সাপ্তাহিকী
|
মোহাম্মদ সফিউল আলম
|
|
বন্ধু
26 May, 2013
বন্ধু একটি ছোট্ট শব্দ। কিন্তু মানুষের জীবনে বন্ধুর প্রভাব সুবিশাল। বন্ধু হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি যে তার বন্ধুর জন্য হৃদয়ে আবেগ, অনুরাগ ও গভীর ভালবাসা পোষণ করে। একে অপরের জন্য হৃদয়ে গভীর অনুরাগ ও ভালবাসা পোষণকারী দু'জন ব্যক্তির মধ্যে বিরাজমান বিশেষ সম্পর্কই হচ্ছে বন্ধুত্ব। দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, "দু'টি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব"। দু'জন ব্যক্তির পারস্পরিক বোঝাপড়া, আগ্রহ, ভালবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ত্যাগ, সমবেদনা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে এই চমৎকার সম্পর্কটা গড়ে উঠে। নানা কারণে মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয়। দু'জন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠার প্রধান শর্ত হচ্ছে উভয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সমমনা ও সহমত পোষণকারী হওয়া। দুই বিপরীত মতের দু'জন ব্যক্তির মধ্যে সাধারণতঃ বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধু সব সময় তার বন্ধুর শুভাকাঙ্খী হয়। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা পরস্পরের আনন্দ জন্য।
বন্ধু বলতে সাধারণতঃ এমন কোন অপরিচিত মানুষকে বুঝায় যার সাথে কোন উপলক্ষে প্রথমে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক তৈরী হয়। তারপর সেই সম্পর্ক ক্রমশঃ গভীরে গিয়ে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব। সাধারণতঃ বাল্যকালে এক সাথে খেলাধূলা করতে করতে কিংবা লেখাপড়া করতে গিয়ে মানুষের বন্ধুত্ব তৈরী হয়। আবার এক সাথে কাজ-কর্ম করতে গিয়েও কেউ কেউ নিছক পরিচিত থেকে বন্ধু হয়ে যায়। ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম উন্নতির এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম চালু হওয়ায় বন্ধুত্বের ধরণও অনেকটা পালটে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে "ডিজিটাল বন্ধুত্ব" নামে নতুন পরিভাষা। উন্নত বিশ্বে বর্তমানে প্রতি চারটি সম্পর্কের তিনটিই তৈরী হয় ইন্টার্নেটের মাধ্যমে। ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে "চ্যাটিং" বা আড্ডা দিতে দিতে অনেকের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব তৈরী হয়। সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় কিছু বন্ধু ক্রমশঃ হৃদয়ের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠে। সুখে কিংবা দুঃখে এদের চেহারাই মনে আসে সবার আগে। সুখের দিনের সহযোগী হয়ে জীবনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয় বন্ধুরা। আবার দুঃখের দিনেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে প্রিয় বন্ধুরা। বন্ধুদের উপস্থিতি ছাড়া আনন্দের অনুষ্ঠানগুলো যেমন অপূর্ণ থেকে যায়, তেমনি বন্ধুদের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া দূঃসময়ের অসহায়ত্বও বেড়ে যায় অনেক গুণ।
সব বয়সী মানুষের কিছু ভাল বন্ধু থাকা দরকার যাদেরকে হৃদয়ের কাছের মানুষ ভাবা যায়। যাদের সাথে অবাধে মেশা যায়। মন খুলে কথা বলা যায়। প্রাণ খুলে হাসা যায়। আড্ডা দেয়া যায়। জীবনের সুখ-দুঃখ শেয়ার করা যায়।সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। সুখের মুহূর্তগুলো কেটে যায় সহজে । কিন্তু মনের উপর দুঃখের পাথর চেপে থাকলে সেটা খুবই দুঃসহ লাগে। এই সময় প্রিয় কোন বন্ধুর প্রয়োজন অনুভূত হয় অনেক বেশী । প্রিয় বন্ধুর কাছে মনের ভেতর জমে থাকা দুঃখের কথাগুলো খুলে বলতে পারলে দুঃখের বোঝা অনেকটা হালকা হয়। বন্ধুত্ব সুস্বাস্থ্যের জন্যও সহায়ক। বন্ধুহীন ব্যক্তিরা হৃদরোগ, উদ্বেগজনিত রোগ ও বিষণ্ণতায় বেশী ভোগে। ভাল বন্ধু মানসিক চাপ কমিয়ে প্রফুল্ল থাকতে মানুষকে সাহায্য করে। বন্ধুত্বের বিস্তার যত বেশী হয়, সামাজিক নিরাপত্তাও তত বেশী বিস্তৃত হয়।
শিশু-কিশোরদের ব্যক্তিত্ব গঠনে বন্ধু মহলের প্রভাব অপরিসীম। তাই শৈশব-কৈশোরের বেড়ে উঠার দিনগুলোতে কিছু ভাল বন্ধু থাকা একান্ত জরুরী। যে শিশু বাল্যকাল থেকে মেধাবী ও সৎ বন্ধুদের সাহচর্যে বেড়ে উঠে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া তার জন্য সহজ হয়। আর মেধাহীন দুষ্টু বন্ধুদের পাল্লায় পড়লে সম্ভাবনাময় প্রতিভাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাইতো বলা হয়, সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। একজন ভাল বন্ধু জীবনের রোল মডেলও হতে পারে । আল-কোরআনে বলা হয়েছে, "হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সৎ লোকের সাহচর্য ( বন্ধুত্ব ) অবলম্বন কর ( সুরা তওবা-১১৯)। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "ভাল বন্ধু হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতার মত। সে তোমাকে সুগন্ধি দিক বা না দিক, তুমি তার ঘ্রাণ পাবেই", [হযরত আবু মুসা আশ' আরী (রা.) বর্নিত]। মনীষী ডেমোক্রিটাস বলেন, "একজন সৎ বন্ধু যার নেই, তার জীবন দুঃসহ"। ভাল বন্ধুর সংস্পর্শে পালটে দেয়া যায় জীবনের গতি। জীবনকে সুখী ও সুন্দর করার জন্য অন্ততঃ একজন ভাল বন্ধু অপরিহার্য। একজন ভাল বন্ধু সত্যিই জীবনের অনেক বড় সম্পদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন