ক’দিন আগে ব্লগে একটি গল্প পড়লাম যা এখানে অপ্রসঙ্গিক হবে না- সংক্ষেপে গল্পটি এরকম- অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করে অনিবার্য প্রয়োজনেই চাকরির বাজারে পা দিলো। কিন্তু যেখানেই আবেদন করুক, প্রচলিত নিয়মে আবেদনপত্রে যাবতীয় সার্টিফিকেটের সাথে একটা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়। তার যে স্বভাব-চরিত্র অতিউত্তম, রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোন সন্ত্রাসী বা অবৈধ কর্মকাণ্ডে যে সে কখনোই জড়িত ছিলো না, একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়ন না পেলে চাকুরিদাতা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিন্ত হয় কী করে ! এটা প্রমাণ করতেই মেয়েটি ইতোমধ্যে বারকয়েক চেষ্টা করেও একটি সার্টিফিকেট পেতে ব্যর্থ হলো। একে তো অভাবী, তাও আবার অপরিচিতা, এরকম মেয়েকে সরকারের কোন দায়িত্ববান কর্মকর্তা না জেনে না শুনে প্রত্যয়ন দেবেন কী করে! অত্যন্ত সঙ্গত কারণ। অথচ এই একটি সার্টিফিকেটের অভাবে তার সবকিছু যে ভেস্তে যায় যায়। অতঃপর একজন নিকটাত্মীয়ের চ্যানেল ধরে কোন এক ভীষণ ব্যস্ত সরকারি কর্মকর্তার অফিসে গেলো সে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সিরিয়াল পাচ্ছে না। বেলা গড়িয়ে অবশেষে যখন ডাক পড়লো, সার্টিফিকেট নেবে কী, প্রথম প্রশ্নেই মেয়ে কুপোকাৎ! সেই একই সমস্যা। ‘তোমাকে আমি কতোটুকু চিনি যে সার্টিফিকেট দেবো? তোমার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আমি নিশ্চিৎ হবো কী করে?’ মেয়ে আর কী বলবে, ফেলফেল করে অসহায় চেয়ে থাকে। হয়তো কর্মকর্তার একটু দয়াও হলো, ‘ঠিক আছে, অমুক যখন বলেছে, দেখা যাক্ কী করা যায়। তুমি পাশের রুমে গিয়ে বসো।’
ছোট্ট এ গল্পটির শেষটুকু এরকম ছিলো, ভিজিটরদের সাক্ষাৎদান শেষে দায়িত্ববান কর্মকর্তা উঠে ধীরে ধীরে পাশের রুমে ঢুকলেন এবং ভেতর থেকে দরজাটি বন্ধ হয়ে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজাটি আবার খুলে গেলো। উস্কুখুস্কু চুল আর বিধ্বস্তপ্রায় পোশাকে উদ্ভ্রান্তের মতো যে তরুণীটি বেরিয়ে এলো, তার হাতে একটি ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। ওটাতে স্পষ্টাক্ষরে ইংরেজিতে জ্বলজ্বল করছে, ‘ ...... সে আমার পূর্ব পরিচিত। তার স্বভাব চরিত্র ভালো। ব্যক্তিগত জীবনে সে অত্যন্ত সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী। আমার জানামতে সে সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কোন অবৈধ কর্মকাণ্ডে কখনোই জড়িত ছিলো না। আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।’
এতো গেল যারা সার্টীফিকেট দেন তাদের চরিত্র, আর যারা নেন তাদের সবার চরিত্রযে সবসময় গল্পের মেয়েটির মত নয় তা কিন্তু হলফ করেই বলা যায়। পানি যেমন সব সময় উপর থেকে নীচের দিকে গড়ায় চরিত্রের প্রভাবও নাকি সেভাবেই সংক্রমিত হয়। ইংরেজিতে একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে ‘when money is lost, nothing is lost/ when health is lost, something is lost/ when character is lost, everything is lost.’
আমরা যে এভরিথিং লস করে বসে আছি আজকাল এ অনুভুতিটুকুন পর্যন্ত আমাদের যুব সমাজের মগজে স্ট্রাইক করে না। পারলৌকিক উন্নতির কথা বাদই দিলাম, বৈশ্বয়িক উন্নতিও কিন্তু ভাল ক্যারেক্টার ছাড়া লাভ করা যায় না। পরাশক্তি আমেরিকার কথাই যদি ধরি, ওদেরকে সারা বিশ্ব যদিও ঘৃণার চোখে দেখে তথাপি তাদের জাতিগত উন্নতির পিছনে রয়েছে প্রচন্ড রকমের কিছু সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় গুণাবলী। যেমন- সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনকে একবার সংসদে ইম্পিচমেন্ট করা হয়েছিল আদালতে (মিথ্যে না বলার) শপথ করে মিথ্যে বলার অভযোগে।যদিও মনিকা লিউনেসকির সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তাদের সমাজে সেটা আবার বে-আইনি নয় যদি দুজনেরই সম্মতি থাকে। আমি বলছিনা উন্নত জাতি-গোষ্টির সব ক্যারেক্টাই ভাল, তারা নারী আর এলকোহল নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছে। অবশ্য এর খেসারতও দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর আমাদের দেশে আদালতের কাঠগড়ায় উঠার আগে সাক্ষীকে মিথ্যে বলার ট্রেনিং দিয়ে নেয়া হয়। এর ব্যতিক্রম যে নেই তাও কিন্তু নয়। গেল কয়েক মাস আগে মানবাতা বিরুধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের সাক্ষী গনেষ বিবেকের তাড়নায় শেষ পর্যন্ত আসামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিলেন! তার মানে দাঁড়াচ্ছে রাষ্ট্রই তার ক্যারেক্টার লস করে ফেলেছে, সে জাতির উন্নতি হয় কি করে? মহাগ্রন্থ আল-কোরান সাক্ষীর বিষয়ে ঘোষনা করছে ‘হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার অথবা তোমাদের বাপ-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও।’- (আন-নিসাঃ১৩৫) আদালত পাড়ায় এ শিক্ষার নুন্যতম বাস্তবায়ন যদি সম্ভব হত তাহলে আজ এত সংঘাত-হানাহানির কবলে হয়ত দেশ পড়তনা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন স্তরেই সত্য বলাকে আর উৎসাহিত করা হচ্ছে না। মহাদুর্নীতির জন্য এদেশে আপনি দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট পেতে পারেন (আবুল হোসেন)অনায়াসে, কিন্তু সত্য বললে কোন প্রতিদানতো নেই-ই বরং রাজাকার বনে যেতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও (বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী)।
আরেকটি উদাহরন- ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনিকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত গোপন ফোনালাপ প্রকাশ করার অভিযোগে। গত ৭ মার্চ ২০১৩ তারিখে ইতালির অন্যতম বৃহৎ শহর মিলানের একটি আদালত বার্লুসকোনির বিরুদ্ধে এ আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বামপন্থি দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বির কথোপকথন গোপনে আঁড়ি পাতা যন্ত্রে রেকর্ড করে ভাই পাওলো’র মালিকানাধীন পত্রিকা ‘ইল জার্নালে’তে প্রকাশ করেছেন। পত্রিকা কিন্তু সত্যই প্রকাশ করেছে, তবে সত্য তথ্যটা উদ্ঘাটনের পন্থাটা ছিল নাগরিক অধিকার হরণ। আঁড়িপাতা যে কোন দেশের জন্য সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এ বিপর্যয়ের হাত থেকে সমাজকে বাঁচাতেই সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘আর (তোমরা) একে অপরের গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করোনা।’
আমাদের দেশে পত্রিকার ক্যারেক্টার হল কাল্পনিক ও মিথ্যা তথ্য নির্দিধায় প্রকাশ করা। আজ পর্যন্ত আমি শুনিনি কোন পত্রিকার সম্পাদককে মিথ্যা তথ্য প্রকাশের অভিযোগে জেল-জরিমানা খাটতে হয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জেল খেটেছেন কিন্তু সেটা সত্য লিখার অভিযোগে। আদালতে উনার আইনজীবী যখন মাননীয় বিচারপতির কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, মাহমুদুর রহমান যে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন বা উনি সেখানে যে তথ্য দিয়েছিলেন সেটা কি মিথ্যে ছিল কিনা? জবাবে বিচার পতি বলেছিলেন- ‘আমরা সত্য মিথ্যা যাচাই করতে বসিনি, আমরা দেখছি আদালত অবমাননা হয়েছে কিনা?’ বাহ বাহ! এই না হলে আদালত! তার মানে দাঁড়াচ্ছে আমাদের আদালত গুলোও তাদের ক্যারেক্টার হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের জাতীয় ক্যারেক্টার বলে আর কিছু রইলনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যারা মুখে ফেনা তুলেন তাদের মাঝে সত্য আর সুন্দরের লেশ মাত্র আমরা স্বাধীনতা-উত্তর প্রজন্ম খুঁজে পাইনা।
একদিন ল্যাবে বসে মনোযোগ দিয়ে জটিল এক ক্যালকুলেশান করছিলাম, এমন সময় পিয়েত্রো নামে মাস্টার্সের এক ছাত্র এসে লোহার পায়া ওয়ালা একটি চেয়ার টান দিল বসার জন্য। মেঝের সাথে লোহার ঘর্ষনে বিরক্তিকর শব্দের উদ্রেগ হওয়াতে আমি একটু লাফিয়ে উঠলাম এবং তার দিকে সামান্য বিরক্তির সাথে তাকালাম। পিয়েত্রো সাথে সাথে তো কয়েকবার সরি বললই, এমন কি সে সারাদিন যতবারই ল্যাবে ঢুকেছে ততবারই ঐ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাচ্ছিল আর বলছিল আমি তোমার স্টাডিতে ডিস্টার্ব করলাম, ভবিষ্যতে আর এরকম হবেনা, যদিও আমি এটা তৎক্ষণাতই ভুলে গিয়েছিলাম। আর আমাদের দেশে? একজন ছাত্র পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিচ্ছে এমতাবস্থায় একদল ছাত্র তাকে টেনে হিছড়ে বাইরে নিয়ে এসে আচ্ছামত পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়ে দিল। তার নামে কোন মামলা নেই, অপরাধ এটুকু যে সে ‘এ’ দলের আদর্শে বিশ্বাস করে আর তার বন্ধুরা ‘বি’ দলের আদর্শে বিশ্বাস করে। একই অপরাধে একগ্রুপ ছাত্র অন্য গ্রুপকে আবাসিক হল থেকে বের করে দেয়, আবার একই আদর্শে বিশ্বাসী হয়েও বন্ধুর বুকে গুলি চালাতে দিধ্বা করেনা কখনো কখনো। অথচ এদেরকেই আমরা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছি...... আমার জানামতে সে সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী কোন অবৈধ কর্মকাণ্ডে কখনোই জড়িত ছিলো না।......... আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি। শুধু তাই নয়, শিক্ষকরাও ইদানীং এসবকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বাংলাদেশের এক খ্যাতিমান শিশুতোষ লেখক (যিনি সিনেমা নাটক বানান আবার বিজ্ঞানী হিসেবেও নিজেকে জাহির করেন!)কিছুদিন আগে তো পত্রিকায় কলাম লিখে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের যৌনাচার প্রেক্টিস করতে রীতিমত উদাত্ত্ব আহবান জানিয়েছেন এই বলে যে ‘যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা.........’ । তো এ হচ্ছে আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের ক্যারেক্টার। অথচ আজকেই (৮ মার্চ ২০১৩, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে) পত্রিকাগুলোতে খবর বেরিয়েছে যে গত দুই মাসে তিন হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গড়ে ১৫ নারী পাচার হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন সূত্র এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক এ চিত্র পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে অনুযায়ী অর্ধেকই ছাত্রী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রেমের নামে ব্যভিচার করা আজ ফ্যাশানে পরিনত হয়েছে। বয় ফ্রেন্ড, লিভটুগেদার, মডেলিং এসব ইংরেজী শব্দের ব্যবহার করে যৌনতাকে শিল্পে রুপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ থেকে পরিত্রানের উপায় কি, সমাজ বিজ্ঞানীরাই হয়ত ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে মনে হয় কোরানের একটা মাত্র শিক্ষা যদি বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে এ মহামারী থেকে সমাজ রক্ষা পেত। শিক্ষাটা হচ্ছে- ‘যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ’- বনী ইসরাইলঃ৩২।
ভাল ক্যারেক্টারের আরেকটা উদাহরণ বলি, সালমান নামে আমার এক বিদেশী বন্ধু কোরিয়া থেকে এমএস করে এসেছে। কোরিয়াতে থাকাকালীন সে তার মানি ব্যাগ তিন তিন বার হারিয়েছে এবং তিন বারই ডাক যোগে তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর আমাদের এখানে একটা আইডি কার্ড ফেলে আসলেও কেউ ফেরত দেওয়ার তাগিত অনুভব করে না।
জাপানীজদের জাতীয় ক্যারেক্টারতো আরও শক্ত ও অনুকরণীয়। আমার কয়েকজন সহকর্মী যারা জাপানে পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছ থেকে শুনেছি –একজন ফল বিক্রেতাকে যদি দেখাতে পারেন যে তার ফলে স্পট আছে সাথে সাথে সে সেটি সরিয়ে ফেলবে কিংবা লজ্জাবনত কন্ঠে আপনার কাছে ক্ষমা চাইবে। তারপরও যদি আপনি সেটি নিতে চান তাহলে দাম ধরবে অর্ধেক বা তারও কম। মিথ্যে বলার অভ্যেস তাদের অজানা, অন্যের সম্পদে হাত দেওয়ার বা অন্যের অধিকার হরণ করার চিন্তা তাদের কাছে অকল্পনীয়। আমার এক স্যার একবার উনার ছাতা ফেলে এসেছিলেন জাপানের এক সুপার মার্কেটে, ৫ দিন পরে গিয়েও ছাতাটা সেখানেই পেয়েছিলেন, এসব হচ্ছে একটা জাতির নৈতিকতা বোধ।
বিশ্বখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসকে তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে চরিত্রহীনতা ও দুর্নীতি প্রবেশ করানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। একথা সচেতন মাত্রই জানেন সক্রেটিস তার সময়ের শাসক শ্রেণী যে শাসন-শোষণ চালাচ্ছিল তার বিপরীতে তরুণ সমাজকে সংগঠিত করছিল বিদ্রোহ করার জন্য । সব অভিযোগ বিবেচনায় এনে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। মৃত্যুর মাধ্যম নির্দিষ্ট হয় হেমলক বিষ পান। প্লেটোর ফিডো গ্রন্থের শেষে সক্রেটিসের মৃত্যুর পর্বের বর্ণনা উদ্ধৃত আছে। কথিত আছে এক শিষ্য তাকে বলেছিলেন আপনি প্রাণ ভিক্ষা চান, কেননা আপনি তো কোন অপরাধ করেননি। জবাবে সক্রেটিস বলেছিলেন অপরাধ না করে আমি ক্ষমা চাইব এ শিক্ষাতো আমি তোমাদের দেইনি। লজ্জাবনত ভঙ্গীতে শিষ্য বললেন বিনা অপরাধে আপনার মৃত্যু দন্ড হবে এ আমি সইতে পারছিনা। সক্রেটিস আবারও জবাব দিলেন তার চিরায়ত যৌক্তিক ভঙ্গীতে- তাহলে কি তোমরা চাও আমি অপরাধ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেই? ন্যায় আর নীতিবোধের কি অমীয় শিক্ষা! বিষ পানের পর সক্রেটিসকে হাটতে আদেশ করা হয় যতক্ষণ না তার পদযুগল ভারী মনে হয়। শুয়ে পরার পর যে লোকটি সক্রেটিসের হাতে বিষ তুলে দিয়েছিল সে তার পায়ে পাতায় চিমটি কাটে। সক্রেটিস সে চিমটি অনুভব করতে পারেননি। তার দেহ বেয়ে অবশতা নেমে আসে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। মৃত্যুর পূর্বে তার বলা শেষ বাক্য ছিল: "ক্রিটো, অ্যাসক্লেপিয়াস আমাদের কাছে একটি মোরগ পায়, তার ঋণ পরিশোধ করতে ভুলো না যেন।"
কাগজে লিখা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট আমাদের সমাজ বদলাতে পারবেনা, বাস্তব ক্যারেক্টারটা কি আমরা বদলে দিতে পারিনা? পারিনা ন্যায়, সত্য আর সুন্দরের জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে, যেমনটা করেছিলেন সক্রেটিস।
লেখকঃ শিক্ষক, শাবিপ্রবি, সিলেট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন