মূলত আমি লেখালেখি করি না। কেননা সে সময় আমার নেই। চাকুরীর পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়। তার মধ্যে সংসার তো আছেই। কিন্তু আজকে কিছু লেখার জন্য মন খুব তাড়া করল। মনে খুব কষ্ট পেলাম মুসলিম নামধারী এক লেখকের লেখা পড়ে। তার লেখার শিরোনামটা দেখে মনে করলাম হয়তো ইসলামের কোন হিতাকাঙ্খীর লেখা। কিন্তু না, যা ভাবলাম সে তার উল্টোটা অর্থাৎ মাকাল ফল। এক কথায় সে যা বোঝাতে চাইল তা হল বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের এই দুরবস্থার মূল কারণ ইসলামী শিক্ষা তথা মাদ্রাসা শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধিতা- এর মানে হল কুরআন শিক্ষার বিরোধিতা। কেন এই বিরোধিতা? সে অনেক কারণ থাকতে পারে।
ওরা চায় মানুষের মধ্যে ধর্মহীনতা বেড়ে যাক, মানুষের মধ্য শিরক প্রবেশ করুক, আকিদা নষ্ট হোক, অহংকার প্রবেশ করুক, খুন-খারাবী বেড়ে যাক, মুসলমানরা বে-নামাজি হয়ে যাক, যাকাত দেওয়া বন্ধ হোক, রোজা রাখা বন্ধ হোক, পিতা-মাতাকে নির্বাসনে দেয়া হোক, মানুষের মধ্যে অকৃত্রিম বন্ধন নষ্ট হয়ে পাশ্চাত্যের বর্বর সভ্যতা প্রবেশ করুক, ধর্ষণ বেড়ে যাক, সমকামিতা বেড়ে যাক, সুদ, জুলুম, মিথ্যাচার, ইয়াতিমের মাল আত্মসাৎ, মদ্যপান, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ, চাদাবাজি, হারাম খাওয়া, আত্মহত্যা, অবিচার, ঘুষের আদান প্রদান, নারী পুরুষ একাকার হয়ে যাওয়া, অশ্লীলতা, নাপাকী, আমানতের খিয়ানত, চোগলখোরী, ওয়াদা খেলাপ, ধোকাবাজী আর অসামাজিক ক্রিয়াকলাপে সমাজে ছেয়ে যাক, যাতে কোন কাজটি সৎ আর কোন কাজটি অসৎ তা মানুষ বুঝতে না পারে। সমাজে, রাষ্ট্রে অন্যায় অপরাধ এমনভাবে বেড়ে যাক- যাতে কোন কাজটা ন্যায় আর কোন কাজটা অন্যায় সে বোধশক্তি যেন মানুষের নষ্ট হয়ে অন্যায় অপরাধ গা সওয়া হয়ে যায়। পাশ্চাত্যের কালচারে ডুবে গিয়ে যেন মুসলমানরা স্বকীয়তা হারায়। যদিও মুখে তারা এটা বলবে না এবং স্বীকারও করে না। দৃশ্যত এমন কথা ও ভাব দেখায় যা দেখে মনে হবে তারাই প্রকৃত মুসলমান ও ইসলাম প্রেমিক।
এদের এক নাম্বার পরিচয় হল এরা মুনাফিক। দুই নাম্বার পরিচয় হল এরা ইহুদি খ্রীষ্টানদের দালাল। মুনাফিকরা ইসলামের জঘন্য দুশমন। ঘরের ভিতরের দুশমন। এরা ইসলামের যা ক্ষতি করেছে কোন শক্তিধর কাফির গোষ্ঠিও তা করতে পারেনি। একজন কাফির নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলে আমি হিন্দু, আমি খ্রীস্টান, আমি শিখ, আমি বৌদ্ধ ইত্যাদি। কিন্তু একজন মুনাফিক সে কখনো বলে না আমি কাফির অমুসলিম। সে মুখে বলবে আমি মুসলমান। কিন্তু অন্তরে তার ইসলাম বিদ্বেষ। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে সদা তৎপর। কিন্তু সে নামায পড়ে, হজ্ব করে, মাঝে মাঝে পর্দা করে, হাতে তসবিহ ধরে ইত্যাদি অভিনয়ে সে লিপ্ত থাকে। আর এ প্রেক্ষাপটে ইহুদি খ্রীস্টান চক্র চালাচ্ছে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন। আর মুনাফিক চক্র চালাচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক তথ্য সন্ত্রাস।
আমার জানামতে মানুষ দুই প্রকার- (এক) জন্মগত মানুষ, (দুই) গুনগত মানুষ। ছাগল থেকে ছাগল, গরু থেকে গরু, মহিষ থেকে মহিষ জন্ম যেমন স্বাভাবিক, ঠিক তেমনিভাবে মানুষ থেকে মানুষ এটাও স্বাভাবিক। এদিক দিয়ে মানুষ পশুতে কোন ব্যবধান নাই। মানুষ খায়, পশুও খায়। মানুষ ঘুমায় পশুও ঘুমায়। মানুষ যৌন মিলন করে পশুও যৌন মিলন করে। এতে মানুষ ও পশুতে কোন ব্যবধান নাই। ব্যবধান হল শুধু গুনগত দিক দিয়ে। এদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা জন্মগত মানুষকে বলেছেন জন্তু জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট। আর গুনগত মানুষকে দিয়েছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মর্যাদা। মানুষের ঘরে জন্ম নিলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। প্রকৃত মানুষ হতে হলে বহু চেষ্টা সাধনা করে মনুষত্ব অর্জন করতে হয়। কৃষক যখন চাষাবাদ করে জমিতে বীজ বুনে, তখন সেই জমিতে ঘাস ও ফসল চারা উভয়ই গজাইয়া উঠে। সময়মত সেই আগাছাগুলি নিড়িয়ে না দিলে যেমন শেষে শত প্রকার যত্ন করিলেও সেই ক্ষেতে তেমন সুফল ফলে না ; তেমনি মানব শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন সুচিন্তা কুচিন্তারূপ আগাছাও তাহার চারদিকে গজাইয়া উঠে। সময়মত এই আগাছাগুলি নিড়িয়ে না দিলে মানব হৃদয়ের সৎ প্রবৃত্তি গুলি দূর্বল হতে থাকে। অসৎ প্রবৃত্তি গুলি সবল ও শক্তিশালী হতে থাকে। অবশেষে মানব হৃদয়ের সৎ প্রবৃত্তি গুলি একদিন সম্পূর্ণ শক্তিহীন চেতনাহীন অকেজো হয়ে মানব হৃদয়ে অবস্থান করে। তখন মানব হৃদয় শয়তানের তান্ডবলীলা ক্ষেত্রে পরিণত হয়। পিতা-মাতার ধর্ম শিক্ষা না থাকা ও সন্তানদের ধর্ম শিক্ষা না দেয়া এবং মাতা পিতার কর্তব্যের অবহেলার কারণে ছেলে-মেয়েরা সমঝদার হওয়ার পূর্বেই তাদের হৃদয়টুকু অসৎ প্রবৃত্তির আবাস স্থলে পরিণত হয়। বড় হয়ে ওরা হয় বড় ধরনের দূর্নীতিবাজ, অন্যায় অপকর্মের গড ফাদার, সন্ত্রাসী। আর ধর্মীয় শিক্ষার বৈশিষ্ট্য হল এখানে আগাছা গুলো নিড়িয়ে দিয়ে শুধু ফসল চারাই পরিপুষ্ট করে গড়ে তোলা হয় অর্থাৎ প্রকৃত মালিকের সাথে বান্দার কি সম্পর্ক ও কর্তব্য রাষ্ট্র সমাজ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কি সম্পর্ক ও কর্তব্য তার বিমল পরিচয় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেয়া হয়। এভাবে এ শিক্ষার্থীরা হয় সৎ, নীতিবান, আমানতদার চরিত্রবান ও সকল মহৎগুনে গুনান্বিত । মাদ্রাসা হল প্রকৃত মানুষ গড়ার একমাত্র কারখানা । এক একটা কওমী মাদ্রাসা এক একটা কিমিয়াগার স্বরূপ। তাঁহার স্পর্শে নিতান্ত নিকৃষ্ট ব্যক্তিও পরম মূল্যবান ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় । আর তাই অসৎ লোকদের কাছে সৎ মানুষ আর বিশুদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্থানেই ওদের যত গা জ্বালা। কারণ পৃথিবীর বুকে সকল সৎকর্ম-অসৎকর্ম এবং মানব জীবনের পরিপূর্ণ সঠিক দিক-নির্দেশ শুধু ইসলাম শিক্ষাতেই বা মাদ্রাসা শিক্ষাতেই পাওয়া যায়। এতে করে অন্যায়কারীদের চেহারা সমাজে রাষ্ট্রে দিবালোকের ন্যায় ধরা পড়ে যায়। এ শিক্ষা ব্যবস্থা যদি চালু থাকে তাহলে এ যুগের ফেরাউনের চরদের বিশেষ অসুবিধা হয়। এতে লজ্জায় তাদের মাথা সমাজে হেট হয়।
তাই তারা ইসলামকে গলা টিপে হত্যা করতে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রতিপক্ষ ধরে নিয়েছে। অথচ পৃথিবীতে মনুষ্য বসতির প্রারম্ভ থেকে এ পর্যন্ত উন্নত জীবন-যাপনে লক্ষ্যে প্রচলিত হয়েছে নানা শিক্ষা দীক্ষা। কিন্তু একমাত্র ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষা ব্যতিত অন্য কোন প্রকার শিক্ষা ব্যবস্থাই মানুষকে দেখাতে পারেনি দুঃখ-দূর্দশা, অসভ্যতা, বর্বরতা, অত্যাচার, অবিচার, ও নৈরাজ্যের নিদারুণ অভিশাপ হতে মুক্তি লাভের সত্য সঠিক পথ। মানব জীবনে সৌভাগ্য লাভ করতে হলে অবশ্যই পবিত্র কুরআন তথা ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বব্যাপী যেসব শিক্ষা ব্যবস্থা বলবৎ রয়েছে তার কোনটিই এ পর্যন্ত সার্বিকভাবে জনগণের অবস্থার উন্নতি সাধন তথা স্থায়ী শান্তি-শৃংখলা কায়েম করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। কেননা মানব জীবনের সার্বিক সফলতা তখনই হবে যখন সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে পূর্ণ মানবে পরিণত হবে। সেই পূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জন করার একমাত্র পথ হলো জাগতিক জ্ঞান বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। এ জন্যই আমার মনে হয় এ বিশ্ব জগতের সত্যিকার মানব দরদী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। ইসলামী শিক্ষার অভাবে আমাদের মুসলিম সমাজের বেনামাজি ও অসৎ লোকের সংখ্যার পরিমান নিতান্তই ভয়াবহ। ফলে সমাজটা মূর্খ ও বেনামাজী দ্বারা পূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি পূর্ণ হচ্ছে মুসলমান সমাজে বসবাসকারী মুসলমান নামধারী মুনাফিক তথা ইসলামী শিক্ষা বিরোধী তথ্য সন্ত্রাস। মুসলিম অসচেতন কর্তাদিগকে পিতা না বলিয়া ষাঁড় বলে সম্বোধন করাই শ্রেয়। কারণ পারিবারিক কারাগারে মাতা-পিতা সন্তানের প্রতি মানবীয় আচরণ না করিয়া গরু বাছুরের মতো আচরণ করে থাকেন। মানুষ গরু বাছুর পালন করে ভবিষ্যতে উহাদের দ্বারা উপকৃত হইবার আশায়। মাতা-পিতাও সন্তানকে গরু-ছাগলের মতো মনে করিয়া গরু-এর মতো পালন করেন। কিন্তু সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা তথা ধর্মীয় শিক্ষা দেন না। যেমন কর্ম তেমন ফল। প্রভু যেমন গরুর নিকট হইতে উপকার ও আঘাত উভয়টাই পায়, বর্তমান মাতা-পিতাও অধার্মিক বেয়াদব সন্তান হইতে তেমনি উপকার অপকার উভয়টাই পেয়ে থাকে। অন্যথায় উহা কেমন করে সম্ভব যে, সন্তান মাতাপিতাকে প্রহার এমনকি খুন পর্যন্ত করিয়া থাকে। সচেতন মহল অবশ্যই অবগত আছেন বিশেষ করে যারা কম বেশী পত্র-পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা তো অবশ্যই। ঐ অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করে সিলেট সহ সারা দেশের জনপ্রিয় লেখক জনাব আফতাব চৌধুরী লিখেছিলেন যে, আগেকার মাতা-পিতারা সন্তানদের বিদ্যালয়ে দিতেন আর শিক্ষককে বলতেন মানুষ করার জন্য। আর এখনকার পিতা-মাতারা সন্তানদের স্কুলে দেন ১০০ মার্ক পাইয়ে দিয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য। ফলে গুটি কয়েকজন বাদে সকলেই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার মন্ত্রি এমপি এমডি এফডি হোন। কিন্তু গুনের মানুষ আর কজন হন? আজ কাল ডাক্তাররাতো রোগীদের সাথে যে আচরণ করে তা রোগীরা কখনও কল্পনাও করে না। অবহেলায় রোগী খুন, সুযোগ বুঝে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ইত্যাদি। আমার খুব পরিচিত, শুধু তাই না সারা দেশেই সে নামকরা ডাক্তার ছিল। নাম বললে চিনতে কেউ বাকী থাকবে না। সে জন্য নাম বলবো না। ডাক্তার সাহেবের পিতা ডাক্তার সাহেবের জন্মের আগে না পরে মারা যান সঠিক বলতে পারব না। আমার মনে নেই। যা বলতে চাই তা হল ডাক্তার সাহেবের বাবা বিবাহের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। যেহেতু মেয়ে লোকটি ছিলেন অল্প বয়স্কা ডাক্তার সাহেবের দাদা নিজেই উদ্যোগী হয়ে পুত্র বধুকে(ডাক্তারের মাকে) অন্যত্র বিবাহের ব্যবস্থা করে দিলেন। ডাক্তার সাহেবের দাদা তার নাতীকে (ডাক্তারকে) মৃত্যুর পূর্বে তার এক বন্ধুর হাতে সপে দিয়ে যান। লেখা পড়া করে ডাক্তার সাহেব হন নাম করা ডাক্তার। আর এই ডাক্তার সাহেবের বাড়িতে তার গর্ভ ধারিণী মা একদিন আসলেন তার নাড়ি ছেড়া ধন প্রথম পুত্রকে দেখতে। নিষ্ঠুর ডাক্তার তার গর্ভধারিণী মাকে খেদমত করলেন বাড়ির গেইটের বাইরে একটি চেয়ারে বসিয়ে। বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি। বাড়ির গেটের বাইরেই কেন আসলেন, কি চাই জিজ্ঞেস করে বিদায় দিলেন। কোন মা কি তার সন্তানের কাছে এমন আচরণ প্রত্যাশা করে? পাঠক মহলের প্রতি আমার প্রশ্ন আপনারা জানেন যে প্রত্যেকটা নারী গর্ভের সন্তান ধারণ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সন্তান ধারনের কারণে কত নারীর যে জীবনের বাতি নিভে গিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। মায়ের মত দরদী দুনিয়ার বুকে আর কেউ হতে পারে না। সেই দরদী মাকে গরীব হওয়ার কারণে আজ ঘরে নিয়ে গেলে, আদর যত্ন করলে, সম্মান দেখালে যে সন্তানের ইজ্জত যায় বলুন সেই সন্তান কেমন মানুষ? এই হল জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা না থাকার ফলাফল। সুপ্রিয় পাঠক, আপনারা মনে করবেন না যে, আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও জেনারেল শিক্ষার বিরোধী। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী, এমপি, ওসি, ডিসি হওয়াতে দোষ নাই বরং এই পদগুলো মহোত্তম পদ। এতে খুলে যাবে বিশাল জন সাধারনের খেদমত করার সৌভাগ্যের দ্বার। এ শিক্ষা ও পদগুলো বিশেষ করে সৎ লোকদের জন্য জরুরী ও প্রশংসনীয়। তবে আমার মত হলো প্রত্যেক মুসলমানের জাগতিক শিক্ষার সাথে ইসলামী শিক্ষা তথা কুরআন শিক্ষা অবশ্যই থাকতে হবে এবং প্রকৃত ধার্মিক হতে হবে। তবেই একজন মানুষ হতে পারবে, জন্মগত মানুষ থেকে উর্ধ্বে উঠে গুনগত মানুষ। গুনগত মানুষ হওয়ার জন্য ধর্ম শিক্ষার বিকল্প নেই। পাঠক মহলের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা ইসলামকে খুব ভালভাবে জানুন, বুঝুন। বেশী বেশী ইসলামী সাহিত্য ও বই পড়াশুনা করুন। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত পাঠাগার তৈরী করুন। বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। মনে রাখবেন দুই, চার, দশটা চটি রেসেলা পড়েই ইসলামকে জানা যায় না। ঈমানদার ভাই বোনদের প্রতি আমার আকুল আবেদন আপনারা চোখ কান খোলা রাখুন। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহ আজ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, বোমাবাজি এ সবই ইহুদি খ্রীস্টানদের এজেন্টদের কার্যকলাপ। এ ঘটনাগুলোকে তথ্য সন্ত্রাসের দ্বারা একদল মুনাফিক আর সারা দুনিয়ার কাফির চক্র মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সারা দুনিয়া জুড়ে ইহুদী, খ্রীস্টান ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা মুসলিম নিধনে আজ ঐক্যবদ্ধ। বর্তমান বিশ্বের সকল অশান্তির মূল কারণ ইহুদি, খ্রীস্টানদের চক্রান্ত। এজন্য মুসলমানদের শিক্ষিত, সচেতন ও শয়তান চক্রের ষড়যন্ত্র অনুধাবন করতে হবে। আজকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা জর্জরিত ও আক্রান্ত মুসলমানদের সুরক্ষার লক্ষ্যে অবশ্যই জিহাদ করতে হবে। তবে সেটা হতে হবে মেধার জিহাদ। প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে সেগুলোর মেধাদীপ্ত জবাব প্রদান এবং একই সঙ্গে আমাদের মধ্যে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো সংশোধন করতে যত্নবান হতে হবে এবং এর প্রতিকার কুরআন নির্দেশিত পথেই করতে হবে। আর তা নিজেদের সংশোধন ব্যতিত হবে না। স্মরণ রাখা দরকার যে, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বিশেষের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে ঐ ধর্মের সকল অনুসারীকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া সম্পূর্ণ অনুচিত। ইসলাম ধর্ম বা মুসলিম জাতিকে সম্পূর্ণ ভাবে জানতে হলে এর belief system-কে জানতে হবে, অধ্যয়ন ও অনুশীলন করতে হবে। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ অনুধাবন করলে এর সত্যিকারের বাণী অন্তর্নিহিত রূপ যে কোন ব্যক্তি সহজেই বুঝতে পারবেন। তিনি বুঝতে পারবেন ইসলামী শিক্ষা কখনোই কোন প্রকার সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদকে অনুমোদন দেয় না। যারা মাদ্রাসা শিক্ষার বিরোধী তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল কোন মাদ্রাসা শিক্ষিতকে কেন্দ্র করে? দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল কোন মাদ্রাসা শিক্ষিতকে কেন্দ্র করে? জাপানে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করে লাখ লাখ নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ হত্যা ও পঙ্গু করেছিল কোন মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তি? ইরাকে ভুয়া অজুহাতে ১২ লাখ বেসামরিক লোকজনকে শহীদ করেছে কোন মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তি? যে জাতির ইতিহাসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ব্যতীত মানবতার পক্ষে তিল পরিমান ইতিহাস পাওয়া যায় না তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হয় না। আর মাদ্রাসায় ছাত্রদের পড়ানোইবা কি হয় ইসলামী সাহিত্য পড়ায় আরবী গ্রামার আর কুরআন হাদিস পড়ায় এদেরকে বলা হয় সন্ত্রাসী-একেই বলে যারে দেখতে নারী তার চলন বাকা। সুতরাং ইসলামী শিক্ষার বিরোধিতা যারা করে এরা ইসলামের কেউ নয়। মুসলমানদের কেউ নয়। এরা সন্ত্রাসী জাতি ইহুদী, খ্রীস্টানদের দালাল। সবশেষ কথা হল, একটি বাঁশ যখন গজাইয়া উঠে তখন উহার মাথার উপর যদি একটি পাতিল দেওয়া হয় তবে তা যেমন বক্রাকার ধারণ করে আর ঋজু হইতে পারে না। ঠিক তেমনিভাবে, আমাদের মুসলমান সমাজে একদল নামধারী মুসলমান প্রভাত জীবন হইতেই ইহুদি খ্রীস্টানদের দ্বারা লালিত পালিত হয়ে তাদের এমন পা চাটা গোলামে পরিণত হয়েছে যে, যাহার ফলে সে আর সহজ সরল ও মহৎ জীবন লাভ করিতে পারে না। হয়ে উঠে সে ইসলাম , মুসলমান, মাদ্রাসা ও খোদাদ্রোহী। তাই একদিকে ঈমানদারদের উপর কাফির চক্র আর মোনাফিকদের আক্রমন অন্যদিকে মনের ভিতর নফসে আম্মারা তথা শয়তানের আক্রমন। এ চতুর্মুখী আক্রমন থেকে মুসলমানদের ঈমান রক্ষা করতে হলে দুটি পথ অবলম্বন করতে হবে। (এক) ইসলামের অনুশাসন পালনে অটল থাকতে হবে (দুই) ইসলাম ছাড়া দুনিয়া আখিরাতে শান্তি নাই- এই মর্মে দাওয়াত অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ দুটি আমল করার তওফিক দান করুন, আমিন
লেখক: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন