তবে লতিফ সিদ্দিকীকে এখন ‘অব্যাহতি’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা মহানবী সা:-এর অবমাননা, হজ সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য কিংবা তাবলিগের বিরোধিতা করার জন্য নয়Ñ ভিন্ন কারণে এই ‘অব্যাহতি’ বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন। জ্যাকসন হাইটসের সে বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় সম্বন্ধে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য’ করে কিছু কথা বলেছেন এবং কিছু অপ্রিয় তথ্যও প্রকাশ করেছেন, যা সরকারকে বিব্রত করে। সাধারণ লোকের ধারণা, এই বেফাঁস কথার কারণেই এই মন্ত্রীকে ‘অব্যাহতি’ দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী ওয়ালাদের ধৃষ্টতা বেড়েই চলেছে। তারা এখন ‘ফতোয়া’ দিতে শুরু করেছে। সম্মানিত কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক মাহফুজ উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও আইনজীবী তুহিন মালিকসহ ৯ জনকে (অর্থাৎ বাংলাদেশে যারাই সত্য কথা বলবেন তাদের সবাইকে) শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। যেন শহীদ মিনার কারো পৈতৃক সম্পত্তি। বাইরে নোটিশ টাঙিয়ে দিলেই হলো : ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি, প্রবেশ নিষেধ’।
লন্ডন, ২১.১০.১৪
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন