সাপ্তাহিকী
|
মহিবুল ইয়াজদানী খান
|
|
আওয়ামী লীগ একুশ বছর, পারবে কি বিএনপি আরো পাচ বছর?
23 Jun, 2013
রাজনীতি আসলে কি ? কিসের জন্য মানুষ রাজনীতিতে উত্সাহিত হয় ? রাজনীতিকে কি আমরা পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি ? যারা রাজনীতি করেন তাদের মূল লক্ষ্য কি ? রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে নিজেকে সক্রিয় রাখাকে কি আমরা রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি ? এধরনের অনেক প্রশ্নই আছে যা আমাদের একটু ভেবে দেখা উচিত।
সাধারণত সমাজে বসবাসরত মানুষদের গণতান্ত্রিক অধিকার, বৈসম্মতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে থাকেন বলে বলা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভৌগলিক কারণে বৈসম্মতা অতিরিক্তভাবে দেখা দিলে তখন স্বাধীনতার প্রশ্ন চলে আসে। এইসময় আভ্যন্তরীণ রাজনীতি রূপ নেয় স্বাধীনতায়। ঠিক যেভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্থান আর পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যে ছয় দফা দাবির মধ্য দিয়ে এই পার্থক্যগুলো তুলে ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই ছয় দফাই পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল। যারফলে পূর্ব পাকিস্থান পশ্চিম পাকিস্থান থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান থেকে বাংলাদেশের মাটিতে অবতরণ করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষে শুরু করেন দ্বিতীয় বিপ্লব। সেই বিপ্লব শুরুর প্রথমার্ধে মাত্র তিন বছর ছয় মাসের মাথায় তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। সে ছিল পচাত্তরের ১৫ আগস্টের কথা। এর পর থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশে আরেক ধরনের রাজনীতির খেলা।
পচাত্তরের পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগমন ঘটে সামরিক ও বেসামরিক পেশাদার কর্মকর্তাদের। এইসময় আসল রাজনীতিবিদের অনেকেই তাদের নিজ নিজ দল ছেড়ে চলে আসতে থাকেন ক্ষমতাসীন দলে। ফলে আওয়ামী লীগ, জাসদ, নেপ মোজাফফর, বাসদ, সাম্যবাদী দল, নেপ ভাসানী, কমিউনিস্ট পার্টি, গণ আজাদী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো দুর্বল হয়ে পরে। বিভিন্ন দলে ভাঙ্গনও ধরে। রাজনীতিটা কৌশলে পরোক্ষভাবে অন্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অবসরপ্রাপ্ত বড় বড় জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন ঘটে। এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ স্টকহলম বাংলাদেশ দুতাবাসে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন আমার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সামরিক বাহিনীর লোক এরা করা। এরাতো আমাদেরই সন্তান। এরাতো আর পাকিস্থানী নয়। সুতরাং অবসরে গিয়ে যদি তারা কেউ রাজনীতি করতে চায় তাতে ক্ষতি কি? লাভ ক্ষতির প্রশ্ন এখানে আসেনি বা আসবেই বা কেন ? রাজনীতি করার অধিকার সকলেরই আছে। তবে সে রাজনীতি হতে হবে রাজনীতির মতো রাজনীতি। জেনারেল জিয়ার ভাষায় রাজনীতিকে সমস্যায় ফেলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করা নয়।
১৯৭৬ থেকে ৮১ পর্যন্ত জেনারেল জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে গেছেন। নানা প্রলোভন দেখিয়ে এইসময় রাজনীতির নামে গড়ে তোলা হয় আরেক ধরনের খেলা। তরুণ যুব সমাজের এক হাতে অস্ত্র আর অন্য হাতে পারমিট তুলে দেওয়া হয়। সুযোগ সন্ধানী ও সুবিধাবাদীরা এই সুযোগের সতবেবহার করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেমে আসে এক কালো ছায়া। রাতারাতি ঐতিহাসিক বাঙালী জাতীয়তাবাদকে পরিবর্তন করে বানিয়ে দেওয়া হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। ধর্মকে নিয়ে আসা হলো রাজনীতিতে। রাজনীতিকে সত্যি সত্যি এক বিরাট সমস্যার মধ্যে ফেলে দিলেন জেনারেল জিয়া। এইসময় স্বাধীনতা বিরোধীদের তিনি রাজনীতিতে পূনর্বাসিত করেন।
জেনারেল জিয়ার পরে তার উত্তরসুরী জেনারেল এরশাদ একই পথ অনুসরণ করেন। তিনি একটানা ৯ বত্সর দেশ শাসন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জেনারেল জিয়া আর জেনারেল এরশাদের মধ্যে তফাত এখানেই, জিয়ার আমলে সামরিক বাহিনীর মধ্যে হয়েছে বেশ কিছু অভ্যুত্থান, নিহত হয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসার। আর এরশাদ সামরিক অফিসারদের সাথে কোনো ধরনের হানাহানিতে না গিয়ে আপোষ করেছিলেন। এরশাদের প্রতি সামরিক বাহিনীর বড় সমর্থন থাকলেও দেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত করেছিল বিদ্রোহ। ফলে ১৯৯০ ডিসেম্বরে তাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাড়াতে বাধ্য করা হয়। এইসময় সামরিক বাহিনীও তার উপর থেকে সমর্থন উঠিয়ে নেয়। এইভাবে ১৯৭৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ১৫ বত্সর এই দুই জেনারেলের হাতে দেশের ক্ষমতা থাকার কারণে রাজনীতির মূল নীতি তারা পাল্টিয়ে দিতে সফল হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যার ফল আমরা এখনো ভোগ করছি। বাংলাদেশে আজ রাজনীতি বানিজ্য নীতিতে পরিনত হয়েছে। আর এটা করেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জেনারেল হুসেন মোহাম্মদ এরশাদ। নিজের জন্য কিছু পাওয়া কিছু নেওয়া এটাই এখন রাজনীতি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন