সাপ্তাহিকী
|
মো. আবদুল হাই
|
|
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হোক
29 Jun, 2013
একজন মেধাবী শিক্ষার্থী চায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং নিজেকে দেশের সেবায় নিয়োজিত করতে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কি এত সহজ? উত্তর, সহজ নয়। কারণ, আসন সীমিত। এজন্য তাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম বাবদ আলাদা আলাদা ফি দিতে হয়। আবার কখনও দেখা যায়, একই দিনে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হওয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যখন পরীক্ষা শুরু হয় তখন একজন শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এভাবে অনেক চেষ্টার পরও সীমিত আসন সংখ্যার কারণে সব মেধাবী শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তির সময়সূচি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী প্রথমে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায় সেটাতে ভর্তি হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময় অন্য পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয় পেলে আবার তাকে ভর্তি হতে হয়। এভাবে সে বারবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা সীমিত অথচ একমাত্র ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া সমন্বয়হীনতার কারণে আসন শূন্য থাকে এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে না, তা যে আমাদের জাতিকে কতটুকু পিছিয়ে দিচ্ছে তা আজ ভাববার বিষয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার পর নানা সুবিধার কারণে যখন শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়, তখন ওই আসনগুলো স্থায়ীভাবে শূন্য হয়ে যায়। আর কোনো শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ থাকে না। এর একমাত্র কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ ও ছাত্রছাত্রী ভর্তিকরণ। একজন শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরবর্তী বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যখন সে ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায়, তখন সে ভর্তি বাতিল করে এবং সেখানে ভর্তি হয়
এভাবেই প্রতি বছর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ শতাংশ আসন স্থায়ীভাবে শূন্য থাকে। এ দেশের ৩১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। সেই হিসাবে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার আসন স্থায়ীভাবে শূন্য থাকে অর্থাৎ আসন শূন্য থাকা সত্ত্বেও ভর্তি প্রক্রিয়ার সমন্বয়হীনতার কারণে প্রায় সাত হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী ওই শূন্য আসনে ভর্তি হতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ে ৭০ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা পাওয়ার কথা, সেখানে একই অর্থে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে মাত্র ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় না করেও এভাবে সাত হাজার আসন শূন্য রাখা রাষ্ট্রীয় অপচয়।
২০১৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবে। তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অতীতের মতো ভুক্তভোগী ও বঞ্চিত না হয় তা দ্রুত নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে, তাদের দুর্ভোগ কমাতে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধ করে তা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংশোধন করা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রস্তাবিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিন্ন, গুচ্ছ অথবা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি এখনই চালু করা দরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন