Image description

গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে পরিমাণ অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ে তার চেয়ে আমদানি হয়েছে এক লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে সয়াবিন আমদানি বেশি হয়েছে আবার তিন লাখ টন। রোজার আগে গত বছর সয়াবিন তেলের এত সংকট ছিল না, এবার বোতলজাত সয়াবিন তেল রীতিমতো উধাও। খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মোতাবেক, দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পরিশোধিত ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। পরিশোধিত এসব তেলের চাহিদা মেটাতে ৩০ লাখ টনের মতো অপরিশোধিত (ক্রুড) তেল আমদানি করা হয়। পাশাপাশি দেশেও তিন লাখ টনের মতো সয়াবিনের উৎপাদন হয় বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অর্থবছর শেষ হতে এখনো বাকি প্রায় পাঁচ মাস। আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করলে সহজেই বলা যায় সংকটের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহে সংকট ও রোজায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা নিয়ে গত ৯ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি দুই দফা ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রথম বৈঠকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই বলে জানান। তথ্য দেন আগের চেয়ে এখন বাজারে সরবরাহ বেশি।

তেল সরবরাহকারীরা বলছেন, সংকট নেই

বৈঠকে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী জানান, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিম ওই সভায় জানান, টিকে গ্রুপ আগের বছরের তুলনায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ ২৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১১ হাজার ৮১০ টন তেল সরবরাহ দিয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৯ হাজার ৫শ টন।

আর কত আমদানি হলে বাজারে সয়াবিন তেল মিলবে?

এর এক সপ্তাহ বাদে রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আবারও তেল সরবরাহকারীদের ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এবার কিছুটা সুর পাল্টিয়ে সংকটের কথা বলে কোম্পানিগুলো। রমজান মাস উপলক্ষে ভোজ্যতেলের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবহিত, মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মতবিনিময় সভায় টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলেন, তেল সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন হয়েছে। কারণ সরকার এর আগে মূল্য কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, এজন্য কিছু কমানো হয়।

বাজারে কোনো সয়াবিন তেল নেই। ডিলাররা কোনো তেল সরবরাহ দিচ্ছে না। এক সপ্তাহ ধরে আমরা বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। ৫ লিটারের বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা রয়েছে। এখন একশ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।-দোকানি মো. ইমন

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে সয়াবিন আসতে ৫০-৬০ দিন ও পাম তেল ১০-১২ দিন সময় লাগে। বর্তমানে সবাই গতানুগতিক সরবরাহ করছে। এমনকি সরকারি দরের চেয়ে ১৫ টাকা কম দামে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে। রোজা উপলক্ষে টিকে দ্বিগুণ এলসি করেছে। সেপ্টেম্বরের এলসি অক্টোবরে করা হয়েছে। এসব পণ্য ডিসেম্বরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ব্রাজিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা দেরি হয়েছে।

সরেজমিনে বাজারে গিয়ে মিলছে না তেল

যদিও তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সারাদিন চট্টগ্রাম মহানগরীর বড় ও ব্যস্ত বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, রিয়াজ উদ্দিন বাজারের অন্তত ৪০টির মতো দোকান ঘুরে মাত্র তিনটি মুদি দোকানে মিলেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। পাইকারি বাজারের মুদি পণ্য বিক্রেতা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এক সপ্তাহ ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। তবে খোলা তেল পাওয়া যাচ্ছে।

আর কত আমদানি হলে বাজারে সয়াবিন তেল মিলবে?

এর মধ্যে নতুন চাক্তাই মোড়ের একটি দোকানে পুষ্টি ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল দেখা যায়। মেসার্স নুরে মদিনা নামে মুদি দোকানটিতে ৫ লিটার বোতলের ওই সয়াবিন তেলের দাম দাবি করা হয় ৯৫০ টাকা। গ্রাহক সেজে দামের বিষয়ে জানতে চাইলে দোকান মালিকের ছেলে মো. ইমন বলেন, ‘বাজারে কোনো সয়াবিন তেল নেই। ডিলাররা কোনো তেল সরবরাহ দিচ্ছে না। এক সপ্তাহ ধরে আমরা বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। ৫ লিটারের ওই বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা রয়েছে। এখন একশ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ এসময় এক লিটার বোতলের সয়াবিনের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক লিটার ১৯০ টাকা।’

নুরে মদিনা নামের দোকানটির বিপরীতে মেসার্স এস আর ট্রেডিং নামে মুদি দোকানে দুই লিটারের ‘রূপচাঁদা’ ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। দোকানের ক্যাশে বসা ব্যক্তি বলেন, ‘দুই লিটার ৩৬০ টাকা’। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে ওই দোকানি বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলই নেই। দাম বেশি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।’

৩৩২ নতুন চাক্তাই ঠিকানায় পাওয়া যায়, ‘মেসার্স এস অ্যান্ড এস ব্রাদার্স’ নামে পুষ্টি ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের ডিলার এজেন্টের অফিস কাম গুদাম। গ্রাহক সেজে কথা হলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. রফিক বলেন, ‘এখন সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। কোম্পানি থেকে তেল দেওয়া হচ্ছে না। দু-তিনদিন পরে দেবে বলেছেন। তখন এসে দেখা করেন।’ প্রতিষ্ঠানটির ভিজিটিং কার্ড কিংবা ফোন নম্বর চাইলেও অপারগতা প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

চাক্তাই ভাঙাপুল এলাকার মেসার্স হক ব্রাদার্সের মো. নাছির বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে ডিলাররা বোতলজাত কোনো সয়াবিন তেল দিচ্ছে না।’ চাক্তাই রাজাখালী রোডের মেসার্স মাওলানা বশির আহমদ সওদাগর নামের দোকানের লোকজন বলেন, ‘বোতল সয়াবিন নেই। খোলা সয়াবিন আছে, প্রতি কেজি ১৯২ টাকা।’

অথচ সরকার নির্ধারিত সবশেষ মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের মুদি ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার বোতলজাত তেলকে ৯শ গ্রাম হিসেবে তুলনা করেন। এতে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিনের দাম পড়ে ১৭৪ টাকা ৪৫ পয়সা। তাতে খোলা সয়াবিন বিক্রিতেও প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেশি দাবি করছেন দোকানিরা।

পরে রিয়াজউদ্দিন বাজারের অন্তত ২০টি দোকান ঘুরে কোথাও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামের শীর্ষ ওই বাজারের ডিম গলির মেসার্স শাহ ট্রেডার্স এবং মেসার্স নবী স্টোরে জানতে চাইলে, সয়াবিন তেল নেই বলে জানান।

গত বছরের চেয়ে আমদানি বেশি

বাজারে ভোজ্যতেলের বিশেষ করে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট প্রকট হলেও চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের এ পর্যন্ত আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছি। এটাই আমার বক্তব্য।- টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার

ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েল প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সব ধরনের রান্নায় সয়াবিন তেলের ব্যবহার বেশি। দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডে পাঁচটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় রয়েছে। ‘রূপচাঁদা’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বাজারজাত করে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, ‘তীর’ ও ‘সান’ ব্র্যান্ড বাজারজাত করে সিটি গ্রুপ, ‘ফ্রেশ’ ব্র্যান্ডের বাজারজাত করে মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ বাজারজাত করে ‘পুষ্টি’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল। পাশাপাশি বিগত কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরা এবং আবুল খায়ের গ্রুপ ভোজ্যতেলের বাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা মাল্টিফুড প্রোডাক্টস ‘বসুন্ধরা’ ব্র্যান্ড এবং আবুল খায়ের গ্রুপের স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস ‘স্টার শিপ’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বাজারজাত করছে। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আর ভোজ্যতেল আমদানি করতে পারেনি দেশের আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলম।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০-২০২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হয়েছিল ২১ লাখ ৭০ হাজার ৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন সয়াবিন এবং ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫১ মেট্রিক টন পাম অয়েল রয়েছে।

চলতি অর্থবছর (২০২৪-২৫) একই সময়ে ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে ২২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৮৬ টন পাম অয়েল এবং ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন সয়াবিন তেল রয়েছে।

আর কত আমদানি হলে বাজারে সয়াবিন তেল মিলবে?

কোন কোম্পানির কত আমদানি

আমদানি করা খালাস হওয়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মধ্যে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও তাদের আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সুন শিং এডিবল অয়েল লিমিটেড মিলে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৪২ টন, টিকে গ্রুপের বে-ফিশিং করপোরেশন লিমিটেড, শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড মিলে ৩ লাখ ৩ হাজার ৪ টন, বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস ৪৭ হাজার ৮শ টন, সিটি গ্রুপের সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড এবং ভুট অয়েল রিফাইনার্স লিমিটেড মিলে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮০ টন, এস আলম গ্রুপের এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড মিলে ৪৭ হাজার ৬৩৬ টন, আবুল খায়ের গ্রুপের স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ৩২ হাজার ৩৬২ টন, সেনা এডিবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ ৬ হাজার ৬৪৬ টন এবং মেঘনা গ্রুপের সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেড ৫২ হাজার ৫১৫ টন অপরিশোধিত সয়াবিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নিয়েছে।

চলতি ক্যালেন্ডার বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপরিশোধিত সয়াবিন তেল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৬১৬ টন।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করা পাঁচটি জাহাজ থেকে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল খালাস হচ্ছে। এসব জাহাজে ২ লাখ ৬৭ হাজার টনের বেশি ক্রুড অয়েল ছিল। এর মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত পরপর চারদিন চারটি জাহাজ আসে। ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ‘এমভি ম্যাস্ট্রাস’ জাহাজটি আমেরিকা থেকে ৫২ হাজার ৫৫৭ মেট্রিক টন সয়াবিন নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ২৮ জানুয়ারি ব্রাজিল থেকে ৫০ হাজার ৯২৭ টন অপরিশোধিত সয়াবিন নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ‘এমভি ওশান আজুরি’। ২৯ জানুয়ারি কানাডা থেকে ৬০ হাজার ৪শ টন ক্রুড নিয়ে আসে ‘এমভি একুয়াভিটা লাইম’ নামের জাহাজটি। ৩০ জানুয়ারি আমেরিকা থেকে ৫৬ হাজার ৭ টন সয়াবিন ক্রুড নিয়ে আসে ‘এমভি এমারিলিস’। সবশেষ ১২ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিল থেকে ৪৭ হাজার ৫শ টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল নিয়ে আসে ‘ইএস ওয়ারিয়র’ নামের জাহাজটি।

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের সময় দেশের খোলাবাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১৬৭ টাকা। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার আসার চার মাস পর ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয় ওই দাম।

বর্ধিত দাম প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। খোলা পাম তেলের দামও লিটার ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১৫৭ টাকা। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বৈঠকে অংশ নেন ভোজ্যতেল প্রস্তুতকারক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার।

মোস্তফা হায়দার দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ টিকে গ্রুপের পরিচালক, তাদের কয়েকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। ভোজ্যতেলের বাজারের বড় অংশীদার টিকে গ্রুপ।

বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট নিয়ে জানতে চাইলে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মোস্তফা হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছি। এটাই আমার বক্তব্য।’ এসময় সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে বাজারে কেন বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই বিবৃতির কথা উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিবৃতিই সরবরাহকারীদের বক্তব্য

১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি ভোজ্যতেল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখেই বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় তাদের সংগঠনে যুক্ত প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময়ের থেকে বেশি সরবরাহ করছে। ভোজ্যতেলের সরবরাহের পরিমাণ বিবেচনায় সংকটের কোনো সুযোগ নেই।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘রমজানে বর্ধিত চাহিদা বিবেচনা করে কিছু ব্যবসায়ীর মজুতের প্রবণতা থেকে যদি সংকট হয়, তা অচিরেই কেটে যাবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় অস্বাভাবিক মুনাফার সুযোগ নেই। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ভোজ্যতেল আমদানি করেছে, যা আগামী ৭-১০ দিনের ভিতরে বাজারে প্রবেশ করবে।’