প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘ বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে নিউ ইয়র্কে তখন দেশে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেল। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যখন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে, ঠিক শেষ মুহূর্তে ১ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া ঘোষণা করল তারা বাংলাদেশ সফরে আসছে না। কারণ বাংলাদেশে নাকি জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে তাদের কাছে খবর আছে। জঙ্গি হামলা হতে পারে তা বাংলাদেশ সরকার জানে না, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড জানে, অবাক হওয়ার মতো কথা বটে। অবশ্য ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার টিম বলটনিকস তাঁদের দূতাবাসের একটি বেশ বড় টিম নিয়ে চট্টগ্রামে লালখান বাজারে হেফাজতের জঙ্গি কারখানা জমিয়াতুল উলুম মাদ্রাসায় তাদের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন। এর কিছুদিন পরই এই হেফাজত নেতার কারখানায় বোমা বানানোর সময় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন বাচ্চা হেফাজতি হতাহত হয়। গত ঈদের আগে থেকে বিএনপি নেতা বেগম জিয়া লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাঁর গুণধর পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে তিনি সেখানে ঈদও করেছেন। ঈদ উপলক্ষে বিএনপি নেতা ড. মঈন খান তাঁর গুলশানের বাসভবনে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। অসিলা ছিল ঈদের দাওয়াত। তবে বিএনপির সব দাওয়াতেরই একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে এবং তা হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশি দূতদের নানা বিষয়ে কান ভারী করা। এটি ঐতিহাসিক সত্য যে বিএনপি সব সময় নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিদেশি শক্তির দিকে থাকিয়ে থাকে, যদিও এযাবৎ তাদের এই কৌশল তেমন একটা কাজে আসেনি; যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপি-জামায়াতের পরামর্শে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে তারা অনেকটা পিছু হটেছে। তবে একেবারে হাল ছেড়ে দেয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান ঘোষণা করেছেন আগাম নির্বাচন দেওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে। তাঁর এই বক্তব্যের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য কী তা পরিষ্কার নয়। এসবের রেশ না কাটতেই দেশে দুজন বিদেশি আততায়ীদের হাতে খুন হলেন। প্রথমজন ইতালীয় নাগরিক সিজারে তাভেল্লা। একটি বিদেশি এনজিওতে কাজ করতেন। গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় আততায়ীদের গুলিতে তিনি খুন হলেন সন্ধ্যায়। দ্বিতীয়জন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশে অবস্থান করে জাপানের সঙ্গে ব্যবসা করেন। রংপুর এলাকায় তিনি বেশ পরিচিত। তাভেল্লা খুন হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় তাঁকে তিনজন আততায়ী দিনদুপুরে মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে হত্যা করে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই দুটি অপ্রত্যাশিত হত্যাকাণ্ড ঘটে বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া তাদের পূর্বনির্ধারিত ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করার পর।
যেকোনো খুন, নিজ দেশের মানুষের হোক বা ভিন দেশের, তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। একজন বিদেশি খুন হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এটি বাংলাদেশের বেলায় একটু বেশি প্রযোজ্য। কারণ বাংলাদেশে কোনো বিদেশি নাগরিক খুন হলে সারা দেশে হইচই পড়ে যায়। কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকায় ও গণমাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ ছাড়া অন্য কোনো সংবাদ তেমন একটা প্রাধান্য পায় না। সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় একজন বাংলাদেশি খুন হলেন। তা নিয়ে আমাদের পত্রপত্রিকা তেমন একটা হইচই করেনি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় প্রতি মাসে নিরীহ বাংলাদেশি খুন হচ্ছেন। তাই বলে বাংলাদেশ সে দেশে বসবাসরত বাঙালিদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করেনি। অন্যদিকে বহুদিন ধরে জামায়াত-বিএনপি ও তাদের মদদদাতা বিদেশি বন্ধু ও এক শ্রেণির মানসিক বিকারগ্রস্ত বুদ্ধিজীবী প্রাণপণ চেষ্টা করছেন বিদেশে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার জন্য, যাতে বিভিন্নভাবে তারা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রা রুখে দিতে পারে। জঙ্গিবাদ ও নিম্নগামী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক কথা নয় অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসীদের হাতে কোনো বাংলাদেশি খুন হলে তা নিয়ে না সরকার, না আমাদের গণমাধ্যম তেমন কোনো উচ্চবাচ্য করে। এই যে গত হজের সময় সৌদি সরকারের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে প্রায় ১০০ বাংলাদেশিসহ কয়েক হাজার হজ পালনরত মানুষ নিহত হলো, তাতে কি কেউ তেমন একটা উচ্চবাচ্য করেছে? অন্যদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যে শক্ত হাতে বাংলাদেশে জঙ্গি দমনে সফল হয়েছে, তা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, তা দেশের গণমাধ্যম তেমন একটা প্রচার করে না। এখন আর কোনো জনসভায় গ্রেনেড ফাটে না। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মতো ঘটনা ঘটে না। তবে বাংলাদেশে আর দশটি দেশের মতোই আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা আছে। তা অনেক সময় সরকারি দলের নামধারী তস্কররা ঘটায়। খুনখারাবি হয়। কোনো কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দ্রুত দমন করতে সক্ষম হয়। কখনো কখনো তাদের নির্লিপ্ততার কারণে এই সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে যায়। আর আইন-আদালতের দীর্ঘসূত্রতা তো আছেই। এর পরও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসূচিতে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ভারতের ওপরে আছে।
পেশাগত কাজে কয়েক দিন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করার পর মেলবোর্ন পৌঁছাই। পরদিন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিতে ফারহাদ জাবের নামের ১৫ বছরের তুর্কি বংশোদ্ভূত এক কুর্দি বালক পারামাট্টা পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত একজন চীনা বংশোদ্ভূত কর্মচারী কার্টিস চেংকে দিনদুপুরে গুলি করে খুন করে। জাবেরের মাথায় নাকি জিহাদের পোকা ঢুকেছিল। সদর দপ্তরে পাহারারত প্রহরী বালক জাবেরকে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে। যেসব দেশে মৃত্যুদণ্ড নেই, সেসব দেশের পুলিশ সাধারণত অভিযুক্ত অপরাধীকে গ্রেপ্তার না করে তাকে হত্যা করাটা অনেক যৌক্তিক মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে এই সংস্কৃৃতিটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অভিযুক্ত কালো হলে তো কথাই নেই। সিডনির ঘটনার পর সপ্তাহ না যেতেই যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগনের রোজবার্গ শহরের এক স্কুলে ঢুকে ৯ জন শিক্ষার্থীকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে একজন ঘাতক, নাম যার ক্রিস হ্যারি মারসার। সেও পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। আটক হলে বলা হতো অপ্রকৃতিস্থ। সুতরাং তাকে বড়জোর যাবজ্জীবন কারাগারে থাকতে হবে। আর তার নাম যদি হতো মোহাম্মদ বা আহাম্মদ, তাহলে সে নির্ঘাত হয়ে যেত একজন জিহাদি। কিছুদিন ওই দেশে বসবাসরত মুসলমানরা একটু অস্বস্তিতে থাকত। যখনই আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাই তখনই আমাকে বিচিত্র সব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ আমার নামের আগে 'আবদুল' আছে। এই নামটিকে তারা সম্ভাব্য জিহাদির তালিকায় লিপিবদ্ধ করেছে বহু আগে। এসবের রেশ না কাটতেই শুক্রবার নর্দান আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হলো একজন ছাত্র। শনিবার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালেয় ঢুকে আরেকজন উন্মাদ গুলি করে দুজন ছাত্রকে হত্যা করে।
অস্ট্রেলিয়ায় এসে অনেকের কাছে বাংলাদেশে ক্রিকেট সিরিজ বাতিল করার কারণ জানতে চেয়েছি। প্রায় কেউই তেমন একটা কিছু জানেন না। কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ান তো হতাশাই প্রকাশ করেছেন। দু-একজন বলেছেন, বর্তমানে টিম অস্ট্রেলিয়া যে রকম ইনজুরিতে কাবু হয়ে আছে তারা বাংলাদেশে না গিয়ে ভালো করেছে। গেলে সাকিবদের হাতে মার খাওয়ার ভয় ছিল। ব্যতিক্রম দু-একজন বাঙালি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার বাঙালির বসবাস। অনেকের মতো এদের অর্ধেকই জামায়াতের ভাবধারায় বিশ্বাসী। গোলাম আযমের মৃত্যুর পর অস্ট্রেলিয়ায় কয়েক হাজার মানুষ তাঁর জানাজা পড়েছে। অনেক মসজিদে তাঁর জন্য দোয়া করা হয়েছে। বলেছে, শেখ হাসিনার জালিম সরকার গোলাম আযমের মতো একজন বড় মাপের ইসলামী চিন্তাবিদকে শান্তিতে মরতে দেয়নি। একজন বাঙালি ব্যবসায়ী, যিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে আর অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে, তিনি অবলীলাক্রমে জানালেন, বাংলাদেশের 'ফেডারেল পুলিশ' অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে বলেছে, তাদের সফরের সময় বাংলাদেশে জঙ্গি আক্রমণ হতে পারে। তাকে বলি, বাংলাদেশে 'ফেডারেল পুলিশ' বলতে কিছু নেই। পরক্ষণে বলেন, তাহলে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে। বলি, বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারপর বলেন, হয়তো জামায়াত-বিএনপির কেউ হতে পারে। আমি আর কথা বাড়াই না। তবে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে খেলতে না যাওয়ার বিষয়ে বোমাটি ফাটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এককালের সেরা ক্রিকেটার ডিন জোনস। তিনি গত শুক্রবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে লিখেছেন, খেলতে না গিয়ে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মান বাঁচিয়েছে। মুশফিক বাহিনীর হাতে তাদের অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মোদ্দাকথা হচ্ছে, বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষ বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে উঠেপড়ে লেগেছে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর থেকেই। সবচেয়ে দুঃখজনক মন্তব্যটি করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। ভারতে গিয়ে তিনি বলে এসেছেন, বাংলাদেশে আইএস আস্তানা গেড়েছে। একজন প্রধান বিচারপতির মুখ থেকে এমন কথা বের হলে তা সবাইকে চমকে দেবে। বিদেশে বসবাসরত একজন কলাম লেখক একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে লিখেছেন, বাংলাদেশে আইএস না থাকলেও জঙ্গি আছে। দুটির মধ্যে তফাত কী, তা বোধগম্য নয়।
সব বিষয় বিশ্লেষণ করলে এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বিদেশে প্রচার-প্রচারণায় সরকার বা আওয়ামী লীগের তুলনায় জামায়াত-বিএনপি জোট অনেক এগিয়ে আছে। তাদের নানাভাবে সহায়তা করে সরকারের ভেতরে থাকা এক শ্রেণির অপরিণামদর্শী নেতাকর্মী। সংসদ সদস্য লিটন তার একটি বড় উদাহরণ। ১০ বছরের একটি বালকের পায়ে গুলি করে তিনি সরকার আর দলের কত ক্ষতি করেছেন তা বোঝার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। আর ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত যে দলের কত ক্ষতি করছে, তা হয়তো তারা টেরই পাচ্ছে না। বহুবার লিখেছি এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সামনে কোনো বড় চ্যালেঞ্জ নেই। তাঁর সামনে দলের দুর্বৃত্তদের দমন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে সরকারের ভেতরে যারা আছে, বিশেষ করে সরকারের আমলা গোষ্ঠী, তাদের কতজন সরকারের পক্ষে কাজ করে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে, যা মোটেই অমূলক নয়। বেগম জিয়ার জোটের দুই নেতা জামায়াতের আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নিজ দলের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। তেমন একটি সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট তো বসে থাকতে পারে না। জামায়াত তো কোটি কোটি ডলার খরচ করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ করার জন্য অনেক আগেই আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বিএনপিই বা বসে থাকবে কেন? বেগম জিয়া বর্তমানে লন্ডনে। তারেক জিয়ার পাশে বাড়িভাড়া নিয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মনে হয় বেশ কিছু দিন থাকবেন। ওই অঞ্চলে বাড়িভাড়া মাসে চার হাজার পাউন্ডের কম নয়। এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য যদি বেগম জিয়ার থাকে, তাহলে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দুই হাতে টাকা খরচ করতে তাঁর বা দলের কোনো সমস্যা নেই। সেই কাজটিই তারা করছে এবং তাদের সহায়তা করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।
বেগম জিয়া জামায়াতকে নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা করেছে, তা দেশের মানুষ দেখেছে। তবে এই দেশের মানুষের একটি বড় অংশ জামায়াত-বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসনির্ভর দলকে এখনো সমর্থন করে। এর অন্যতম কারণ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হওয়াটাকে তারা কখনো সমর্থন করেনি। এর জন্য তারা আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুকে দায়ী করে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, এটি তারা কেন সহ্য করবে? তারা সব সময় অন্য দলে শেখ হাসিনার বিকল্প খুঁজবে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, একা শেখ হাসিনা এই চ্যালেঞ্জ কত দিন মোকাবিলা করতে পারবেন? কোনো একটি সংকট বা সমস্যা দেখা দিলে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীকে চুপ থাকতে দেখলে মানুষ বিরক্ত হয়। যাঁরা কথা বলেন তাঁদের অনেক সময় তালমাত্রা ঠিক থাকে না, বাগাড়ম্বরের মাত্রাটাই বেশি। তাঁদের কথায় অনেকে বিরক্ত হন। তাঁরা যুক্তি দিয়ে এটা বোঝাতে পারেন না যে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা থাকতে পারে, আইএস বা জঙ্গি সমস্যা নেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থান বিশ্বব্যাপী নন্দিত। এযাবৎ সরকারের সফলতা ঈর্ষণীয়, তা অনেকের সহ্য হয় না। সুশাসনের দিকে একটু নজর দিতে পারলে বর্তমান সরকারের আরো অনেক দূর যাওয়া অসম্ভব নয়।
লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন