Image description
আলী আহমাদ মাবরুর
 

জায়নবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইল কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেনি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ধারণা, ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং এ অস্ত্রের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলের এ ভয়াবহ গোপন তথ্য নিয়ে কখনোই উদ্বেগ প্রকাশ করে না। অপরদিকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার পরেও ইরানকে শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমা মিত্ররা উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। অথচ এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিহাসজনক ঘটনা।

গত ১৩ জুন ইসরাইল কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানে হামলা চালায়। এ হামলার লক্ষ্য ছিল শুধু তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা নয়, বরং ইরানের বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো। এ সংঘাতের সূচনা করে ইসরাইল। একদম বিনা উস্কানিতে ঘুমন্ত তেহরানের ওপর ইসরাইল যে ভয়াবহ হামলা চালায় তাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন দু’ডজনেরও বেশি পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং বিশজনের বেশি উচ্চপদস্থ সামরিক কমান্ডার। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধানও। ইরান এ হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেÑইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুঁড়েছে যার অনেকগুলোই জায়োনিস্ট রাষ্ট্রের বহুল প্রচারিত ও অহংকারের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাভেদ করে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরাইল বহুদিন ধরেই পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ধারণা করা হয়। যদিও তারা কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেনি এবং কৌশলে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি বা নন-প্রোলিফিরেশন ট্রিটি তথা এনপিটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্র বলা হয় ডিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্র যা নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত। বিশ্লেষকরা অনুমান করেন ইসরাইলের হাতে ৮০ থেকে ২০০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র আছে। এ স্পর্শকাতর বিষয়টি ইসরাইল কখনোই স্পষ্টভাবে স্বীকার বা অস্বীকার করে না। অথচ এতটা লুকোচুরি করার পরও পশ্চিমা কোনো দেশই ইসরাইল নিয়ে শংকা প্রকাশ করে না। উল্টো পরিহাসজনকভাবে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে চায়। অথচ ইরান এমন একটি দেশ যা এনপিটি চুক্তিতে ঠিকই স্বাক্ষর করেছে এবং চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল বা আইএইএ’র কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে আসছে।

ইসরাইলের এমন দ্বিমুখী আচরণ নতুন কিছু নয়। তারা নিজেরা পারমাণবিক বোমা বা অস্ত্র বানালেও প্রতিবেশি কোনো দেশের পারমাণবিক কার্যক্রম বরদাশত করে না। এ কারণে ১৯৮১ সালে ইসরাইল ইরাকের এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ার পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে দিয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থেকেছে। ইসরাইলকে শাস্তি দেয়নি বা ভবিষ্যতের আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইসরাইলের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সিমুর হার্শ।

১৯৯১ সালে প্রকাশিত বই দ্য সামসন অপশন-এ তিনি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন কিভাবে ইসরাইল ১৯৫০ এর দশক থেকে একটি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তুলেছিল, যার ওপর খুব কম নজরদারি ছিল। কেউই তাদেরকে কিছু বলেনি। কেবল ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে জন এফ. কেনেডি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইসরাইলকে কিছুটা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পেরেছিলেন। কেননা, ১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা ও এয়ার অবজারভেশনের মাধ্যমে ইসরাইলের দিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্র আবিষ্কার করে। ইসরাইল প্রথমে বলেছিল এটি একটি বস্ত্র কারখানা, পরে এটিকে গবেষণাগার হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য উম্মোচিত হয়েই যায়। পারমাণবিক বিস্তাররোধে দৃঢ় বিরোধী কেনেডি ইসরাইলের এ গোপন পারমাণবিক কার্যক্রমকে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করেছিলেন।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট কেনেডি দিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্রে নিয়মিত মার্কিন পরিদর্শনের দাবি জানান এবং তখনকার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়নকে এ বিষয়ে তিনি একাধিক চিঠিও প্রেরণ করেন। ১৯৬৩ সালের এপ্রিল মাসে কেনেডি হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি ইসরাইল এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার পরিচয় না দেয় তাহলে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। এর কিছুদিন পর বেনগুরিয়ন আচমকাই পদত্যাগ করেন এবং তিনি কেনেডির প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। বেনগুরিয়নের পর প্রধানমন্ত্রী হন লেভি এস্কোল। তিনিও দিমোনায় পরিদর্শনের বিষয়টি নানা অজুহাতে দেরি করেন এবং এরপর পরিদর্শন করতে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কখনোই পুরোপুরি পরিদর্শন করার সুযোগ দেননি।

কেনেডি এবং তার যুগের একজন বিশিষ্ট আমেরিকান ইতিহাসবিদ মার্টিন স্যান্ডলার দীর্ঘ পর্যালোচনার পর বলেছেন, কেনেডি হত্যাকাণ্ডে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত থাকতে পারে। আর মোসাদ এ হত্যাটি সংঘটিত করেছিল যাতে ইসরাইলকে পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে আর চাপ না দেয়া হয়। কেনেডির মৃত্যুর পরে। তাঁর উত্তরসূরী লিন্ডন বি. জনসন ইসরাইলের প্রতি নমনীয় হন এবং ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচিও বিনা বাধায় চালিয়ে নেয়ার অনুমতি প্রদান করেন। এরপর থেকে ইসরাইল নির্বিগ্নেই পারমাণবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছে।

ইসরাইল কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ঘোষণা করেনি। তবে ইসরাইলের হাতে যে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড রয়েছে এর স্বপক্ষে প্রচুর প্রমাণও পাওয়া গেছে। সবচেয়ে নিশ্চিত প্রমাণ আসে ১৯৮৬ সালে, যখন ইসরাইলের পারমাণবিক প্রযুক্তিবিদ মরদেশাই ভানুনু ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচির ছবি ও প্রযুক্তিগত তথ্য ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমস-এর কাছে ফাঁস করে দেন। বিশেষজ্ঞরা ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে জেনে যান যে, ইসরাইলের কাছে অন্তত ১০০টি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র ছিল। এর পাশাপাশি গোয়েন্দা রিপোর্ট, স্যাটেলাইট চিত্র এবং হুইসেলব্লোয়ারদের বর্ণনা পাওয়া যায় যা ইসরাইলের পারমাণবিক সক্ষমতাকে নিশ্চিত করে।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল উভয়েই প্রকাশ্যে ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিশ্লেষকরা ধারণা করেন, বর্তমানে ইসরাইলের কাছে ১০০ থেকে ৪০০ পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। তারপরও, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কখনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ১৯৯৫ সালে যখন পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি এনপিটি প্রবর্তিত হয়, তখন মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এমনকি মিসরও এসে যুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইসরাইলও এ চুক্তিতে যোগ দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইসরাইল এ চুক্তিতে যোগ দেয়নি এবং সে জন্য তাদের ওপর কোনো চাপও প্রয়োগ করা হয়নি।

১৯৭৪ সাল থেকে ইরান, মিসর এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার দাবি করে আসছে। চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনও এ বিষয়টি বারবার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। ইরানও জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এনপিটিতে স্বাক্ষর করেছে কিন্তু ইসরাইল বরাবরই এ বিষয়টি উপেক্ষা বা প্রত্যাখ্যান করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তি বা এনপিটি স্বাক্ষরকারী হিসেবে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকতে হয়। তবে চুক্তিতে থাকলেও এর আলোকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার অধিকার দেশটির আছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা শতাধিকবার পরিদর্শন করেছে কিন্তু কোনোবারই তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। ২০১৫ সালে ইরান ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে যৌথ সার্বিক কর্মপরিকল্পনা বা জেসিপিওএ স্বাক্ষর করে, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করার, পারমাণবিক মজুদ হ্রাস করার এবং কঠোর পরিদর্শন স্বীকার করার অঙ্গীকার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, জেসিপিওএ’র ফলশ্রুতিতেই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম অনেকটা নিয়ন্ত্রিতও হয়েছিল।

ইসরাইল ১৯৯৫ সাল থেকেই দাবি করছে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে আছে। অথচ এরপর ৩০ বছর চলে গেছে এবং এখনো পর্যন্ত ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো অস্তিত্বের প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। ২০১৮ সালে মোসাদ কর্তৃক প্রাপ্ত “অ্যাটমিক আর্কাইভ” থেকেও ইরানের সক্রিয় অস্ত্র কর্মসূচির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০০৩ সাল থেকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো চূড়ান্ত অভিমত জানিয়ে দেয় যে, ইরান ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করেছে এবং এরপর থেকে কখনোই এ প্রকল্প আর শুরু করেনি। ২০২৫ সালের মার্চ মাসেও বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে নিয়োগ পাওয়া মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড নিশ্চিত করেছেন যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বিরোধী নীতিটি প্রণীত হয়েছে ইরানের বাসিন্দাদের ধর্মীয় ও নৈতিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ২০০৩ সালে একটি লিখিত ফতওয়া জারি করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে, ইসলাম ধর্মে পারমাণবিক অস্ত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অত্যন্ত মর্মান্তিক সত্য হলো, ইসরাইল এনপিটির বাইরে থাকলেও গোপনভাবে পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বজায় রেখেছে এবং কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। অন্যদিকে ইরান স্বচ্ছতার সাথে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সহযোগিতা করার পরও নিয়মিতভাবে শাস্তি ও সামরিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। যদি ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতো, তাহলে এর ওপর হামলা হতো না। পশ্চিমা মোড়লদের এ দ্বিচারিতার কারণে এবং ইরানের পরিণতি দেখে আগামীতে ইরানসহ অনেক দেশই হয়তো নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার জন্য পারমাণবিক প্রকল্পের দিকে ঝুঁকে যাবে।

শুধুই অজুহাত দিয়ে কোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণ, আগ্রাসন, সে দেশের শাসকদের উচ্ছেদ করে দেশটিকে লুটপাটের ঘটনা ইসরাইল ও পশ্চিমা বিশ্বের এবারই প্রথম নয়। সম্প্রতি পুরনো একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার প্রাথমিক পরিকল্পনাও ছিল মূলত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের মূল অজুহাত ছিল “গণবিধ্বংসী অস্ত্র” বা উইপন অব ম্যাস ডেস্ট্রাকশন। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের দাবি ছিলÑসাদ্দাম হোসেনের হাতে রয়েছে রাসায়নিক, জৈব ও পরমাণু অস্ত্র; যা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি। কিন্তু সময় প্রমাণ করেছে, এসব অভিযোগ ছিল মিথ্যা, ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এক ভয়াবহ প্রতারণা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকা ও তার মিত্ররা, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও মানবাধিকারের প্রশ্নে কতটা দ্বিচারিতার আশ্রয় নেয়, তা নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমও তাদের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। Fox News, CNN, BBC, The New York Times প্রভৃতি সংবাদমাধ্যম একতরফাভাবে মার্কিন তথ্য প্রচার করে। তাদের কেউই এ তথাকথিত প্রমাণের সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন বোধ করেনি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরাক আক্রমণের পক্ষে কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করেনি। তবুও আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য “প্রিভেন্টিভ ওয়ার”-এর ধুয়ো তুলে জাতিসংঘের অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ চালায়। এটি ছিল আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন। এবার ইরানের ক্ষেত্রেও ইসরাইল একই কাজ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্ররা তা সমর্থনও করছে। কার্যত. পশ্চিমারা নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যায়, তারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থেই আইনের ব্যবহার করে। পশ্চিমাদের এ দ্বিচারিতার শিকার হয়ে অনেক দেশ এরই মধ্যে ধ্বংস হয়েছে, এ অপকৌশল অব্যাহত থাকলে হয়তো আগামীতেও অনেক দেশকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে হবে।