Image description

শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলে দেশের শেয়ারবাজার ছিল লুটপাটের অন্যতম টার্গেট। আর্থিক খাতে ব্যাংক লুট ও দখলের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে কারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লুটে নেয় এক লাখ কোটি টাকার বেশি।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে হাসিনার আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে ‘প্রভাবশালীদের’ সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও তারা কারা- সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। তবে আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন শেয়ারবাজার লুটের। তার সহযোগী হিসেবে কারসাজিতে নাম এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ডিএসইর তৎকালীন প্রধান রকিবুর রহমান গং শেয়ারবাজার জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

 

মূলত প্রতারণা, কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাবিপর্যয়ের পর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন এবং পরে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শেয়ারবাজারের কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

তারা জানান, ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের মধ্যে গড়ে ওঠা নানা ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে শেয়ারবাজারকে লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তাদের লুটপাট আর অনিয়মের কারণে নিঃস্ব হয়ে বাজার ছেড়ে চলে গেছেন বহু বিনিয়োগকারী। কিন্তু এত লুটপাট ও অনিয়মের পরও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

পুঁজিবাজার নিয়ে বর্তমান সময়ে বিএসইসি কী করছে জানতে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের মন্তব্য চাওয়া হয়েছিল আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে। তাতে তিনি সাড়া দেননি। তবে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম আমার দেশকে বলেন, শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলোতে বিএসইসির দায় রয়েছে। তিনি এটাও বলেন, বিএসইসি একাই সবকিছু করেছে বিষয়টা এমন নয়।

 

এখানে যেমন রেগুলেটরের দায় রয়েছে, তেমনি মার্কেটে যেসব ইন্টারমিডিয়েট প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদেরও দায় রয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির দায় বেশি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা কিছু প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং আরো প্রতিবেদন জমা দেবে। সেগুলোও পর্যালোচনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এ ছাড়া পুঁজিবাজার বিষয়ে একটি সংস্কার কমিটিও করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে সেগুলো রোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতে কমিশন কাজ করবে।

 

ডিএসইর একাধিক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, খায়রুল ও রুবাইয়াত কমিশনের আমলে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির নামে বাজারে ‘বিষ’ সঞ্চালন করা হয়েছে। অচিরেই তারা এদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কীভাবে অভিযুক্তরা বিচারের বাইরে রয়েছেন? প্রশ্ন করেন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের কারো সঙ্গে ‘সম্পর্কের জেরে’ এরা এখনো মুক্ত জীবনযাপন করছেন বলে সন্দেহ সংশ্লিষ্টদের।

 

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মতামত জানতে চাইলেও সাড়া দেননি।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন সমাপ্ত করে অবসরে গেছেন। শিবলী রুবাইয়াত ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি ক্লাসে যাচ্ছেন না। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিক্ষা ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে তার বিদেশযাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এদিকে শিবলী রুবাইয়াতের পাসপোর্ট বাতিল করেছে সরকার।

 

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আমার দেশকে বলেন, গত এক-দেড় দশকে পুঁজিবাজারে দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব ছিল না। যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, গত দেড় দশকে অধিকাংশেরই নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেননি। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি বিভাগের মতো কাজ করেছে। ফলে নানা ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

 

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ আমার দেশকে বলেন, বস্তাপচা কোম্পানির তালিকাভুক্তির মাধ্যমে আইপিও বাজারকে ধ্বংস করেছে খায়রুল হোসেন। আর শিবলী সেকেন্ডারি মার্কেটে জুয়াড়ি তৈরি করেছেন এবং তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় না দাঁড় করালে শেয়ারবাজারে এ ধরনের অনিয়ম বারবার ঘটবে।

 

শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন আমার দেশকে বলেন, দুই কমিশনের আমলে দুই ধরনের অনিয়ম হয়েছে। অধ্যাপক খায়রুল যে সময় ছিলেন তখন আইপিও মার্কেটে অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানির তালিকাভুক্তি হয়েছে।

 

এতে সালমান এফ রহমানসহ বিশেষ গোষ্ঠীর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষরাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে রুবাইয়াত আমলে আইপিও বাজারের পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটেও নানা অনিয়ম ও কারসাজি করা হয়েছে। সে সময় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক সবকিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

 

ad

ডিএসই ব্রোকারেজ হাউস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) খায়রুল-রুবাইয়াত আমলে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, দুর্নীতি ও লুটপাটকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে এই দুই আমলে।

 

এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজারে এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবের ফলে শেয়ারবাজারে জুয়া ও প্রতারণার এক স্থায়ী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই শ্বেতপত্রে।

 

শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমার দেশকে বলেন, এখানে পদ্ধতিগত কারসাজি হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে শেয়ারবাজার লুটপাট আরো বেড়েছে। দোষীদের অবশ্যই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আমরা আশা করব সরকার এ কাজটি করবে।

 

অর্থ লুটপাটে দুর্বল কোম্পানির আইপিও

 

শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লুটপাটের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন। আর্থিকভাবে খুবই দুর্বল কোম্পানিকে এ সময় আইপিওর মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ তুলে দেওয়ার সুযোগ করে দেয় কমিশন। গত ১৪ বছরে ১২৭টি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩টি কোম্পানি ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

 

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুমোদিত আইপিওর ৭০ শতাংশই ডিএসইর মূল্যায়ন কমিটি বাদ দিয়েছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে এসব কোম্পানির অনুমোদন দেয়। এসব অনুমোদনের জন্য আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে। প্রিমিয়াম মূল্যে অনুমোদন পাওয়া ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ৩০টি কোম্পানির শেয়ারদর প্রিমিয়াম দরের নিচে লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি জাংক শেয়ারে পরিণত হয়েছে। আইপিও মার্কেটে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে এম খায়রুল হোসেনের কমিশন বিশেষভাবে দায়ী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

 

খায়রুল হোসেনের পুনঃনিয়োগে আইনভঙ্গ

 

২০১০ সালে ধসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিএসইসির আইন অনুযায়ী, দুই মেয়াদের বেশি কেউ কমিশনের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তৃতীয়বারের মতো দুই বছরের জন্য চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। মূলত সরকারের আস্থাভাজন ও লুটপাটে সহযোগিতার পুরস্কার হিসেবেই তিনি তৃতীয়বারের মতো নিয়োগ পান বলে অভিযোগ করেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তিন মেয়াদে প্রায় এক দশক চেয়ারম্যান পদে থেকে রেকর্ড করেন তিনি। পরে তাকে সরকার পিকেএসএফের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়।

 

শেয়ারবাজার ধ্বংসে শিবলী রুবাইয়াত

 

অধ্যাপক খায়রুলের বিদায়ের পর নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৭ মে তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান পদে যোগ পান। খায়রুল হোসেন অনিয়ম যেখানে শেষ করেছেন, শিবলী রুবাইয়াত সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন। দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তির ধারা শুধু অব্যাহতই নয়, নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। শেয়ারবাজারে দরবেশখ্যাত সালমান এফ রহমান, বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানসহ আরো কয়েকজনের সমন্বয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি হয়। কোন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, শেয়ারের দর কত হবে তার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করত সিন্ডিকেট চক্রটি।

 

জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্য

 

শিবলী রুবাইয়াতের আমলে শেয়ারবাজার জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। দেড় দশকে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কারসাজির কয়েকশ তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে পাঠানো হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কারসাজি চক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল কমিশন। ফলে বাজারে সিন্ডিকেট চক্র আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে।

 

শেয়ারবাজারে কারসাজির অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত সরকারি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু। তার বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজির বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলেও কমিশন তাকে নামমাত্র জরিমানা করে। কারসাজির সঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নাম উঠে এলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সাকিব আল হাসানকে সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে বিএসইসির কমিশনার শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম পরিচয় করিয়ে দেন এবং বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খায়রুল হোসেনের আমলে সাকিব আল হাসানকে বিএসইসির শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল।

 

তদন্ত কমিটি গঠন

 

শেয়ারবাজারে গত ১৫ বছরের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও কারসাজির বিষয়ে তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ৫ আগস্টের পর নবগঠিত কমিশন। এ ছাড়া শেয়ারবাজারের বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামসহ বিএসইসির আট কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এসব তদন্ত হলেও বিচার নিয়ে সংশয় রয়েছে বাজারসংশ্লিষ্টদের। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটলেও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের অনেকেই মুক্ত হয়ে গেছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা কিছু কিছু তদন্ত করে বিএসইসির কাছে দিচ্ছি। তদন্ত কাজটি এমনভাবে করতে চাই যাতে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায়নি। এসব দুর্নীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে সময় লাগবে।

 

আওয়ামী আমল মানেই শেয়ারবাজার লুটপাট

 

দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সে বছরই দেশের শেয়ারবাজারে প্রথমবারের মতো বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০১০ সালে আবার বড় ধরনের ধস নামে শেয়ারবাজারে। এ ধসে পুঁজি হারিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১০ বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করেন। ২০১০-এর ধসের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সেই লুটেরাদের হাতেই পুঁজিবাজার সমর্পণ করে। ফলে শেয়ারবাজার দুরবস্থা থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেনি।