
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির সাবেক প্রধান নিকট অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় দেশে যে আইনের শাসন নেই, কথাটি যেমন ব্যক্ত করেছেন এর পাশাপাশি এটিও বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ হয় আর বাকি ৬০ শতাংশ নিয়ে দুর্নীতি হয়। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প ৪০ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে সম্পন্ন করা হলে তা কখনো টেকসই ও কাঙ্ক্ষিত মানের হবে না। এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ অর্থ স্রেফ জনগণ প্রদত্ত করের অর্থের অপচয়। আর তাই দেশের জনসাধারণের প্রশ্ন যে প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে দুর্নীতির অংশ বেশি এ ধরনের প্রকল্প কেনইবা গ্রহণ এবং কেনইবা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতিলব্ধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ প্রদান। আজ দেশের সর্বত্র দুর্নীতির যে বিস্তৃতি এর মূলে রয়েছে সরকার পরিচালনায় গণতান্ত্রিক শাসনের অনুপস্থিতি। গণতন্ত্রের এ ধরনের অনুপস্থিতি আইনের শাসন ও সুশাসনকে দুর্বল করে দেয়। আর আইনের শাসন ও সুশাসন দুর্বল অর্থ জবাবদিহিবিহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি শাসকশ্রেণী
একটি দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যখন সংবিধানে প্রদত্ত নির্দেশনা এবং প্রচলিত আইনানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন সাধারণ মানুষ সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। আমাদের সংবিধানের বিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সংবিধান ও আইন মেনে চলা অবশ্য-কর্তব্য। দেশে বিভিন্ন সাংবিধানিক ও সরকারি পদে যারা আসীন রয়েছেন; তাদের সবার বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাহ করা হয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা সাকুল্য অর্থ জনগণ প্রদত্ত কর হতে প্রাপ্ত। সাংবিধানিক ও সরকারি পদে কেউ চিরস্থায়ীভাবে আসীন থাকতে পারেন না। সাংবিধানিক ও সরকারি পদ থেকে বিদায় নেয়া পরবর্তী যেকোনো নাগরিক একজন সাধারণ মানুষ। সাংবিধানিক ও সরকারি পদধারীরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক কর্মচারীকে কর্মে বহাল থাকাকালীন জনগণকে নিঃস্বার্থ সেবা প্রদানে সচেষ্ট থাকতে হয়। সেবা প্রদানের কাজটি নাগরিকদের সংবিধান ও আইন মেনে চলার ন্যায় তাদের অবশ্য-কর্তব্য।
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, সরকারি কর্মকমিশনের সভাপতি ও সদস্য, মহা-হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এসব নিয়োগে সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইনে উল্লিখিত বিধানাবলি মেনে চলতে হয়। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে দলীয় মতাদর্শী অথবা দলীয় সুবিধাভোগী বিবেচনায় নিয়োগকাজ সম্পাদন করা হলে সেসব নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে সৎভাবে দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের সাধারণ মানুষ সবসময় রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ধরনের হয়রানি ও অবৈধ প্রাপ্তি ব্যতিরেকে নিঃস্বার্থ সেবা প্রত্যাশা করেন। এ নিঃস্বার্থ সেবাপ্রাপ্তিতে দেশের জনগণ বিফল হন না যখন বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। আমাদের দেশে নির্ধারিত মেয়াদান্তে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদ কিভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের বিধানানুযায়ী, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং অনুরূপ ৩০০ সদস্যের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত ৫০ মহিলা সদস্যসহ সর্বমোট ৩৫০ সদস্য সমন্বয়ে সংসদ গঠিত। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনটি অবলোকনে প্রতীয়মান হয়, প্রত্যক্ষ নির্বাচনে উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টির সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরূপ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা নির্বাচিত তারা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে নির্বাচিত নন এ প্রশ্নে বিতর্ক করার অবকাশ নেই বললে চলে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেখা গেল, যদিও বিএনপি ও এর অনুগামী দলগুলো নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল; কিন্তু ভোট গ্রহণের আগে বিএনপি ও অনুগামী দলের নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এতে দেখা গেল, বেশির ভাগ আসনে বিএনপি ও অনুগামী দলের কোনো এজেন্ট ছিল না। আর তাই একতরফাভাবে সরকারদলীয় সমর্থকরা বেশির ভাগ আসনে ভোট গ্রহণের আগের রাতে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করে তাদের আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করে।
২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত তার নিজ দলের প্রার্থী এবং নিজ দলের বিদ্রোহীদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে একটি সাজানো নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ এ তিনটি সংসদ নির্বাচনের কোনোটিতে বেশির ভাগ আসনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল শতকরা ৫ শতাংশেরও কম। কিন্তু সরকারের নির্দেশনায় নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্ফীত ভোটার উপস্থিতি দেখিয়ে ফল ঘোষণা করে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হলে সে নির্বাচন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক ও সরকারি পদে নিয়োজিত অনেকের অবৈধ সহায়তার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ধরনের অবৈধ সহায়তা নিয়ে যারা নির্বাচিত তাদের পক্ষে পরবর্তীতে অবৈধ সহায়তাকারীদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।
আইনের শাসনের অন্য নাম সুশাসন। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র একটি অন্যটির পরিপূরক। আইনের শাসন ও সুশাসন থাকলে দুর্নীতির সুযোগের ব্যাপক হারে হ্রাস ঘটে। আর আইনের শাসন ও সুশাসন না থাকলে দুর্নীতির মাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থপাচার বিষয়ে যে সংস্থাটি কাজ করে তার নাম গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি। সংস্থাটির তথ্য মতে, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থপাচার হয়েছে। এ বিপুল অর্থ যারা পাচার করেছেন তাদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলে দলীয় মতাদর্শী বিবেচনায় সুবিধাভোগী। যেকোনো রাজনৈতিক সরকার সচেষ্ট হলে দেশ থেকে অর্থপাচারের সাথে কারা সংশ্লিষ্ট তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া সম্ভব। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে, বিভিন্ন সময় দেখা গেছে রাজনৈতিক সরকার এবং দুর্নীতি নির্মূলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে অনীহ বা কালক্ষেপণের মাধ্যমে বিষয়টি এড়িয়ে চলার প্রবণতা লক্ষণীয়।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান ও জীবনযাপন ব্যয় বিবেচনায় সাংবিধানিক ও সরকারি পদে আসীন ব্যক্তিদের অষ্টম বেতনস্কেল ঘোষণা-পরবর্তী যে হারে বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি দেয়া হয়ে আসছে, তাতে যেকোনো পদধারীর মধ্যে দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ভাবনা জাগ্রত হওয়া অনুচিত। এ বেতনস্কেল বাস্তবায়ন-পরবর্তী সরকারের তৎকালীন শীর্ষ নির্বাহী গর্বভরে ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি যা পৃথিবীর কোনো দেশে সম্ভব হয়নি, কথাটি বললেও যাদের উদ্দেশে কথাটি তিনি বলেছিলেন; তারা কি তার যথার্থ মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছেন?
অতীতের সাংবিধানিক ও বর্তমানের সরকারি পদে আসীন ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ থেকে দেশের জনমানুষের অবৈধ প্রাপ্তির যোগ না থাকায় কাক্সিক্ষত সেবাপ্রাপ্তিতে বঞ্চিত হওয়া-পরবর্তী অনন্যোপায় হয়ে প্রাপ্তি যোগের বিনিময়ে সেবা নিচ্ছেন। বিষয়টি সবার জানা থাকলেও অবৈধভাবে দেয়া-নেয়া উভয়ই অপরাধ বিধায় যাদের অনেকটা বাধ্য হয়ে এ ধরনের অন্যায়ের সহযোগী হতে হয়, তারা নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে এসব বিষয়ে জনসম্মুুখে মুখ খুলতে অপারগ।
সাংবিধানিক পদে নির্বাচন ও নিয়োগ এবং সরকারি পদে নিয়োগে সংবিধান ও আইনের বিধিবিধান অনুসৃত হলে সৎ ও যোগ্যদের নির্বাচিত হওয়া ও নিয়োগ লাভ সম্ভব। এর ব্যত্যয়ে যারা নির্বাচিত হন ও নিয়োগ পান তাদের পক্ষে নীতিনৈতিকতা সমুন্নত রেখে ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সৎভাবে দায়িত্ব পালন দুরূহ।
আমাদের দেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু ও উড়াল সেতুর নির্মাণব্যয় ভারত, পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক বেশি। এসব কাজে প্রাথমিক যে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় তা দিয়ে কখনো কাজটি সম্পন্ন করা হয় না। কাজ শুরু-পরবর্তী মাঝপথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যয় বাড়ানোর পাঁয়তারায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে ব্যয় বৃদ্ধিকে যৌক্তিক করার প্রয়াস নেয়া হয়। সরকারের উন্নয়ন বাজেট থেকে এ সব কাজের ব্যয় নির্বাহ হয়। এসব কাজের যেকোনো অতিরিক্ত ব্যয় জনগণের প্রদত্ত করের অপব্যয়। এ ধরনের অপব্যয়ে কাজের গুণগতমান নিশ্চিতে সহায়ক না হয়ে; বরং অতিরিক্ত কাজের অনুমোদন এবং তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরাসহ ঠিকাদারের জন্য অবৈধ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করে। এযাবৎকাল পর্যন্ত দেশে বড় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এর কোনোটির ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, এ ধরনের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম ব্যয়ে সম্পন্ন করা হয়। আমাদের সাথে ওই সব দেশের পার্থক্য হলো সেখানে আইনের শাসন ও সুশাসন থাকায় প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহি রয়েছে যা দুর্নীতি রোধে ব্যাপকভাবে কার্যকর। আর আমাদের দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতায় জবাবদিহির যে অনুপস্থিতি তার ফলে সব পর্যায়ে দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী।
আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদরা সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করেন। এ সীমাহীন ক্ষমতার জন্য তারা কোনো ধরনের দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও সেটি আমলে নেয়া হয় না। রাজনীতিবিদদের এ সীমাহীন ক্ষমতার কারণে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অবৈধভাবে বিত্তবৈভবের বলয় বৃদ্ধির উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আমাদের দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, উদ্যোক্তা পরিচালকরা যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন; এসব ব্যাংক থেকে তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ বিনিয়োগকৃত অর্থের ৮-১০ গুণ বেশি। এসব বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা ব্যাংকের সামগ্রিক জমাকৃত অর্থের আড়াই শতাংশের মালিক হয়ে কী করে ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত তা ব্যাংকগুলোর সাধারণ গ্রাহক যারা সামগ্রিক জমাকৃত অর্থের সাড়ে ৯৭ শতাংশের মালিক তাদের ভাবিয়ে তোলে। দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ তথ্যে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট যেসব বড় ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছেন এদের প্রত্যেকের দেশে যে সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তাদের ঋণের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। এসব ব্যবসায়ী ঋণের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে অর্থ উত্তোলন করেন এর একটি অংশ তারা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে তথায় নিজ ও পরিবারের জন্য সুখের নীড় গড়ে তোলেন যা ক্ষমতার পালাবদলে তাদের সাময়িক প্রশান্তির আশ্রয়স্থল।
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির সাবেক প্রধান নিকট অতীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় দেশে যে আইনের শাসন নেই, কথাটি যেমন ব্যক্ত করেছেন এর পাশাপাশি এটিও বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের ৪০ শতাংশ কাজ হয় আর বাকি ৬০ শতাংশ নিয়ে দুর্নীতি হয়। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প ৪০ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ দিয়ে সম্পন্ন করা হলে তা কখনো টেকসই ও কাঙ্ক্ষিত মানের হবে না। এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ অর্থ স্রেফ জনগণ প্রদত্ত করের অর্থের অপচয়। আর তাই দেশের জনসাধারণের প্রশ্ন যে প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে দুর্নীতির অংশ বেশি এ ধরনের প্রকল্প কেনইবা গ্রহণ এবং কেনইবা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতিলব্ধ অর্থ উপার্জনের সুযোগ প্রদান। আজ দেশের সর্বত্র দুর্নীতির যে বিস্তৃতি এর মূলে রয়েছে সরকার পরিচালনায় গণতান্ত্রিক শাসনের অনুপস্থিতি। গণতন্ত্রের এ ধরনের অনুপস্থিতি আইনের শাসন ও সুশাসনকে দুর্বল করে দেয়। আর আইনের শাসন ও সুশাসন দুর্বল অর্থ জবাবদিহিবিহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি শাসকশ্রেণী।
বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর আগের ধারাবাহিকতায় প্রকল্পগুলোর কাজ বিদ্যমান। তবে ক্ষেত্রবিশেষে নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান ও নতুন প্রকল্পে দুর্নীতি যে একেবারে নেই, এ কথা বলার অবকাশ সম্ভবত সৃষ্টি করতে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পারেনি। আর তাই কথাটি বলা যায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন পেতে অবশ্যই দুর্নীতির সম্পূর্ণরূপে নির্মূল অপরিহার্য।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক