সাপ্তাহিকী
|
রাহমান মনি
|
|
সামরিকীকরণের পথে জাপান
12 Jul, 2014
অবশেষে পাস হয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের গৃহীত ‘সমষ্টিগত আত্মরক্ষার অধিকার নীতি’ বা ‘নয়া প্রতিরক্ষানীতি’। আর এই জন্য আবেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫০ দিন আর শরিকদের সঙ্গে করতে হয়েছে নয়টি বৈঠক। আবের নেতৃত্বে পরিচালিত ক্ষমতাসীন দল এলডিপি এবং নিউ কোমেইতো গত ২২ জুন এই ঐকমত্যে পৌঁছায়।
২৪ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে গৃহীত জাতীয় নিরাপত্তানীতি বাক্যগত পরিবর্তন করে সমষ্টিগত আত্মরক্ষার অধিকারনীতি বা প্রতিরক্ষানীতি গ্রহণে ক্ষমতাসীন জোটের মতৈক্যের কথা ঘোষণা দেন। আবে বলেন, ‘এই জন্য আমাকে ১৫০টি দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এই জন্য আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে চাই ক্ষমতাসীন জোটের সকল সম্মানিত সদস্য যারা একাধিকবার বৈঠকে বসে বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনা শেষে মতৈক্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে যারা ত্যাগ স্বীকার করে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি দেশবাসীকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোর জন্য।’ এই সময় আবেকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবে আরও বলেন, ‘জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পৃথিবীর যেখানেই, যে অবস্থায় থাকি না কেন প্রতিটি জাপানি নাগরিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর এ দায়িত্ব পালনে আমি অবহেলা করতে পারি না। কেবলমাত্র বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই শুধু নয়, এছাড়াও আরও অনেক দায়িত্বও রয়েছে।
জনসাধারণের স্বাস্থ্য বীমা আরও সহজ করা এবং নতুন নতুন পদক্ষেপ নিয়ে সকলকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনাও আমার দায়িত্ব। বর্তমান বিশ্বে নতুন নতুন এবং জটিল জটিল সব অসুখ হচ্ছে, যেগুলো স্বাস্থ্য বীমার আওতায় নেই। সেই সব বের করে স্বাস্থ্য বীমার অধীনে এনে চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সহজতর করতে হবে। জনসাধারণ যেন সহজতর স্বাস্থ্য সেবা পায়।’
সাংবাদিক সম্মেলনে আবে আরও বলেন, ‘কেবল বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না, ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের আরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যেখানে নিত্যনতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং মানুষ তার পছন্দের কর্মক্ষেত্র বেছে নিতে পারবে। এই জন্য উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করতে হবে। তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছর থেকে কয়েক বছরের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে কর্পোরেশন কর এক চতুর্থাংশ কমিয়ে আনা হবে। ২০% থেকে কমানো শুরু হবে এবং ৩০% পর্যন্ত তা কমানো হবে। যাতে নতুন উদ্যোক্তারা আরও বেশি বেশি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহী হন।
এই বছর এপ্রিল মাস থেকে ভোক্তা কর ৫% থেকে বাড়িয়ে ৮% করা হয়েছে। এতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ভোক্তাদের অতিরিক্ত কর দিতে হচ্ছে। আগামী বছর অক্টোবর থেকে এই কর ১০% হারে আদায়ের কথা থাকলেও আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ডাটা সংগ্রহ শুরু করেছি। আগামী তিন মাস অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর আমরা পর্যবেক্ষণ করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব ভোক্তা কর বৃদ্ধি কার্যকরের ব্যাপারে।’
আবে বলেন, ‘এই বছর বিভিন্ন কোম্পানি বেতন বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা যায় গড়ে ২% হারে বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মধ্যমসারির কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬০% কোম্পানি তাদের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। তাই এ বছর গ্রীষ্মকালীন বোনাস গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হবে বলে আশাবাদ করা হচ্ছে। এটা জাপানের অর্থনীতির অগ্রগতির একটি ভালো দিক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডে কেয়ার-এর অভাবে অনেক শিশুকে রাখা যাচ্ছে না। এতে করে মায়েরা কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। তাই ডে কেয়ার-এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে অনেক শ্রম অপচয় থেকে রক্ষা হবে। মায়েরা কাজ করার সুযোগ পাবে। দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। আবেনোমিক্স (আবে গৃহীত অর্থনীতি বা অনবহড়সরপং) এর উদ্দেশ্য সফল হবে। এটার সুফল ইতোমধ্যে মানুষ পেতে শুরু করেছে। গত ১৮ মাস আগে আমরা দায়িত্ব নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির রোডম্যাপ দিয়েছি। এরপর গত ১৭ মাস ধরে একনাগাড়ে বিভিন্ন কোম্পানি ঘোষণা দিয়ে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। গত ৭ বছর ৯ মাসের মধ্যে এটা একটা রেকর্ড। এর মধ্যে যারা অনিয়মিত কর্মী ছিলেন তাদের নিয়মিত করা হচ্ছে। স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দেয়ার পরিমাণও বেড়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবে অর্থনীতির আরেকটি দিক হলো সবকিছুই শহরকেন্দ্রিক না হয়ে জাপানব্যাপী অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা। অর্থাৎ গ্রামীণমুখী করা। প্রত্যন্ত অঞ্চল উন্নয়ন করতে পারলে মানুষ আর শহরমুখী হবে না। শহরের ওপরও চাপ কমবে, অর্থনীতি গতিশীল হবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলকেই কোনো না কোনো খাদ্য বা বিশেষ কোনো পণ্যের জন্য বিখ্যাত করে গড়ে তুলতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে আবে বলেন, ‘দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলগুলোতে আমি প্রতিমাসে গিয়েছি। সেখানে শিমানে এবং তোত্তরি প্রিফেকচারের স্থানীয় গোমাংস, প্রসিদ্ধ চাল এবং সুমিষ্ট তরমুজ খেয়ে আমি অভিভূত। এই থেকে ওই অঞ্চলগুলো এসব পণ্যের জন্য বিখ্যাত করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এরকম তদারকি অফিস গড়ে তোলে পরিকল্পনামাফিক এগুলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিয়ার খুবই সুপেয়।’
শিনজো আবে বলেন, ‘জাপান অর্থনীতিতে বিদেশি নাগরিকদের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্নভাবে তারা এই অবদান রাখছে। তাছাড়া আমাদের শ্রম ঘাটতিও রয়েছে। কর্মক্ষম এবং স্কিলদের স্থায়ী বসবাস অনুমতি প্রদান আরও সহজ করতে হবে। আমরা সেই পদক্ষেপও নিয়েছি। তাছাড়া সামনে রয়েছে আমাদের অলিম্পিক আয়োজনের মতো বড় ধরনের একটি আয়োজন। ২০২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারা অলিম্পিক আয়োজনের অবকাঠামো তৈরিতে আমাদের বিপুল পরিমাণ শ্রম ঘাটতি রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী আনতে হবে। জাপানি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়াসহ অন্যান্য সব পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হবে।’
ফিলিপিনকে নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্র উল্লেখ করে আবে বলেন, ‘ভাতৃপ্রতিম এই বন্ধুরাষ্ট্রটির স্বার্থ রক্ষায় আমাদের আরও বেশি বেশি কাজ করতে হবে। ফিলিপিনের প্রেসিডেন্ট আকিনার সঙ্গে বৈঠকে আমরা বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি। আগামীতে ফিলিপিন এবং ইন্দোনেশিয়ায় নাগরিকদের জন্য বন্দর অবতরণ ভিসা সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ার নাগরিকদের জন্যও ভিসা প্রথা সিথিল করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের আবে বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চাই যুদ্ধে জড়ানো বা বল প্রয়োগে আমি বিশ্বাসী নই, সেই চিন্তাও নেই। আমি চাই আইন তৈরি করে এবং কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি বজায় রাখায় কাজ করা। জাপানের এই পদক্ষেপ প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ এ-৭, অঝঊঅঘ, অচঊঈ, ঊচঅ সংস্থাগুলো প্রশংসা করেছে।’
সবশেষে আবে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া জাপানের জন্য সবসময়ই হুমকিস্বরূপ। তাই আমাদের চোখ বন্ধ করে থাকলে চলবে না। প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। জানমাল এবং দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় কাজ করতে হবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা বা সফর করার কোনো চিন্তাও আমার মাথায় নেই’ বলে আবে জানান।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো আবে ক্ষমতায় এলে জাতীয় নিরাপত্তানীতি পর্যালোচনা এবং পুনর্গঠনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করলে কমিটি বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। কিন্তু আবে প্রশাসন বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে না পারায় প্রতিবেদনটি আর এগুতে পারেনি।
এরপর ২৬ ডিসেম্বর ২০১২-তে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসলে আবে প্রশাসন ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেন নিরাপত্তানীতি পুনর্গঠন পর্যালোচনায়, যার প্রধান করা হয় প্রাক্তন ভাইস মিনিস্টার এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল আইন বিশেষজ্ঞ এবং সভাপতি ইয়ানাই শুনজিকে।
কিন্তু ক্ষমতাসীনদের শরিক দল নিউ কোমেইতো
পার্টি প্রথম থেকে আইনটির বাক্যগত পরিবর্তন এবং সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদের ধারা অনুসরণ করার অনুরোধ জানায়। একপর্যায়ে শরিকদের আপত্তির মুখে বৃহত্তম শরিক দল এলডিপি তা মেনে নেয় এবং এলডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসাহিকো কোউসুরা তা ঘোষণা দেন
নতুন সংশোধনী খসড়াতে উল্লেখ রয়েছে, যদি জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কোনো বিদেশি রাষ্ট্র একক বা দলগতভাবে আক্রমণের শিকার হয় এবং তা থেকে সেই দেশ বা দেশগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে হুমকির মুখে পড়ে, সেই সঙ্গে জনগণের জানমাল হুমকির মুখে পড়ে তখন জাপান তার সমষ্টিগত আত্মরক্ষার অধিকার ব্যবহার করতে পারবে। তবে শুধু তা আত্মরক্ষার কাজে। নিউ কোমেইতো পার্টি এই দাবিটিই করে আসছিল।
জাপানের প্রতিরক্ষা নীতি
অবশেষে মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গৃহীত প্রতিরক্ষা নীতি পরিবর্তনের উদ্যোগ। আর এতে করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর অর্থাৎ ৬৭ বছর পর জাপানের সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর জাপানে প্রচলিত শান্তিবাদী সংবিধান মোতাবেক ‘আত্মরক্ষা ছাড়া জাপান সরকার অন্য কোনো কারণে সামরিক শক্তি ব্যবহার’ স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ, তাই এই অনুমোদনের ফলে জাপানের প্রতিরক্ষা নীতির বড় ধরনের এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করছে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।
১ জুলাই মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্যরা প্রথমে সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। তারপর সেখান থেকেই সেটি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করলে বিনা বাধায় তা অনুমোদন পেতে সক্ষম হয়। ওই দিনই বিকেলে এক ত্বরিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবে তা ঘোষণা দেন ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন।
আবে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলে সেই সময়ে তার উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্যানেল করেন। যাদের সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। প্যানেলটি বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সংবিধান পরিবর্তনের সুপারিশ করেন।
১৮ মাস পূর্বে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী আবে পূর্ব সুপারিশের ভিত্তিতে সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। আর প্রথমেই তিনি তার জোটের অন্যতম শরিক দল ‘নিউ কোমেইতো’ দলের আপত্তির মুখে পড়েন। নিউ কোমেইতো দলের আইন প্রণেতারা বাক্য ব্যয়ে সাবধানতা এবং বর্তমান সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসরণ করার আহ্বান জানান। একপর্যায়ে উভয় দলের সদস্যদের ঐকমত্যে এবং সংশোধনী আনলে ২২ জুলাই তা আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই প্রথমে ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্যদের অনুমোদন এবং পরে মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে।
সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে ‘সমন্বিত আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে জাপানি সেনাসদস্যরা মিত্রদের জন্য লড়াই করতে পারবেন।’ তবে নিশ্চিত হতে হবে যে, আক্রান্ত বন্ধু রাষ্ট্রটির জানমাল, ভূখণ্ড নিশ্চিত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবটিকে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই অনুমতি পেতে হবে। তবে দুটি কক্ষেই ক্ষমতাসীন জোটের তো বটেই আবের দলেরও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই বিলটি পাস হতে কোনো বেগ পেতে হবে না। আর তা পাস হওয়ার পর অবসান হবে ১৯৪৭ সালের ৩ মে কার্যকরকৃত আইনটির।
যথারীতি এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জাপানের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তার কারণও আছে। আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের কাজে বিশ্ব শান্তির অজুহাতে তারা জাপানকে ব্যবহার করতে পারবে।
তবে এ উদ্যোগে খুশি হতে পারেননি নিকটতম বৃহৎ রাষ্ট্র চীন। কট্টর চীনবিরোধী আবের ক্ষমতা গ্রহণ চীন ভালোভাবে নেয়নি। বিগত কয়েক মাস ধরেই চীন-জাপান সম্পর্কে টানটান উত্তেজনা চলে আসছে। এ উদ্যোগ চীনে আগুনে ঘি ঢালার মতো। চীন বলছে, আবের এ উদ্যোগ ফের জাপানকে সামরিকীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই কোনোমতেই তা সমর্থনযোগ্য নয়। তাছাড়া জাপানের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে চীনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। কি সামরিক শক্তির দিক থেকে, কি অর্থনৈতিক দিক থেকে।
শুধু যে বহির্বিশ্বে আবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বা হবেন তা কিন্তু নয়, নিজ দেশেও তিনি বিভিন্ন প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন এ উদ্যোগ গ্রহণে। ১ জুলাই তার কার্যালয়ের সম্মুখে বিপুল বিক্ষোভ হয়েছে। ২৮ জুন এক ব্যক্তি নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে শান্তিবাদী সংবিধান ঠেকাতে প্রতিবাদ করেন।
(সাপ্তাহিক )
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন