সাপ্তাহিকী
|
আব্দুল আজিজ মীর
|
|
সেরা প্রবাসীদের সেরা প্রাপ্তি
03 Jun, 2013
মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের একটি সাধারণ নাম মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত "প্রবাসী শ্রমিক" এই শ্রমিক নামে আমাদের অভিহিত করেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে শুরু করে কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও। আমার অনেক লেখায় এই আপত্তিকর অপবাদ থেকে অব্যহতি পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা বহুবার করেছি। আপাত দৃষ্টিতে তেমন ফল আমরা প্রবাসীরা পাইনি।
সৌদি আরবের বিশিষ্ট মানবতাবাদী ব্যক্তি, বুব্ধিজীবী ও বহুল প্রচারিত সৌদি গেজেট পত্রিকার সম্পাদক মি. তারেক আল ময়না বিদেশিদের নিয়ে যত লেখা লিখেছেন সব লেখায় তিনি সৌদি আরবের অবস্থারত সবদেশের প্রবাসীদের "অতিথি কর্মজীবি" বলে সম্বোধন করেছেন। ফিলিপাইন তার দেশের সকল প্রবাসী নাগরিকদের সার্ভিস কর্মজীবি বলেই ক্ষান্ত হননা তাদের পাসপোর্টে পেশা হিসাবে সার্ভিস সেক্টর উল্লেখ করা থাকে। সম্মান নিজের ঘর থেকেই শুরু হওয়া উচিত। আমাদের আঁতেল মার্কা কর্তাব্যক্তিদের বোধগম্য আশা করি হবে।
সৌদি আরবের শিক্ষার সুতিকাগার নামে খ্যাত কিং সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়েটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে যার বর্তমান ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা আটত্রিশ হাজার আটশত পচাত্তর জন। যার মধ্যে বর্তমানে ৭২টি দেশের প্রচুর ছাত্র/ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে চারহাজার আটশত পঞ্চাশজনের মতো শিক্ষক/শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে লোক কর্মরত রয়েছেন। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা ক্যাম্পাস এবং ছাত্রী নিবাস।
মনোরম এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে দুইহাজার দুইশত চব্বিশ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই কিং সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়। কিং সৌদ বিন আব্দুল আজিজ এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। আরবি এবং ইসলামিক বিষয় ব্যতিত সব বিষয়ে ইংরেজী ভাষায় পড়াশুনা করানো হয়। সম্পূর্ণ অবৈতনিক বরঞ্চ ছাত্র/ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। বিদেশি ছাত্র/ছাত্রীরা মেধার ভিত্তিতে এখানে বৃত্তি নিয়ে পড়াশুনা করতে আসেন।
২০১২সালে করা বিশ্ব জরিপে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২৯৩তম। আরব বিশ্বে ১ নাম্বার সারির মধ্যে ২৫তম স্থান কিং সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
Vice rectorat for knowledge exchange and technology transfer এই নামে পৃথিবীব্যাপী মেধার ভিত্তিতে বিদেশি ছাত্র/ছাত্রীরা বৃত্তি নিয়ে এখানে আসেন। বর্তমানে মাসিক ৯৯০ সৌদি রিয়াল অর্থাৎ ২৬৪ আমেরিকান ডলার দেওয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। এই সুযোগের আওতায় বর্তমানে বেশ কিছু বাংলাদেশি ছাত্ররা এখানে অধ্যায়ন করছেন। তবে আরো আনন্দের খবর হল সৌদি আরবের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম এই বিদ্যাপিঠে বাংলাদেশের প্রায় ২৫জন অধ্যাপক রয়েছেন। যাদের সবাই ডক্টরেট ডিগ্রীধারী। যারা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন এবং নিরবে আমাদের জাতীয় পতাকার সম্মান বয়ে চলেছেন।
গত ৩০মে ২০১৩ বৃহস্পতিবার আমি একটি বিরল অনুষ্ঠানে যোগদান করে সত্যিই নিজেকে গর্বিত অনুভব করছি। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলেন কিং সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত বাংলাদেশি ছাত্ররা। এই সমস্ত ছাত্ররা মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর একজন প্রফেসর যিনি উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য এখানে এসেছেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপ বিভাগের উদ্যোগে বিদেশি ছাত্রদের নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর তাদের নিজ নিজ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পোশাক, পর্যটন, খাবার ইত্যাদি মেলার মাধ্যমে তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় এই বছরের ৬ই এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী মেলায় ২৫টি দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মেলায় বাংলাদেশ প্রথম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করেন।
গত ২৭মে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপ বিভাগের হল রুমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী বাংলাদেশি ছাত্রদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্কলারশিপ বিভাগের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান আল আমরী। পুরস্কার প্রাপ্তির এই আনন্দকে স্মৃতিময় করে রাখার জন্য ৩০মে ২০১৩ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের হলরুমে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উচ্চতর শিক্ষা নিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এসময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন নাসির উদ্দিন কাজেম আলী, ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী মুহসিন, মক্কা সুইটসের সত্বাধিকারী মাকসুদ আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কামরুজ্জামান, আল ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ সোহাইল উল্লাহ, বাংলানিউজের সৌদি আরব কারেসপন্ডেন্ট মোহাম্মদ আল-আমীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লোকমান।
বাংলাদেশি এই সমস্ত মেধাবী ছাত্রদের অর্জিত ও গর্বিত এ জাতীয় অর্জনকে স্মৃতিময় করে রাখার জন্যই এই মিলন মেলার আয়োজন।
এই মিলন মেলাকে আরও অলংকৃত করেছেন আমাদের জাতির গর্বিত সন্তানগণ অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে শিক্ষাদানরত শ্রদ্ধেয় বাংলাদেশি শিক্ষক যাদের মধ্যে ছিলেন ড. কাজী মহসীন, ড. কামরুজ্জামান, ড. সাইফুল ইসলাম, ড.ইউসুফ আলী, ড. মোহাম্মদ গোলাম মর্তুজাসহ আরও শিক্ষাগুরুরা।
আমার বলতে দ্বিধা নেই আমি দীর্ঘ বছর যাবত একটি ইউরোপিয়ান দুতাবাসে কর্মরত আছি এবং দীর্ঘ বছর যাবত প্রবাসীদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে লেখা-লেখি করছি। এমনকি বাংলাদেশের সুনাম রক্ষার জন্য সৌদি আরবের পত্র-পত্রিকায় লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। লেখা-লেখির সুবাদে অনেক অনুষ্ঠানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় বা হয়েছে এবং অনেক শিক্ষিত লোকদের মিলন মেলায় যোগ দিয়েছি কিন্তু বিদেশের মাটিতে এক সাথে একই অনুষ্ঠানে এতজন শিক্ষাগুরুদের সামনে আমি আমার প্রবাস জীবনের প্রথম উপস্থিত হতে পেরেছি। আমি সত্যি অভিভুত।
এই সমস্ত মেধাবী ছাত্রদের অনুষ্ঠানে এবং সম্মানিত শিক্ষাগুরুদের উপস্থিতি এবং মেলাতে এই শিক্ষাগুরুদের পরামর্শ সক্রিয় সহযোগিতায় সম্ভব প্রথম স্থান লাভ করা।
আসলে আমরা এই বাংলাদেশ দেখতে চাই প্রবাসের মাটিতে। রিয়াদের সকল বাংলাদেশি কলম সৈনিক বিশেষ করে যারা প্রবাসীদের নিয়ে লেখা-লেখি করেন যেমন, অহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আল-আমীন, লোকমান বিন নুর হাশেম, মোহাম্মদ আলী, মামুনুর রশীদ, শাহপরান মিঠু, সাগর চৌধুরীসহ সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
হারা বা বাথার তরবারী যোদ্ধার সংখ্যা অতি নগন্য। তাই তাদের কাছে আমরা পরাস্ত হবোনা। লেখা-লেখির মাধ্যমে আমাদের জাতির ভাল দিকগুলো তুলে ধরে আমরা প্রমাণ করবো আসলেই আমরা কর্মঠ ও সৎ বাংলাদেশি। এই পরিচয়ই আমরা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবো এবং সফল আমরা হবই, অনেক ক্ষেত্রে হয়েছি যার প্রমাণ আমি দিতে পারবো তাও দালিলিক।
আমার পুরানো লেখার একটি পুনরাবৃত্তি করে আমার আজকের লেখা শেষ করবো।
কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ২০০৮ সাল থেকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের অহংকার ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে একটি চেয়ার আছে। যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মানের বিষয় এবং ড. ইউনুস এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত ভিজিটিং প্রফেসর।
বাংলাদেশের মিডিয়া কর্তাদের প্রতি আবেদন থাকবে বিদেশে বাংলাদেশিদের নদীসম অপবাদের বিপরীতে সাগরসম সুনামগুলি আপনাদের মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সম্মান উঠে সর্বোচ্চ চূড়ায়। সার্থক হবে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারি শহীদদের রক্ত এবং অসংখ্য মা-বোনদের ইজ্জতদান।
লেখকঃ আব্দুল আজিজ মীর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন