সাপ্তাহিকী
|
কানিজ ফাতিমা
|
|
“খাওয়াচ্ছি, পরাচ্ছি, আর কথা শুনবে না, তাকি হয়?’
22 Jun, 2014
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর একটি সমস্যা হলো অনেক পুরুষই তার স্ত্রীর প্রতি এমন মন্তব্য করেন বা এমন মনোভাব পোষণ করেন যে, “খাওয়াচ্ছি, পরাচ্ছি, আর কথা শুনবে না, তাকি হয়?’
এ ধরনের মানসিকতা এক ধরনের প্রভুসুলভ মানসিকতা। স্বামী স্ত্রীর যে ভরণপোষণ করেন তা আসলে একজন মালিক বা প্রভু যেভাবে ভৃত্যকে খাওয়ান বা পরান ঠিক সেরকম না। এখানে পুরো সংসারটাকে একটা ইউনিট ধরলে দেখা যাবে যে সংসারের মূল কাজগুলো স্বামী স্ত্রী ভাগাভাগি করে নেন। সেখানে আল্লাহ পুরুষের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিল রেখে অর্থনৈতিক দায়িত্ব অর্থাৎ ‘খাওয়ানো, পরানো’ পুরুষকে দিয়েছেন আর সন্তান ধারণ ও লালন-পালনের মুখ্য ভূমিকা ( সন্তান ধারণ, জন্মদান, বুকের দুধ দেওয়া সহ মৌলিক কাজগুলো ) নারীকে দিয়েছেন। একটু চিন্তা করলে বোঝা যায় তুলনামূলকভাবে কঠিন ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজটি স্ত্রীর দায়িত্বে। সেক্ষেত্রে একজন স্বামীর বরং কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট চিত্তে এ ‘খাওয়ানো, পরানো’র দায়িত্বটি পালন করা উচিত। এ দায়িত্ব পালনে ঔদ্ধত্য বা প্রভুত্ব কোনটাই প্রদর্শন করার কোন সুযোগ নাই। আরও একটি ব্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ভরণপোষণের দায়িত্বটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। কাজেই এটি একটি ইবাদাত। আল্লাহর অন্যান্য ইবাদাত যেমন বিনয়ের সাথে করা কর্তব্য তেমনি এ ইবাদাতটির ক্ষেত্রেও বিনয়ী হওয়া উচিত।
আমাদের সমাজে আরেকটি সমস্যা হলো বিবাহিতা কন্যার কাছ থেকে মাতা-পিতার সাহায্য নেয়াকে সমাজ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখে না। এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমরা জানি, বিবাহিতা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর । বিবাহিতা নারী যদি সম্পদশালীও হন বা নিজে উপার্জনও করেন তবুও তার উপার্জন তিনি তার সংসারে ব্যয় করতে বাধ্য নন। সেক্ষেত্রে পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে তিনি যদি স্বেচ্ছায় চান তবে নিজ উপার্জনের একাংশ সংসারে ব্যয় করলে তা গ্রহণে স্বামীর কোন পাপ হবে না। একজন বিবাহিত নারী যে কোন হালাল পন্থায় তার উপার্জিত অর্থ ব্যয়ে পুরোপুরি স্বাধীন। এক্ষেত্রে বাধা দেয়ার অধিকার আল্লাহ স্বামীকে দেননি। অন্যদিকে নিজ পিতামাতার প্রতি ভাল ব্যবহার ও তাদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য সন্তানকে তাগিদ দেয়া হয়েছে- সে পুত্র হোক বা কন্যা হোক। একথা সত্য যে, ইসলাম পুত্রকে পিতামাতার আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করেছে, কন্যাকে করেনি। কিন্তু কন্যা যদি নিজ সম্পদ থেকে পিতামাতাকে সাহায্য করেন তবে ইসলাম একে ভৎর্সনা তো করেইনি বরং একে অনেক উচ্চ দৃষ্টিতে দেখেছে এবং এই কারণে ঐ কন্যা আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবার যোগ্য। অন্য কোন পন্থায় নিজ সম্পদ ব্যয় করার থেকে নিজ পিতামাতার প্রয়োজনে এগিয়ে আসা অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক উঁচুমাপের কাজ- এমনকি পিতামাতা অমুসলিম হলেও। যদিও পিতামাতার অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে কন্যাকে আল্লাহপাক মুক্তি দিয়েছেন তথাপি কন্যা সন্তানের আর্থিক সামর্থ্য থাকলে যদি পিতামাতার দুঃসময়ে বা অসহায়ত্বে কন্যা সন্তান সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসে তবে তা অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় ।
যে ইসলাম প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজের ভোগবিলাসকে পাপ মনে করে সেই ইসলামের অনুসারী একজন কন্যা নিজ পিতামাতার প্রয়োজনে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে না আসলে তা অবশ্যই পাপ বলে গণ্য হবে। এমনকি কন্যা উপার্জন করলে পিতামাতার স্বচ্ছল হলেও কন্যার উচিত পিতামতার জন্য মাঝে মধ্যে উপহার পাঠানো। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজ এ মহৎ কাজটিকে কখনও কখনও লজ্জাজনক কাজ মনে করে।
লেখক ঃ শিক্ষক ও কানাডা প্রবাসী
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন