|
অপু তানভীর
|
|
গল্পঃ অচেনা আগন্তুক (এপিসোড ফোর)অপ
12 November 2014, Wednesday
দেশের ছোট বড় প্রত্যেকটা দৈনিক কেবল একটা শিরোনাম ছাপা হয়েছে আজ ।
প্রেসিডেন্ট হাউজ আক্রান্ত ।
সাথে আরও অনেক জল্পনা কল্পনা । কিন্তু দেশের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার সংস্থা থেকে কোন প্রকার প্রেস বিফিং হয় নি ! কেউ মুখ খুলতে রাজি নয় কিন্তু পত্রিকা গুলো তো বসে থাকার পাত্র না ! নিজেদের মত সংবাদ পরিবেশ করেই চলেছে ।
খবর পাওয়ার দিনই প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরে এসেছে । নিজের অফিসে গম্ভীর মুখে বসে আছে । চিফ সিকিউরিটি অফিসার আহমেদ আসাদ রুমে প্রবেশ করতেই প্রেসিডেন্ট মুখ তুলে চাইলেন । তিনি এখনও চিন্তিত হয়ে আছেন । বারবার কেবল নিজের মেয়ের কথা চিন্তা করছেন ।
যেই এখানে আসুক না কেন সে কোন প্রকার ক্ষতি না করেই চলে গেছে । কোন কিছু নেই নি কিংবা কোন হতাহতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি । এটাই তার কাছে সব থেকে বেশি চিন্তার বিষয় লাগছে । চাইলেই সে অনেক কিছু করতে পারতো কিন্তু করে নি ।
কেন ?
আহমেদ আসাদও ঠিক এই ব্যাপার না নিয়ে ভাবছে ।
-কিছু পেলে ?
-না স্যার ? আমরা টোটালী ব্লাঙ্ক ! কেউ কিছু না জানে না । যেই এসেছে এমন নিঁখুদ ভাবে কাজটা করেছে যে কোন প্রকার সুত্র রাখে নি ! আমাদের মনে হচ্ছে সে একজন না ! বেশ কয়েকজন !
-তুমি তাহলে কি বলতে চাও ? আমি আমার নিজের ঘরে নিরাপদ নই । যা হোক আমি না হলাম না আমার মেয়েও কি নিরাপদ না ?
-স্যার আমরা এরকম ভুল আমরা আর এফোর্ড করতে পারি না ।
আহমেদ আসাদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই প্রেসিডেন্ডের ফোন টা বেজে উঠলো ! কথার মাঝখানে বাঁধা পেয়ে আহমেদ আসাদ থেমে গেল । প্রেসিডেন্ট নাম্বার টা দেখে একটু অবাক হল । অপরিচিত নাম্বার !
-গুড মর্নিং মিস্টার প্রেসিডেন্ট !
-গুড মর্নিং ! কে বলছেন ?
-এতো সহজে আপনি আমাকে ভুলে গেলেন ?
-তুমি !
ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ এল ।
-যাক চিনতে পেরেছেন জেনে ভাল লাগলো !
-তোমাকে কি ভোলা যায় নাকি ভোলার উপায় আছে ?
আবারও হাসির আওয়াজ এল ওপাশ থেকে । হাসি থামিয়ে আগুন্তুক বলল
-আহমেদ আসাদও নিশ্চই আপনার সাথে আছে ?
-হুম ! তুমি কিভাবে জানো ?
-মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমি সেদিন বলেছিলাম আমি থাকতে আপনার কোন প্রকার ক্ষতি হবে না । সেইটা সত্যি করার জন্য আমাকে অনেক কিছু করতে হয় !
-হুম ! বুঝলাম !
-আপনি আপনার ফোন টা একটু লাউড স্পিকারে দিন । আমি যা বলতে চাই তা আহমেদ আসাদও শুনুক !
প্রেসিডেন্ট নিজের ফোনটা লাউড স্পিকারে দিল ! আহমেদ আসাদ কে বলেও দিল ফোনের ওপাশে কে আছে । সেদিনের পরে আহমেদ আসাদেরও আগন্তুকের খানিকটা কৌতুহল আছে ।
ফোনের ওপাশ থেকে আগুন্তুক বলল
-গত পরশুর ব্রেক-ইন টা আমি করেছি !
-হোয়াট ?
আহমেদ আসাদ সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট এক সাথে বলে উঠলো !
-কেন ?
-আমি কেবল দেখাতে চেয়েছি যে আপনার সিকিউরিটি ব্যবস্থাটা কতটুকু দূর্বল ! আমি ছাড়া অন্য কেউ হলে কি অবস্থা টা হতে পারতো একবার চিন্তা করে দেখুন ! দেখেন আমি সারাটা সময় আপনাদের আসেপাশে থাকতে পারবো না ! তখন কি হবে একবার চিন্তা করে দেখেছেন !
আহমেদ আসাদ বলে উঠলো
-কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমাদের সিকিউরিটি ব্যবস্থা এরকমই ! কই কেউ তো এভাবে ব্রেক-ইন করতে পারে নি !
-তার কারন হচ্ছে প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান এই প্রথম বারের মত এ দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন । নিজের হাতে দেশটা কে সাজানোর চেষ্টা করছেন । অন্য কেউ এটা করে নি । আপনি নিশ্চই জানেন ! অনেকের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছেন তিনি ! অনেক ইনকিউয়ারিতে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে !
-জি জানি !
-আপনি নিশ্চই জানে তিনি এমভিকে হিট লিস্টে প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খানের নাম একেবারে শীর্ষ আছেন ! জানেন ?
কেউ কোন কথা বলল না !
এম ভি কে হিট লিস্ট টা অনেক টা মফিয়াদের বানানো শেয়ার বিজনেসের মত ! এখানে এম ভি কে অর্থাৎ মোস্ট ভ্যালুয়েবল পার্সন টু কিল লিস্টে সব বিখ্যাত মানুষের নামের কিলিং অর্ডার দেওয়া হয় ! আস্তে আস্তে সেখানে বিড হয়, প্রাইস বাড়ে । এভাবে কয়েকজন ভাড়াতে খুনি কিংবা খুনী অর্গানাইজেশন সেই মানুষটার পেছনে গেলে যায় !
আগন্তুক বলল
-আগের সিকিউরিটি দিয়ে মিস্টার প্রেসিডেন্টের সিকিউরিটি দেওয়ার চেষ্টা করতে যাবেন না প্লিজ ! আমার পয়েন্ট নিশ্চই আপনি ধরতে পারছেন !
-হুম !
-গুড ! এটাই আমি বলতে বোঝাতে চেয়েছি ! আমি একা সব সময় সব জায়গায় উপস্থিত থাকতে পারবো না ! আর ঠিক এই সুযোগটাই ওরা নেবে !
নিকিতা যখন লিফ্টের দরজা খুলে বাইরে বের হল ততক্ষনে আট তলার পুরো ফ্লোর টা ফাঁকা হয়ে গেছে । হওয়ারই কথা । যেখানে পুরো শপিং মলের মানুষ গুলো নিচের দিকে নামছে সেখানে ও উঠছে উপরের দিকে । পারলে আরও উপরে উঠলে ভাল হত । কিন্তু ঠিক সব থেকে উপরের তলায় ওঠতে ঠিক ভরশা পাচ্ছে না । এখানেই কোথাও লুকিয়ে থাকতে হবে !
নিকিতা নিজের ফোনটার প্রয়োজনীয়তা খুব ভাল করেই অনুভব করছে । এখন ফোনটা কাছে থাকলে অন্তত বাবার কাছে একটা ফোন করে তার বিপদের কথা জানাতে পারতো । যদিও টিভির মাধ্যমে এতোক্ষন সারা দেশের মানুষের জেনে যাওয়ার কথা যে দেশের সব থেকে বড় শপিং মলটাতে টেরোরিস্ট এটাক হয়েছে, কিন্তু ও যে এই শপিং মলটার ভিতরে রয়েছে সেটা তো জানার কোন উপায় নেই । সমস্যাটা এখানেই !
ওর বাবা দেশের রাজনীত করে সেই কবে থেকে । তখন থেকেই ও আর ১০ টা সাধারন ছেলে মেয়েদের মত স্বাধীন ভাবে বাইরে অরাঘুরি করতে পারে না । তার উপর যখন থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছে তখন থেকে তো তার বাইরে বের হওয়া বলতে গেলে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে একা একা । যেখানেই যাও না কেন এক গাদা লোক সাথে নিয়ে বের হতে হয় । এটা ওর একদম ভাল লাগে না । তাই ও মাঝে মাঝে ছদ্মবেশ নিয়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলেই ।
ওদের বাসায় কাজের লোকজনের বাইরে বের হওয়ার জন্য একটা ওয়ানওয়ে আছে । কেবল মাত্র এদিক দিয়ে ওরা বের হতে পারে । ঢুকতে পারে না । সুযোগ পেলেই ও এমন করে বাইরে বের হয়ে যায় । আজকে সকালেও ঠিক এমন ভাবেই বের হয়ে গেছে ।
অবশ্য বের হওয়ার একটা কারন আছে । গত কাল রাতে ও রাফায়েল চৌধুরীকে একটা মেইল পাঠিয়ে জানিয়েছে যে আজকে ও এখানে আসবে । ব্যাস আর কিছু না ! ওর কেবল মনে হয়েছে মেইল পেলে রাফায়েল ঠিকই সব কাজ কর্ম ফেলে ওর সাথে দেখা করতে ছুটে চলে আসবে !
নিকিতার ধারনা সে ঠিকই আসবে । তার সাথে কিছু টা সময় আরও ভাল করে পর্যবেক্ষন করা যাবে আসলেই এই ছেলে সেই ছেলে কি না ।
কিন্তু সমস্যা বেঁধে ও এখানে আসার পর থেকেই । ও এসে পৌছিয়েছে তার একটু পরেই শপিং মলের মাইকে একটা ভারি গলার আওয়াজে ভেসে এল একটা অদ্ভুদ নির্দেশনা । তখন শপিং মলে ভীড় শুরু হয়নি । মানুষ জনও এতোটা আসা শুরু করে নি । ভারি গলায় একে একে সবাইকে শপিং মল থেকে বের হয়ে যেতে বলা হল । যে যেখানে আছে সেভাবেই যেন শপিং মল থেকে বের হয়ে যায় যদি প্রানের মায়া থাকে । তারা একজন বিশেষ মানুষকে খুজছে, তাকে পেলেই অন্য কারো কোন প্রকার ক্ষতি হবে না । এই জন্য মেইন দরজা দিয়ে সবাইকে বের হওয়ার জন্য বলা হল ।
নিকিতার বুঝতে একটুও কষ্ট হল না যে এই বিশেষ মানুষটা হচ্ছে সে নিজে । ও বারবার কিছুতেই বুঝতে পারে না ওর ওপর মানুষের এতো নজর কেন ? যেখানেই যেভাবেই বের হয় না কেন কেউ না কেউ ঠিকই বুঝে ফেলে ।
আরে বাবা প্রেসিডেন্টের মেয়ে হয়েছে বলে কি একটু সাধ আহ্লাদ নেই !
ভিড়ের মাঝে যখন সবাই নিচের দিকে নামছিল তখন সে উপররের দিকে উঠলছিল । ফোন বের করে গিয়ে একজনের ধাক্কায় সেটা হাত থেকে ছুটে গিয়ে কোথায় গিয়েছে সেদিকে তার লক্ষ্য দেয় নি । যেদিকে চোখ গিয়েছে সেদিকেই হাটার চেষ্টা করেছে । কোন একটা নিরাপদ জায়গায় যেখানে ওকে কেউ খুজে পাবে না !
এখন ও আট তলার একবারে কর্নারের দিকের একটা দোকানের আড়ালে লুকিয়ে আছে । জানে খুব বেশি লাভ হবে না । একটু পরেই লোকজন তাকে খুজতে বের হবে । কে জানে, আর কতক্ষন ওকে এখানে থাকতে হবে ।
তবে একটা অবাক করে দেওয়ার বিষয় হচ্ছে ওর কেন জানি একটুও ভয় করছে না যদিও ওর খুব ভায় পাওয়ার কথা । কেন জানি মনে হচ্ছে ঠিকই সেই মানুষ টা চলে আসবে । ওর বিপদে কিছুতে হাতে হাত রেখে বসে থাকবে না । আর তার উপর অন্য মানুষ যেমন ওর ওপর লক্ষ্য রাখে ঠিক তেমনি ভাবে আরও একজন ওর উপর লক্ষ্য রাখে !
শামীম জাফরকে আকিব আরিয়ান যতটা ভয় পায় তার থেকে বেশি অস্বস্থি বোধ করে ফারিয়া নূশরাতের সাথে কথা বলার সময় । মেয়েটার ভিতর কেমন যেন একটা কাঠিন্য আছে । চোখের দিকে তাকিয়ে যায় না ! আকিব সব সময় অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলে ।
কিন্তু এই কাজটাই ওকে মাঝে মাঝে করতে হয় । ফারিয়ার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয় । এখনও ঠিক ফারিয়ার সামনেই বসে আছে সে । তাকিয়ে আছে অন্য দিকে । মাঝে মাঝে আড় চোখে ফারিয়ার দিকে আড়চোখ তাকিয়ে আছে । একটু পরপর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে ।
প্রথম দর্শনে যে কেউ দেখলে ফারিয়েকে ২২/২৩ বছরের কোন মেয়ে মনেই করবে । সে যে এই প্রতিষ্ঠানের সিইও এটা মেনে নেওয়া কিংবা হজম করা একটু কষ্টকর । তারও আবার এরকম একটা প্রতিষ্ঠানের । আকিব প্রথমেই নিজেও এটা মেনে নিতে পারে নি । কিন্তু সময় যত পেরিয়েছে মেয়েটার কাজকর্ম ওকে মুগ্ধ করেছে । বিশেষ করে প্লানিং এবং যে কোন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার ব্যাপার টা দেখে আকিব একটু অবাকই হয়েছে ।
কফির কাপ টা এক পাশে সরিয়ে রেখে ফারিয়া বলল
-সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ?
-জি ম্যাম ! প্রায় সব টুকু !
-প্রায় ?
-আসলে এখনও আমাদের লোকজন রাফায়েল চৌধুরীকে ট্রেস করতে পারে নি । তার যে বাসার ঠিকানা দেওয়া আছে সেখানে সে নেই । আর অফিসেও আসে নি কালের পরে । কোথায় গেছে কেউ জানে না ?
-আর ?
-ওর মেইল টাও হ্যাক করা সম্ভব হচ্ছে না ! আপনি তো জানেনই সে দেশের শীর্ষ স্থানীয় আইটি এক্সপার্টদের একজন । প্রেসিডেন্ট পুরুষ্কারপ্রাপ্ত !
ফারিয়া কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো । কদিন থেকে প্রায় কয়েকবার রাফায়েল চৌধুরী নামটা ওর সামনে এসেছে । খোজ খবর নিয়ে যতদুর জানা গেছে খুব বেশি আহামরি কেউ না । বিদেশ থেকে পড়আশুনা করে আসা একজন আইটি এক্সপার্ট বলা চলে । ওর দিকে খুব বেশি নজর দেওয়ার কোন কারন নেই । কিন্তু নজর দিতে হচ্ছে কারন প্রেসিডেন্টের মেয়ে নিকিতা এই ছেলেটার উপর খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে !
দেখতে সুন্দর, আইটি এক্সপার্ট প্রেসিডেন্ট পুরুষ্কারপ্রাপ্ত এইটাই কি কারন ?
নাকি অন্য কোন কারন আছে ?
সে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না ! তার ঠিক গত কাল রাতেই নিকিতা রাহমান এই রাফায়েল কে একটা মেইল পাঠিয়েছে । যদিও রায়াফেলের মেইল টা হ্যাক করা যায়নি তবে নিকিতার মেইল আইডিটা সহেজেই হ্যাক করা গেছে । সে কাকে কিভাবে কখন মেইল পাঠিয়েছে সব কিছু লক্ষ্য রাখা সম্ভব হয়েছে । সেটা মেইল থেকেই আজকের এই প্লান !
প্রেসিডেন্ট হাউজের উপরও নজর রাখা ছিল । সেখান থেকে নিশ্চিত খবর এসেছে যে নিকিতা বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে । তার পিছেন ফেউ লাগিয়েছে বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই । সব কিছু প্লান মোতাবেগই চলছে কেবল রাফায়েল চৌধুরী একটু ওকে চিন্তিত করছে । লোকটা খোজ পাওয়া গেলে আরেক টু নিশ্চিন্ত হওয়া যেত ।
-ওরা এটাকে কখন যাবে !
আকিব ঘড়ি দেখে বলল
-আর মিনিট বিশেক পরেই ।
-ওকে ! আমাকে আপডেট জানিও !
-জি ম্যাম !
নিকিতা হঠাৎই কিসের যেন আওয়াজ শুনলো । মনে হল কেউ কোন একটা চেয়ারে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, তারপর কিছু একটা টেনে টেনে নেওয়ার আওয়াজ হল কিছুটা সময় ! টুকটাক কিছু আওয়াজ ! তারপর আবার নিরবতা । পুরো শপিং মল টা কি রকম চুপচাপ হয়ে গেছে । এই সময় এমন নিরবতা এখানে কল্পনাই করা যায় না ! নিকিতা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগুলো । আর একটু এগুতেই জিনিস টা চোখ পড়লো ওর ।
এমনিতেই তো খাবারের দোকান গুলোর সামনে অনেক গুলো চেয়ার আর টেবিল পেতে রাখা আছে । কিন্তু যেখান দিয়ে মানুষ জন হাটা চলা করে সেখানে কোন চেয়ার কিংবা বসার কোন কিছু নেই । কিন্তু ঠিক রাস্তার মাঝ খানে একটা ছোট্ট টেবিল আর একটা চেহার রাখা আছে ।
টেবিলের উপরে একটা আইসক্রিম স্ট্যান্ডের সাহায্যে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে । তার নিচে একটা মোবাইল রাখা !
একটু দুর থেকেই নিজের মোবাইলটা চিন্তে নিকিতার একটুও কষ্ট হল না । কি করবে ঠিক ভেবে পেল না । সামনে যাবে ?
যদি কেউ ফাঁদ পেতে রাখে ?
নাহ !
চাইলে এখনই তাকে যে কেউ ধরতে পারে । ফাঁদ পাতার কি দরকার !
নিকিতা টেবিলের কাছে পৌছে গেল । দেখলো মোবাইলের নিচে একটা কাগজ চাপা দেওয়া রয়েছে । সেখানে একটা স্মাইলীর ছবি আকা ! আর ইংরেজীতে লেখা
"হাই"
নিকিতার মনে যে ভয় টুকু ছিল তা সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে গেল । ও জানে আর কোন ভয় নেই । সে চলে এসেছে !
আইসক্রিম টা হাতে নিয়ে সেখানে একটা কামড় দিয়েছে তখনই ফোন বেজে উঠলো !
নিকিতা ফোন রিসিভ করেই বলল
-আপনি এতো দেরি কেন করলেন ? আমার বুঝি ভয় করছিল না ?
-হুম ! আমার তো দুনিয়ার আর কোন কাজ নেই । তুমি কোথায় কি বেকুবী কর সেই খোজ নিয়ে বেড়াই !
-এই ! খবরদার বলছি ! আপনি আমাকে বেকুব বলবেন না ?
-তো কি বলবো ? এই দিনের পর দিন একম কাজ কারবার করে বেড়াচ্ছ কোন দিন কোন যদি আমি ঠিক সময়ে না আসি !
-আরে সমস্যা নেই ! আপনি আছেন না ?
-আহা ! কত শখ ! এর পর থেকে আমি আর আসবো না ! মনে রেখো !
-দেখা যাবে !
-আর তোমাকে মেইল পাঠিয়ে আসতে কে বলেছে ?
-আপনি পেয়েছেন মেইল টা ?
-মেইল টা কি তুমি আমাকে পাঠিয়েছো যে আমি পাবো ?
নিকিতা আবারও একটু কনফিউশনে পড়ে গেল ! তাহলে সত্যিই মানুষটা রাফায়েল না !
ওপাশের মানুষটা আবার বলল
- তোমার মেইল যে হ্যাক হতে পারে এটা কি তুমি জানো না । তুমি কোথায় যাও কার সাথে কথা বল কাকে কি মেইল পাঠাও সব দিকে ওদের লক্ষ্য আছে । জানো না !
নিকিতা আপন মনে আইসক্রিম খাচ্ছে আর এক কানে বকা শুনছে । ওর খুব যে একটা খারাপ লাগছে তা কিন্তু না ! মজাই লাগছে ।
-আচ্ছা আমরা এখন কি করবো ?
কথা বলতে বলতে আগন্তুক থেমে গেল !
-তোমার খুব মজা লাগছে । না ?
-হুম ! হিহিহিহি !
-আসলেই আমার এখানেই আসাটাই ভুল হয়েছে । একবার আসল বিপদে পড়বে তখন বুঝবে !
কথা শেষ হল না ঠিক তখনই একজনকে দেখা গেল ওর দিকে এগিয়ে আসতে । মুখ একটা হাসি নিয়ে আস্তে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ।
নিকিতা বলল
-আমি কি করবো এখন ? দৌড় দিবো ?
-দৌড়ে পারবা ওর সাথে ?
-না ।
-তাহলে দৌড়িয়ে লাভ কি ? এই লোকটাই তোমার উপর নজর রাখছিল । তোমার বাসা থেকে এ পর্যন্ত তোমার পিছু পিছু এসেছে । বুঝছো ?
-হুম !
-এক কাজ করে ! একটু ঘুরে বস !
-কেন ?
-আহা ! এতো কথা কেন বল ! ঘুরে বস !
নিকিতা এগিয়ে আসা লোকটার দিক থেকে উল্টো করে মুখ করে ঘুরে বসলো ! ঠিক তখনও ধুপ করে কিছু পরার আওয়াজ শুনতে পেল ! পেছনে ঘুরে তাকাতে যাবে ঠিক তখনই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো
-এই তাকাবে না পিছনে ! আইসক্রিম শেষ কর ! আমাদের নয়তালায় যেতে হবে !
-আমি একা যাবো ?
-আপাতত একাই !
আইসক্রিম শেষ করে নিকিতা হাটতে শুরু করলো সামনের দিকে । নয়তলা ওঠার সিড়ির টা একেবারে শেষ মাথায় ! শপিং মলটা সাধারন টা আট তলা পর্যন্তই ! এর পরে সাধারন মানুষের যাওয়া নিষেধ । কিন্তু আজকে তো আর এসব কিছু মানা নেই ! নিকিতা হাটতে হাটতে নতলায় ওঠার সিড়ির মাথায় চলে এল । উঠতে যাবে তখন দেখলো সিড়ির ঠিক উপরে দুজন মুখোস পরা লোক হাতে অটোমেটিক অস্ত্র নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
ওদের দেখে একটা ছোট্ট ভয়ের স্রোত নিকিতার শিরদার বেয়ে নিচে নেমে এল !
-হ্যালো ?
ফোনে তাকিয়ে দেখে ফোন লাইনে হোল্ড পজিশনে আছে । তার মানে ওপাশের মানুষ টা নেই ।
কি করবে এখন ও ? কি করা উচিৎ ?
নিকিতা বলল
-আচ্ছা বাধরুম টা কোন দিকে ?
উপরের দুজন কেবল এক অন্য দিকে মুখ চাওয়া করলো কিছুটা সময় তারপর একজন বলল
-এই তো সামনে ! আসুন !
-না থাক ! আমি খুজে নেব !
এই বলেই নিকিতা পিছনে ঘুরে দৌড় লাগালো ! উপরে লোক দুটোও তেড়ে এল ! কিন্তু আসতে পারলো না খুব বেশি দুর ! কেবল কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুজনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ! আগন্তুক যে আসেপাশেই আছে এটা ওদের জানা ছিল না !
কিন্তু নিকিতা তখনই দৌড়িয়ে চলেছে । ওর পেছনে তাকানোর লক্ষ্য নেই ! কয়েকটা খাবারের দোকান আর চেয়ার টেবিল পার হতেই যখন সামনে গেল দেখলো আরও একজন কালো পোষাক পরা মুখে কালো কাপড় পরা লোক ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে !
পিছন ফিরে দৌড়াতে যাবে তখন মনে হল এই চোখ যেন ওর চেনা ! আরেকটু ভাল করে তাকিয়ে দেখলো আসলেই চেনা ! সেই মায়াভরা চোখ । নিকিতা কিছু আর না ভেবে সরাসরি আগন্তুকে জড়িয়ে ধরলো ! আসলেই বেশ খানিটা ভয় পেয়েছে ও !
এমন হঠাৎ করে ওকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় ও খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল !
-আর কখনও আমার সাথে এমন টা করবেন না !
-আরে বাবা আমি করি করলাম আবার ?
-না বলে আর কখনও আমাকে এভাবে একটা রেখে যাবে না ! বল !
-আচ্ছা যাবো না ! আর আমি গিয়ে ছিলাম না কি ! আমি তো ছিলামই তোমার কাছেই !
অনেকক্ষন পরে যখন নিকিতা শান্ত হল তখন আগন্তুক বলল
-চল আমার এখন যেতে হবে ! ওরা তোমাকে খোজা শুরু করে দিয়েছে ।
-আমরা কিভাবে যাবো ?
নিকিতার হাত ধরে আগন্তুক এগিয়ে চলল নতলার দিকে । নতলাট ঠিক বাম দিকটা সম্পূর্ন কাচে ঘেরা ! নিকিতা দেখলো মানুষটা কাচে ঘেরা দেওয়ালে কি যেন হিসাব করছে । কি করছে কে জানে । একবার জিজ্ঞসে করতে গেল কি খুজছেন । পরে আর করলো না !
এদিকে আগন্তুক হিসাব কষে ঠিক একটা কাচের জানালা খুলে ফেলল ।
-আপনি কি করতে যাচ্ছেন ?
একটু আগে ভুলে নিকিতা আগন্তুক কে তুমি বলে ফেলেছিল কিন্তু এখন আবার আপনিতেই ফিরে এসেছে ।
-লাফ মারবো !
-মানে কি ? আমি পারব না ! মোটেও পারবো না !
-তোমাকে পারতে হবে না । তুমি চোখ বন্ধ করে লাফ মারো !
-না না না ! আমি পারবো না !
-আরে আবার কথা বলে !
আগন্তুক বলল
-আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখো ! আর কিছু করা লাগবে না ! আসো
-না !
-আবার কথা বলে !
ততক্ষনে আগন্তুক ফ্লোরের মেঝে পরর্ন্ত কাঁচ খুলে ফেলেছে । নিকিতা তাকিয়ে দেখলো একটা কালো মত মোটা দড়ি আগন্তুকের হাতে । এটা কোথা থেকে এল কে জানে ! নিশ্চই আগে থেকেই সে সব কিছু ভেবে রেখেছে !
আগন্তুক বলল
-তুমি কেবল আমাকে জড়িয়ে ধর শক্ত করে । খবরদার ছাড়বে না !
নিকিতা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল ! ততক্ষনে আগন্তুক প্রায় বাইরে বের হয়ে ঝুলে পড়েছে মোটা দড়িটা ধরে ! নিকিতা চোখ বন্ধ করে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আগন্তুক কে জড়িয়ে ধরলো !
কতক্ষন জড়িয়ে ধরলো ঠিক বলতে পারবে না তবে একসময় লক্ষ্য করলো ওর পায়ের নিচে শক্ত কিছু ! তাকিয়ে দেখে পাশের একটা বিল্ডিংয়ের সানসেটের উপর দাড়িয়ে ! আগন্তুক ওকে চেনে ছাদের উপর ওঠালো !
-চাল এবার যাওয়া যাক !
-চলেন আরেক বার এই কাজ টা করি !
-খুব মজা লাগলো ?
-হুম !
-ভয়ে তো মুখ শুকিয়ে আসছিল !
-মোটেই না !
পাশের বিল্ডিং থেকে নিচে নেমেও পেছনে দিকে চলে এল ওরা । নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-এখান থেকে ঠিক ডান দিকে যাবে । দেখবা একটা কালো রংয়ের ট্যাক্সি আছে । ওঠে উঠে পড়বা ! ঠিক আছে ?
-আপনি যাবেন না ?
-আপনি আসছি তোমার পিছনে !
-কিন্তু ? ঐদিনের মত বাইকে ?
-বলছি না, যাও ! বাইকে অন্য কোন দিন !
-ঠিক তো ?
-হুম ! যাও !
নিকিতাকে হাটতে শুরু করলেই আগন্তুক আবারও বিল্ডিংয়ের মাঝে হারিয়ে গেল !
-কি খবর আকিব ?
-খবর ভাল না ম্যাম !
-সেটা তো বুঝতেই পারছি ! আমি কেবল জানতে চাই একা একটা মেয়ে কিভাবে তিন জন আর্মড ম্যান কে খূন করে পালিয়ে গেল ?
-ম্যাম আমরা সিসি টিভি ক্যামেরা চেক করে দেখেছি ! মেয়েটা একা ছিল না ! ওর সাথে একজন মানুষ ছিল ! আসলে ঐ মানুষটাও আমাদের লোকজনের মত কালো উইনিফর্ম পরা ছিল বিধায় আমরা ঠিক পার্থক্য বুঝতে পারি নি ।
আকিব লক্ষ্য করলো ফারিয়া নূশরাতের মুখটা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে । এখানে এখন থাকা টা মোটেই সমীচীন হবে বলে মনে হচ্ছে না !
ফারিয়া বলল
-আগের দুইটা অপারেশনও এই একজনের কারনে ফেইল হয়েছে ?
-আমাদের এখন তো তাই মনে হচ্ছে !
-হুম ! একজন মানুষ কিভাবে এতো দক্ষ হয় আমি জানতে চাই !
-আমি খোজ লাগাচ্ছি !
-এতোদিন কি ঘোড়ার ঘাস চড়াচ্ছিলেন ?
আকিব কি বলবে খুজে পেলো না ! ফারিয়া ওকে হাতের ইশারায় চলে যেতে বলল ! ততক্ষনে গভীর চিন্তায় ডুবে গেছে । একটা কিছু চিন্তা মাথায় চলছে ।
প্রথম বারের মত তার দায়িত্বে থাকা কোন অপারেশনে ফেইল করলো সে । কারো কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে এই প্রথমবার !
ঐ অচেনা আগন্তুককে পরাজিত না করতে পারলে ফারিয়া নূশরাতের মনে আর শান্তি আসবে না ! এরই ভিতর চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছে সে ! কিভাবে আগন্তুক কে কাবু করা যায় !
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন