সাপ্তাহিকী
|
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
|
|
আইন তৈরীর কারিগরদের ভাষা নিয়ন্ত্রণে আইন তৈরীর প্রস্তাব
29 Jun, 2013
জনগনের ভোটে নির্বাচিত সর্বোচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কর্মস্থল হচ্ছে মহান জাতীয় সংসদ । এই মহান জাতীয় সংসদে সন্মানিত সাংসদগন জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটাবেন তাদের সুচিন্তিত বক্তব্য ও আইন প্রনয়নের মাধ্যমে । দেশ জাতির কল্যান, সমাজ রাষ্ট্রের উন্নয়ণ ও শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে আইন তৈরী করবেন । জনগন অধীর আগ্রহে শুনবে দেখবে, আশায় বুক বাঁধবে, দেশটা এগিয়ে যাবে, এটা সবার প্রত্যাশা । প্রত্যাশার প্রতিফলন কতটুকু হচ্ছে, তা কারো অজানা নয় । সাম্প্রতিক সময়ে সংসদে সংরক্ষিত আসনের কয়েকজন নারী সাংসদের লাগামহীন বক্তব্য নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠেছে । যে যার মত মনের মাধুরী মিশিয়ে নোংরা ভাষা বা শব্দগুলিকে অধিকতর নোংরা শব্দে প্রতিবাদের নামে কুরুচিপূর্ণভাবে এনজয় করছেন । নবীন নারী সাংসদদের উচ্চারিত শব্দগুলি ভাষার মান বিচারে কতটা শ্লীলতাহানিকর, অশ্রাব্য, শ্রবণ অযৌগ্য গালি-গালাজ প্রকৃতির, তা আমাকে ভাবায় না । ভাবনার বিষয় হচ্ছে জনগনের ট্যাক্সের পয়সায় এসি চালিত ব্যয় বহুল সংসদে ওনাদের সাড়া জাগানো বক্তব্যের (কথিত খিস্তি খৈওড়) সাথে জনগনের সম্পর্ক আদৌ আছে কি ! কার স্বার্থে কেন ওনারা এতোটা বেপোরোয়া আচরণ করছেন । তা কি আমরা ভাবি ? কেউ যদি খুশীই না হন, তাহলে কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ কেন এমনটা করবে ? অসুস্থ্য মস্তিষ্ক হলে নিশ্চয় সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে পারতেন না । তাহলে এই সুস্থ্য মস্তিষ্কের নারী সাংসদরা ওনাদের নিয়োগ দাতাদের (দলীয় প্রধানদের) খুশী করতে এমনটা করছেন । তাও মানতে কষ্ট হয় । আবার উড়িয়ে দেয়াও কষ্টকর । অপছন্দ হলে নিশ্চয় নবীন সাংসদদের থামতে বলতেন । বলা যায়, অপছন্দ হলেও প্রতিহিংসা চরিতার্থের কৌশল ভেবেছেন হয়ত । কিন্তু এতে যে ওনাদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার হচ্ছিল, ক্ষেত্র বিশেষ উদ্দেশ্য বুমেরাং হয়ে ওনাদের ক্ষতির কারন হচ্ছিল, এসব কলংকিত কল্পকাহিনী দ্বারা, সেদিকটা ভাবেননি । তবে এতে যে জনগনের কোন কথা নাই, এটা পড়া লেখার জ্ঞানহীন মানুষও অনায়েসে বুঝতে সক্ষম । কিন্তু এই সক্ষমতা নাই তাদের, যারা বলেন- চুদুর বুদুর চইলতনা, আমিও গ্রামের পোলা, চুতমারানি গাইল দিতে জানি, (---অমুক) এক ইহুদী চা মালিকের ঔরসজাত । এর আগে আরেকজন বলেছিলেন (---অমুক) তাহলে (---অমুকের) কোলে বসে সরকারে এসেছেন ।
দেখুন কতটা নিচে নামলে এই বক্তব্যদানকারী সন্মানিত সাংসদরা নিজ দলের অন্য সব সাংসদদের হাত তালি পান, নেত্রী মিটি মিটি হাসেন আর অন্য নেত্রী দাঁত কিড়মিড় করেন । তা বুঝে প্রতিপক্ষ দল পাল্টা দেন ঐ একই কায়দায় । ঐ সাংসদরা পরদিন পত্রিকায় হেড লাইন হন, কথিত বক্তব্যকে সাংবাদিক সন্মান দেন এভাবে, ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য খিস্তি খৈওড় বলে । তারপরও যখন থামছিল না, নবীন দুই পুরুষ সাংসদ প্রতিবাদী কন্ঠে সমালোচনা ও জরিমানার প্রস্তাব করলেন । এতেও হাত তালি পড়ল । অবাক হলাম ভালো বললে হাত তালি আবার খিস্তি খৈওড়েও হাত তালি । কোনটা প্রকৃত হাত তালির যোগ্য, তা বুঝা গেল পরদিনের পত্রিকায় ঐ নবীন সন্মানিত সাংসদদের নিয়ে আশাবাদী রিপোর্ট পড়ে এবং সোস্যাল মিডিয়াতেও প্রচুর সমার্থক উক্তি দেখে । এখন ঐ খিস্তি খৈওড় মার্কা বক্তব্যদানকারীরা নিশ্চয় ট্র্যাক পাল্টানোর মত আত্ম উপলব্দিতে আসতে পারবেন । নিজ দলীয় কলিগদের হাত তালি ভালো খারাপ উভয় ক্ষেত্রে পাওয়া গেলেও জনগন কিন্তু একমাত্র ভালো কথায়, ভালো প্রস্তাবনাকে সমর্থণ দেন । নির্দিৃষ্ট সময়ান্তে যেহেতু জনগনের নিকট যেতেই হবে, সেহেতু জনগনের চাওয়া পাওয়ার মূল্যায়ন করাই বাঞ্চনীয় নয় কি !
অবশ্য বর্তমানে বহুল আলোচিত সাংসদদের বেশীর ভাগ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ, যাদের সরাসরি ভোট প্রার্থনার প্রয়োজন পড়ে না, দলীয় প্রধানের সহানুভূতি অর্জনই যথেষ্ট । যে ভাবে মারমুখী ঝগড়াটে ভাষার কসরৎ করছেন, এতে ওনাদের পাঠশালা ও পরিবারের শিক্ষা ভদ্রতা সভ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠতেই পারে । আবার বর্হিবিশ্বের মানুষের দৃষ্টিতে পড়লে, আমাদের দেশের সামগ্রিক শিক্ষা সংস্কৃতিই প্রশ্নের মুখে পড়বে । আমাদের সামাজিক ভাষা সংস্কৃতি কি এতোটা নিন্মমানের ! নিশ্চয় তা না । কিন্তু গুটিকয়েক সাংসদ দলাদলির প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে সমুগ্র জাতির মুখেই চুনকালি মেখে দিচ্ছেন ।
এটাও ঠিক আমাদের সাংসদের কতজনইবা বাজেট বুঝেন, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান রাখেন, সংসদীয় রীতিনীতি, সংসদীয় ভাষা শৃংখলা বুঝেন বা বুঝার আগ্রহ রাখেন । নির্দিৃষ্ট বিষয়ে জ্ঞান না থাকায় এলোমেলো প্রসঙ্গ টেনে এনে উত্তেজনা ছড়ান, আর বেশীর ভাগ শব্দ ব্যয় করেন নেতা নেত্রীর স্তূতি বাক্য অর্থাৎ বন্দনা বাক্য আওড়িয়ে আর প্রতিপক্ষের নেতা নেত্রীর প্রতি শ্রুতি কদর্য্য বিষদগার করে ।
এতো কিছুর পরও আশায় বুক বাঁধি, যখন দেখি নবীন নারী সাংসদদের খিস্তি খৈওড় রুখতে দলমত নির্বিশেষে সমস্বরে জরিমানার প্রস্তাবনা রাখছেন নবীন পুরুষ সাংসদরা । সমস্বরে ঘৃণা, ক্ষোভ ও ধিক্কার জানাচ্ছেন টিভি টকশোতে । প্রত্যাশা থাকবে এক্ষেত্রে সন্মানিত প্রবীণ সাংসদগন তাঁদের ত্যাগ ও শিক্ষালব্ধ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গড়ে তুলবেন প্রাণবন্ত সংসদ । যা হয়ে ওঠবে দেশ জাতির স্বপ্নের সূতিকাগাররুপে ।
লেখকঃ প্রবাসী, জাপান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন