গত ৫ই জানুয়ারি বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই শেষ হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এক তরফা-এ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোন নির্বাচনই হয় নি, আর বাকি যে ১৪৭টি আসনে নির্বাচন হলো সেখানেও ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। বিভিন্ন হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ দেখানোর চেষ্টা করা হলেও কোন হিসাবেই তা ৩০% অতিক্রম করে নি। সারাদিন ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের কোন উল্লেখযোগ্য উপস্থিতই না থাকলেও ভোটের কাস্টিং দেখানো হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ %। কেবল মাত্র ভারত এবং নেপাল ছাড়া বিদেশি কোন পর্যবেক্ষক না থাকলেও দেশীয় যে সকল প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ করেছে তাদের মতে, বাস্তবে ১০ থেকে ১৫% এর বেশী মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায় নি। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে মানুষ দেখেছে অধিকাংশ কেন্দ্রই ছিল ভোটার শুন্য। সরকার সমর্থকরাও ভোট দিতে যায় নি। একটি ভোটও প্রদত্ত হয় নি এমন কেন্দ্রের সংখ্যাও অনেক। ভোটার বিহীন এ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে মহাজোটের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও ভোটারহীন অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়েদেরও লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে। কোন প্রতিপক্ষ না থাকায় প্রিসাইডিং অফিসার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নির্বাচনী এজেন্টরা জাল ভোট প্রদানের কাজটি খুব সহজেই সেরে ফেলেছেন। নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপালনকারী একজনের বর্ণনা মতে, সকাল থেকে ১টা পর্যন্ত মাত্র ১০ টি ভোট পড়েছে। দুপুর ১টায় উনি যোহরের নামাজ পড়তে যান এবং ফিরে এসে দেখেন ২৫০ ভোট কাস্টিং হয়ে গেছে। কি আজব নির্বাচন! নির্বাচনের পরদিন ইউটুবেসহ অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের ভিডিও চিত্রটি প্রমান করে কতটুকু ভোট কারচুপি হয়েছে।
একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এমন তামাসার নির্বাচন মানুষ আর কখনও দেখে নি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা সদর্পে বলে বেড়াচ্ছেন সংবিধান রক্ষা করতে নাকি এ নির্বাচনের কোন বিকল্প ছিল না। দেশের সুশীল সমাজসহ এ দেশের রাজনীতি সচেতন সকল মানুষ খুব ভাল করেই অবগত এটি সংবিধান রক্ষার জন্য নয়, ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। সংসদের মেজরিটির সুবাদে শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গায়ের জোরে সংবিধান সংশোধন করেছে। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের তৈরি হয়েছিল কুটকৌশলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে সে প্রথাকে বাতিল করা হয়, যদিও আদালত আরও দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থার অধীনে করার মত প্রদান করেছিল। সংবিধানের রক্ষার যে শ্লোগান তুলা হয়েছে তা রাজনৈতিক ছলচাতুরী ছাড়া আর কিছু নয়। যে সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করা হলো দেশের মানুষের কল্যাণে সেটা কেন আবার পুনর্বহাল করা যাবে না? দল মত নির্বিশেষে সকলের সম্মতিতে যে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছিল, দেশের সকল মানুষ যে ব্যবস্থার উপর একটা আস্থা এনেছিল সেটা কেন একক সিদ্ধান্তে বাতিল করা হল তা রাজনীতি সচেতন সকল নাগরিকই খুব ভাল ভাবেই বুঝেছেন। বিরোধী দলের দাবীকে উপেক্ষা করে সম্পুর্ন অগণতান্ত্রিক পন্থায় যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলো সেটা কখনও গণতান্ত্রিক হতে পারে না। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বজন স্বীকৃত যে পন্থা তা পুনর্বহালের দাবিতে প্রথম দিন থেকেই বিরোধী দলগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্মসুচি দিয়ে যাছে। সরকার একদলীয় শাসনের মনবৃত্তি নিয়ে সকল রাজনৈতিক মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ করেছে। বিরোধী দলের উপর নির্মম ও লোমহর্ষক নির্যাতন চালিয়েছে। মিছিল দেখলেই গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজপথে নিহত হয়েছে বিরোধী দলের কয়েক’ শ নেতা কর্মী। নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে দুই শতাধিক। ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়নি গৃহের অভ্যন্তরে থাকা নারী ও শিশুরাও। দেশের সুশীল সমাজের অন্তর্ভুক্ত সাংবাদিক, কলামিস্ট, আইনজীবী, শিক্ষকসহ সকল পেশাজীবীদের উপরও নির্যাতন ও নিষ্পেষণ চালানো হয়েছে। সরকারের দমন পীড়নের খবর প্রকাশ করায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছ দৈনিক আমারদেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি। গ্রেফতার করে কারান্তরীন করে রাখা হয়েছে নির্ভীক সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। এটা গণতন্ত্রের কোন নমুনা হতে পারে না, বরং গণতন্ত্রের আবরণে একদলীয় স্বৈরশাসনের উপস্থিতি, যা স্বৈরশাসনের চেয়ে অধিক ভয়ংকর।
স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমেই আজ দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে। রাজনৈতিক মিছিল মিটিং-এ অংশগ্রহণ নাগরিকের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সে অধিকার মানুষের আজ নেই। বিরোধী সমর্থকরা রাস্তায় বের হলেই আইন শৃঙ্খলা নামক পেটোয়া বাহিনী দিয়ে গুলির নির্দেশ, বাসা বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট, আটক করার পর গুলি করে হত্যা করা যে সরকারের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে হারিয়েছে সেটি যে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নয়, তা কারো অজানা নয়। নির্যাচিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল যে বিচার ব্যবস্থা সেটাকে আজ একটি দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশে এখন বিচার কার্য পরিচালিত হয়। স্কাইপি কেলেংকারীর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার উপর সরকারের অযচিত ও নগ্ন হস্তক্ষেপ সবার সামনে পরিষ্কার হয়েছে। একবার রায়ের পর আইন সংশোধন করে ফাঁসির আদেশ দেয়া ও রিভিউয়ের সুযোগ না দিয়ে তা তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা, আসামী পক্ষের আইঞ্জীবীদের বিচারিক কার্যক্রমে বাঁধা দেয়া ও হয়রানি করার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। স্বাধীন দেশের ইতিহাসে এই প্রথম আদলত ভাংচুরকারী ও দলীয় একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিচারপতির আসনে বসানো হয়েছে। গায়ের জোরে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেশে এক সহিংস পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের ক্ষেত্রে যে যুক্তি উপস্থাপন করা হয় সেটি হল, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে সহজে বিদায় নেয় না, এক-এগার-এর মত ঘটনার পুরাবৃত্তি ঘটবে। কিন্তু একটি কথা উল্লেখ করা দরকার, সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে এম হাসানের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামীলীগের বিরোধীতার কারনেই অসাংবিধানিক পন্থায় ফখরুল-মইনুদ্দিনের সরকার এসেছিল এবং বর্তমান সরকারই তাদের সকল অপকর্মের বৈধতা দিয়েছে। কাজেই সংবিধান লঙ্ঘনের নজির আওয়ামীলীগই বার বার স্থাপন করে চলেছে। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এ দলটির পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। যারা কোন দিন মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা আজ সব চেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা! রাজাকার হয়েও যদি আওয়ামীলীগ করে তাহলে সে বড় মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি! আর যারা সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছে, হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে, তারা আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক না হলে খাঁটি রাজাকার! অর্থ হচ্ছে, আওয়ামীলীগ নামক দলটি মুক্তিযোদ্ধা বানানোর একটি সার্থক মেশিন, এর মধ্যে ঢুকলেই রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়! স্বাধীনতার ধারক ও বাহক বলে দাবীদার এ দলটির মধ্যে গণতন্ত্রের কোন চর্চা নেই।
সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দল অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েছে। সরকারও গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এদেশ একটি অনিবার্য সংঘাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে হরতাল অবরোধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশের সিংহভাগ রপ্তানী আয় অর্জনকারী গার্মেন্ট শিল্পটি সঠিক সময়ে শিপ্টমেন্ট না দিতে পারার কারণে ইতোমধ্যে অনেক বিদেশী ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।ক্রেতারা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এদেশে অর্ডার নিয়ে আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে এবং বিকল্প হিসেবে ভারতকে বেছে নিচ্ছে। পত্রিকাতে এসেছে, গত কয়েক মাসে ভারতের গার্মেন্ট শিল্প থেকে আয় অনেক বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী অচলাবস্থা বিদ্যমান থাকলে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরই বেশি লাভ। গত কয়েকমাস ধরে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নতুন বছর এলেও শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা যায় নি। এমন অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না। অতি তাড়াতাড়ি এর একটি সুরাহা হওয়া দরকার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খুব সহজে এ অচলাবস্থা নিরসন হছে না। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষন সে শঙ্কা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। একটি প্রতিনিধিত্বশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে এ দেশের মানুষ প্রতি পাঁচ বছরে একবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে । সে অধিকার এবার ভুলুন্ঠিত হয়েছে। অনেক মানুষ জানেই না কে প্রার্থী হয়েছে এবং কে নির্বাচিত হয়েছে। ফলে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সে সরকার দেশের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার হবে না। দেশের মানুষ এ সরকার চায় না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ সরকার স্বীকৃতি পাবে না। কাজেই অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিনিধিত্বকারী সরকার গঠন গণ মানুষের প্রানের দাবী।
সংবিধানের জন্য মানুষ না বরং মানুষের জন্যই সংবিধান। এই সংবিধানটি এ পর্যন্ত পনের বার সংশোধন করা হয়েছে, সময়ের প্রয়োজনে হয়ত আরও বহুবার করতে হবে। কাজেই সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন সময়ের দাবী। এ লক্ষ্যে একটি অর্থপুর্ণ সংলাপ অতি জরুরি। আওয়ামীলীগ সরকার সংলাপে আগ্রহী নয় বলে টেলিফোন নাটক মঞ্চস্থ করে সংলাপের নামে সময় ক্ষেপণ করেছে। আবার এটাও বলা হচ্ছে, জামায়াত ছাড়লেই নাকি বিএনপির সাথে আলোচনা। বিএনপি কাদের সাথে জোট করবে সে সিদ্ধান্ত নিতান্তই বিএনপির নিজস্ব। জামায়াত যদি তেমন খারাপ দল হয়ে থাকে তাহলে ভোটের মাধ্যমে জনগণ জবাব দিবে, এটার জন্য আওয়ামী কর্তা ব্যক্তিদের মাথা খারাপ হওয়ার কোন কারণ দেখি না। আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও এখন খুব সরব হয়েছেন এই ইস্যুতে। প্রবাদ আছে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ অনেক বেশি! অবস্থা দৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। তিন বারের প্রাধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি, দলের সব সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা কর্মী কারাগারে আটক রয়েছে, ভাংচুর, লুটপাটে সর্বস্ব হারিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী খোলা আকাশের নিচে জীবন যাপন করছে। পুলিশী হয়রানির ভয়ে কোথাও একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতেও পারে না। অথচ অন্ধ বুদ্ধিজীবিরা এগুলো চোখে দেখেন না। আওয়ামীদের সাথে বিএনপির একটি অংশও মনে করছে এই মুহুর্তে বিএনপি’র জামাত ছেড়ে আসা উচিত। যারা মনে করছেন, জামায়াত ছাড়লেই আওয়ামীলীগ আলোচনায় আসবে তারা এখনও বোকার সর্গে বাস করছেন। এটা তাদের একটি কৌশল মাত্র। বিএনপি’কে জামায়াত থেকে আলাদা করতেই পারলেই খুব সহজেই ক্ষমতার মসনদ পাকা করা যাবে। তারা খুব ভাল করেই জানেন জামায়াত সরে গেলে বিএনপি একা সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনই চাঙ্গা করতে পারবে না। এ যাবত সরকার বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে তা বলা যায় জামায়াতই টিকিয়ে রেখেছে। কর্মসুচি ঘোষণা করা ছাড়া বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ভুমিকা নিয়ে অনেক কথা উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মাঠে না থাকায় স্থানীয় পর্যায়েও কর্মী-সমর্থকরা হতাশ। ফলে সরকার বিরোধী আন্দোলন এখনও আলোর মুখ দেখে নি। বেগম খালেদা জিয়া এ সত্যটি খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করছেন। এজন্য তিনি এ বিষয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।
সরকারের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে না তারা সহজেই ক্ষমতা ছাড়বে। দমন নিপীড়ন চালিয়ে এ সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার আপ্রান চেষ্টা করবে। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেটার প্রতি বিদেশী সমর্থন আদায়ে কুটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত কোন দেশ সমর্থন জ্ঞাপন করে নি। বিরোধী জোট যদি আন্দোলন জোরদার করতে পারে, তাহলে এ সরকারের উপর বাইরের বিভিন্ন দেশের সমর্থন উঠে যাবে এবং সরকার বাধ্য হবে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে। প্রিন্ট মিডিয়াতে এসেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত জনগণের প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনকে বিভিন্ন দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে ভারত যেভাবে এ সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে গত চল্লিশ বছরে যে দেশ বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় নি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তারা এত সোচ্চার কেন? বাস্তব কথা হল, বাংলাদেশে একটি টলটলায়মান সরকার থাকলে ভারত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারবে। একটি দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক ফায়দাও রয়েছে। সেটি হল, ভারত বিদ্বেষী মনোভাব সম্পন্ন কোন মানুষ এ দেশে তৈরি হবে না। গত ১০ই জানুয়ারি প্রকাশিত একটি দৈনিকে দেখলাম, দশম সংসদে নির্বাচিত অনেক এমপি’রা ইতোমধ্যে বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন মন্ত্রিত্ব লাভের আশায়। ভারতীয় হাইকমিশনে ‘র’ এর একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সিগন্যাল অনুযায়ী নাকি মন্ত্রিত্ব বন্টন হবে। হায়রে স্বাধীন দেশ, স্বাধীন গণতন্ত্র! বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কোন বিকল্প নেই। এ দেশ আমার, এ মাটি আমার। অনেক রক্ত ও ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতা । গুটিকতক কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে লেন্দুপ দর্জির মত একটি তাঁবেদারি সরকারের মাধ্যমে এ দেশ সিকিমে পরিণত হোক তা আমরা কেউ চাই না। এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে দেশ প্রেমিক গণতন্ত্রকামী মানুষদের এগিয়ে আসা দরকার। এক দলীয় সরকারের অপশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজের সোচ্চার কন্ঠ এখন সময়ের দাবি। আশা করছি দেশের কল্যাণে সবাই সঠিক দায়িত্বটি পালন করবে।
লেখকঃ সহযোগী অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। ইমেইলঃ
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন