সাপ্তাহিকী
|
আরিয়ানা শাওলী মজুমদার
|
|
মানবাধিকারে নেই কোন বর্ডার
08 Sep, 2013
ফেলানী একটি নাম, একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশের সুবিধা বঞ্চিত নাগরিক, অভাবী পরিবারের একজন নিরীহ কিশোরী । ক্ষুধার্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে অন্নের সংস্থানে ওপারে যার ছিল অবৈধ যাতায়াত । হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার আগে ফেলানীরা আমাদের দলীয় রাজনীতির উপজীব্য বিষয় হতে না পারলেও কাঁটাতারে ঝুলন্ত প্রাণহীন ফেলানী তথাকথিত রাজনীতির (দুঃখিত) দৃষ্টিকাড়া হৃদয় বিদারক পোষ্টার । জীবন্ত ফেলানীরা আমাদের রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন না । ফেলানীদের কেন ওপারে যেতে হয়, কেন নিঃলজ্জ্বের মত ওপারের অহংকারীদের বৈষম্যের কাঁটাতার ডিঙ্গাতে হয়, কেন পাখি শিকারের মত জীবন দিতে হয় । এ নিয়ে উচ্চবাচ্য মায়াকান্না জীবন্ত ফেলানীদের ভাগ্যে জোটে না । জোটে যা, তা শুনতে অদ্ভূত শোনায়, ক্ষোভ জন্মায়, ব্যথিত করে- কোন আমলে কয়জন বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে তার হিসেব-নিকেশের বে-শরম রাজনীতি ।
জীবন দিয়ে অর্জিত দেশে জীবনের সুরক্ষার দায়িত্ব কার ? ভাগ্য, বিধাতা নাকি রাজনীতিবিদদের ! এ কেমন রাজনীতি ! রাজনীতিবিদরা পালাক্রমে লুটেপুটে খাবেন, আর ফেলানীরা ক্ষুধার অন্ন জোগাতে জীবন দিবেন ! আর কত উপহাস করবেন ফেলানীদের জীবন নিয়ে ! টিভির পর্দায় তাকালে চোখ-কর্ণ জুড়িয়ে আসে দুই প্রধান দলের পক্ষে সুশীলদের ওকালতির টকশো দেখে । সমাজের চিন্তা-ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গী, মর্যাদা ও ফেলানীদের অধিকার নিয়ে সুশীলরা যদি নাই বলেন । সমাজের বিবেক ও দৃষ্টিভঙ্গী যদি নাইবা গড়েন । কোন না কোন দল বা নেতার পক্ষে স্তূতিবাক্য ও বন্দনাই যদি সুশীলরা তাদের কর্ম মনে করেন । জানতে ইচ্ছে করে দালালের কর্ম কী ?
ফেলানী যদি পশু-পাখি বা জন্তু-জানোয়ারের গর্ভে জন্মাতো, দেখা যেত স্বজাতিরা সব আকাশে উড়ে বা গাছের ঢালে বসে বা দল বেঁধে জঙ্গল দাপিয়ে করছে আর্তনাদ আহাজারী আর প্রতিবাদ । ফেলানীতো আর পশু-পাখি বা জন্তু-জানোয়ার গোষ্টির নয়, ফেলানী আমাদের মানব জাতি-গোষ্টীরই একজন । আর আমরা মানবরা করছি কী ? ভেবে দেখেছেন কী ? ভীন দেশে ফেলানীর অনধিকার অনুপ্রবেশ ন্যায়-অন্যায় ও আইনের দৃষ্টিতে হত্যা যোগ্য অপরাধ কী ? কিশোরী ফেলানী কাঁটাতার ডিঙ্গানো অবস্থায় কাছ থেকে সরাসরি গুলি করে হত্যার ক্ষেত্রে আইন-আদালত বলছে কী ? বিচারের নামে দেখছি যতসব প্রহসন । বিএসএফ করেছে হত্যা, হয়েছেন বাদী, হয়েছেন বিবাদী, সেজেছেন সাক্ষী, করেছেন ইনক্যুয়ারী, হয়েছেন বিচারক, সাজিয়েছেন বিচারিক আদালত । স্বীকৃত হত্যাকারী পেয়েছেন বেকসুর খালাস । এতে কতটুকু রক্ষিত হয়েছে ন্যায়-বিচার ? আর কতটুকু রক্ষিত হয়েছে মানবাধিকার ? কোথায় সব বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীর দল ? এপার বলুন আর ওপার বলুন, মানবাধিকারের নামে বিশ্ব চষে বেড়ানো সব বিজ্ঞ, মহাবিজ্ঞ, দ্যোদন্ড প্রতাপের বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীর দল । কেন বলতে পারছিনা ? মানবাধিকারে নেই কোন বর্ডার। এপারে হোক আর ওপারে হোক অন্যায় ভাবে মানব হত্যায় মানবাধিকার কর্মী হতে হবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে সোচ্চার ।
লেখকঃ প্রবাসী, জাপান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন