সাপ্তাহিকী
|
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
|
|
ব্রিটিশ এক্সট্রাডিশন এক্ট ২০০৩, বাংলাদেশে বিচারাধীন আসামী প্রত্যার্পন এবং বিশিষ্ট আইনজীবীদের অভিমত
03 Jun, 2013
ব্রিটেনে বসবাসরত ও আইনী প্রাকটিসে ব্যাপক খ্যাতি অর্জনকারি স্বনামধন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিস রহমান ওবিই মনে করেন, ব্রিটেনে এক্সট্রাডিশন আইন ২০০৩ অনুযায়ী যে কোন দন্ডপ্রাপ্ত, ওয়ারেন্টভুক্ত অপরাধীদের বাংলাদেশ ব্রিটেন থেকে নিতে পারবে, সে জন্য বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের মধ্যে পৃথকভাবে কোন চুক্তির প্রয়োজন নেই। ব্যারিস্টার আনিস রহমান কিছুক্ষণ আগে বিলেতের কমিউনিটি চ্যানেল চ্যানেল এস-এর সাথে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে আগত রিকুয়েস্ট হতে হবে ফরমালি, যা এদেশে বাংলাদেশের হাই কমিশনার থ্রোতে অফিসিয়ালি আসতে হবে আদালতের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, এক্সট্রাডিশন এক্ট ২০০৩ মতে, যেখানে বাংলাদেশ সহ বিশ্বে ১০০টির মতো অঞ্চল ও দেশ অন্তর্ভূক্ত, এই ট্রিটির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে নতুন করে কোন আন্তদেশীয় ট্রিটির চুক্তির দরকার পড়েনা।
এদিকে বিখ্যাত টেম্পল চেম্বার-এর আইনজীবী ব্যারিস্টার এন ইসলাম মনে করেন, একই এক্টের অধীনে ব্রিটেন-বাংলাদেশে অপরাধী বিনিময় করা যাবে, এতে কোন বাধা নেই। ব্যারিস্টার ইসলাম আরো বলেন, অপরাধী সংক্রান্ত অনুরোধ যখন আসবে, তখন সেক্রেটারি অব ষ্টেইট সেটা পরীক্ষা করে দেখবেন এই এক্সট্রাডিশন এক্টের (২০০৩) এর অধীনে। ব্যারিস্টার ইসলাম আরো বলেছেন, সেক্রেটারি অব ষ্টেইট এর কাছে যদি যথেষ্ট পরিমাণে মনে হয়, অর্থাৎ আদালতে কেউ ১২ মাসের সাজা প্রাপ্ত হন, নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকী হন, তাহলে তিনি যে কারো সিটিজেনশীপ কেড়ে (রিভক) নিতে পারেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচারাধীন, দন্ডপ্রাপ্ত, ব্রিটেনে বসবাসরত কোন আসামীর ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার চাইলে তাকে ফেরত নিতে আইনী খুব একটা সমস্যা না বলে এই দুই আইনজীবীর অভিমত। তবে তারা বলেন, তা হতে হবে ফেয়ার ও এভিডেন্স নির্ভর ও যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আদালতের সাজা প্রাপ্ত, জন নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকী অনেকের নাগরিকত্ব (ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ) ইতিমধ্যে ব্রিটিশ সরকার কেড়ে নিয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, ১২ জনের মতো সিটিজেনশীপ হারিয়েছেন, ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার বরাবরই সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে সোচ্চার এবং এ ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান পরিস্কার বলে এই দুই আইনজীবীর অভিমত। তবে ব্যারিস্টার আনিস রহমান বলেছেন, মৃত্যুদন্ডের মতো রায়ের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের অবস্থান, ব্রিটিশ আইনে তা বৈধ নয়। বাংলাদেশ সরকারকে হয়তো এব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্রিটিশ সরকারের কাছে পরিস্কার করা লাগতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনে আইনী পেশায় জড়িত ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেছেন, এক্সট্রাডিশন এক্ট ২০০৩ মতে আসামী প্রত্যার্পন করা যায়, এতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেছেন, ব্রিটেন সরকার এ পর্যন্ত ১৯ জনের নাগরিকত্ব রিভোক করেছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ব্রিটেনে ও আমেরিকায় দুই জায়গায় বসবাসরত চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে তাদের অনুপস্থিতে বিচার শুরু করেছে, যা পত্র-পত্রিকায় এসেছে। এ নিয়ে ব্রিটেনের কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইষ্টলন্ডনের মুসলিম সেন্টার ও দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে, আইআর, মুসলিম এইড নিয়ে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর এই দুই নেতাকে ব্রিটেনে কমিউনিটি, পত্র-পত্রিকা, কমিউনিটি টিভি চ্যানেল, ইসলাম টিভি, প্রভৃতিতে বিভিন্ন লাইভ চারিটি প্রোগ্রামে ব্যাপকভাবে সক্রিয় দেখা যেতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর পর থেকে এই দুই জামায়াত নেতার তৎপরতা এখন কিছুটা পর্দার আড়ালে চলে গেছে। দুজনই ব্রিটেন ছাড়াও আমেরিকার বাসিন্দা বলে অনেকেই অভিমত পোষণ করতে শোনা যায়। আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশের বিশিষ্ট এক সাংবাদিক, যুদ্ধাপরাধী বিচারের আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনার জানিয়েছেন, তিনি আশারাফুজ্জামানকে আমেরিকায় বসবাস করতে দেখেছেন। আরো একজন মিডিয়া কর্মী টেলিফোনে জানিয়েছেন, তিনি চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে বেশ কয়েকবার আমেরিকাতে অবস্থান করতে দেখেছেন।
ব্রিটেনের এক্সট্রাডিশন এক্ট ২০০৩ এর বিস্তারিত জানতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেনঃ
https://www.gov.uk/extradition-processes-and-review এখানে পার্ট টুতে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। পুরো ট্রিটি সবিস্তারিত বর্ণনা আছে, ট্রিটিটির প্রসেসিং সহ সব কিছুই এখানে পাবেন।
https://www.gov.uk/extradition-processes-and-review
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন