
রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা’। গণমাধ্যমে প্রায়ই এমন শিরোনাম দেখা যায়। কথায়-কথায় একাধিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করেন। সর্বশেষ গত রোববার রাতের আন্দোলন রূপ নেয় সংঘর্ষে।
ওই ঘটনার পর গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন সভাকক্ষে ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় আট বছর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয় সেই উদ্দেশ্য তো পূরণ হয়নি উল্টো নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানা অবহেলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘ইগো প্রবলেম’ তৈরি করেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন। যার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ গত রোববার রাতভর চলা সংঘর্ষ। কেন এই সংঘর্ষ, তা জানতে চেষ্টা করে ঢাকা পোস্ট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর রশিদের দ্বন্দ্বের জেরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া সাত কলেজ এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা গত আট বছরে কয়েক শ বার বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তত অর্ধশতাধিকবার রাস্তায় দেখা যায় তাদের
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর রশিদের দ্বন্দ্বের জেরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া সাত কলেজ এখন সরকারের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা গত আট বছরে কয়েক শ বার বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তত অর্ধশতাধিকবার রাস্তায় দেখা যায় তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন-অর-রশিদের দ্বন্দ্বের জেরে সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার সাত কলেজকে আলাদা করে দেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক কলেজ সামলাতে হিমশিম খাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার কমানোর যুক্তি দিয়ে কলেজগুলোকে ঢাবির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশ করে দীর্ঘ সেশনজট কমানো এবং অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনার কথাও বলা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, সাত কলেজকে আলাদা করার নেপথ্যে ছিল আরেফিন-হারুনের পুরোনো দ্বন্দ্ব। অধ্যাপক হারুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার পর তার ক্ষমতা কমানো এবং আয়ের উৎসে বাগড়া দিতে সাত কলেজকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন ঢাবির তৎকালীন ভিসি। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকেও প্রস্তাবে সায় মেলে। নানা প্রক্রিয়া শেষে ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার পর নতুন নতুন সমস্যা দেখা যায় কলেজগুলোতে।
একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য অনুযায়ী, তারা এখন স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। পরিচয় দিতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার অপ্রতুলতার পাশাপাশি রয়েছে বিভাগভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংকট। এ ছাড়া সক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের বিলম্বের কারণে আন্দোলন লেগেই থাকত
একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য অনুযায়ী, তারা এখন স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগছেন। পরিচয় দিতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার অপ্রতুলতার পাশাপাশি রয়েছে বিভাগভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংকট। এ ছাড়া সক্ষমতার বাইরে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের বিলম্বের কারণে আন্দোলন লেগেই থাকত।সর্বশেষ ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীরা এখন ঢাবির অধিভুক্ত থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করছেন। একই ইস্যুতে গত রোববার রাতে আন্দোলনের সময় সাত কলেজ ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সাত কলেজ সঙ্কটের জন্য আরেফিন সিদ্দিক ও ড. হারুনের ব্যক্তিগত রেষারেষিকে দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদলেহনকারী সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার আরেক সহযোগী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদের ব্যক্তিগত রেষারেষির পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও সুন্দর ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এটি ছিল একটি অবিবেচনাপ্রসূত চরম হঠকারী পদক্ষেপ।’নাসিরের মতো একই অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও। তিনি এ সমস্যার পেছনে শেখ হাসিনাসহ সাবেক দুই উপাচার্যকে দায়ী করেছেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ সমস্যা তৈরির জন্য দায়ী শেখ হাসিনা ও সাবেক দুই উপাচার্য। তাদের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে সাত কলেজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভুগছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষে সাত কলেজের ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কী নিয়ে দুই ভিসির দ্বন্দ্ব, যেভাবে আলাদা হয় সাত কলেজ
এক সময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হতো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করে তৎকালীন বিএনপি সরকার। এরপর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধিও বাড়ানো হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক কলেজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। সময়মতো পরীক্ষা না নেওয়া বা বিলম্বে ফল প্রকাশ করায় দেখা দেয় দীর্ঘ সেশনজট। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে দেখা দেয় স্থবিরতা। তখন সনদের মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠায় সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। ঠিক ওই সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান আরেফিন সিদ্দিকের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যাপক হারুন।
২০১২ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক যখন ঢাবির ভিসি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (উপ-উপাচার্য) ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। ওই সময় তাদের দ্বন্দ্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ওপেন সিক্রেট।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে হারুনের ছেলেকে জিন প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেননি আরেফিন। সিন্ডিকেট নির্বাচনে নীল দলের হার, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য ও দ্বন্দ্বের জেরে ২০১২ সালের ৫ জুন উপ-উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন হারুন।
২০১৩ সালের মার্চে হারুন-অর-রশিদকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। এরপর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে আরেফিন-হারুনপন্থি বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। হারুনের কাজ-ক্ষমতা ও পদচারণা কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করার প্রস্তাব দেন আরেফিন। একই সঙ্গে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সেই সিদ্ধান্ত পক্ষে নিয়ে আসেন আরেফিন।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলছেন, সাত কলেজে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। কলেজগুলোর আয় থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের এফডিআর করা হতো। সেই এফডিআর থেকে কোটি কোটি টাকা আসত। সাত কলেজকে আলাদা করতে পারলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় কমার পাশাপাশি ক্ষমতাও কমে আসবে। এ চিন্তা ও উদ্দেশ্য থেকে সাত কলেজকে আলাদা করেন আরেফিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালে হারুনের ছেলেকে জিন প্রকৌশল বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেননি আরেফিন। সিন্ডিকেট নির্বাচনে নীল দলের হার, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য ও দ্বন্দ্বের জেরে ২০১২ সালের ৫ জুন উপ-উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন হারুন। ২০১৩ সালের মার্চে হারুন-অর-রশিদকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। এরপর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মধ্যে আরেফিন-হারুনপন্থি বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে
ওই সময় বিভিন্ন ইস্যুতে দুই উপাচার্যের বিভিন্ন মন্তব্য ও বিবৃতিতে দ্বন্দ্বের বিষয়টি একাধিকবার উঠে আসে। অধিভুক্তির পর এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিযোগ করেন, ‘খাতা না দেখেই চূড়ান্ত ফল দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।’
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ চেয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়। অন্যথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের তাগিদ ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুরুতেই সমন্বয়হীনতা
অধিভুক্তির পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তথ্য না দিয়ে অসহযোগিতা শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাবি প্রথমে সাত কলেজের চারটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেও সব তথ্য না পাওয়ায় রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ, ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তথ্য চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চারবার ও কলেজগুলোকে দুবার চিঠি পাঠিয়ে তথ্য পায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মধ্যস্থতায় সেই সমস্যার সমাধান হয়। এরপর প্রায়ই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানো হতো বিভিন্ন দাবিতে। এসবের পেছনে হারুনের হাত ছিল বলে সবসময় অভিযোগ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৫ আগস্টের পর নতুন সংকট
এত দিন শিক্ষার্থীরা দ্রুত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ, ঢাবির ইস্যু করা সনদ থেকে ‘এফিলেটেড’ শব্দ বাদ দেওয়ার দাবি জানালেও ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। এ দাবি প্রথমে তিতুমীর কলেজ করলেও এখন সাত কলেজের সবাই একই দাবি করছে। ইতোমধ্যে কিছু শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজের মেইন ফটকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, আগস্ট থেকে বিভিন্ন দাবিতে অর্ধশতাধিকবার রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মন্ত্রণালয়-ইউজিসির উচ্চপর্যায়ের কমিটি
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন।
এরপর স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠায় গত ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিতে মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে রাখা হয়। আগামী এপ্রিলের মধ্যে কমিটিকে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি সাত কলেজের অধ্যক্ষ, সিনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে যেটা মঙ্গলজনক হবে সেই সুপারিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হবে।
কী বলছেন সাবেক দুই ভিসি
এ প্রসঙ্গে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ও প্রশ্ন-সম্বলিত একাধিক বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
একই অভিযোগের বিষয়ে ২০১৭ সালে এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্বের বিষয় নয়। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই দুই লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব ঢাবি নিয়েছিল। ১৯৯২ সালের আইন বলবৎ থাকতে তারা এক বৈঠকের মধ্য দিয়ে কলেজগুলোকে কীভাবে অধিভুক্ত করে নেয়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অধ্যাপক হারুনের দ্বন্দ্বের জেরে সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্ত হয়েছিল, বিষয়টি সত্য নয়। এ কলেজগুলোর শিক্ষা, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের জন্য ইউজিসির নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় কমপক্ষে দুটি কমিটি গঠিত হয়। তাদের পর্যবেক্ষণ ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এ অধিভুক্তির পেছনের কারণ ছিল।’
তবে, বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সাবেক এই ভিসি।