যে কোন দেশ, জাতি বা ব্যক্তির আত্মপরিচয়ের মূল স্তম্ভ সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতির প্রকাশ প্রায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে। উদাহরণসরূপ বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষ আত্মপরিচয়ের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছিল । সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের আর্বিভাব নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে সবার মাঝে। দিয়েছে এক সম্মানের স্থান বিশ্ব দরবারে। কিন্তু কোন দেশের সংস্কৃতির ভীত একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে তৈরী বা নির্মাণ হতে পারে না। তার প্রভাবে হউক বা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে হউক আরো নতুন মাত্রা যোগ করে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। দু:খজনক হলেও সত্যি কেউ কেউ বাংলা সাহিত্য মানেই কেবল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বুঝান। এমনকি সকল চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে রবীন্দ্রনাথকে রেখে তাঁর পূজায় ব্যস্ত। এমন প্রচারণা সত্যকে কেবল আড়ালই করছেনা, আমাদেরকে সাম্প্রদায়িকও করে তুলছে। ২৫ শে মে বা ১১ই জৈষ্ঠ নজরুলের জন্ম বার্ষিকীতে যখন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সমালোচকেরা নজরুলের উপর আলোচনায় উদাসীন থাকেন আমরা কেবল ক্ষুদ্ধই হই না, চরম হতাশও হই। কারণ সেদিন সে সমস্ত সমালোচকেরা নীরব না থেকে ’রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরী?’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তখন তাদের এই হীন চেষ্টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করব এবং তাদের মানসিকতাকে কিভাবে দেখব বুঝতে বেশ কষ্ট হয়। কারণ তাদের হেন আচরণ জাতির সাথে প্রতারণার সামিল। তেমনিভাবে নজরুলের প্রতি হীন বিদ্বেষও প্রকাশ পায়।
উল্লেখিত প্রবন্ধে জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ”রবান্দ্রনাথ কেবল বৃহৎ নন, বৃহৎ তো তিনি অবশ্যই তিনি মহৎও। তার এই মহত্ত্বের নানা মাত্রা আছে।” রবীন্দ্রনাথ মহৎ এনিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, কিন্তু তিনি ’মহৎ’ এবং তার ’মহত্বের’ নানা মাত্রা রয়েছে -এ বিষয়ের বিষদ ব্যাখ্যা দরকার ছিল। কিন্তু ব্যাখ্যা পাইনি এবং কিসের ভিত্তিতে ’মহৎ’ ও ’মহত্ব’ মাপা হয়, তার সরূপ কী তার ব্যাখ্যা নেই। একটু পরেই তিনি আবার বলেন, ”বাংলার কৃষক খুবই পরিশ্রমী, রবীন্দ্রনাথের মধ্যে সেই শ্রমশীলতা দেখি আমরা; কিন্তু কৃষক বাধ্যতামূলকভাবেই স্বল্পে সন্তুষ্ট, রবীন্দ্রনাথ যেটা ছিলেন না। এক কথায় বলতে গেলে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথের মূল ভূমিকাটি ছিল সাংস্কৃতিক।” এখানে কৃষকদের সাথে তুলনাটি অসামঞ্জস্য। কারণ কৃষক তার ক্ষেত্রে ’বৃহৎ’ ও ’মহৎ’। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ’বৃহৎ’ ও ’মহৎ’¡। সেই সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কৃষককে চিত্রায়িত করার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিলেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোন বাস্তব পদক্ষেপ তিনি না সাহিত্যে, না বাস্তবে নিতে পেরেছেন বা নেননি। কিন্তু এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শোষক, মহাজন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কেন মনে করলেন বাঙালির অস্থিত্ব যতদিন থাকবে, ততদিন রবীন্দ্রনাথের গানই কেবল থাকবে। নজরুলের গান কী থাকবে না? কোন ক্ষেত্রে নজরুলের গান মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেনি?
সবচেয়ে আপত্তিজনক যে কথাটি তিনি বলেছেন, তা প্রথমে হুবহু তুলে ধরতে চাই। ”জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ তিনি যতটা কার্যকর সাংস্কৃতিকভাবে করেছিলেন তেমনভাবে অপর কোনো ভারতবাসী করতে পারেননি। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, স্বভাবতই। কিন্তু পরে এর উগ্র ও সাম্প্রদায়িক প্রবনতা দেখে পিছিয়েও এসেছেন।” তার কথাতেই রবীন্দ্রনাথের দ্বিধা-দ্বন্ধ ফুটে উঠেছে। তাছাড়া একথা মারাত্মকভাবে আপত্তিজনক বেআইনি হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের মত আর কোন ভারতীয় সংগ্রাম করেননি। কিন্তু নজরুলের আন্দোলন ছিল আজীবন। তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবধরনের অন্যায় অত্যাচার ও হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে ছিলেন এক বিপ্লবী সিপাহী।
আমরা জানি প্রথম মহাযোদ্ধত্তর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন প্রাশ্চাত্য উপনিবেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের প্রতি ছিল নজরুলের আকুন্ঠ সমর্থন। ফলে নজরুল তাঁর সমকালীন ইতিহাসের প্রগতিশীল আন্তর্জাতিক চেতনায় অবিভক্ত হয়ে তাঁর সৃষ্টি কর্মকে ওই আদর্শে নিয়োজিত করেন। ------তিনি বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন, সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তাঁকে পাশ কাটিয়ে গেলে স্বরাজরা স্বাধীনতা আন্দোলন কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা বা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তথা জাতীয় মুক্তি আনয়ন করতে সক্ষম হবেনা। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট নজরুল নিজেকে কেবল ভাবাবেগ ও সমাজের চিত্র ফুটে তুলে ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেননা। তিনি সেই আদর্শকে নিজের মধ্যে ধারণ করে আকুন্ঠ সংগ্রাম ও করেছেন। আর নজরুল বিশ শতকে সাম্প্রদায়িকতাকে মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রুরূপে শনাক্ত করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। সেই মর্মকথা উপলব্ধি এবং বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি বলেই আজ একুশ শতকে সাম্প্রদায়িকতা নতুনভাবে মাথা ছেড়ে উঠেছে।
কেউ কেউ নজরুলের বিদ্রোহকে বাঁকা চোখে দেখে থাকেন। তারা মনে করেন, ”তিনি বিদ্রোহী ছিলেন কারণ তিনি যে সম্প্রদায়ে জন্ম গ্রহন করেছিলেন সে সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ও বৈশয়িক পরাজয়ের ক্ষোভ। সামাজিক অধ:পতনের ক্ষোভ তিনি ধারণ করেছিলেন তার হৃদয়ের অন্তস্থলে।” এমন বিভ্রান্তির জবাবে বলা যায় সময় যুগ বা কাল যদি একটি পথ হয় তবে সমাজ শ্রেণি বা জাতি হলো এর একেকটি বাহন আর মানুষ হলো এই বাহনের যাত্রী। সময়ের খাদ ও খানাখন্দে আটকে যাওয়া সমাজ বাহনকে ঠেলে ঠেলে টেনে হিচড়ে মসৃণ পথে উঠাতে যে নির্ভীক যাত্রীরা রাস্তার কাদায় নেমে পুরো জাতিকে উদ্ধার করেন, অন্যদিকে সমাজ বাহনের রাস্তায় কাদায় নেমে পুরো জাতিকে উদ্ধার করেন, অন্যদিকে সমাজ বাহনের রাস্তায় না নামা যাত্রী যখন সেই সমস্ত ঘর্মাক্ত মহাপূরাণ কর্তাদের দেখে নাক সিটকান ভ্রু কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে রক্ষণশীলতা দেখান তখন সেটা হয় অমানবিকতা ও চরম অকৃতজ্ঞতা, অন্ধ অজ্ঞতাও বটে। আর এই সাহসী বীরটি হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম। অতএব তাঁর বিদ্রোহকে বাঁকা চোখে দেখার অর্থই হল নিজেদের হীনমন্যতা ও দৈনদশাকে প্রকাশ করা।
তাই এক্ষেত্রে বলতে হয়, ব্রিটিশ শাষক শোষকদের দুরাচার, অন্যায়, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্য ও লুন্ঠনের প্রতিবাদে সোচ্চার হবার করণে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তথাকথিত ও আরোপিত বিদ্রোহী বলা হলেও যুগপৎ তিনি ছিলেন এক ঐতিহাসিক মহাবিপ্লবী ’জাতীয় বীর’। তিনি ছিলেন শোষিত নিপীড়িত মজলুম জনতার কাতারে মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত একজন ভক্তিবাদী, যুক্তিবাদী, সাম্যবাদী, সর্বোপরি মানবতাবাদী নিবেদিত প্রেমিক এবং সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব। সমাজ সংস্কার ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নজরুল চেতনার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করতে গিয়ে বলা যায়, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম যুগস্রষ্টা-কবি-বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধূ ব্রিটিশ পরাধীনতার বিরুদ্ধে, অত্যাচার-নিপীড়ন-শোষণ- বঞ্চনা সামাজিক ভেদ-বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামী ও কুসংস্কার ইত্যাদি বহুবিধ মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষনা এবং সংগ্রাম করেননি। তিনি বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেক সঙ্কীর্ণতা , সীমাবদ্ধতা, গোঁড়ামী, কুসংস্কার, কুপম-কতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন এবং নানা ধরনের বাধার আগল ভেঙ্গে দিয়ে নিজের সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার কল্যাণেও বৈচিত্র্যময় সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে অনন্য সাধারণরূপে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছেন।
কথাগুলো উপস্থাপনের কারণ রয়েছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে যেমন দাবী করেন, ”সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে তার মনে হয়েছে তিনি তীর্থ ভ্রমনে এসেছেন, বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছেন সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা দেখে, কিন্তু পছন্দ হয়নি ধনবৈষম্যের দূরীকরনের ব্যাপারে বলপ্রয়োগের।” এক্ষেত্রে স্বভাবতই কথা থেকে যায় রবীন্দ্র যুগে বাংলার অবস্থা কেমন ছিল? সহজেই বলা যায় সেসময়ে স্বাভাবীকতা কোথাও ছিল না। ইংরেজদের কবলে সর্বত্র আমরা দাস হয়েছিলাম। সে সময়ে রবীন্দ্রনাথের এমন ভীরুতা কেন ছিল? কেন নজরুলের মত পারেননি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে তিনি লড়তে? যে সংস্কৃতির কথা বারবার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী উল্লেখ করেছেন এবং রবীন্দ্রনাথের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে প্রশ্ন জাগে সাংস্কৃতিক আগ্রসনের বিরুদ্ধে তিনি কতটুকু সংগ্রাম করেছেন? এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলাম সাংস্কৃতিক ধারাকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও বিপ্লব করেছেন। কারণ বিদ্রোহী ও জাতীয কবি নজরুল পরাধীনতার বন্ধন মুক্তির, পুরানো সমাজ ভেঙ্গে নতুন ও উন্নত সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখেননি, তিনি বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিভেদের এবং সঙ্কীর্ণতার আগল ভেঙ্গে নতুন ঐতিহ্য গড়ার ধারা সৃষ্টি করে গেলেন, রেখে গেছেন অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত।
নজরুলের এমন সংগ্রামের কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও বলা যায় নজরুলের উদ্ভব সাধারণ মানুষের ভিতর থেকে তৈরি হয়েছে। মানুষই ছিল তাঁর সমগ্র সাহিত্য ও সঙ্গীত কর্মের অনুসঙ্গ-অনুকল্প ও অনুঘটক। মানুষের সুখ-দু:খ , হাসি-কান্না , আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরোহ, সংগ্রাম –সংঘাত, শান্তি, ভক্তি, মুক্তি, মান-অপমান, পরাধীনতা , আশা-আকাক্সক্ষা, জয়-পরাজয়, অনুরাগ-অভিমান, কাম-বিরংসা-ঈর্ষা, হিংসা কাতরতা, শক্তি প্রবণতা-সমর্পণ-চপলতা-চটুলতা-গভীরবোধ-দর্শন, ভোগ-ত্যাগ, ইত্যাদি সব কিছুকে নিয়েই তাঁর বিধ্যামানতা এবং তাঁর সৃজনকর্ম আবর্তিত্ সম্মানের উচ্চ বাতায়ন থেকে নিচের দিকে তাকাতে হয়নি তাঁকে। মানুষের মধ্যে থেকেই মানুষের কথা গেয়ে উঠতে তাই কেবল জল্পনা সুন্দরীর কৃপা লাভের আয়োজন হয়নি।
নজরুলের গজলের কথা তো শেষ করা যাবে না। ’এত জল ও কাজল চোখ’ ----, ’বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে’ ---’কে বিদেশী মন উদাসী’, ’আধো আধো বোল লাজে বাধো বাধো বোল’ ---- এমনি হাজারো জনপ্রিয় গান তিনি রচনা করেছেন। তাঁর কাব্যগীতির সংখ্যা যেমন বিপুল, জনপ্রিয়তাও তেমনি আকাশচুম্বি। উদাহরণ দিতে গেলে বিভ্রাটে পড়তে হয়, কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলব। তবু কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করেছি- ’মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল’----, ’নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল’, মোর আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম ’ ,’তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়’, ’আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়’ , ’তুমি শোনতে চেওনা আমার মনের কথা’, ---- এমন আরো অনেক গান। নজরুলের সব শ্রেণীর গানেরই এমন অনায়াস জনপ্রিয়তা আর কারও ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি। আপামর বাঙালির কাছে এভাবে বাংলা গান পৌছে যাওয়াটা হয়তো অনেকের কাছে ভালো লাগেনি। তাদের চিন্তায় ছিল , বাংলা গানের রস-আস্বাদানের ক্ষমতা থাকবে সীমিত জনের। যাঁরা কবির কাছের জন, বুঝে বা না বুঝে হোক সৃষ্টির পর প্রথম শ্রোতা হওয়ায় এবং বাহবা দেয়ার সুযোগ তাঁদের থাকবে। ঘরোয়া পরিবেশে পরম রসজ্ঞের মতো যাঁরা মাথা দোলাবেন , কবির স্নেহধন্য হওয়ার সুবাদে তা গাইবার সুযোগ পাবেন, বাংলা গান শোনার , বোঝার ও গাওয়ার অধিকার শুধূ তাদের।
ধর্মীয় উম্মদনা ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়েও বর্তমান বিশ্বে ব্যপক কথা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন , ” রবীন্দ্রনাথের তপোবন অতীতের স্মৃতি, গান্ধীর রাম রাজ্য ভবিষ্যতের স্বপ্ন। গান্ধী মোটেও সাম্প্রদায়ক ছিলেন না; ধর্মের চেয়ে মানুষ বড় এ তিনি সর্বদাই বলেছেন। কিন্তু গান্ধী যে ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন সেটাও সত্য। কাজটা তিনি শুরু করেননি, মিশ্রনের ব্যধি আগেই ছিল, কিন্তু এই ব্যাধিকে তিনি নিরুৎসাহিত না করে বরঞ্চউৎসাহিত করেছেন।” অপর পক্ষে নজরুল সারা জীবন ছিলেন সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের পক্ষে। এই ক্ষেত্রে গান্ধীজী মানসিক গোলামীতে মজ্জআগত হয়ে পড়েছিলেন, সেখানে নজরুল ছিলেন স্বাধীন। এ প্রসঙ্গে নজরুলের বিদ্রোহ ও অবস্থান ছিল লক্ষণীয় , তিনি বিশ্বাস করতেন মর্ম অপেক্ষা আচার সর্বস্বতায় অধিক থেকে অধিকতর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি। নজরুলের কথায় কলতে হয়, ”আজাদ আত্মা, আজাদ আত্মা সাড়া দাও সাড়া, এই গোলামীর জিঞ্জির ধরি ভীম বেগে দাও নাড়া।’
এ প্রসঙ্গে আহমদ ছফার মূল্যায়নও প্রনিদান যোগ্য। তিনি বলেন, ”তবে বাঙালী সমাজ সম্বন্ধে নজরুলের দু’ধরনের স্থির বিশ্বাস ছির। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি এবং ঐক্য পুরোপুরি বিশ্বাসী ছিলেন।” তিনি আরও বলেন , ” নজরুল ইসলাম তাঁর প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে যে একটা যোগসুত্র স্থাপন করে দিয়েছিলেন, তার তো কোন তুলনা হয় না।”
শুরুতেই বলেছিলাম কোন জাতির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙন যতবেশি শক্তিশালী হবে তার মর্যদাও ততবেশি বৃদ্ধি পায় এবং সে জাতি তত বেশি প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে বিশ্ব দরবারে। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দু’জনের কাছেই আমরা ঋণী। এ প্রসঙ্গে আহমদ ছফার মূল্যায়ন প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, ”আজীবন সুন্দরের সঙ্গে সত্যের সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দুর্মর প্রচেষ্টারই তো নাম রবীন্দ্রনাথ। এ বিষয়ে তাঁর ঐকিন্তিকতা ধর্ম প্রচারকের চাইতে কোনো অংশে কম ছির না। অত্যন্ত সুকুমল, সংবেদসশীল , স্পর্শকাতর, শ্রদ্ধারভারে আনত একখানা মন নিয়ে তিনি যেন প্রচারকের ভূমিকায় নেমেছিলেন। কিন্তু প্রচারকের লেবাস তিনি কখনো অঙ্গে ধারণ করেননি।” অন্যদিকে নজরুল সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ”নজরুলের কাছে বাঙালি মুসলমান সমাজের অন্যতম প্রধান প্রণিধানযোগ্য ঋণ এই যে, নজরুল তাদের ভাষাহীন পরিচয় ঘুচিয়ে দিয়ে তাদের সামাজিক ভাষাকে সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা দান করলেন এবং স্বীকৃতি অর্জন করে দিলেন। আর নজরুলের কাছে সমগ্র বাঙালী সমাজের ঋণ এই যে, নজরুল বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যিক বাঙলার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ভাষা হিসাবে চিহ্নিত করে নব বিকাশধারায় ভিত্তিপত্তর স্থাপন করে অনেকদূর পর্যন্ত গাঁথুনি নির্মান করেছিলেন।” তাই স্পষ্ট করেই বলতে পারি বাঙালি সম্বন্ধে নজরুলের দু’ধরণের স্থির বিশ্বাস ছিল। তিনি হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি এবং ঐক্য পুরোপুরি বিশ্বাসী ছিলেন, অর্থ্যাৎ নজরুল ইসলাম তাঁর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দিয়েছিলেন , তার কোনো তুলনা হয় না। অতএব আহমদ ছফর ভায়ায় বলা যায় বাঙালি মুসলামান সমাজ শিল্প এবং সংস্কৃতি চিন্তার ক্ষেত্রে নজরুলের মতো আর কারো কাছে অত বিপুল ঋণী নয়।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত সবাইকে মুগ্ধ করে তাঁর কথা সুর ও ভিন্নতার জন্য। তাই এক্ষেত্রে রবীন্দ্র জয়জয়কার সর্বত্র। কিন্তুসঙ্গীতে নজরুল প্রকৃত অর্থেই খুবই শক্তিশালী এবং ভিন্নতার জন্য বাংলার সংস্কৃতিকে কত সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন, তার ঋণ কখনই শোধ করা যাবে না। এর পরেও কেন নজরুলের সঙ্গীত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মূল্যায়িত হয়না , সে প্রশ্ন সবার কাছে।
নজরুলের সঙ্গীত প্রসঙ্গে একটু খেয়াল করলেই বুঝঅ যাবে শুধু সংখ্যার দিক থেকেই নয়, বৈচিত্রের দিক থেকেও তাঁর আগের কোন সুরকার তাঁকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি। তিনি কোনক্রমেই ঝড় তুলতে পারতেন না, যদি না তাঁর গানের কথায় ও সুরে নবতর বৈশিষ্ট্য, নতুন রঙ সঞ্চালন করতে পারতেন। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন নজরুলের বিশাল সুরম-লের মধ্যে মুসলমানী দরবারী ঐতিহ্য, লোকসঙ্গীতের ভাবধারা, আরব, ইরান, এমনকি ইউরোপীয় সুরের প্রভাবও তাঁর গানকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছে।
তিনি সর্বত্র সুরের অন্বেষণ করেছেন। বাংলার সকল শ্রেষ্ট গীতিকার ও সুরকারদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন একথা নি:সংকোচে বলা যায়, নজরুলের সাথে বাংলা সঙ্গীত যেভাবে সুর সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে ইতিপূর্বে আর কোনদিন তেমনটি হতে দেখা যায়নি। সুরের এই মৌলিক অবদানের জন্য নজরুলগীতি ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর আব্বাস উদ্দিন নজরুলের গানকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ” সুরকার নজরুলের জীবন একটা বহু রাগ-রাগিনী বিশিষ্ট যন্ত্রবিশেষ। এককথায় নজরুল আজ পর্যন্ত বাংলার সর্বশ্রেষ্ট কম্পোজার বা সুরকার হয়ে আছেন।”
অর্থ্যাৎ নজরুল যে বাংলা গানের একজন সেরা পর্যায়ের দিকপাল স্রষ্টা, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকেনা। বাংলা গানের সুরের মাতোয়ারা ভাব তিনিই সবচেয়ে বেশি সংযোজন করেছিলেন। রঙ-রসের বৈচিত্রে ও তাঁর গানকে অনন্য বলা যায়। এত বিচিত্র সুরের গান আর কোনো বাঙালি সুরকার রচনা করেছিলেন কিনা জানা নেই।
বাংলাগানের জগতে তাঁর বিশেষ অবদান নজরুলের গজল, নজরুলের ঝুমুর, নজরুলের শ্যামা-সংগীত , নজরুলের ইসলামী গান। এই পর্যায়ের গানগুলোর তুলনা চলেনা। এক নতুন গায়কী ধারায় বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর সঙ্গে তাঁর হারমনি ও রাগ সংগীত গুলোর কথা মনে হলে বিষ্ময় ও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। কত বড় সঙ্গীত সাধক হলে তাঁর পক্ষে সতেরোটির মতো নতুন রাগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
নজরুল তাঁর রচনার-বিশেষ করে কবিতা ও গানের ভাষায় সমগ্র বাংলা ভাষার ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারকে ধারণ করেছেন এবং বিষয়, ভাব ও বক্তব্য প্রকাশের প্রয়োজনে নতুন রূপে ব্যবহার করেছেন। তাই বলা চলে বাংলা সাহিত্যের দুই যুগস্রষ্টা কবি-মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও- নজরুলের মতো এতো ভাষা-বৈচিত্রের সাধক নন। কারণ হিসাবে আমরা বলতে পারি সংস্কৃতি যেকোন বিভেদকে মুছে দেয় এবং অন্য সংস্কৃতির সাথে নিজেদের মিলনের মাধ্যমে সমৃদ্ধশালী করে থাকে। আর নজরুরের মতো বাংলা সাহিত্যের আর কোনো কবি হিন্দু-মুসরমানদের জাগরণমূলক এবং তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার বিষয়ক এত বেশি সংখ্যক কবিতা, গান- বিশেষত কীর্তন, ভজন, দেবস্তুতি, হামদ্, নাত ইত্যাদি লিখেছেন কি? ইসলামী ঐতিহ্যমূলক বিশেষ রচিত তাঁর কবিতা গানে তিনি অবলীলায় মুসলিম সমাজে প্রচলিত আরবি ফারসি-উর্দু ইত্যাদি শব্দ, উপমা, উপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প অবলীলায় ব্যবহার করেছেন। অন্যপক্ষে হিন্দু ঐতিহ্য মূলক বিষয় তিনি অবলীলায় ব্যবহার করেছেন সংস্কৃতি, হিন্দি ইত্যাদি শব্দ, বাকবন্ধ, উপমা, উপ্রেক্ষা, হিন্দু-মুসলমানে মিলনে বিশ্বাসী নজরুল বলেছেন, ”বাংলা সাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভযেরই সাহিত্য, এতে হিন্দু দেব-দেবীর নাম দেখলে মুসলমানদের রাগ করা যেমন অন্যায়, হিন্দুদেরও তেমনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে নিত্য -প্রলিত মুসলমানী শব্দ তাদের লিখিত সাহিত্য দেখে ভ্রু কুঁচকানো অন্যায়।’ তিনি অধ্যক্ষ ইবরাহীম খাঁকে লিখিত এক পত্রে উল্লেখ করেন, ”আমি হিন্দু-মুসলমানদের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী । --- তাই তাদের এ সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি বা হিন্দু দেব-দেবীর নাম নেই।” তাই আমাদের মনে রাখতে হবে বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু পরাধীনতার বন্ধন মুক্তির, মুক্তির পুরানো সমাজ ভেঙ্গে নতুন ও উন্নত সমাজ গঠনের স্বপ্নই দেখেননি, তিনি বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিভেদের এবং সঙ্কীর্ণতার আগল ভেঙ্গে নতুন ঐতিহ্য গড়ার ধারা সৃষ্টি করে গেছেন, রেখে গেছেন অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত।
বিশ শতক পেরিয়ে আমরা একুশ শতকের প্রথম দশকে প্রবেশ করেছি। এরই মধ্যে সাম্রাজ্যবাদের বদলে এসেছে বিশ্বায়ন, উপনিবেশিক শোষনের স্থান নিয়েছে মুক্তবাজার অর্থনীতি , জাতীয় সংস্কুতিকে গ্রাস করে ফেলেছে আকাশসংস্কৃতির বিকিরণে অপসংস্কৃতির বাতাবরণ। আজ তৃতীয় বিশ্বের সবচেয়ে জটিল সমস্যা ওই প্রভুত্ব থেকে স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রাখা আর সে জন্য প্রয়োজন একই সঙ্গে স্বদেশি ও আন্তর্জাতিক হওয়া। নিজের জাতিসত্তার ও সংস্কৃতির প্রতি অবিচল থেকে আন্তর্জাতিক হওয়া। আজকের পৃথিবীতে কোন দেশ-জাতি নির্জন দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেনা। আজ তাকে নিজের মাটিতে আপন ঐতিহ্যের শেকড় গভীর থেকে গভীরে প্রোথিত করে দাঁড়াতে হবে। নজরুলের মতো বলতে হবে, ” বল বীর/ বল উন্নত মম শির,/ শির নেহারি আমারি নতশির ওই শির হিমাদ্রির।”
এই আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয় যদি মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তাহলেই মানুষ স্বাধীন চিত্ত সত্বার জাগরণ ঘটাতে পারবে। পরাধীন যুগের স্বাধীন কবি নজরুল বারবার স্বদেশের মানুষের মধ্যে স্বাধীন চিত্ততার জাগরণের আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি প্রথমে মনের শিকল ভেঙ্গে পরে হাতের শিকল ভাঙ্গার কথা বলেছেন। নজরুলের ভাষায, ”মনের শিকল ভেঙ্গেছি, এবার হাতের শিকলে পড়েছে টান।”
বাংলার মানুষের বীরোচিত সংগ্রাম আর বিজয় গাঁথা আজও সঠিকভাবে রচিত হয়নি বরং বারবার বিকৃত হয়েছে আজ আমাদের প্রয়োজন নজরুলের মতো অকোতভয় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কবি সাহিত্যিকের যিনি বাংলার সাহসী সন্তানদের সংগ্রামকে সাহিত্যে তুলে আনবেন, এ দেশের দু:খী মানুষকে সাহসও প্রেরণা জোগাবেন মানবতার জয়ের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাতে মানুষ আশাহত না হয়ে, উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে জয়যাত্রার পথে এগিয়ে যেতে পারে।
নজরুল যেমন তাঁর সৃষ্টি কর্মের মধ্যদিয়ে বিশ শতকের প্রথম চার দশকের পরাধীন দেশের মানুষের মর্মজ্বালাকে ছন্দে গানে তুলে ধরে ভীতি তুচ্ছ করে উপনিবেশিবাদ, সামান্তবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। আজকের বাংলাদেশে তেমন কবিও সবচেয়ে বেশি। মানুষ আজ হতাশ এবং বিভ্রান্ত এই অবস্থা থেকে প্ররিত্রানের পথ প্রদর্শন করতে পারেন নজরুলের মতো মানবতাবাদী এবং সংগ্রামী শিল্পী-সাহিত্যিক যিনি আন্তর্জাতিক স্বার্থের রক্ষক দেশীয় তাঁবেদারদের মুখোস উম্মোচন করতে পারেন নির্ভয়ে , নিসঙ্কোচে। নজরুল পরাধীন দেশের মানুষকে অগ্রযাত্রার পথপ্রদর্শনের জন্য নজরুলের মতো নির্ভয় মানুষের প্রয়োজন, যিনি সত্য কথা বলতে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতিকে বিবেচনায় আনবেন না। নজরুলের কবিতায় তিনি যেমন বলেন, ” সত্যকে হায় হত্যা করে অত্যাচালীর খাঁড়ায়/ নেই কিরে কেই সত্য সাধক বুক খুলে আজ দাঁড়ায়? ” আজ নজরুলের মতো তেমন দীপ্ত উচ্চারণ প্রয়োজন। নজরুল পরাধীন দেশের দু:শাসন সম্পর্কে লিখেছেন, ” বলরে বন্য হিংস বীর/ দু:শাসনের চাই রুধির।” সে জন্যেও নজরুলের মতো সাহসী উচ্চারণ প্রয়োজন্ নজরুল তথাকথিত বুদ্ধীজীবীদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলি বলেছেন তা দিয়ে শেষ করব। তিনি বলেন, ” দোহাই তোদের এবার তোরা সত্যি করে সত্য বল/ ঢের দেখালি ঢাক ঢাক গুড় গুড় ঢের মিথ্যা চল।”
লেখকঃ প্রভাষক, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন