যে জাতি ইতিহাস জানে না, তাদের মতো দুর্ভাগ্যবান কেউ নেই। মুর্শিদাবাদের পলাশীর প্রান্তরে কোন যুদ্ধ হয়নি, হয়েছিল যুদ্ধের নামে প্রহসন। পলাশীতে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য্য অস্তমিত হয়েছিল শুধুমাত্র যার যা দায়িত্ব তা পালন না করার কারণে এবং সিরাজ-উদ-দৌলার মন্ত্রীপরিষদ সদস্যদের সীমাহীন লোভ-দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের কারণে। সেদিন মীরজাফর নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু তার ওপর প্রদত্ত দায়িত্বও পালন করেননি তিনি। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা সকলেই শাসক গোষ্ঠির অংশ ছিল। আমরা সবাই বলি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, অথচ কেউ আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। আমাদের সকলেরই পলাশী থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। পলাশীর ট্রাজেডির জন্য যতটা ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী দায়ী ঠিক ততটাই নবাবের কাছের লোকেরাও দায়ী। পলাশীর বিপর্যয় তখনই ঘটেছিল যখন অর্থনীতির উপর থেকে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে গিয়েছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বানিজ্যের নামে এদেশে প্রবেস করে অবশেষে দেশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। বাণিজ্যের নামে কেউ যেন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারসহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্টিকে সজাগ থাকতে হবে।
দিল্লীর শেষ সম্রাট যেমন বাহাদুর শাহ্ ঠিক তেমনই ভারতের প্রাণ কেন্দ্র বঙ্গদেশের শেষ নবাব ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা। ১৭৫৭ সালে ইংরেজ ও তাদের দালালদের চক্রান্তে নবাবকে ধ্বংস করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর জীবনের মহত্ব নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও বীরত্বকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়। আর ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে নিজের দেহের সমস্ত রক্ত বিন্দু দিয়ে যিনি বাংলার মাটিকে রক্তে রঞ্জিত করলেন তার ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্র রক্ষার জন্য সামান্যতম চেষ্টার পরিবর্তে, অপচেষ্টা করা হয় অসামান্য। বাংলার স্বাধীনতার সূর্যকে পরাধীনতার গ্লানিতে কবর দেয়ার সকল পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত প্রায় ঠিক সেই সময় ১৭৫৭ সালের ১৩ই জুন রবার্ট ক্লাইভ মাত্র তিন হাজার দুইশত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। ১৯শে জুন নবাবের অধীনস্থ কাটোয়া ক্লাইভের দখলে চলে যায়। ২২শে জুন গঙ্গা পার হয়ে ক্লাইভ মধ্য রাত্রিতে নদীয়া জেলার সীমান্তে পলাশীর প্রান্তরে পৌছান। নবাবের প্রচুর সুদক্ষ সেনা আগে হতেই তৈরী ছিল। ক্লাইভের তবুও ভয় ছিল না, কারণ তিনি জানতেন এ যুদ্ধ-যুদ্ধ নয়, পুতুল খেলার সামিল। আগে হতেই পরিকল্পনা পাকাপাকি। মীর জাফর আলী খাঁ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ প্রভৃতির সাজানো সেনাপতি আজ ভিতরে ভিতরে ক্লাইভের পক্ষে।
ক্লাইভের সৈন্য যেখানে মাত্র তিন হাজার দুইশত সেখানে নবাবের সৈন্য ছিল পঞ্চাশ হাজার। কিন্তু, মীর জাফর, রায় দুর্লভ-সহ অন্যান্য সেনাপতিরা পুতুলের মত দাড়িয়ে ছিল, আর ইংরেজদের আক্রমন ও গুলির আঘাতে নবাবের সৈন্যরা আত্মহত্যার মত মরেছিল। ঐ অবস্থায় অবশ্য নবাব দেশ ও জাতির জন্য ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল মীর মদন, মোহন লাল আর সিনফ্রেকে সাথে নিয়ে। বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে সেদিন মাতৃভূমির জন্য শহীদ হয়েছিল মীর মদন। যুদ্ধ নামক নাটকের মাধ্যমে সেদিন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পাশাপাশি বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। অন্যদিকে পরাজয়ের পর নবাবকে হত্যা করা হয়েছিল নির্মমভাবে। বাংলার বিশ্বাসঘাতক সন্তানেরা এটা বোঝেনি যে, পলাশীর প্রান্তরে সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয় শুধু মাত্র নবাবের পরাজয় নয়, পরাজয় বাংলার-পরাজয় সমগ্র ভারতের। আর ঐ জয় ইংরেজ ও ইংল্যান্ডের। পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের বিখ্যাত লেখক শ্রী নিখিনাথ রায় লিখেছেন, “অষ্টাদশ শতাব্দীর যে ভয়াবহ বিপ্লবে প্লাবিত হইয়া হতভাগা সিরাজ সামান্য তৃণের ন্যায় ভাসিয়া গিয়াছিল এবং মীর জাফর ও মীর কাশিম উর্ধ্বক্ষিপ্ত ও অধঃক্ষিপ্ত, কেহবা অন্তত নিদ্রায়-কেহবা ফকিরী অবলম্বনে নিস্কৃতি লাভ করেন। জগৎ শেঠগণের ক্রোধ ঝটিকা সেই তুফানের সৃজনের মূল।” শ্রীঘোষও তাঁর ইতিহাসে লিখেছেন, “আজকের যে কোন বালকও বুঝিতে পারে যে পলাশীর যুদ্ধ, শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার মত অভিনয় ছাড়া কিছু নহে”।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সম্পর্কিত ইতিহাস, সাহিত্য, নাটক, গ্রামোফোন রেকর্ড ও সিনেমা সকল কিছুতেই কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে সেই সকল অপবাদ মিথ্যা হিসাবেই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদ-ব্রাক্ষণ্যবাদ আর আধিপত্যবাদের দালালির দলে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন এবং বংশানুক্রমে এখনো সে দালালিতে লিপ্ত তারা আজও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে ভারতের কিংবা বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সম্মানে ভূষিত করেন নি এবং এখনো করতে চায় না। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সম্রাট আওরঙ্গজেবের ন্যায় ইসলামের পূর্ণ প্রতীকও যেমন ছিল না, তেমনিই সম্রাট আকবরের মত স্বধর্মের নিপাত সাধনে অগ্রগামী নায়কও ছিলেন না। বরং তাকে ধর্মভীরু বলার পথে কোন বাঁধা নেই। কেননা যখন তিনি বন্দী তখন তাঁর কক্ষে মহম্মদী বেগ তাকে হত্যা করতে আসলে তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়ার সময় চেয়েছিলেন।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ইতিহাসের ভিলেন শুধু যেন মনে হয় মুসলমান মীরজাফরের কথা, যেন প্রমাণ হয় মুসলমান জাতি মানেই বিশ্বাস ঘাতক জাতি। তাই আজ মুর্শিদাবাদ জেলা ও মুসলমান জাতি পর্যন্ত বাংলার বাতাসে যেন কলংক, কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস এই কথাই বলে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে স্বাধীনতার আকাশ ধোয়া অগ্নিশিখা প্রজ্জলিত হয়েছিল তা মুসলমানদের হাতেই। সিপাহি বিদ্রোহ তাঁর জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ যেমন মীরজাফর ও ঘষেটি বেগমের কথা বারবার করে বলা হয়, তেমন জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মিচাঁদদের কথা কেন বারবার বলা হয় না, এ প্রশ্নটি আজ সকলের মনে? ইংরেজরা যখন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পিঞ্জিরাবন্ধ পাখির মত বন্ধী করেছিল তখন সিরাজের সমস্ত চাকর-চাকরানি আর নবাবের ছিল না বরং ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ক্লাইভ আর ওয়াটের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিল।
এমতাবস্থায় ইতিহাসে মুসলিম চরিত্রকে কলঙ্কিত করার পরিকল্পিত বুদ্ধিতেই নবাবের সাহায্যপুষ্ট মোহাম্মদী বেগকেই আদেশ করা হয়েছিল নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হত্যা করতে। মোহাম্মদী বেগ তাতে রাজি না হওয়ায় তারও প্রাণদন্ড দেয়া হবে বলে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। তখন অনন্য উপায় নিরক্ষর-বোকা মোহাম্মদী বেগ অশ্রু স্বংবরণ করেও মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। যদি মোহম্মদী বেগ শিক্ষিত জ্ঞানী হত তাহলে ইংরেজদের আদেশ প্রত্যাখান করে নিজের প্রাণদন্ডকেই অমৃত জ্ঞানে বরণ করে মীর মদন আর মোহন লালের মত ধন্য হতে পারতো। নবাব যখন একটু অসহায়ের মত বেঁচে থাকার আবেদন করেছিল তখন মোহম্মদ বেগ একথা বলেনি যে-না, আমরা তা দেব না। বরং তাঁর ভাষাতে হদয়ের অবধারিত প্রেমধারাই প্রবাহিত হয়েছিল, ‘‘ না তাঁরা তা দেবে না’। এই তারা কারা?
যাই হোক, সেদিন নবাবকে নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁর মৃত দেহকে একটি বস্তায় ভরে হাতীর পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নবাবের স্ত্রী, মা এবং অনেক আত্মীয়রা তখন বন্দি। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তাঁরা আলীবর্দির খাঁর বিখ্যাত আম খেতে চান কি না। অশ্রু সজল নয়নে তাঁরা ইঙ্গিতে সম্মতি দিয়েছিলেন। তার পর করুনার জীবন্ত ছবি ইংরেজ কর্মচারীর আদেশ অনুযায়ী অর্ধ ভর্তি আমের বস্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। নবাব পরিবারের সমস্ত মহিলাদের পক্ষ হতে একজন বস্তার মুখ খুলতেই দেখতে পেলেন ভিতরে আমও নেই বা অন্য কোন খাদ্য বস্তুও নেই আছে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বীভৎস কাঁচা কাটা মাথা। নবাব যেন তাঁর গর্ভধারিণী মার সাথে শেষ দেখা করতে এসেছে। নবাবের হতভাগী মা প্রিয় পুত্রের মুখের দিকে এক পলক তাকাতেই অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়লেন। সম্বিৎ ফিরে এল মীর জাফরের অনুচর গোলাম হোসেনের আদেশে তাঁকে পুনরায় কারারুদ্ধ করা হয়। এদিকে জয়নাল আবেদিন নামক এক দরিদ্র নাগরিকের অনুরোধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার খন্ডিত দেহকে ভাগীরথী নদীর পাড়ে খোসবাগ নামক বাগানে নানাজান নবাব আলিবর্দী খাঁর কবরের পূর্বপার্শ্বে সমাধিস্থ করা হল। আবার মৃত নানা ও নাতীর এক ঐতিহাসিক মিলন হয়েছিল মৃত্যুর পরেও। এ প্রসঙ্গে বর্ধমান জেলার এক কবির কিয়দংশ গভীর শ্রদ্ধার সাথে তুলে ধরছি-
“ আলিবর্দীর কবরের ছায়া সূর্যাস্তের সনে, ধীরে ধীরে পড়ে সিরাজের গোরে। দেখি ভাবি মনে -
আজো বুঝি দাদু ভোলে নাই তারি স্নেহের দুলালটিরে,
আজো বুঝি তারে দুটি বাহু দিয়ে রেখেছে সোহাগে ঘিরে’’।
পলাশীর পর ইংরেজরা ক্লাইভকে নিয়ে গর্ব করতো, কি বাহাদুরী আর বীরত্ব না তিনি দেখিয়েছিলেন পলাশীর প্রান্তরে। বিলেতী সাহেবদের বিলেতী বীরত্বের ইতিহাস বিলেতে চির স্মরণীয় করে রাখবার জন্য পলাশীর আমবাগানে শেষ শুষ্ক আম গাছটির মূল উপড়ে নেওয়া হয়েছিল ১৮৭৯ সালে। তারপর সগর্বে তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিলেতের মাটিতে। দেশবাসীর দেখার তৃপ্তি মিটে যাওয়ার পর ১৮৮৩ সালে শ্বেত মার্বেল পাথরে জয়স্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছিল। ক্লাইভ মিথ্যা সম্মানের যে বুদবুদ নির্মিত গগনচুম্বি অট্টালিকা তৈরী করেছিলেন কিছুদিন পরে সামান্য সূর্য্যালোকে তা শেষ হয়ে গেলে। প্রকাশ হয়ে গেল ভিতরের তথ্য, নানা গুপ্ত দোষ হয়ে গেল প্রকাশিত। তাই হয়ত ক্লাইভের শেষ পরিণতি হল রক্তাক্ত মৃত্যু। অর্থাৎ কাপুরুষের মত নিজের কন্ঠে কুলষিত হস্তে ধারালো ক্ষুর ধরে শ্বাসনালী কর্তন করে আত্মহত্যার কলংক নিয়ে ইতিহাসের পাতায় আত্মগোপন করার চেষ্টা করলেন। পলাশীর পতন ছিল একটি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করার প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। পলাশীর আম্র কাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য্য অস্তমিত হবার পর বিদেশী ও দেশীয় বেনিয়াদের যোগসাজশে যে লুটপাটের রাজত্ব শুরু হয়, ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ-উ-দৌলার পতন কোন একক ব্যক্তির পতন ছিল না, এটি ছিল একটি স্বাধীন জাতির পতন। পলাশীর বিপর্যয় তখনই ঘটেছিল যখন অর্থনীতির উপর থেকে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে গিয়েছিল। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বানিজ্যের নামে এদেশে সে দেশের আলো হাওয়ায় প্রতিপালিত একশ্রেনীর বেনিয়াদের গভীর চক্রান্তের ফসল। পলাশীর ইতিহাস ব্যর্থতার ইতিহাস, নিছক নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার নবাবী হারানোর ব্যর্থতা সেটা নয়। সেটি স্বাধীনতা রক্ষার ব্যর্থতা।
পলাশী মত আজও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে চলছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বন্ধুবেশে বাংলাদেশকে পরিণত করতে চাচ্ছে করদরাজ্যে। আর তাদের এদেশের এজেন্টরা দেশের ভিতর থেকে তাদের কর্মসূচী বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পরও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ মাথা করে দাড়াতে পারেনি, ভারতের অব্যাহত আগ্রাসনের কারণে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে, এখন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সিলেটসহ পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলকেও মরুভূমিতে পরিণত করতে চাচ্ছে। আর তাদের চক্রান্ত সফল করতে মন্ত্রী পরিষদের কিছু সদস্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারত চাচ্ছে করিডোর, যার পরিণতিও বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনবে অকল্যাণ। তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা যেমন কাজ করে যাচ্ছেন তেমনই ভারতীয় পাচাটা বুদ্ধিজীবিরাও কাজ করে যাচ্ছেন নিরবে-নিভৃতে। লোখা-লেখি করে এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারতকে করিডোর দেয়ার পক্ষে জনমত সৃষ্টিরও কাজ করছেন তার।
শুধু পানি আগ্রাসনই নয়, বন্ধু রাষ্ট্র ভারত আমাদের উপর চালাচ্ছে আকাশ আগ্রাসন, সীমান্ত আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। তাদের এই অব্যাহত আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ঐতিহাসিক পলাশীর ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা-মানচিত্র, স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষায় সকল দেশপ্রেমিক-জাতীয়তাবাদী-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, বিভক্ত শক্তি যত দেশপ্রেমিকই হউক না কেন, তারা বিজয়ী হতে পারে না। আর বিজয়ী হতে ব্যর্থ হলে পরিণতি হবে পলাশীর পরবর্তী অবস্থার মত।
লেখকঃ রাজনীতিক ও কলামিষ্ট, মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ)
e-mail :
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন