
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে সরকার গঠিত হয়। নাগরিকরা ভোটাধিকার নির্বাচনে প্রয়োগ করে থাকেন। পৃথিবীর বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমাদের মতো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিকের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা জনগণ তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে কার্যকর করে থাকেন।
রাষ্ট্র ও সরকার এক নয়। রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো রাষ্ট্র স্থায়ী অন্য দিকে সরকার অস্থায়ী। পৃথিবীর প্রতিটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটে। এমন কিছু রাষ্ট্র রয়েছে, যেখানে জনবিপ্লবের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়। সরকার রাষ্ট্রের শুধু একটি উপাদান। চারটি অপরিহার্য উপাদান সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত। যথা- জনসংখ্যা, ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। সরকার রাষ্ট্্েরর একটি মাত্র অংশ, যা রাষ্ট্রের পক্ষে কার্য সম্পাদন করে। সরকার রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরূপে কাজ করে। এটি রাষ্ট্রের এমন একটি প্রতিনিধি, যা রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা আইনে পরিণত করে, রাষ্ট্রে আইনগুলোর বাস্তবায়ন করে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র বিমূর্ত অপর দিকে সরকার মূর্ত। একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসরত ব্যক্তিসমষ্টির সার্বভৌম অধিকার রক্ষার ধারণা রাষ্ট্র ব্যক্ত করে। রাষ্ট্র অদৃশ্য।
জনগণ সমন্বয়ে রাষ্ট্র গঠিত। অন্য দিকে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠিত হয়। সরকারের নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত গঠনপ্রক্রিয়া রয়েছে। এটিকে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের ক্ষমতা প্রয়োগকারী ব্যক্তিসমষ্টি হিসেবে দেখা হয়। রাষ্ট্রের সব জনগণ রাষ্ট্রের অংশ এবং তারা রাষ্ট্রের নাগরিকও বটে। শুধু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে সরকার গঠিত, যাদের সংখ্যা দেশের সামগ্রিক জনসাধারণের তুলনায় স্বল্প। একটি শিশু জন্মপরবর্তী আপনাআপনি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করে; কিন্তু ব্যক্তিরূপে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে সে সরকারের সদস্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সরকারের ভিন্নতা রয়েছে। কোনো কোনো রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। আবার কোনো কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা চলমান। কোনো কোনো রাষ্ট্রে সরকারব্যবস্থা একক আবার কোনো কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অথবা উভয়ের সমন্বয়। একটি সরকার রাজতান্ত্রিক, অভিজাত অথবা গণতান্ত্রিক অথবা একনায়কতান্ত্রিক হতে পারে। জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী সরকারের ধরনের পরিবর্তন ঘটায়; কিন্তু রাষ্ট্র স্বাধীন সত্তায় বিদ্যমান এবং এটির বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তনশীল।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দেয়ায় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি অভ্যুদয়-পরবর্তী স্বল্প সময়ের মধ্যে এটির সংবিধান রচিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রাণ হলো এটির প্রস্তাব। সংবিধানের প্রস্তাবে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে- রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশের সংবিধান দেশের অপরাপর আইনের মতো একটি আইন হলেও দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে এটির অবস্থান অন্যান্য আইনের উচ্চে। এ বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(২) এ উল্লেখ রয়েছে- জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এ সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এ সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে সে আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হবে।
সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে- সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত, বাতিল বা স্থগিত করা হলে অথবা এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করা হলে এগুলোকে রাষ্ট্রদ্রোহসম অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। সেই সাথে এ ধরনের অপরাধের সাজার বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে এ আইনের অপরাধে দোষী ব্যক্তি দণ্ডিত হবে।
সংবিধান অনুমোদন করে না বা সংবিধান দ্বারা সমর্থিত নয় বা সংবিধানবিরোধী যেকোনো কাজ সংবিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করার শামিল।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ প্রাসঙ্গিক। অনুচ্ছেদটিতে অপরাপর বিষয়ের পাশাপাশি বলা হয়েছে ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং তাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ৫০ জন মহিলা সদস্য সর্বমোট ৩৫০ সদস্য সমন্বয়ে সংসদ গঠিত হবে।’
প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগ বুঝায়। পৃথিবীর সর্বত্র প্রত্যক্ষ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের সংবিধানে যে সংসদ নির্বাচনের ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে তা প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন।
সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে- ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে।’ এ বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ সমভাবে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম এবং তদপরবর্তী বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছে; তাতে যে ধারণা পাওয়া যায় তা হলো- ‘জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে এক বা একাধিক প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তাকে যেমন প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত বলা যায় না, অনুরূপ তার মাধ্যমে প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় যে আইনটি অনুসৃত হয়, সেটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ নামে অভিহিত। আইনটির বিধান অনুযায়ী, ‘মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর অথবা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর যদি দেখা যায় বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী শুধু একজন, সে ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে উক্ত বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীকে আসন হতে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।’
ওই আদেশের বিধান অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ একজন প্রার্থীকে জনগণের ভোট প্রদানের সুযোগ দেয়া ছাড়া নির্বাচিত ঘোষণা করা হলে সংবিধানে উল্লিখিত প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ধারণা পরাহত হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর উল্লিখিত বিধানটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (২)-এর সাথে সাংঘর্ষিক। এরূপ সাংঘর্ষিকতায় সংবিধানের অবস্থান যেকোনো আইনের উচ্চে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন যেমন : সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতির নির্বাচনেও সংশ্লিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, ‘মনোনয়নপত্র বাছাই অথবা প্রত্যাহারের পর যদি দেখা যায়, বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থী শুধু একজন সে ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে উক্ত বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত তারিখের পর বিনাপ্রতিদ্ব›দিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন।’
স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যে কোনো পদের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১-এ ব্যক্ত প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এ ধারণা অবদমিত করে।
সংবিধানের বিধান অনুসারে আইন অনুযায়ী ‘নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশের স্থানীয় শাসনভার প্রদান করা হয়।’ স্বভাবত প্রশ্ন দেখা দেয়, কোনো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে যেকোনো পদের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে সংবিধানের চেতনার আলোকে তাকে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত বলার অবকাশ আছে কি না?
আমাদের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের জন্য চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। এ স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশে একজন নাগরিক তার ভোটাধিকার প্রয়োগে পছন্দের দল বা প্রার্থীর পক্ষে নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনে একজন নাগরিকের সংবিধান প্রদত্ত এ মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। স্মরণযোগ্য, সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের সাথে যেকোনো প্রচলিত আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হবে।
জাতীয় নির্বাচনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা দল থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আইনের পরির্তন ঘটিয়ে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়নের বিধান প্রবর্তন করা হয়েছিল; যদিও পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বারিত করা হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক দল যেন স্বাধীনভাবে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করতে পারে সে নিরিখে সংবিধানে সংগঠনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন কর্মসূচি বা দাবিদাওয়া বিষয়ে জনমানুষকে অবহিত করতে হলে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা বা শোভাযাত্রার আয়োজনের আবশ্যকতা দেখা দেয়। সংবিধানে সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারও নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনে আইন প্রণীত হলেও এসব সদস্য দলের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইন প্রণয়নে সমর্থন ব্যক্ত করেন। দলীয় সরকার কর্তৃক আইন প্রণীত হলেও প্রণয়ন-পরবর্তী এটি রাষ্ট্রের আইন হিসেবে পরিগণিত হয়। রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা নাগরিক কর্তব্য। একজন নাগরিকের ভোটাধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে একজন নাগরিক স্বাধীনভাবে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলে একজন নাগরিকের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণের উদ্ভব ঘটে। নাগরিকের অধিকার রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের পক্ষে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার এ দায়িত্ব পালনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রজাতন্ত্রের কর্মে সামরিক ও বেসামরিক কর্ম, চাকরি বা পদে নিয়োজিত ব্যক্তি রাষ্ট্রের কর্মচারী। তাদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রক্ষিত জনগণ প্রদত্ত কর থেকে নির্বাহ করা হয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আনুগত্য রাষ্ট্রের প্রতি এবং তা কোনোভাবে সাময়িক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলীয় সরকারের প্রতি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আনুগত্যে ভিন্নতা দেখা দিলে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থের হানি হয়। তাই সাময়িক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক দলের উচিত নয়, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো ধরনের বাধা প্রদান বা তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতিবিশ্লেষক