সর্বনাশা মাদকের মরণ ছোবলের কারণে যুবসমাজ শুধু মেধাশূন্য হচ্ছে তা নয়, মাদকাসক্তদের মনুষ্যত্ব, বিবেক ও বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। এরই প্রতিফলন তাদের আচরণে উচ্ছৃঙ্খলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, অভিভাবকদের অবাধ্যতা; সর্বোপরি অনৈতিক এমনকি রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ। কিন্তু কেন এমনটি হচ্ছে_ এ বিষয় নিয়ে ভাবছি কি আমরা? যে সন্তানকে জন্ম থেকে তিলে তিলে আদর-ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করে তুলেছেন বাবা-মা সে কীভাবে ছুরি চালায় তাদের বুকে! সন্তানের কাছে যে বাবা-মা পরম আদর-মমতার আশ্রয়স্থল সে সন্তানের কি দ্বিধা করে না বাবা-মাকে হত্যা করতে! বাবা-মা মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো আর রক্ত পানি করা পরিশ্রম ও ভালোবাসার সাধনায়, জীবনের সমুদয় অর্জিত অর্থ-সম্পদ-আকাঙ্ক্ষা দিয়ে প্রিয় সন্তানকে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠায়, সেখানে গিয়ে কী শিখছে তারা? কাদের সংসর্গে মিশে বিপথে যাচ্ছে? কীভাবে, কী কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে প্রিয় সন্তান_ সেই ভাবনা আজ বিদগ্ধ করছে সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং অভিভাবকদের। তাই সময়ের বাস্তবতায় আজকের লেখার শিরোনাম_ শ্বাপদ সভ্যতায় ধ্বংসমুখী তারুণ্য : কে বাঁচাবে তরুণ সমাজ?
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের গণমাধ্যমে প্রতিদিন খুন, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তের ঘটনা এবং তরুণ প্রজন্মের অপরাধপ্রবণতার খবর আসছে। আমাদের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ মাদকের মরণ ছোবলের শিকার হয়ে নিজ মেধা, সৃজনশীলতা, কর্মক্ষমতা আর শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এই অধঃপতনের কারণ হিসেবে নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক সংস্কৃতির বিলুপ্তি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অসামঞ্জস্যতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো সামগ্রিক অবক্ষয়কেই দায়ী করছেন সমাজ বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকরা।
এক গবেষণা তথ্যে জানা গেছে, ধূমপায়ীদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগই মাদকাসক্ত এবং এর মধ্যে শতকরা ৪৪ ভাগই বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধুবান্ধবদের সাহচর্যে সিগারেট থেকে নেশায় আসক্তি শুরু হয়ে তা ক্রমে মাদকের জীবনধ্বংসী আসক্তিতে পর্যবসিত হয়। বিভিন্ন বিশ্লেষণ ও গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে মূলত মাদক কেনার অর্থ জোগাড় করতেই কিশোর বা তরুণ সমাজ নানা রকম অসামাজিক কাজ এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। একটা সময় পর্যন্ত এই মাদকাসক্তি তরুণদের বেশি আকৃষ্ট করতে দেখা গেলেও এখন ভয়ঙ্করভাবে তা তরুণী এমনকি কিশোর-কিশোরীদের মাতিয়ে তুলছে। এর আরেক কারণ ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, সিগারেট বা এসব নেশাজাত দ্রব্যের পাশাপাশি আধুনিক মরণ ট্যাবলেট ইয়াবার সংযোজন। সমাজে ব্যাপকভাবে ইয়াবার ছড়াছড়ির খবর হতাশাগ্রস্ত তরুণ সমাজকে আলোড়িত করছে। ইয়াবার নেশাগ্রস্ততা, যৌনকামিতা, কিংবা নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার এমন তথ্য তরুণ-তরুণীদের আরো কৌতূহলী করে তুলছে ইয়াবা আসক্তিতে। এর ওপর দায়ী হয়ে অছে বন্ধুত্বের প্রণোদনা। আছে এসব নেশাজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতাও। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নৈতিক শিক্ষার অভাব, শিক্ষক সমাজের অনাদর্শিক কার্যক্রম, অভিভাবকদের সচেতনতা ও দায়িত্বহীনতার অভাব এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের উদাসীনতা কি কম দায়ী?
এসবের কারণ অনুসন্ধানের জন্য খুব বেশি জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ, তাত্তি্বক পর্যালোচনা অথবা গবেষণার দরকার পড়ে না। সমস্যা, সমস্যার কারণ, প্রেক্ষাপট, ক্ষেত্র, ধরন, প্রকৃতি এসব যদি আমরা চিহ্নিত করতে পারি তবেই ভুলগুলো কোথায় হচ্ছে তা বের হয়ে আসবে। সহজ কথায় যদি বলি, এই যে জীবনধ্বংসী আকর্ষণ যেভাবে তরুণদের কাছে টানছে_ আমাদের পারিবারিক বন্ধনের সম্মোহনী শক্তি কি সেভাবে কাছে টানতে পারছে? একজন তরুণ-তরুণীর অনাগত ভষ্যিতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা, সমৃদ্ধ জীবনশৈলীর স্বপ্ন যদি তাকে কাছে টানতে পারত তাহলে তারা বিপথে যেত না। তার শিক্ষালয়, শিক্ষক, শিক্ষা কারিকুলাম এবং শিক্ষা শেষে তার সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন যদি তাকে কাছে টানতে পারত, তবে সে কেন বিপথে পা বাড়াবে? তার মানে আমরা অভিভাবকরা, শিক্ষকরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতি ও রাষ্ট্র তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সৃজনশীল ও কর্মময় সাফল্যম-িত জীবনের স্বপ্নের বীজটুকু বুনে দিতে পারছি না। এই দায় কী করে এড়িয়ে যাবে অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজ এবং রাষ্ট্র?
পুলিশ প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের এই মরণ নেশার জালে একবার জড়িয়ে পড়লে কেউ আর সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না। এ কারণে মাদকসেবীরা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে ওঠে তাদের জীবন যাপনে। দেশের সর্বত্র ইভ টিজিং, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, খুন, পারিবারিক সহিংসতা এমনকি সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও এই মাদকাসক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, নেশার জগতে দীর্ঘদিন ধরে রাজা হয়ে বসে আছে হেরোইন, বর্তমানে নতুন রানীর নাম দ্য কুইন। নেশার জগতে নতুন সংস্করণ ইয়াবা এখন বাজারে এসেছে 'ইয়াবা প্লাস' নামে। তরুণ-তরুণীদের ভাষায় দ্য কুইন। কারণ হচ্ছে, হেরোইন সাধারণত ছেলেরা সেবন করে, মেয়েদের মধ্যে হেরোইনসেবীর সংখ্যা সীমিত। আবার ইয়াবার নেশায় মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক হারে। জানা গেছে, ইয়াবা দিয়ে নেশার জগতে প্রবেশের পর আসক্তরা অন্যান্য নেশায়ও জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবা মস্তিষ্কের রক্তবাহী সূক্ষ্ম নালীগুলোকে ধ্বংস করে ব্রেন স্ট্রোক ঘটাতে পারে। এটি কোকেনের চেয়েও মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মাদক এবং প্রতিক্রিয়া কোকেনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত, ইয়াবায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ক্যাফেইন রয়েছে। এ কারণে ইয়াবা আসক্তরা শেষ পর্যন্ত মানসিক বিকারগ্রস্তও হতে পারে। আমরা ঐশীর ক্ষেত্রে যা দেখলাম তা মানসিক বিকারগ্রস্ততার নমুনা নয় তো কী?
বিভিন্ন বিশ্লেষণে জানা গেছে, ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা এরই মধ্যে ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরো বেশি। আবার ইয়াবা আসক্তদের মধ্যে তরুণ সমাজের সংখ্যা বেশি হলেও তরুণীরা জড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর খবর হলো আসক্তদের অধিকাংশই উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই চিত্র এবং এর পরিণতি গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর। কারণ আমরা একদিকে আমাদের তরুণ সমাজের সম্ভাবনাকে হারাচ্ছি, অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ইতিবাচক-ঐহিত্যগত শক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে। না হলে জাতীয় সভ্যতা আর ঐতিহ্য বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
আইসিডিডিআরবির তথ্যানুযায়ী, আসক্ত ব্যক্তির দৈনিক মাদক সেবনের খরচ গড়ে ১৩০ টাকা। তবে গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যে এই খরচ দৈনিক গড়ে ৭০০ টাকা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মাদকসেবীরা বছরে গড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের তরুণ-তরুণীরা তাদের জীবনের অমিত সম্ভাবনা, তাদের সৃজনী ক্ষমতা আর বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে অকালে ধ্বংস করে দিচ্ছে। পারিবারিক সম্পর্কের স্নেহ-মমতার মায়াজাল ছিন্ন করে নেশায় কবলিত হয়ে বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ববোধ বিসর্জন দিচ্ছে মাদকের গড্ডলিকায়। নেশাগ্রস্তরা নেশায় আসক্ত হয়ে টাকার জন্য বা পারিবারিক কলহের কারণ হয়ে সন্তানের হাতে খুন হচ্ছে বাবা-মা ও ঘনিষ্ঠজনেরা। এই সামগ্রিক সামাজিক অবক্ষয়ের সূত্রপাত ঘটছে পরিবার থেকেই। পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ এর জন্য দায়ী। তাই সন্তানকে নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। অভিভাবকদের সন্তান সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে। আধুনিকতা আর স্মার্টনেসের নামে ছেলে-মেয়েদের এভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাদের ভবিষ্যতের সুন্দর ও অনাবিল আনন্দের জীবনকে উপভোগ করার জন্য দিকনির্দেশনা দিতে হবে। আবার সমাজে অনেক তরুণ ভালো কাজ করছে, সাফল্য অর্জন করছে, সামাজিক ও মানবিক ক্ষেত্রে বিরল ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তও স্থাপন করছে। এসব উদাহরণ তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। এসব নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষা কারিকুলামে এসব গল্প উঠে আসতে পারে। আবার প্রতিদিনের খবরের কাগজ থেকে ইতিবাচক ও সাফল্যের খবর ক্লাসরুমের আলোচনায় চলে আসতে পারে।
মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দুটো দিক আছে। ভালোটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এখন ঘরে ঘরে হাতে হাতে মোবাইল ফোন। অভিভাবকের দৃষ্টির অগোচরে প্রিয় সন্তানের মোবাইল ফোনে আছে পর্নো ভিডিও ক্লিপ। সাইবার ক্যাফেগুলোয় খুপি ঘর বানিয়ে কিশোর-তরুণদের পর্নো সাইডের অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি দেখার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় কম্পিউটার ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান থেকে মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে উত্তেজক গান, দৃশ্য, ভিডিও ক্লিপস লোড করে নেয়া যায় সহজেই। এসব সামাজিক অনাচার বন্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হলেও সচেতন হয়ে সোচ্চার হতে হচ্ছে সমাজকে। এরও আগে জেগে উঠতে হবে অভিভাবকদের। তবে এত অল্পতে ভয় পেয়ে গেলে হয়তো চলবে না। কারণ আরো ভয়ঙ্কর দিন হয়তো অপেক্ষা করছে সামনে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের নামিদামি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক ছাত্রী মাদকাসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেশে শতকরা প্রায় ১০ জন তরুণী ও বয়স্ক মহিলা মাদকাসক্ত, এদের মধ্যে শতকরা তিনজন গৃহবধূ। এক জরিপে দেখা যায় মাদকাসক্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে শতকরা ১৫ এবং ৮২ ভাগই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মাদকাসক্তির কারণে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় মহিলারা উল্লেখযোগ্য হারে মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতিসংঘের এক জরিপে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ লোক মাদকাসক্ত। কারো কারো মতে, এ সংখ্যা ৮০ লাখেরও বেশি, যার প্রায় ৭ শতাংশই স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী।
ইউনাইটেড স্টেটস ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'পিতা-মাতাই পারেন তাদের সন্তানকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে'। কাজেই বাবা-মায়ের সময়ের কিছুটা অংশ সন্তানের পেছনে ব্যয় করতেই হবে। কারণ আপনার সামান্য অবহেলা আর উদাসীনতায় আপনার সারা জীবনের প্রচেষ্টা, ত্যাগ, সাধনা আর অর্থ বিনিয়োগ বৃথা যেতে পারে। সন্তানের অসুবিধাগুলো বুঝতে এবং পারিবারিক সম্প্রীতির চর্চায় এর সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। বাবা-মায়ের সাহচর্যে বেড়ে ওঠা সন্তান হঠাৎ করেই বিপথে যেতে পারে না।
এস এম মুকুল: ফিচার ও কলাম লেখক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন