( দ্বিতীয় কিস্তি )
গুজবে কান দিবেন না, এটা কি সম্ভব ! কানে তালা দেয়া গেলে বা কান খুলে রাখা সম্ভব হলে না হয় তা করতেন । বধির হলে তাও হতো । সমস্যা থেকেই গেল বধির যদি পড়ালেখা জানা লোক হয় । গুজব পড়তে বারণ করা হয়নি কেন ? নাকি এই প্রবাদ প্রবচনটি যখন চালু হয় তখন শিক্ষা দীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না । যাহোক, গুজবের জন্ম বৃত্তান্ত ও শিক্ষার বিকাশ নিয়ে না হয় অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে । আসুন, দৃষ্টি রাখি জয়ের জয় বিষয়ক তথ্যে ।
গুজব নং দুই ) আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসবেঃ সজীব ওয়াজেদ জয় ।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই একটি কথা থেকে জন্ম নিয়েছে অনেক কথা অনেক আলোচনা-সমালোচনার । এই কথার অন্তরালে কেউ খুঁজছেন দলীয় কর্মীর উৎসাহ উদ্দীপনার কথা, কেউ খুঁজছেন পর্দার অন্তরালে ষড়যন্ত্রের আলামতের বাস্তবতা । আবার কেউবা খুঁজছেন আজগুবী সব গুজবীয় ধারনা । এটা ঠিক, গুজব যদি আজগুবী ধরনের হয়, তা কেউ বিশ্বাসে নেন না । আবার ঐ গুজবটি সত্যি হয়ে ধরা দিলে তা হয়ে পড়ে কাকতালীয় বা ষড়যন্ত্র বা কূটকৌশলের অংশ । বর্তমান ভোটার সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্যটি আজগুবী বিবেচিত হওয়ারই কথা আর এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে ঝড় ওঠার প্রশ্নও ওঠে না । কারন মোটামুটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ঠেকায় কে ? বিএনপি জোট তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রবর্তনে জোড় আন্দোলনের হাকঢাক ও রণ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আছে । সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতির এহেন বাস্তবতায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার তথ্যটি এ্যান্টি আওয়ামী শিবিরকে বিচলিত করবে, ভয় ধরাবে, পীড়া দিবে, এটাই স্বাভাবিক । আবার দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তাও আছে, অজানা আশংকাই কী সত্যি হতে যাচ্ছে ? সত্যিই কী সরকার প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটতে না দিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার কোন ছক তৈরী করে রেখেছেন । না হয় সজীব ওয়াজেদ জয় এমনটা বলবে কেন ?
জয়কে এ্যান্টি আওয়ামী শিবিরের সুখ স্বপ্ন ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা যায় কিন্তু এজন্য জয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ! রাষ্ট্রদ্রোহসম অপরাধ বিষয়ক কোন খবর পত্র পত্রিকায় এসেছিল কিনা তা আমার জানা নেই, কারন ঐ দিনটিতে আমি ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছিলাম, তাই জয়ের তথ্য ও তথ্যের প্রতিক্রীয়া জানা ছিল না । জয়ের তথ্যটি রাষ্ট্রদ্রোহসম অপরাধ বলে মন্তব্যটি শুনেছি জাপান প্রবাসী বিএনপিমনা একজন রাজনীতিকের কন্ঠে । প্রবাসী রাজনীতিক জয়কে রাষ্ট্রদ্রোহ তুল্য অপরাধী বলাটা তুলে ধরেছি এ্যান্টি আওয়ামী মানুষিকতা সম্পন্ন নাগরিকদের মানুষিক অবস্থাটা বুঝাতে, এই মন্তব্যটি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তাৎপর্য্য থাকলেও আইনী যৌক্তিকতা অবশ্য নেই । মোটকথা অপছন্দের দলটির শাসন অবসান যখন সময়ের ব্যাপার আর ঐ সময়ে জয়ের তথ্য বিক্ষুব্ধ, ব্যথিত করবে এটাই স্বাভাবিক ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল থাকলে জয়ের এই বক্তব্যটি ন্যূনতম গুরুত্ব পেত কিনা সন্দেহ আছে । কারন একটাই তা হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অর্থাৎ সরকার পরিবর্তনের নির্বাচনের সুখকর ইতিহাস আমাদের রাজনীতিতে নেই । তাই বর্তমান সরকার নির্বাচনে নিরপেক্ষ আচরণ করবে, এ বিশ্বাস জনমনে নেই বললেই চলে । তবে আওয়ামীলীগ সরকার তা করতে পারলে আমাদের গনতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে নতুন যুগের শুভ সূচনা হবে ।
যাহোক, আওয়ামীলীগের নেতারা গন্ধ হাওয়া বিশ্বাস ও ওবামাকে না টেনে যদি বলতেন- আওয়ামীলীগে জয় আসবে বা জয় আওয়ামীলীগের ঘরেই থাকবে বা জয় আওয়ামীলীগের না হয়ে পারে না । তা আপনি আজগুবী মনে করলেও আমি শতভাগ নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, এটি গুজব বা আজগুবী কিছু নয় । যেভাবেই হোক জয় আওয়ামীলীগেই থাকবে, জয় বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয় । নিশ্চয় ভাবছেন আমি গাঁজাখুড়ি কিছু বলছি । অসুবিধা কি ? গাঁজার নৌকা নাকি পাহাড়েও চলে । আমিও না হয় একটু চালিয়ে দেখলাম । দেখুন, তা কিন্তু নয় , আমি সত্য সত্যই জেনে শুনে বলছি জয় বিএনপির হতেই পারে না কারন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ধারাবাহিক উত্তরাধিকারী জয় অর্থাৎ সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামীলীগেই থাকবে বিএনপিতে নয় ।
প্রধানমন্ত্রীর তনয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের তথ্যটিকে হালকা করার জন্য আওয়ামীলীগের সাঃ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বললেন- আমার কাছে তথ্য নেই তবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি গন্ধ পাচ্ছি আওয়ামীলীগই আগামীবার ক্ষমতায় আসবে । আর আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম মেম্বার মোহাম্মদ নাসিম বললেন- হাওয়া বদলে গেছে । অর্থমন্ত্রী মুহিত বললেন- সজীব ওয়াজেদ জয়ের মত আমার কাছে তথ্য না থাকলেও বিশ্বাস আছে আওয়ামীলীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে । আর যে যুবলীগের ইফতার অনুষ্ঠানে জয় এ্যটম বোমাটি ফাটালেন সে যুবলীগ বিবৃতি দিলেন জয়ের বক্তব্য ওবামার নির্বাচনী বক্তব্যের সাথে তুলনীয় । এতেও যখন বিরোধীদলের অস্থিরতা কাটছিল না তখন জয় আত্মপক্ষকে যৌক্তিকতা দিতে বললেন- আন্তর্জাতিক জরীপ প্রতিষ্ঠান দিয়ে ওনি জরীপ করিয়েছেন এবং সেই জরীপেই আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসার তথ্যই দিয়েছে ।
জয়ের তথ্যকে নিয়ে বিএনপির ওপর ভর করা ভয়কে সরকার গন্ধ, হাওয়া ও বিশ্বাসের কথা বলেও হালকা করতে পারেনি । বলতে পারেন সরকার যতই বিষয়টা হালকা করার চেষ্টা করছে উল্টো বিএনপির সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে । তাই বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা বললেন- জয়ের বক্তব্য দুরভিসন্ধি ও চক্রান্তের আলামত দিচ্ছে । আর বিএনপি মুখপাত্র রিজভী আহমেদ বললেন- এটা জয়ের কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য । এনিয়ে জনৈক টিভি টকশো আলোচক মজা করে বললেন- বাড়া ভাতে ছাই দিলে যা হয়, বিএনপির হয়েছে সেই দশা । জয় বিএনপির স্বপ্নভঙ্গের দায়ে দুষ্ট ।
এটা ঠিক, সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম দিনই জরীপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখপূর্বক বক্তব্যটি রাখলে অন্য ধরনের বিতর্কের সূত্রপাত ঘটালেও অবিশ্বাসের ধূম্রজালের ব্যাপকতা পেত না । কারন আমাদের সামাজিক বংশ পরিচয়ে বিশ্বাস বংশ থাকলেও রাজনীতিতে বিশ্বাস নেই । এদেশে কেউ একবার ক্ষমতার স্বাদ পেলে ছাড়তে চায় না । আওয়ামীলীগ-বিএনপির চাইতে দুর্বল রাজনৈতিক ভীত নিয়ে এরশাদ যদি নয় বৎসর ক্ষমতায় থাকতে পারে, সেই তুলনায় আওয়ামীলীগতো অনেক বেশী সুসংহত । ভয় শংকা আশংকা একটাই, এদেশে ক্ষমতার ভূত একবার পেয়ে বসলে ছাড়ায় কে ! ভূত তাড়ানোর তত্ত্বাবধায়কই তাড়িয়েছে আওয়ামীলীগ । আওয়ামীলীগ যতই বলুক, আমরা শত-সহস্র নির্বাচন নিরপেক্ষ করিয়েছি, শেষটাও করাব । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ৩০০ মধ্যে কয়টা করাবেন ! ১৫০ টা উল্টে দিলেইতো যে লাউ সেই কদু । জয় বলুন আর জয়ের তথ্য বলুন । তখন কি আর গুজব থাকবে !
ও হ্যাঁ, আগেও বলেছি, এখনও বলছি -গুজবে কান দিবেন না । তবে গুজব পড়তে এবং ছড়াতে নিষেধ করার জন্য কোন নীতি বাক্য নাই । তাই পক্ষে গেলে আরো রং মেখে ছড়িয়ে দিন, আর বিপক্ষে গেলে চেপে যান ও পরবর্তী গুজবটিতে চোখ বুলান, দেখেন যদি কিছু পাওয়া যায় ।
গুজবের সমার্থক বা পরিপূরক এরশাদ কার ঘরে থাকবেন ?
( তৃতীয় ও শেষ কিস্তি )
গুজব শব্দটির জীবন্ত রূপ আমাদের রাজনীতিকদের মধ্যে আছে । নিশ্চয় ভাবছেন, কী যা তা বলছি ! তা কিন্তু নয় । যে দেশের রাজনীতিতে এরশাদের মত রাজনীতিক আছে, সেখানে অসম্ভব বলতে কিছু থাকতে পারে কী ! সবই সম্ভব । এরশাদই গুজবের জীবন্ত রূপ । এককথায় বলতে পারেন এরশাদ এবং গুজব সমার্থক ও পরিপূরক । কারন গুজবে যেমনি বিশ্বাস নেই এরশাদেও বিশ্বাস নেই । আমরা যেমনি সকালের গুজবের উল্টো গুজব বিকেলে শুনতে পাই । আমাদের এরশাদ সাহেবও সকালে যা বলেন বিকেলে ঠিক তার উল্টোটিও বলতে পারেন । আগেও বলেছিলাম গুজবে কান দিবেন না, না বলে কেউ যদি বলেন -এরশাদে কান দিবেন না, তা নিশ্চয় ভুল বলা হবে না । পেন্ডুলামের মত এরশাদ এদিক ওদিক করলেও ক্ষমতাই মূল কেন্দ্রবিন্দু । আসুন, কান নয় দৃষ্টি রাখি পেন্ডুলাম এরশাদের ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার গুজবে ।
গুজব নং তিন ) এরশাদ ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে আওয়ামী জোটেই থাকবে ।
এরশাদকে নিয়ে গুজব লিখার সাধ থাকলেও সাধ্যি নাই । যার জীবনটাই আজগুবী সব কান্ডকারখানায় ভরপুর । কোনটা ধরব, কোনটা ছাড়ব আর কীভাবে লিখাটি এগিয়ে নিব । এ নিয়ে কনফিউসড্ হচ্ছি কারন এরশাদ সাহেব কোন বিষয়েই স্থায়ী নন । ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিভার অধিকারী এরশাদ, ক্ষমতার প্রতিভায় উদ্ভাসিত হয়ে গান কবিতা কত কিছুই না লিখতেন । ক্ষমতার সাথে সাথে প্রতিভাও নাই হয়ে গেছে । স্মৃতিপটে এখনও অম্লান এরশাদ স্বরচিত গানের মডেল হয়ে বন্যায় গলা পানিতে নেমে সহযোগিতার দৃশ্য, জাতীয় দৈনিক গুলিতে লম্বা-চওড়া কবিতা, রওশন এরশাদের গর্ভে সাদ এরশাদের জন্ম ! আরও কত কী ! যার লেশমাত্র এখন আর নেই । অনেক নাই এর মধ্যেও এরশাদ সাহেবকে নির্বাচনী জোটে পেতে আওয়ামীলীগ বিএনপির কাছে কদর ঠিকই আছে । প্রতিটা নির্বাচনকে সামনে রেখে সুচতুর এরশাদও তার অতীত পাপগুলোকে (মামলা) হালকা করার চেষ্টা করেন । আর এজন্যই এরশাদ ক্ষমতার পাশে থাকতে বিভিন্ন কৌশলে ওৎ পাতেন ।
যাহোক আসুন, বর্তমান হিসেব-নিকেশে এরশাদ সাহেব কার হবেন, তা বুঝার চেষ্টা করি । বাস্তব নিরীখে বিএনপির পক্ষে থাকার সম্ভাবনাই বেশী । কারন সিটি কর্পোরেশন রেজাল্ট সে ইঙ্গিতই দেয় । কিন্তু কেউ যদি বলে এরশাদ আওয়ামী জোটে থাকবে । হয়ত কম লোকই তা বিশ্বাস করবেন । কারন আওয়ামীলীগ এরশাদকে প্রেসিডেন্ট বানায়নি, একটি মাত্র মন্ত্রীত্ব দিয়েছে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আশানুরূপ পাননি । অন্যদিকে আওয়ামীলীগের বর্তমান ভোটার জনপ্রিয়তাও হতাশাব্যঞ্জক । কিন্তু আমি অবাক হব না এরশাদ যদি মহাজোটে থেকে যায় অথবা মহাজোটের নাটকে আলাদাভাবে নির্বাচনী নাটকে অংশ গ্রহন করে । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসবে আমি কী আমার বিশ্লেষণকে ঠিক মনে করছি না । কারন আমি বলেছি এরশাদ ক্ষমতার পাশে থাকবে । ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও বেশী বিএনপির । তাহলে মহাজোটে এরশাদ থাকবে কীভাবে । হ্যাঁ থাকবে, যদি আওয়ামীলীগ যেভাবেই হোক ক্ষমতায় আসার নিশ্চয়তা এরশাদকে দিতে পারে অথবা বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কট করে । আমি নিশ্চিত ঐ সরকারটি গ্রহন যোগ্যতা পাক, না পাক অথবা কতদিন টিকবে, কী টিকবে না, তা এরশাদ বিবেচনায় আনবে না । আমার বিবেচনায় এরশাদ একদিনের জন্যও ক্ষমতার বাহিরে থাকতে চাইবে না । যদি এরশাদ ত্যাগ স্বীকারের মানুষিকতাই রাখত তাহলে মহাজোট ছাড়ছি ছাড়ছি বলতেন না, অনেক আগেই ছাড়তেন । এজন্য আওয়ামীলীগ বড়জোড় কিছুদিন এরশাদকে কারাগারে রাখতে পারতেন, এর বেশী কিছু নয় । এতে এরশাদের জনপ্রিয়তা বাড়ত এবং বর্তমান সরকার বিদায়ের রাস্তা খুঁজতে বাধ্য হতেন । বর্তমান সরকারকে হঠাতে ভূমিকার জন্য বিএনপি নিশ্চয় এরশাদকে পুরস্কৃত করত । এরশাদ যেহেতু এসব কিছু করছেন না, তাহলে এরশাদকে বিএনপিতে ভাববেন কীভাবে ? এরশাদের সাথে আওয়ামীলীগের গোপন সমঝোতা হয়েছে বলেই মনে হয় । আর এরশাদের মুখে কখনও শুনছি মহাজোটে থাকছিনা আবার কখনও শুনছি মহাজোটে আছি এবং থাকবো । এসবে দুরন্ধর এরশাদ কর্তৃক জনগনকে বিভ্রান্ত করার অনৈতিক কৌশল ছাড়া অন্য কোন অর্থ খুঁজে পাই না ।
তারপরও যদি বিশ্বাস না হয়, আপনাকে কিছুটা অতীতে যেতে বলব, দেখুন ২০০১-২০০৫ সালের সরকারে হাওয়া ভবন, দশ ট্রাক অস্র, গ্রেনেড হামলা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, এমপি আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যাকান্ড ও ৬৩ জেলায় জঙ্গীদের বোমা ফাটানোর মহড়ায় সরকাটির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামার পরও এরশাদ বিএনপি জোটে ডুকতে চেয়েছিল । তাই খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে পল্টনে বক্তব্যও করেছিলেন । কারন এরশাদ জানতেন বিএনপি দেড় কোটি ভূঁয়া ভোটার তৈরী করেছে, দল অনুগত নির্বাচন কমিশন বানিয়েছে ও দল অনুগত যে তত্ত্বাবধায়ক সাজিয়েছে, এতে বিএনপি অনায়েসে সরকার গঠনে সক্ষম হবে । কিন্তু লগি বৌঠার আন্দোলন ও পরবর্তীতে ১/১১ সরকারের দুই বৎসর উল্টে দিল সব হিসাব-নিকাশ, সম্ভাবনা তৈরী হল আওয়ামীলীগের পক্ষে । আর এরশাদও যথারীতি উল্টে চলে গেলেন আওয়ামী জোটে । তাহলে বলুনতো এরশাদ কার ? আওয়ামীলীগের নাকি বিএনপির ? এক কথায় বলতে পারেন, যে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকবে, এরশাদ তারই হবে । নীতি-নৈতিকতা, বৈধ-অবৈধ ও ভাল-মন্দ এসব বিবেচ্য বিষয় নয় । এরশাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে যেভাবেই হোক ক্ষমতার অংশীদারিত্ব চাই । আওয়ামীলীগ যদি তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রবর্তন না করে বা নিরপেক্ষ প্রধানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার গঠন না করে বা বিএনপির আন্দোলনে সরকারের পতন না হয়, এরশাদকে আওয়ামী জোটের সাথেই পরবর্তী সরকারেও হিসেবে দেখতে পাবেন ।
এছাড়া বিএনপির আন্দোলনের হুমকী-ধামকীতেও সরকারী দলের অনঢ় অবস্থান এবং এক চুলও না সরার দৃঢ় প্রত্যয়ের মূল শক্তি যে এরশাদ, এটা সহজে অনুমেয় । শেষ পর্যন্ত এরশাদ আওয়ামীলীগের পাশে থাকবেনা, এ ধরনের সম্ভাবনা থাকলে শেখ হাসিনার সরকারের নেতাকর্মীদের নমনীয় বক্তব্য আমরা দেখতে পেতাম । কারন এরশাদ সরকারী দলের জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আওয়ামীলীগের পক্ষে আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক কোন ষড়যন্ত্রই সম্ভব না । তাই গুজব বলুন আর সমীকরণ বলুন এরশাদ আওয়ামী জোটের কৌশলিক পার্টনার হিসেবে থাকার সম্ভাবনাই বেশী ।
এ পর্যন্ত তিনটি কাল্পনিক গুজবের সমীকরণকে কমবেশী যুক্তিতর্ক সহ উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি । কাল্পনিক গুজব গুলি কালো কালিতে লিখা হয়েছে সত্য । কিন্তু যখন ধীরে ধীরে বাস্তব পর্দায় চিত্রায়ন শুরু হবে তখন কমবেশী রক্ত, জীবন ও সম্পদহানি ঘটাবে । কালো কালির গুজব গুলো বাস্তবায়নে যেন রক্তের লাল রং এ রঞ্জিত না হয়, সাধারন নাগরিক সমাজ তাই প্রত্যাশা করে । জনগন রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে নির্ভেজাল ও নির্ঞ্চান্ট গনতন্ত্রের সফলতা কামনা করে ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন