Image description

মাসুম খলিলী 

 

বাংলাদেশ যখন ’২৪ এর মহান বিপ্লবের বার্ষিকী পালন করছে, তখন এমন একজন ব্যক্তিত্ব বিদায় নিলেন যাকে রাষ্ট্র সেভাবে স্মরণ করল না। অনেকের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য জাতীয় নেতারা শোকবাণী দেন, কিন্তু যে বীর স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় ভূমিকার জন্য বীর উত্তম খেতাব পেলেন, ভারতের আধিপত্যের বন্ধনে বন্দী করার গোপন চুক্তি ও বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর একনায়কের কাছে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রতিরোধের কঠিন জীবনকে বেছে নেন, সে বীর চলে গেলেন নীরবে নিভৃতে। তার সহকর্মী সেনানায়করা তাকে ভুলেননি, চিকিৎসা-সম্মান সবই দিয়েছেন, কিন্তু রাষ্ট্র কি যথাযথ সম্মান দিয়েছে? এই প্রশ্ন ওঠতেই পারে যদিও কর্নেল জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম এখন সব আলোচনার ঊর্ধ্বে ওঠে স্থায়ী জীবনে চলে গেছেন।

 

অনন্ত লড়াই

২০ আগস্ট, ১৯৭২ সালে ‘হলিডে’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন গর্ব’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও তৎকালীন ৪৬ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম এই লেখাটিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হতাশাজনক অবস্থার কথা তুলে ধরেছিলেন। তিনি দেখছিলেন- এই জাতির অবস্থা ছিল খারাপ, যে জাতির মুক্তির জন্য তারা লড়াই করেছিল এবং রক্ত দিয়েছিল। তিনি তখনকার সরকারকে ২৫ বছরের গোপন চুক্তিতে কী ছিল- তা জনগণকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন, ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশ তার বৃহৎ প্রতিবেশীর আধিপত্যের কাছে নিজেকে এক ধরনের পরাধীন করে তুলছে।

কর্নেল জিয়া ‘হিডেন প্রাইজ’ একটি নিবন্ধও লিখেন। হলিডেতে এই লেখা ছাপানোর পরে চার দিকে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। ‘হিডেন প্রাইজ’-এ কর্নেল জিয়াউদ্দিন লিখেন, ‘আজ আমি মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ করে এবং সাধারণভাবে জনগণকে এমন কিছু জানাতে চাই, যা আমার মনে হয়, তাদের কারণেই হয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা অত্যন্ত স্বার্থপর উদ্দেশ্যে তা গোপন রেখেছে। এই স্বাধীনতা এই দেশের জনগণের জন্য এক যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনি জীবনের যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেখতে পাবেন উদ্দেশ্যহীন, আত্মাহীন, প্রাণহীন মুখগুলো। সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘নতুন চেতনা’ জনগণকে বহন করে এবং দেশ শূন্য থেকে নিজেকে গড়ে তোলে। কারণ সবার জীবন তখন এক একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে এবং তারা নির্ভীকভাবে এর মুখোমুখি হয়। আজ বাংলাদেশের গল্পটি একেবারে বিপরীত। সমগ্র বাংলাদেশ হয় ভিক্ষা করছে অথবা দুঃখের গান গাইছে অথবা অসচেতনভাবে চিৎকার করছে।’

Waker

তিনি আরো লিখেন, ‘সমগ্র দেশকে নিম্নলিখিতভাবে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন অংশে বিভক্ত করা যেতে পারে : ক. বুদ্ধিজীবীরা ‘চুল কচলাতে’ ব্যস্ত; খ. যারা একটু পড়েছেন তারা আত্ম-ধ্বংসাত্মক সমালোচনায় নিমগ্ন। তাদের অবশ্যই এমন কাউকে থাকতে হবে যাকে ‘প্রতিদিন দোষারোপ করা যায়, অফিসে বা বাড়িতে।’ গ. যাদের সামান্য টাকা আছে তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চটা কাজে লাগাচ্ছেন, কিন্তু তারাও অস্থির বোধ করছে। ঘ. যারা প্রশাসনে আছেন তারা এমন একটি অপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চালানোর চেষ্টা করছেন, যা ‘অগ্রগতি’কে আটকে রাখছে। ঙ. যারা ক্ষমতায় আছেন তারা ইতোমধ্যেই জাতীয় সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করেছেন এবং জাতির পুরস্কার রক্ষায় ব্যস্ত আছেন। ক্ষুধার্ত ও দরিদ্ররা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে এবং তারা ভিক্ষা করছে। বাংলাদেশের তথাকথিত বন্ধুরা ‘সহানুভূতি প্রদর্শন করছে এবং তাদের জন্য খারাপ পরিণতির সন্ধান করছে।’

কর্নেল জিয়াউদ্দিন এটি লিখেছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায়। ঢাকার ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার থাকাবস্থায় তার এই লেখা পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সব মহলে কর্নেল জিয়াউদ্দিনের সেই লেখা রীতিমতো ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। প্রধানমন্ত্রী তাকে ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি ক্ষমা চাননি। তাকে ১৯৭৪ সালে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি চলে যান আন্ডারগ্রাউন্ডে, যোগ দেন সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিতে। নিজের চাকরির পরোয়া না করে কর্নেল জিয়াউদ্দিনের মতো আর কেউ সে সময় ভারতের সাথে গোলামি চুক্তির বিরোধিতা করার হিম্মত দেখাতে পারেননি।

১৯৭১ সালে জাতির ক্রান্তিকালে তিনি তার দায়িত্ব যেমন পালন করেছেন, তেমনি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতেও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বছরের পর বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়। অত্যন্ত সততা ও সফলতার সাথে তিনি সে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে তিনি সিডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। শেষ জীবনে তিনি সেনাবাহিনীসহ সবার শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে অন্তত তার দেশপ্রেমের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তবে তিনি কখনোই আত্মপ্রচার করতেন না। মুক্তিযুদ্ধকে পণ্য বানিয়ে সুবিধাও নিতেন না।

ক্যারিয়ারের শুরু, ’৬৫ ও মুক্তিযুদ্ধ

কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার সন্তান লে. কর্নেল মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম সারগোদার পিএএফ স্কুল থেকে সিনিয়র ক্যামরিজ পাস করে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির ২৫তম পিএমএ লংকোর্সে যোগদান করেন। ট্রেনিং শেষ করে কমিশন পান প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন এবং লাহোর রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবেও কাজ করেন। খুব কম সংখ্যক পূর্ব পাকিস্তানি অফিসার পিএমএর প্লাটুন কমান্ডার হতে পেরেছিলেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন এমন আরেক জন।

১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই মেজর মঞ্জুর (পরিবারসহ), মেজর তাহের ও ক্যাপ্টেন পাটোয়ারিসহ অ্যাবোটাবাদ সেনানিবাস থেকে রাতের অন্ধকারে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ভক্সওয়াগন নিয়ে শিয়ালকোট হয়ে ভারতে পালিয়ে যান কর্নেল জিয়াউদ্দিন। ২৭ জুলাই এই দলটি দিল্লি পৌঁছায়। ৭ আগস্ট কলকাতায় পৌঁছান মেজর জিয়াউদ্দিনসহ বাকিরা। এরপর তাকে জেড ফোর্সের অধীনে থাকা প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তেলঢালা থেকে জেড ফোর্সের হেডকোয়ার্টার সরিয়ে সিলেট রণাঙ্গনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ৪ অক্টোবর থেকে জেড ফোর্সের অধীনে থাকা বাহিনীগুলো সিলেটের দিকে যাত্রা শুরু করে। এরপর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে চা-বাগানগুলোর ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালানো হয়। মেজর জিয়াউদ্দিনের পরিকল্পনা ছিল চা-বাগানগুলো মুক্ত করে সিলেটের দিকে অগ্রসর হওয়া।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ধলই বিওপির যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ধলই বিওপির অবস্থান ছিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায়। ১৪ অক্টোবর প্রথম ইস্ট বেঙ্গলকে খাজুরি চা-বাগানে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর রেইড করতে পাঠান মেজর জিয়াউদ্দিন। ধলই বিওপি আক্রমণের আগে প্রথম ইস্ট বেঙ্গলের কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন মিত্রবাহিনীর ৬১ মাউন্টেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এসডিএস যাদব ও জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে ঠিক হয়, ২৬ অক্টোবর হবে ধলই বিওপিতে আক্রমণ। ঠিক হয় ধলই বিওপি আক্রমণ করবে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। আর তাদের সাহায্য করবে ভারতীয় ৬১ মাউন্টেন ব্রিগেড।

জেড ফোর্স কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ২৮ অক্টোবর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। ২৭ অক্টোবর আক্রমণের প্রস্তুতি দেখতে আসেন কর্নেল ওসমানী। এরপর সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং শেষে ধলই বিওপি দখলের সব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন মেজর জিয়াউদ্দিন।

২৮ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৩টায় এসল্ট ফরমেশনে যাওয়ার আগেই সুবেদার আবুল হাসেম এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরীর প্লাটুনের অবস্থান টের পেয়ে পাকিস্তানিরা আক্রমণ শুরু করে। এরপর ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী ফায়ার অ্যান্ড মুভ পদ্ধতিতে অগ্রসর হন। একদম কাছাকাছি চলে এলে পাকিস্তানিদের গুলিতে আহত হন তিনি। সুবেদার হাশেমের প্লাটুনটিও তেমন এগোতে পারেনি। টিলার ওপর থাকা একটি এলএমজির জন্য প্লাটুনটি এগিয়ে যেতে পারছিল না। হতাহতের সংখ্যা তখন আরো বাড়তে থাকে। বিষয়টি ডেপথ প্লাটুনকে জানালে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম একটি সুইসাইড ডিটাচমেন্ট পাঠান। এই সুইসাইড ডিটাচমেন্টে ছিলেন সিপাহি হামিদুর রহমান। এলএমজি পোস্ট ধ্বংসের জন্য ক্রলিং করে এগিয়ে তিনি বাঙ্কার লক্ষ করে গ্রেনেড ছুড়লে এলএমজি বিস্ফোরিত হয়। অন্য এলএমজির গুলি লেগে শহীদ হন সিপাহি হামিদুর রহমান। শেষ পর্যন্ত প্রচুর হতাহত হওয়ায় মোহনপুরের ক্যাম্পে ফিরে আসার নির্দেশ দেন মেজর জিয়াউদ্দিন।

মুক্তিযুদ্ধের ১৩ ডিসেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ যুদ্ধের অগ্রভাগে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও যৌথবাহিনী সিলেটের সদর দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানি বাহিনী। ১৭ ডিসেম্বর বেলা ৩টায় পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে সিলেটে।

১৯৭২ সালে ঢাকার ৪৬ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হন জিয়াউদ্দিন। তিনি ছিলেন ওই ব্রিগেডের দ্বিতীয় কমান্ডার, তার আগে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন কে এম শফিউল্লাহ। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউদ্দিন তাকে গার্ড অফ অনার দেন। তিনি ভারতের সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তির সমালোচনা করে ছুটির দিনে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে ১৯৭৪ সালে তাকে বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তিনি পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে সাধারণ ক্ষমার অধীনে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ১৯৯৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সাহসের পরীক্ষা

ইতিহাস প্রায়শই যুদ্ধক্ষেত্রে নয়; বরং শান্ত মুহূর্তগুলোতে মানুষের সাহস পরীক্ষা করে, যখন সত্য কথা বলতে হয়। কেউ কেউ হয়তো জিয়াউদ্দিনকে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দোষারোপ করতে পারেন, তবুও ইতিহাস তাকে বিরল সততার দেশপ্রেমিক হিসেবে স্মরণ করবে-যিনি সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেছিলেন, ক্ষমতার সামনে অটল ছিলেন এবং আরামের চেয়ে সম্মানকে বেছে নিয়েছিলেন।

তার সমসাময়িক অফিসাররা তার নীতিবান মনের জন্য তার প্রশংসা করতেন। জেনারেল ওসমানী তাকে দালাইলামা বলতেন। প্রতিটি অর্থেই একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক জিয়াউদ্দিন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি জেড ফোর্সের অধীনে পূর্ব বাংলার কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই একই ব্যাটালিয়নে যেখানে তিনি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতের জাতীয় স্বার্থবিরোধী গোপন চুক্তির প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।

কর্নেল জিয়াউদ্দিনের দেখানো প্রতিরোধের পথে ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবে তরুণরা এগিয়ে যায়। ব্যক্তির চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখে যে কঠিন জীবনকে তিনি বরণ করেছিলেন, সেই কঠিন পথে লড়াই করে ’২৪-এর তরুণ যোদ্ধারা জয় ছিনিয়ে এনেছেন। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছেন।

ব্যক্তি ও মানুষ হিসেবে জিয়াউদ্দিন ছিলেন অনন্য। পারিবারিক পরিবেশে অনেকবার কথা বলার সুযোগ হয়েছে তার সাথে। শেষবার অসুস্থ মাকে দেখতে চট্টগ্রাম গেলে জিয়াউদ্দিন ভাইকে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু একেবারে অল্প সময়ের ওই সফরে আমি জিয়া ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে পারিনি। কিন্তু আমাদের একই ট্রেনে যাওয়া ফটো সাংবাদিক সহকর্মী এ কে এম মহসিন ভাই তার এককালের নেতা ও সহযোদ্ধাকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ লাভ করেন। কর্নেল জিয়াউদ্দিন ছিলেন পুরো পরিবারের জন্য ছাতার মতো। তার ছয় ভাইয়ের বড় পরিবারের সব ছেলেমেয়ে বড় চাচাকে হারিয়ে এক শূন্যতার মুখে পড়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্সি স্কুলের ছেলেমেয়েদের মধ্যেই ক্যান্সার আক্রান্ত কর্নেল জিয়াউদ্দিন নিজের জন্য শান্তি সুখ ও স্বস্তি অনুভব করতেন। তার বিদায়ে বাংলাদেশ তার গৌরবোজ্জ্বল এক সন্তানকে হারাল।