দার্শনিক হব্স ( Hobbes ) ও লক (Locke ) এর মতে, ‘রাষ্ট্র একটি মৃত যন্ত্রের মত’ হলেও ফরাসী বিপ্লবের মহানায়ক রুশো ( Rousseau ) বলেছেন ভিন্নকথা। তার মতে, ‘রাষ্ট্র একটি প্রাণবন্ত চলৎশক্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান’। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রুশোর মতকেই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। আসলে রাষ্ট্র কখনো গতিহীন নয় বরং এক নান্দনিক ও ছন্দময় গতিময়তায় আন্দোলিত। প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তায় আদর্শ রাষ্ট্রের লক্ষ উত্তম জীবন। তাই তিনি মনে করেন, শুধু তারাই আদর্শ রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্য যারা জানেন সমাজ জীবনের সর্বোত্তম পন্থা কী ! শুধু তারাই শাসনদন্ড ধারণ করার যোগ্য যারা নাগরিক জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা সম্পর্কে সচেতন এবং জ্ঞানের আলোয় সমুজ্জল। সুতরাং রাজদন্ড গ্রহণ যেমন সকলের জন্য যৌক্তিক নয়, ঠিক তেমনিভাবে নাগরিকের উত্তর জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে ব্যর্থতাও সফল রাষ্ট্রের মানদন্ড নয়।
সুশাসনের ধারণা থেকেই আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সরকার ক্রিয়াশীল থাকে। কোন দেশে কী ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে তা সে দেশর বৃহত্তর জনগোষ্ঠির বোধ-বিশ্¦স, চিন্তা-চেতনা সর্বোপরি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ধারার উপর নির্ভর করে। তবে আধুনিক বিশ্ব গণতন্ত্রায়নের বিশ্ব। সে ক্ষেত্রে আধুনিক সরকার পদ্ধতি হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি। মূলত সরকার যে অনুসঙ্গ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চর্চা করে তা একটি ‘শক্তি’। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই এই শক্তি সরকারের হাতে তুলে দেয় সুশাসন ও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য। এ প্রসঙ্গে ম্যাকআইভার বলেন, ‘ The state in an association which acting through law as promulgated by a government endowed to this end with coercive power, maintaining within a community territorially demarcated. অর্থাৎ রাষ্ট্র এমন একটি সংঘ, যা সরকারের ঘোষিত আইন অনুসারে কার্য করে। সরকার আইন ঘোষণা করার এবং তা পালন করার শক্তির অধিকারী। ঐ শক্তির সাহায্যে সরকার নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মধ্যে সামাজিক শৃংখলার বাহ্যিক ও সর্বজনীন অবস্থা বজায় রাখে।
রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো সুশাসনরে মাধ্যমে নাগরিকদের জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা বিধান করা। এ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ ( The Executive ) ক্রিয়াশীল থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গার্নারের মতে, প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসন বিভাগের কার্যাবলী মোটামোটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা- ( এক ) আভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃংখলা বিষয়ক ( Administrative ), ( দুই ) পররাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও বৈদেশিক সন্মন্ধ ( Diplomatic ), ( তিন ) সামরিক ব্যবস্থা ( Military), ( চার ) বিচার বিষয়ক ক্ষমতা ( Judicial ) ও ( পাঁচ ) আইন বিষয়ক ক্ষমতা (Legislative ). মূলত শাসন বিভাগের এসব উপবিভাগ যদি ক্রিয়াশীল ও যথাযথভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে পারে তাহলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত আছে বলে মনে করা হয়।
আমাদের দেশের শাসন বিভাগে এসব সকল উপবিভাগই বিদ্যমান। কিন্তু রাষ্ট্রের এসব বিভাগ কতখানী ক্রিয়াশীল ও কার্যকর তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার দাবী রাখে। এই নিবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। তাই সংক্ষিপ্ত ধারনার মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করতে হচ্ছে।
একটি রাষ্ট্রের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলার উপর। দেশে শান্তি-শৃংখলা বজায় না থাকলে নাগরিক তার অধিকার পুরোপুরি ভোগ করতে পারে না। আর নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখতেই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা বিস্তৃতি লাভ করে। মূলত বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত। তাই আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলার উপর নির্ভর করে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার কী এ মহান জাতীয় দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে সফল ? এটিই এখন আলোচ্য বিষয়।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভ এই প্রথম নয়। বর্তমান মেয়াদের আগেও তারা দু’দফা দেশ শাসন করেছে। সেসব মেয়াদে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে সুশাসন উপহার দিত পেরেছে কী-না তা কারো কাছে অজনা নয়। সেসব আলোচনা করতে গিয়ে নিবন্ধের পরিসর বাড়াতে চাইনা বরং সর্বসাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান সরকারের দেশের আইন-শৃংখলা বিরোধী অপৎপরতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘন সর্বপরি গণহত্যার বিষয়ে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবো।
সরকারের দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে সরকার গঠন করার মাত্র ১ মাসের মাথায় পিলখানা ট্রাজেডির ঘটনা ঘটে। এই নির্মম ঘটনার মাধ্যমে দেশের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে সরকারী এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন এবং দীর্ঘ তদন্ত শেষে পৃথক দু’টি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও সেসব প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এতে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকার পক্ষই এই নারকীয় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত।
দেশের সার্বিক শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের হলেও তারাই পরিকল্পিতভাবে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতর অবনতি ঘটাচ্ছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসীবাধী মানসিকতার কারণে বিরোধী দল রাজপথে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে পারছে না বরং বিরোধী দলের ঘরোয়া কর্মসূচীগুলোকে কথিত গোপন বৈঠক আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ জনতার উপর নির্বিচারে গুলী চালিয়ে শতশত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান হলেও সরকার প্রকারান্তরে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করা হচ্ছে। কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে যে আইন করা হয়েছে তা কথিত অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। কোন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের সময়সীমা ৬০ দিন হলেও কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে করা হয়েছে ৩০ দিন। কথিত বিচারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইনকে অকার্যকর করে এমন ভাবে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যে যাতে স্বাভাবিকভাবেই যেকোন ব্যক্তিকে দন্ডিত করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা যায়। গণতান্ত্রিক সমাজে যেকোন বিষয়ে ব্যক্তির মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বারবার সংবিধান লংঘন করলেও জনগণ প্রতিবাদের অধিকারটুকুও পায়নি।
সরকার গোটাদেশকেই অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। একদিকে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর মামলা, হামলা, জেল-জুলুম চালানো হয়েছে, পক্ষান্তরে তারা দলীয় অপরাধীদের নানানভাবে আস্কারা দিয়ে গোটা দেশেই এক নৈরাজ্যকার পরিস্থিতি তৈরী করেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হত্যা-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া তো হয়নি বরং তাদেরকে নানানভাবে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে দর্জি দোকানী বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করলেও মূল হত্যাকারীদের এখনও বিচারের আওতায় আনা হয়নি। যা করা হচ্ছে তা শুধু আইওয়াস মাত্র। গত ৩ জুলাই পছন্দের প্রার্থীকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে নিয়োগ না দেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ্য বায়তুল্লাহ কাদরীকে লাঞ্চিত করেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সরকারী আস্কারা পেয়েই তিন লীগ ( আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ) নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণের বাইবে চলে গেছে। এতে দেশে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বর্তমান সরকারের সাড়ে চার বছরের শাসনামলে সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ৫ শ’ ৩২ টি, যৌতুকের কারণে নারী নিগ্রহের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ১ শ’ ৭০, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৫ জন এবং সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ১ শ’ ৮৫টি। এ সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান থেকেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।
সরকার দেশের পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাড় করিয়েছে। জনতার বিক্ষোভ দমনের জন্য সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বি জি বিকে মাঠে নামানো হয়েছে। এতে সীমান্তে অপরাধ প্রবণতা ও চোরাচালান মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা সরকারের ইচ্ছামত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছেন তাদেরকে নানান ভাবে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবদীন ফারুকের উপর হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদকে প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত করা হয়েছে। পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলামেলাভাবেই বলেছেন, পদক প্রদানে বিরোধী দলীয় চীপ হুইপের উপর হামলার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে। বি এন পি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার জন্য পুরষ্কৃত করা হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসানকে। বি এন পি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তান্ডব চালানোর পর তাকে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রভূত অর্থ দিয়ে সিঙ্গাপুরে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে সরকার পুলিশকে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর নিগ্রহের ওপেন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এসব সরকারের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না বরং তারা বিরোধী দলের জন্য যে গর্ত খুঁড়ছে সময়ের ব্যবধানে হয়তো তাদেরকে সে গর্তেই পরতে হবে।
একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন দেশের পররাষ্ট্রনীতি সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে না হয়ে নতজানু হয়, সেক্ষেত্রে দেশটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অসার হয়ে পরে। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি শুধু নতজানু নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে জানু কাটার পর্যায়ে পরে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতালিপ্সার কারণেই তারা অতিমাত্রায় ভারত তোষণ করে চলেছে। ভারত সীমান্তে আমাদের অমিমাংসিত বিষয়গুলোর ব্যপারে বর্তমান সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সবগুলোই ভারতের পক্ষে চলে গেছে। এমন কী ভারতীয় পত্রিকাগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারত যা কখনো দাবী করেনি এমন কিছুও সরকার ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকার ভারতকে এক তরফাভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিস্তা চুক্তি এখনও সম্পাদন করেনি। অথচ ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তান সরকার উভয় পাকিস্তানের মধ্যে সড়ক পথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কড়িডোর বা ট্রানজিট চেয়ে ছিল। ভারত তখন এই বলে তা প্রত্যাখান করেছিল যে, এতে ভারতের স্বাধীনতা বা হুমকীর মুখে পরবে।
বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে ভারত তোষণ কেন্দ্রীক। এর প্রমাণ মেলে প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের টেলি কথোপকথনের মাধ্যমে। মিসেস ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি তার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন বিষয়টি নাকি ভারতই ভাল বলতে পারবে। মূলত কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হচ্ছিল তখন সরকারে পক্ষে বলা হতো বিষয়টি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু মিসেস ক্লিনটনের কাছে প্রধানমন্ত্রী ভারতের দিকে অঙ্গলী নির্দেশ করে কী স্ববিরোধীতায় লিপ্ত হননি ? এজন্য অবশ্যই তাকে এবং কথিত বিচারের কুশীলবদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
সরকারের ভ্রান্ত পররষ্ট্রনীতির কারণে মারাত্মক কুটনৈতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যেসহ বৈদেশিক রেমিটেন্ট প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হলেও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বর্হিবিশ্বের শ্রমবাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভার পড়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃক স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চু্িক্তগুলো অমান্য করায় আন্তর্জাতিকভাবে দেশ মারাত্মক ইমেজ সংকটে পরেছে। কিন্তু সরকার ভারত কেন্দ্রীয় নতজানু পররষ্ট্রনীতির বৃত্ত থেকে বিড়েয়ে আসতে পারছে না। ফলে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পরেছে এবং দেশের মানুষকে নানাবিধ বৈরী পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি গঠন করতে হলে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ দেশে সেনাবাহিনীর অবশ্যকতাই অস্বীকার করেছিল। পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরী বি ডি আর’কে পরিকলিপতভাবে ধ্বংশ করে দেশের প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকে হুমকীর মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগ কখনোই দেশে শক্তিশালী ও স্বাধীনচেতা সেনাবাহিনী অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর সমান্তরালে রক্ষীবাহিনী তৈরী করে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের হীনমনোবৃত্তির কারণেই দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংশের মুখোমুখী দাড়িয়েছে। দলীয় আনুগত্যের কারণে হত্যা এবং প্রধান বিচারপতির এজলাসে ভাঙ্গচুরের অভিযোগে অভিযুক্তকে বিচারক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে পুরো বিচার ব্যবস্থা কলংকিত করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলোকে আদালতে টেনে এনে একের পর এক নিজেদের অনুকুলে রায় নেয়া হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় জাতীয় এক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে উচ্চ আদালতের দোহায় দিয়ে। আর এই বিতর্কিত রায় নিয়েও মহাকেলেংকারীর আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের সাথে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর রায় লেখা হয়েছে শপথের বাইরে থাকা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিরকে দিয়ে। যার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর আগে সেই বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে আওয়ামী লীগের হাতে চাঁদ তুলে দিয়েছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রণীত ও পাশকৃত ৫ম সংশোধনী তিনি এই বলে বাতিল করেছেন যে, মার্শাল ল’ বলতে সংবিধানে কোন ল’ নেই। দ্বিতীয়তঃ এ সংশোধনী সাংবিধানের মৌলিক স্থাপনা ( basic structure) বদলে দিয়েছে। এটা জঘণ্য অপরাধ। বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ ) গঠন ও বাকশালী শাসনকে কিন্তু বেআইনী বলা হয়নি ঘোষিত রায়ে বরং Doctrine of necessity-এর অধীনে এনে বিষয়টি ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, যদিও এ বিষয়ে কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। ৭২ এর সংবিধানে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিলনা। কিন্তু সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সে Basic Structure পরিবর্তন করে দেয়া হয়। চালুু করা হয় একদেশ এক নেতা পদ্ধতি। এ পরিবর্তন সম্পর্কে বিচারপতি খায়রুল হক বলেছেন, Violation of the constitution is a grave legal wrong and remains so for all time to come. It can not be legalized and shall remain illegitimate for ever. ( P.242 of Judgment ) কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর কুশীলবদের না চাইতেই ক্ষমতা করে দেয়া হয়েছে। এটা আর যাইহোক কোন বিচারকের কাজ হতে পারে না। আর কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তো যা করা হয়েছে তা তো জাতি হিসাবে আমাদের মাথা নিচু করে দেয়া হয়েছে। দেশে আইন থাকলেও বাস্তব প্রয়োগ নেই। ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের অনুকুলে প্রণয়ন করছে এবং তা তাদের প্রতিকুলে গেলে বাতিলও করা হচ্ছে। এভাবে কোন সভ্য সমাজ চলতে পারেনা।
আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে জনগণের সমস্যা সমাধানের কোন সুযোগ হয়েছে বলে মনে হয় না। সরকারের এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভংগীর কারণে কোন বিষয়েই দেশের মানুষ প্রতিকার পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলেই ইতিহাসের সর্ববৃহত্ত শেয়ার কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে। এতে লক্ষ লক্ষ আমানতকারী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদকারীদের অর্থমন্ত্রী ফটকাবাজ হিসাবে আখ্যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের উপহাস করেছেন। ঘটনা তদন্তে সরকার ঘনিষ্ঠ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন তাতে তো সরকারের শ্যাম-কুল উভয়ই যায়যায় অবস্থা। খোদ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতিবেদনে যাদেরকে দায়ী করা হয়েছে তাদেরকে ধরার মত ক্ষমতা সরকারের নেই। অবশ্য তিনি এ প্রতিবেদনকে অগ্রণযোগ্য বললেও বিষয়টি পূনঃতদন্তের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রকারান্তরে সরকার ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন।
সরকারের পদ্মাসেতু দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে। সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির জন্য সরকারের শীর্ষ মহল দায়ী হলেও সরকার তা বরাবর অস্বীকার করে আসছে এবং অভিযুক্তদের পক্ষে খোদ প্রধানমন্ত্রী সাফাই গেয়েছেন। এমন কী পদ্মাসেতু দুর্নীতির মহারথী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমী আখ্যা দিয়েছেন। সরকার আজ্ঞাবহ দুর্নীতি দমন কমিশনও আবুল হোসেন ক্লিন ইমেজোর সার্টিফিকেট দিয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বিশ্বব্যাংক প্রদত্ত প্রতিবেদনে আবুল হোসেনকেই পদ্মাসেতু দুর্নীতির দিকপাল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে যেমন বহিঃবির্শ্বে দেশের মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে পদ্মাসেতু প্রকল্প পরিত্যাক্ত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে রীতিমত ভাবলেশহীন।
এ সরকারের আমলেই ইতিহাসের সর্ববৃহত ব্যাংক কেলেংকারী হলমার্ক কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হলেও বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ৪ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নাকি বড় ধরণের ঘটনা নয়। এমন কী সরকার হলমার্ক গ্রুপের কাছে হাতিয়ে নেয়া টাকা আদায়ের না করে নতুন করে আবারো ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এতে ঘটনার সাথে সরকারের শীর্ষমহলের জড়িত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। হরমার্কের বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলেও ভেতরের খবর নাকি আরও খারাপ। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের আমলে নাকি পুরো ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংশ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাবে সরকার সবকিছুই গোপন রেখেছে। আর সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই যেকোন মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। সেজন্যই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে এই ভেবে যে ক্ষমতা হারালে তাদের পিঠের চামড়া রক্ষা সম্ভব না ও হতে পারে।
তৈরী পোষাক শিল্পে সীমাহীন নৈরাজ্য, শ্রমিক সন্তোষ, শ্রমিকদের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা এবং শ্রমিক নেতা আমিনুল অপহরণসহ পোষাক শিল্পে নানাবিধ অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে যুক্তরাষ্টের বাজারে বিশেষ বানিজ্য সুবিধা ( জি এস পি ) স্থগিত করা হয়েছে। এতে আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। সরকার পক্ষ এজন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীকে দায়ী করছে। যেমন পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের পর সরকারের পক্ষে নোবের লরিয়েট ড. ইউনুুসকে দায়ী করা হয়েছিল। সরকার বোধ হয় নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার বিরোধী দলসহ অন্যদের উপর চাপিয়ে পুলকবোধ করে। জি এস পি সুবিধা বাতিলের জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীর কথিত নিবন্ধকে দায়ী করছেন। এর মাধ্যমে সরকার কী নিজেদের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভংগ করছে না ? বিরোধী নেত্রীর একটি নিবন্ধের কারণেই যদি ওবামা প্রশাসন জি এস পি সুবিধা বাতিল করে তাহলে সরকারের কুটনৈতিক মিশনগুলো কী করেছে ? বিরোধী দলের একটি নিবন্ধের কারণেই যদি সরকারের কুটনৈতিক বিপর্যয় দেখাদেয় তাহলে সরকার যে বৈদেশিক কুটনীতিতে কতখানি অসহায় তা সহজেই অনুমেয়। তাই এই অথর্ব সরকারের হাতে দেশ ও জাতি কোনভাবেই নিরাপদ বলে মনে হয় না।
এদিকে যুক্তরাষ্টের বাজারে বিশেষ বানিজ্য সুবিধা ( জি এস পি ) স্থগিত করার ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রভাবশালী ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এটা আসলে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার জন্য দেশটির জনগণকে শাস্তি দেয়ার শামিল। পত্রিকাটি বরং বাংলাদেশের তৈরী পোষাক যাতে বিনাশুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানী করা যায়, সে সুপারিশ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের দারিদ্র কমবে বলে ১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রমিকেরা বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরী পায় সত্য। ততে তা সত্বেও গত দু’দশকে বাংলাদেশের গরীব মানুষের সংখ্যা ৭০ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে শিল্পে দ্রুত বিকাশের মর্মান্তিক পার্শ¦প্রতিক্রিয়া হলো নিরাপদ পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাটি। আর সরকার ও সমাজ এর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না। শিল্প নিয়ন্ত্রণ সামর্থ বিকাশ ও দুর্নীতি দমনের ঢাকার সহায়তা প্রয়োজন। তবে একথাও গোপন রাখা ঠিক নয় যে, এসব কারখানা আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে এবং তা উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
উপরের আলোচনা থেকে সহজেই অনুমিত হয় যে, বিগত সাড়ে চার বছরের শাসনামলে সরকার জনগণকে সুশাসন উপহার দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সরকারী উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে মারাত্মকভাবে গণদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জি এস পি সুবিধা বাতিলের পর সরকার তা ফিরে পেতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো বিরোধী দলকে দোষারোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে দায় সেরেছে। গত ৪ জুলাই লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনমিষ্ট মন্তব্য করে বলেছে, ‘বাংলাদেশের জি এস পি সুবিধা বাতিলের জন্য ড. ইউনুস ও আমিনুল ইস্যু কাজ করেছে’। কিন্তু সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি না করে সকল ক্ষেত্রেই এধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দলসহ জনগণের উপর নিগ্রহ চালিয়েছে। ফলে জনগণের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনিভাবে সরকারও গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষায়, ‘শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা একেবারে তলানীতে ঠেকেছে’। এখন তারা খরকুটার আশ্রয়ে নিজেদের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত। এতে তারা কতখানী সফল হবে তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন