মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের ছাত্রাবস্থায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়ে সাহসিকতার জন্য খেতাব অর্জন করেছেন, এমন এক পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধোত্তর পর্বে তথ্যপ্রযুক্তি অর্জন করে একটা নামকরা বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদ লাভ করে এশিয়ার দেশে দেশে ঘুরেছেন। তার স্বদেশ হিতৈষণার কিছু ভাবনা ও তথ্য বিশ্লেষণ অনলাইনে প্রকাশ করে মতামত বিনিময়ের একটা সামাজিক নেটওয়ার্কও পরিচালনা করতেন দেশ-বিদেশ যেখানেই তিনি থাকুন না কেন সেখান থেকে। নয়া সহস্রাব্দের প্রাক্কালে তিনি তার সেই ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিলেন একটা শেষ লেখা দিয়ে। তার লিখিত তথ্যবহুল সেই উপসংহারের দীর্ঘশ্বাসে মূল প্রতিপাদ্য ছিল : বাংলাদেশে সংগঠিত অপরাধ তৎপরতা তখনো দক্ষতা এবং নির্মমতার উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি; ইউরোপ-আমেরিকা-রাশিয়ার মাফিয়া কিংবা হংকংয়ের ট্রায়াড পর্যায়ে পৌঁছাতে এ দেশের অপরাধীদের অনেক দেরি; কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার সাবেক বানানা রিপাবলিকগুলোর মতো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী তখনই রাষ্ট্রক্ষমতার আশ্রয়ে সংগঠিত অপরাধ তৎপরতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তথা, তার মতে নয়া সহস্রাব্দ শুরুর আগেই বাংলাদেশের পুলিশ দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠিত অপরাধী চক্রে পরিণত হয়েছিল। ওই সময় ভয়ংকর কয়েকজন গডফাদার কয়েকটি জেলা সদর বা মহানগরগুলোর কয়েক মহল্লাজুড়ে যে ছায়ারাজত্ব গড়ে তুলেছিল, তাদের চেয়ে অনেক বেশি নির্মম রক্তচোষা বৃহদায়তন দক্ষ অপরাধবৃত্ত গড়ে বাংলাদেশের পুলিশি ব্যবস্থা সমাজচক্ষুর ভ্রƒকুটি এড়িয়ে ক্যানসারের মতো দেশজুড়ে জালবিস্তার করেছিল।
তখনো র্যাব গঠিত হয়নি। ‘ক্রসফায়ার’ কালচার ব্যাপকতা লাভ করেনি। চোরাই মালের হিস্যা, দাগি অপরাধীর রক্ষাপণ, উপরি আদায়ের জবরদস্তির জন্য ব্রিটিশ আমল থেকেই দুষ্ট পুলিশের দুর্নাম ছিল। কিন্তু সেটা প্রাতিষ্ঠানিক বদনামে পরিণত হয়নি।
ক্রমাগত পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ইনডেমনিটি প্রদানের ফলে, বিশেষ করে বিগত এক দশকে পুলিশের জুলুম এবং অপরাধ-বাণিজ্য এখন দেশবাসীর সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এখন সরকারঘেঁষা একটি দৈনিকেরই সংবাদভাষ্যের শিরোনাম : বদনাম পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। ওই মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : ‘বদনাম’ যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না পুলিশের। (নিদারুণভাবে) হচ্ছে এ বাহিনীর ভাবমূর্তি। পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ উঠছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেয়া হয় নানা ধরনের (লোক দেখানো) শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু কমছে না তাদের অপরাধ প্রবণতা। অব্যাহত রয়েছে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের নানা অপকর্ম।
সাধারণত পুলিশের অপরাধের তদন্ত বা অনুসন্ধান পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। যার কারণে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এসব ঘটনার। এছাড়া নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও পদায়নসহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হওয়ায় ক্ষমতার মোহে পড়ে বিপথগামী হচ্ছেন অনেকে। অবশ্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে দাবি করেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
দিন দিন পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ভারি হচ্ছে। ঘুষ, চাঁদাবাজি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, আটকাবস্থায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কিংবা জামিনের অযোগ্য ফৌজদারি গ্যাংকেসে জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, বাস্তবিক বেদম মারপিট করে পায়ে গুলি করে রাখঢাক না করেই বেপরোয়া মুক্তিপণ আদায়ের অভ্যাস, সেপাই দিয়ে নারীহরণ ও ধর্ষণের স্বভাব, পুলিশি ক্ষমতা জাহিরে যত্রতত্র পুলিশ-ডিবি পুলিশ-র্যাবের সুযোগসন্ধানী অভিযান, ছিনতাই-ডাকাতি-রাহাজানি-অজ্ঞান পার্টির সঙ্গে যোগসাজশে পথিক নির্যাতন ও লুটের বখরা আদায় এবং সর্বশেষে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বা রাজনৈতিক উপরওয়ালাদের আদেশে আইন প্রয়োগের নামে অপহরণ, গুম ও চুক্তিখুন, বিগত পাঁচ-সাত বছর ধরে এসবের নজির ও প্রামাণ্য তথ্য ফাঁস হয়ে চলেছে একটার পর একটা। এমন ঘটনায় সন্দেহভাজন পুলিশ বা র্যাব কর্মকর্তা আর শনাক্তকৃত পুলিশ সিপাইদের ক্ষতিগ্রস্ত, নিখোঁজ বা নিহতদের পরিবার পরিজন কিংবা পাবলিকের তরফে অভিযোগ দায়ের করার একটা সুযোগ রেখেছে খোদ পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে ১০০ জন পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে। ২০১৩ সালের সিকিউরিটি সেলে পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে ১,২৬৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করা হয়। আর চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আমলে নেওয়া হয়েছে ৮৯০টি অভিযোগ। পুলিশ অধ্যাদেশ ও সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি মোতাবেক অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত, পদাবনতি, ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের বিভাগীয় শাস্তি দানের কথা।
অতি সম্প্রতি রাজধানীতে কিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ ওঠে। মিরপুর থানার এসআইর হাতে প্রাণ হারান ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন। উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ ধরা পড়ে পুলিশের বিশেষ শাখার এক এসআই। খুলনার সাবেক পুলিশ কমিশনার শফিকুর রহমানের ছেলেকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশের দুই এসআই ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে তবেই পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর কাছে ওই ছেলেকে ফেরত দিয়েছে। পরে অভিযুক্ত হয়ে এখন তারা জেলে। রাজধানীর বংশালের ব্যবসায়ীর কাছে বংশাল থানা পুলিশের এক এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্য পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মকবুলকে ইয়াবা দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মকবুল হোসেন এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেছে গত সপ্তাহে। গত সপ্তাহে পুলিশের মধ্যেই কা- ঘটিয়েছে শেরেবাংলা নগর থানার এক এসআই। এক সময় মোহাম্মদপুর থানায় পুলিশের সিভিল টিমের গাড়ি চালাত শাহ আলম। তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় শাহ আলমকে সন্ত্রাসী বানাতে দুই পায়ে গুলি করে ওই এসআই। শাহ আলম বেঁচে যাওয়ায় এ ঘটনা ফাঁস হয়ে ওই এসআই গ্রেফতার হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আরও খবরে এসেছে, পুলিশের ফেনসিডিল বিক্রি। ১৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তুরাগ থানা পুলিশ। পরে উদ্ধারকৃত ফেনসিডিল বিক্রি করে দেয় পুলিশের কতিপয় সদস্য। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ভাষানটেকের গোলটেক বালুর মাঠে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পিটুনিতে খুন হয় যুবক নাসির উদ্দিন। মামাতো বোন লাবনীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ভাষানটেক থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর লাবনীর বাবা ও স্বামীকে ডেকে নিয়ে পুলিশ জোরপূর্বক জিডিও করে নেয় যে, লাবনী উত্ত্যক্তের শিকার হয়নি। অথচ ডিবির হাতে গ্রেফতারের পর খুনের দুই আসামি লাবনীকে উত্ত্যক্তের কথা স্বীকারও করে। অভিযোগে ওই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশের সখ্যের কথা এসেছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ২১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ নিয়ে মামলা হয়েছে। যে কোনো অপরাধে পুলিশের কেউ জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
সপ্তাহান্তের হেডলাইন : ৩ পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা, শেরেবাংলা নগর থানার এসআই দুই দিনের রিমান্ডে, চট্টগ্রামে ২ এসআইর বিরুদ্ধে মামলা।
পাবলিক বলছে, পুলিশ ব্রিটিশ আমলের একটা বচন অনুসরণ করে চলেছে : চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা। পুলিশ সদরে অভিযোগের হিম্মত দেখাতে পারে কিংবা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে পুলিশের বিরুদ্ধে লাগবে এমন মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। তাই সরাসরি পুলিশের জুলুম প্রকাশ্য চাঁদাবাজি গ্রেপ্তার বাণিজ্য কিংবা দুর্ধর্ষ বা ছিঁচকে অপরাধী উভয়ের সঙ্গে চাকরির মর্যাদার স্তরভেদে পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশ, এসব নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাতা-কলমে নিয়মরক্ষা দেখাতেই মাত্র অহরহ ঘটনার মধ্যে ধরা পড়েছে তথা বেশি জানাজানি হয়ে গেছে এমন কিছু অনিয়ম অভিযোগ আমলে নিয়ে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় নিষ্পত্তি হয়, মামলা হয় যেসব ঘটনা সামলানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে এমন ক্ষেত্রে। যেমন সামলানো যায়নি নারায়ণগঞ্জে চুক্তিমাফিক দিনদুপুরে গুম করে র্যাব-পুলিশের সাত খুন, লিমনকে পঙ্গু করার ঘটনা কিংবা মাসোয়ারা পেয়ে মুখ-ফিরিয়ে-থাকা পুলিশের চোখের সামনেই লক্ষ্মীপুরের ফেনীতে দিনদুপুরে ধাওয়া করে রাস্তায় পুড়িয়ে বা গুলি করে রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা চাঁদার বখরায় বেইমান শরিক হত্যা। এছাড়া মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে এক দশক ধরেই ক্রসফায়ার ও পুলিশি হেফাজতে রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনা। সেসব নিয়ে ঘরের খেয়ে নয়, পরের খেয়ে তথা বৈদেশিক মদদে মোষ তাড়াচ্ছে কিছু মানবাধিকার সংগঠন। মোটামুটি তারা সৎ কাজ করছে বলতে হবে, প্রশ্ন তুলছে পুলিশি-ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার, অমানবিক নির্যাতন, তল্লাশি হয়রানি আর নির্বিচার গুম বা খুনের পুলিশি লাইসেন্স নিয়ে। তাদের লেগে থাকার কারণে দেশে-বিদেশে এখন এ দেশের র্যাব-পুলিশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত। বেশ কয়েক বছর ধরেই ‘ক্রসফায়ার’ কালচারের কারণে বাংলাদেশের র্যাব-পুলিশকে প্রশিক্ষণদান বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ পুলিশকে কোনো ধরনের অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ, অনুদান বা প্রশিক্ষণ বঞ্চিত ঘোষণা করেছে। প্রকাশ, একই পথ অনুসরণ করতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বাংলাদেশের পুলিশের এমন অদক্ষতা ভ্রষ্টাচার আর সরাসরি গুরুতর অপরাধ প্রবণতা নিয়ে, র্যাব যখন রাজনৈতিক মতলববাজি আর চুক্তিখুনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে ধিকৃত সাব্যস্ত হয়েছে, তখন পাশের দেশ ভারতবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অনুসন্ধানে প্রকাশ, বাংলাদেশকে ঘিরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ভারতীয় বেল্টে বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে নাশকতার ৬৫টি ঘাঁটি শনাক্ত হয়েছে, যেখানে জঙ্গিরা হাতবোমা বানিয়ে ‘বাংলাদেশে আর আসামে’ পাঠাচ্ছে, নাশকতার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অদক্ষতা বা দুর্নীতি প্রবণতা নিয়েও ভারতে প্রশ্ন তুলেছে ওই রাজ্যে ক্ষমতাসীন ‘তৃণমূল’ দলের প্রতিপক্ষ দিল্লিতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতের বিজেপি। এখন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ তদন্ত হাতে নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতেও বলা হয়েছে : “ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গিরা মিলেমিশে দুটি রাষ্ট্রেই বড় মাপের ধারাবাহিক নাশকতার ছক কষেছিল। সে জন্য কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলার গোপন ডেরায় প্রচুর আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) মজুদ করা হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বানাতে গিয়ে খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয় ২ অক্টোবর। ১১ অক্টোবর এনআইএ তদন্তে নামে। খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় সন্ত্রাসবাদীরা বিস্ফোরক, আইইডি ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র তৈরির পুরোদস্তুর একটি গবেষণাগার গড়ে তুলেছিল। খাগড়াগড়ের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে বাদশাহী রোডের একটি বাড়িতে গত ১৬ অক্টোবর এনএসজি (ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড) তল্লাশি চালিয়ে ৩৫টি হ্যান্ড গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা উদ্ধার করেছিল। খাগড়াগড়ের মতোই আরও একটি গবেষণাগারের হদিস মিলেছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাতেও। সেখানে তিন রকম তিনটি জায়গায় গেলেন। একটি বিস্ফোরক ও আইইডির গবেষণাগার, দ্বিতীয়টি আইইডি মজুদ রাখার জায়গা, তৃতীয়টি খাগড়াগড়ের আগে যেখানে গবেষণাগার ছিল, সেই জায়গার হদিস মিলেছে। খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে নিহত মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, ভারতীয় নাগরিক গান্ধি শাকিল বলে পরিচিত। বোরকা-তৈরি ও বিক্রির কাজে নিযুক্ত। জেরায় তার স্ত্রী শাকিলের বাংলাদেশ কানেকশন প্রকাশ করেছে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় যোগাযোগের ঠিকানা ছিল বড়ুয়া পাওয়ার হাউসপাড়ায় শাকিলের ভাড়া করা ওলিওল ইসলামের বাড়িতে, কাছেই ফারাজিপাড়ায় ছিল বোরকা তৈরির কারখানা। শিশু মাদ্রাসা বাজারে ছিল শাকিলের দোকান ‘বোরকা ঘর’। দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানার করিমনগরে গত ফেব্রুয়ারি মাসের একটি ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গেও শাকিলের যোগসূত্র পেয়েছে এনআইএ। ওই ডাকাতির টাকার একাংশ খাগড়াগড়ের জঙ্গিদের কাছে পৌঁছেছিল। ওই ডাকাতিতে জড়িতরা জেল পালানো সিমি বা ভারতীয় ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য বলে সন্দেহ। খাগড়াগড়ে উদ্ধার টাকার বান্ডিলে করিমনগরের ব্যাংকের ছাপ মিলেছে।”
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জেএমবি বা জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ তথা বাংলাভাইয়ের লুপ্ত দলের সঙ্গে এই জঙ্গির সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হলেও ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্যেই দেখা যাচ্ছে এসব গুপ্তঘাতকদের নাগরিকত্ব, প্রশিক্ষণ আর নাশকতার অস্ত্র সরঞ্জাম সবই ভারতীয়। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে নাশকতাকাতর করে তুলে জাতিরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি রোধ করে এ দেশকে একটা ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত’ করার যে চক্রান্ত এভাবে ঘটনাচক্রে ফাঁস হয়েছে, তাকে ঠেকানোর দক্ষ ব্যবস্থা কি আর করতে পারবে এ দেশের গণধিকৃত অপরাধপ্রবণ কাপুরুষ র্যাব-পুলিশ?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামনিস্ট
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন