সাপ্তাহিকী
|
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
|
|
সাংসদ রনি ক্যারিক্যাচার
05 Aug, 2013
গোলাম মওলা রনি একাধারে সাংসদ কলামিষ্ট ও টিভি টকশোর নিয়মিত আলোচক । ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন টিভি টকশোতে সত্য সুন্দর নৈতিক যুক্তিশীল কথাবার্তা এবং অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণের জন্য । সাংসদ রনির অবয়ব, পোষাক-পরিচ্ছদ, চলনে-বলনে সহনশীল ও মার্জিত ধরনের । যা দিয়ে রনি দল ও সরকারের ইমেজ তৈরীতে সহায়ক হতে পারত । কিন্তু গোলাম মওলা রনি দল ও সরকারের সমালোচনা দলের সাংগঠনিক ফরমেট ও সংসদীয় কমিটিতে না করে টকশোতে করতেন । এতে দল ও সরকারের শৃংখলা ও ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্যক্তি রনি দলের বাহিরে ব্যাপক জনপ্রিয় একজন মানুষ হয়ে ওঠেছিলেন । সে মানুষটি আজ কারাগারে ।
সাংসদ রনি কর্তৃক সাংবাদিক প্রহার এবং তদপরবর্তীতে মধ্যস্থতার উদ্যোগ, পারষ্পরিক মামলা, জামিন ও জামিন ক্যান্সেল করে এ্যারেষ্ট হওয়া, এ নিয়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোস্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে । সরকারী দল, বিরোধী দল, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টা দেখছেন । সাংসদ রনির সমর্থকদের ধারনা একটি কুচক্রীমহল উত্তেজনার ট্র্যাপে ফেলে উত্তেজিত করে রনিকে দিয়ে হীন কাজটি করতে প্ররোচিত করেছেন । দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলেও একটা জায়গায় সবাই একমত, পরিবেশ পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সাংসদ রনি কোন বিবেচনাতেই সাংবাদিককে প্রহার করতে পারেন না । একজন আইন প্রণেতা হয়ে আইনকে নিজ হাতে তুলে নিতে পারেন না । সাংসদ রনির এ কাজটি অশোভন গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
সাংসদ রনির বিষয়ে আইন প্রয়োগকরী সংস্থার গতিশীলতা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে । সকল ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এভাবে কার্যকর হলে দেশের অবস্থাই বদলে যেত । সমস্যা হচ্ছে রনির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কী আইনের স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে নাকি সুযোগের সদব্যবহার করেছে । অনেকের ধারনা রনির ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ ঠিক হলেও রাজনীতির রাঘব-বোয়ালরা হরহামেশা এর চাইতে গুরুতর অপরাধ করেও দিব্যি বড় গলায় কথা বলে, সরকার সেক্ষত্রে আইনের সঠিক ব্যবহারটি করেন না । অন্যদের ক্ষেত্রে আইনের সঠিক ব্যবহার হয় না, তাই সাংসদ রনি সেই অজুহাতে আইনের উর্ধ্বে থাকবেন, তাও অনৈতিক । সরকার আইনকে নির্মোহ ভাবে সবার জন্য সমান ভাবে প্রয়োগ করলে বিতর্ক থাকবে না ।
সাংসদ রনি কর্তৃক সাংবাদিক প্রহারের প্রতিক্রীয়ায় সরকার সমর্থিত মিডিয়া ও প্রধান বিরোধী দলের সমর্থিত মিডিয়ার মধ্যে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী ঐক্য দেখা গেছে । সবাই রনির শাস্তি দাবী করে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছে এবং সবকটি বেসরকারী টিভি রনিকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । সরকারের হিসাবটা স্পষ্ট, রনি মিডিয়ার বাহিরে থাকলে সরকারী দলকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না । তাই রনিকে মিডিয়া থেকে বয়কটে সরকার সমর্থিত মিডিয়া সমর্থন যুগিয়েছিল । তাহলে বিরোধী দল সমর্থিত মিডিয়া কী না বুঝে ফাঁদে পা দিয়েছে নাকি ভেবেছিল সরকার নিজ দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে এতোটা কঠিন ব্যবস্থা নিবে না, এই সুযোগে সরকার দলীয় সাংসদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে সরকারকে এক হাত নেয়া যাবে এবং রনিকেও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে । এটা ঠিক, সাংসদ রনি টিভি টকশোতে অংশ গ্রহনের সুযোগ থাকলে সরকারী দলকে বিব্রত করার মত নিত্য নতুন বিতর্কের মশল্লা নিয়ে হাজির হতেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে আবেগ, যুক্তি, কুশলী ও মার্জিত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে দর্শক শ্রোতার করুণা ও ভালবাসা অর্জন করতে সক্ষম হতেন । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সাংসদ রনি হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় (কারাগারে) অসন্মানজনক প্রস্থানে বাধ্য হয়েছেন । এ যাত্রায় বিরোধী দল রনির কার্ডটি হাতছাড়া করেছেন, কারন সাংসদ রনির সাথে দরবেশ মালিকানাধীন ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির বৈরীতার সময়টায় রনির টকশো উপস্থিতি নিশ্চিত থাকলে বিরোধী দলের পরোক্ষ সহযোগীতা হতো অর্থাৎ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতো ।
কৌশল কূটকৌশল রাজনীতিতে আছে, হয়তো থাকবেও । তবে সরকারকে আইন প্রয়োগে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই চলতে হবে । এতেই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক । প্রত্যাশা থাকবে সরকার দলমত নির্বিশেষে আইনকে আইনের গতিতে চলতে সহায়তা করবেন । পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক না হলেও প্রায় সবার জানা একটি গল্প দিয়েই লিখাটি শেষ করছি .
বিএনপির একজন কট্টর সমর্থক ছিলেন রহিম সাহেব, টি স্টল থেকে হাটে মাঠে ঘাটে সর্বদা আওয়ামীলীগের নিন্দা ও সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতেন । এক সময় ওনার ক্যান্সার ধরা পড়ল এবং ডাক্তার বললেন রোগের আলামত বলছে বড়জোড় এক দেড় মাস হয়তো বাঁচবেন । রহিম সাহেব মৃত্যু শর্য্যায় থেকে নাতিকে বললেন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি করিম ভাইকে বলবি আমি আওয়ামীলীগে যোগদান করব । আসার সময় করিম ভাই যেন আওয়ামীলীগের সমর্থক ফরম নিয়ে আসে । নাতি অবাক হয়ে দাদাকে বলল দাদা তুমি পাগল হয়েছ নাকি ? তুমি কেন আওয়ামীলীগে যোগ দিবে ? তুমি না আওয়ামীলীগ পছন্দ করো না । দাদা বলল যা বলছি শোন, আমি মারা গেলে ব্যাপকভাবে মাইকিং করবি এবং বলবি আওয়ামীলীগের সমর্থক রহিম মৃত্যুবরণ করেছে । নাতি বলল দাদা এই শেষ সময়ে তুমি কি বিএনপিকে অপছন্দ করে যাচ্ছো । আরে গাধা শোন, মৃত্যুর পরেও আমি আওয়ামীলীগের ক্ষতি করতে চাই । আমার মৃত্যুর মাইকিং শোনে মানুষ বলবে আওয়ামীলীগের একটা ভোট কমেছে । আওয়ামীলীগের এমপি হয়েও রনির বক্তব্যে আওয়ামীলীগের ক্ষতি হয়েছে এবং সরকারের মেয়াদান্তে আওয়ামীলীগের সাংসদ হিসেবে সাংবাদিক পিটিয়ে আওয়ামীলীগেরই ক্ষতি করেছেন । সাংসদ রনি যদি আগামীবার আওয়ামীলীগের নমিনেশন না পান, তাহলে ধরেই নিতে পারেন সাংসদ রনির শুরু থেকে শেষ পুরোটা আওয়ামীলীগের ক্ষতিতেই গেল ।
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম ।
প্রবাসী, জাপান ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন