মানুষ সৃষ্টির সেরা, আশরাফুল মাখলুকাত। মহান রাব্বুল আলামিন আঠার হাজার মাখলুকাতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তিনি মানব সৃষ্টির অনেক আগে জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা থেকে, তাইতো তারা মানুষের দৃষ্টির বাইরে। আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন –
وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ مِنْ نَارِ السَّمُومِ
(আল হিজর, আয়াত ২৭) আমি জ্বীনকে মানুষের আগে তৈরি করেছি আগুনের শিখা থেকে। এরও অনেক আগে তিনি অগনিত ফেরেস্তা্ তৈরি করেছেন। তাঁরা অবিরত অক্লান্তভাবে স্বতস্ফুরতভাবে আল্লাহর ইবাদতে এবং আদেশ পালনে রত। তাঁদের আহার নেই, নিদ্রা নেই, ক্লান্তি নেই, রোগ ব্যাধিও নে্ই, তাদের জন্ম আছে মৃত্যু নেই সৃষ্টির বিলয় না হওয়া পর্যন্ত।
কোন কিছু সৃষ্টি করতে মহান আল্লাহর কারো অনুমতি বা মতামতের প্রয়োজন হয় না। তাঁর ইচছা হল, তিনি আদম তৈরি করবেন এবং পৃথিবী আবাদ করবেন। গণতান্তিক পন্থায় পরামর্শহেতূ ফেরেস্তাদেক ডেকে বললেন-
خَلِيفَةً۬ لۡأَرۡضِ فِى جَاعِلٌ۬ إِنِّى
(আল বাকারাহ, আয়াত ৩০) আমি পৃথিবীতে খালিফা পাঠাতে করতে চাই। ফেরেস্তারা শুনে বললেন-
أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ
(আল বাকারাহ, আয়াত ৩০)তারা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে, মানুষ হত্যা করবে, রক্তপাত ঘটাবে। ফেরেস্তারা আরও বললেন- بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ نَحْنُ نُسَبِّحُ
(আল বাকারাহ, আয়াত ৩০) আমরা আপনার প্রশংসায় অবিরত তাসবিহ পাঠ করছি। ফেরেস্তাদের অভিপ্রায় মানুষ সৃষ্টি না করা হোক। কিন্তু আল্লাহর অভিপ্রায় ভিন্ন। তিনি বললেন-
تَعْلَمُونَ لَا مَا أَعْلَمُ إِنِّي
(আল বাকারা্হ, আয়াত ৩০) আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।
আল্লাহ চাইলেন মানুষকে ফেরেস্তাদের উপরে স্থান দিতে। সেহেতু আল্লাহ ঐ জিনিষগুলোর নাম ফেরেস্তাদের কাছে জানতে চাইলেন-
(আল বাকারা্হ, আয়াত ৩১)তাইতো তিনি আদমকে কিছু জিনিষ শিখিয়ে দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেস্তাদেক জিজ্ঞাসা করলেন- তোমরা আমাকে ঐ জিনিষগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। ফেরেস্তারা অপারগতা প্রকাশ করলেন। কারণ তাঁদের পূর্বাপর কোন জ্ঞান নেই। তাঁদের স্মৃতি শক্তি নেই, মেধা নেই। আল্লাহর হুকুম মানা আর তাঁর ইবাদাত করাই তাঁদের একমাত্র কাজ। আল্লাহ বলেন- وَيَفْعَلُونَ أَمَرَهُمْ مَا اللَّه يَعْصُونَ لَا (আত তাহরিম, আয়াত ৬)। এরপর তিনি আদমকে ঐ জিনিষগুলোর নাম বলতে বললেন। আদম অবলীলায় নামগুলো বলে দিলেন। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেস্তাদেক বললেন, “তোমরা আদমকে সেজদা কর।’’ একমাত্র মোকাররম ফেরেস্তা বাদে অন্য সব ফেরেস্তাই আদমকে সেজদা করল। অহংকার বশত সেজদা না কোরে মোকাররম ফেরেস্তা ইবলিশে পরিণত হল। তার কাজ হল মানুষকে ধোঁকা দেয়া, দোজখের পথে চলতে মানুষকে উৎসাহিত করা ও আল্লাহর জাহান্নাম পরিপূর্ণ করা।
আগেই বলেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেস্তাদেক বলেছেন, “আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা পাঠাতে চাই। তাহলে আমরা কি? আমরা কি আল্লাহর খলিফা নই? খলিফা শব্দের অর্থ কি? খলিফা শব্দের অর্থ প্রতিনিধি। আমরা আল্লাহর প্রতিনিধি। আমাদের কাজ কি? আমাদের কাজ আল্লাহর জমিনে আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। কিভাবে করব? তার জন্য মহান রাব্বুল আলামিন দয়া করে একখানা গাইড দিয়েছেন। আর তার নাম আল কোরআন। আমরা কোরআনের হুকুম মত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, জাকাত দেই, কোরআন তেলাওয়াত করি, তার মর্ম বুঝি এবং সেই মোতাবেক চলার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা যদি ঐ সাড়ে চৌদ্দ শ’ বছর আগের গাইডকে যুগোপযুগী করে নিতে পারি, তবেই তো আমরা ইচ্ছামত আধুনিক হতে পারি। আর তাতে বাধা কোথায়? মানুষ আমাকে খাঁটি ঈমানদার মুসলিম হিসাবে জানে এবং ভক্তি করে। যারা জানে না, তাদেক জানাই আমি এগুলো করি, যাতে তারা আমাকে ঈমানদার হিসাবে জানে ও বিশ্বাস করে।
কথায় বলে, মিথ্যা সকল পাপের জননী। যখন মানুষ একটা মিথ্যা বলে, তখন তার অন্তরে একটি কাল দাগ পড়ে। আরেকটি বললে আরেকটি দাগ পড়ে। এমনিভাবে বলতে থাকলে এক সময় দেখা যাবে, গোটা অন্তরটাই কাল হয়ে গেছে। তখন কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ বুঝার মত কোন ক্ষমতা থাকে না। তখন ইচ্ছামত কথা বলা যায়, আধুনিক হওয়া যা্য়, মানুষের বাহবা পাওয়া যায়। আমি কেন এটা চাইব না?
মিথ্যা মুখোরোচক, তার সম্মোহনী ক্ষমতা আছে, মানুষের অন্তরে পেলব লাগায়, বাহবা-হাততালী পাওয়া যায়। মন্দ কি? আমার তো ঈমান নষ্ট হয়নি। পক্ষান্তরে সত্য কর্কশ, নিঃরস, তিক্ত, বিস্বাদ, মানুষকে খুশি করতে পারে না। তাকে বর্জন করায় দোষ কি? আমার ঈমানে তো কমতি পড়ছে না?
আমার মনে হয়, ইবলিশ আর দুনিয়ায় আসে না। হয়ত লজ্জায় অথবা আনন্দে। কারণ, ইবলিশের সময়ে তো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সে তো পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। আমরা তার অধস্তন পুরুষ। আমরা বিদ্বান হয়েছি, পি এইচ ডি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী ইত্যাদি ডিগ্রি নিতে পেরেছি, আমরা কথা বলার কৌশল জানি। ইবলিশ তো অত কিছু জানে না। অত কিছু বুঝে না। আমরা আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেছি। কই তাতে তো কোন অসুবিধা হয়নি? আমরা অনেক মসজিদ নির্মাণ করেছি। লোকজন ওখানে ধর্ম কর্ম করতে কোন বাধা নেই। বাইরে না করলে কি হয়? তাতে অসুবিধা কোথায়?
একটি ইঞ্জিন তার আবিষ্কারকের গাইডে পরিচালিত হয়। গাইড ছাড়া ইঞ্জিনকে ইচ্ছামত চালানো যায় না। তেমনি আল কোরআন এর একটি হরকাত পরিবর্তনের ক্ষমতাও আল্লাহ মানুষকে দেননি। তা করলে তাতে কোরআন মানা হয় না। একটি চোখের মধ্যে সূক্ষ্ম কুটা পড়লে চোখ যেমন লাল হয়, যন্ত্রণা করে, গোটা শরীর অচল অকেজো হয়ে পড়ে, কোন কাজ করা যায় না, এমন কি বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ে, তেমনি আমার ঈমানের মধ্যে একটু পরিবর্তন ঢুকালে আর যাই থাক ঈমান থাকে না।
الشَّيْطَان خُطُوَاتِ تَتَّبِعُواوَلَا كَافَّةً السِّلْمِ فِي ادْخُلُوامَنُواا ذِينَآالَّأَيُّهَا يَا আল্লাহ বলেছেন- (আল বাকারাহ, আয়াত ১৪৫) তোমরা পুরাপুরিভাবে ইসলামে দাখিল হও। শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেছেন- الْمَاكِرِينَ خَيْرُ وَاللَّهُ اللَّهُ وَمَكَرَ وَمَكَرُوا
(আল ইমরান, আয়াত ৫৪) কৌশল অবলম্বন করছ? আরো কর, আল্লাহও কৌশল করবেন। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।
লেখক: কানাডা প্রবাসী, ইমেইলঃ [email protected]
পাঠক মন্তব্য
many many thanks for your writing.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন