শৈশব মানেই দূরন্তপনা। শৈশব মানেই স্মৃতি ও স্বপ্ন জাগানিয়া সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাটানো সময়। সেই শৈশবের দূরন্তপনা আর প্রকৃতির আলিঙ্গন থেকে সরে যাচ্ছে আমাদের প্রজন্ম। তাই নতুন প্রজন্মের জীবনস্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। সস্তা প্রতিযোগিতায় বিবেক-বোধহীন পরিবেশে বড় হচ্ছে আমাদের শিশুরা। আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যত- এমন মনভুলানো শ্লোগান, ভাষণ, বক্তৃতা দিয়েই শিশুর প্রতি দায় সারছে সমাজ। আর ইট, কংক্রিটের ফ্ল্যাট কালচারের আড়ালে হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির আলিঙ্গন।
এখন শিশুরা ঠিকই বড় হচ্ছে- তবে তারা পাচ্ছে না সোনালী রোদের আলো, বর্ণিল মেঘের ছায়া, রঙধনুর আলোর ঝলকানি অথবা নির্মল বাতাস! যেখানে নেই উন্মুক্ত খেলার মাঠ, নেই গাছ-গাছালি, ফুল ও পাখির কলরব। আমাদের শিশুরা এখন মাছ চিনে না, গাছ চিনে না-পায় না প্রকৃতির আলিঙ্গন। আকাশ সংস্কৃতির অপছায়া এখন গ্রাস করে নিচ্ছে শিশুদের দূরন্তপনা ও স্বপ্ন সুখের শৈশবকে। চারদেয়ালের ভেতর তার জন্য সব বন্দীত্বের আয়োজন! টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও গেম আর মোবাইল গেম রীতিমতো ভুতের বোঝা হয়ে চেপেছে শিশুদের মনে। ডরিমন, পকিমন আর শিশুদের বেকুব বানানোর জন্য স্টার জলসার কিছু আয়োজন, গিলে খাচ্ছে শিশুদের স্বপ্ন বিলাস। এখন অনেক বাবা মায়ের অভিযোগ ডরিমন, পকিমন নিয়ে। অভিযোগ ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান নিয়ে। শিশুরা এখন অকপটে যেসব হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শিখছে-যা শুনে বাবা-মায়েরা বোকা বনে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাও জানে না এসব ভাষার মানে কি। যে শিশুটি ঠিকমতো বাংলা বলতে শিখেনি- সে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করছে হিন্দি! এখনো আমাদের টনক নড়ছেনা!! এ পরিস্থিতিতে অবশ্য টিভি অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রক সংস্থার দাবী তুলেছে ভারতীয় বাবা-মায়েরা। অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’র এক জরিপে জানা যায়- টিভি অনুষ্ঠানে লাগামহীন যৌনতা ও সহিংসতা প্রদর্শনে রাশ টানতে একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ চায় ৬৩ শতাংশ ভারতীয় বাবা-মা। জরিপের ফলাফলে দেখানো হয়- শিশুদের ১০ শতাংশ সহিংস আচরণের জন্য টিভি অনুষ্ঠানের চমৎকার প্রদর্শন দায়ী। জরিপে আরো বলা হয়- চার থেকে ছয় বছরের শিশুরা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে টিভি দেখতেই বেশি পছন্দ করে। ৭৬ শতাংশ বাবা মা বিশ্বাস করে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের কারণেই চার থেকে আট বছর বয়সী শিশুরা অভিভাবকদের শ্রদ্ধা করেনা। এই হলো ভারতে অবস্থা। ভারতে আগ্রাসী প্রভাব এখন আমাদের দেশেও পড়তে শুরু করেছে।
শিশুদের আমরা যা দেখাচ্ছি, তারা তা-ই দেখছে, শিখছে। তাদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু আমরা কিভাবে দায় এড়াচ্ছি! ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে দাদা-দাদী, নানা-নানীর সাহচর্য শিশুদের দীর্ঘজীবী করে। এখন দাদা বাড়ি, নানা বাড়ি বা মামার বাড়ি বেড়ানোর উচ্ছ্বাস শিশুদের জীবনে নেই। শহুরে শিশুরা নদী দেখে না , সাঁতার জানে না। ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর অসাধারণ রোমাঞ্চকর সাহসিকতা তাদের জীবনে ঘটে না! কারণ পারিবারিক সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। শিশুরা পাচ্ছে না যৌথ পারিবারিক বন্ধনের আনন্দ। বিচ্ছিন্ন, ছন্নছাড়া পরিবারগুলোর মাঝে নিরানন্দ বিষন্নতায় শৈশব কাটছে শিশুদের। স্কুলের হোমওয়ার্ক, গৃহশিক্ষকের পড়া, তারপর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নাচ, গান প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার চাপে শিশুদের মাঝে অস্থিরতা বাড়ছে। শিশুরা মনন-মেজাজে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকরাও বুঝতে চায় না যে শিশুর জন্য কখন কি প্রয়োজন। শিশুমন কখন কি চায়, তার কি প্রয়োজন তা না বুঝেই তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় বাবা-মায়ের ইচ্ছা। শিশুটির উপযোগিতা, সক্ষমতা না বুঝেই তাকে দিয়ে বড় কিছু আদায় করাবার চেষ্টা করা হয়। ক্লাশে সেরা ছাত্র হতে হবে, খেলায় পুরস্কার জিততে হবে, গান গেয়ে সুনাম কুড়াতে হবে, গোল্ডেন জিপিএ পেতেই হবে- বাবা, মায়ের সব সাধ আর অপূর্ণতা পূরণের দায়িত্ব যেন এই শিশুটির ওপর!
অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে বাবা, মা শিশুর কাছে অসম্ভব প্রত্যাশা চাপিয়ে দিচ্ছেন- তিনি ছিলেন হয় স্কুল পালানো, না হয় ফেল মারা শিক্ষার্থী! তাদের জীবনে কোনো প্রতিযোগিতায় জয়ের গল্প নেই, অথবা তাদের জীবনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের গল্পই অনুপস্থিত! আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি- কি চাইছি আমরা কোমলমতি শিশুটির কাছে?
ব্রিটেনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রয়েল সোসাইটি’র এক জরিপে জানা যায়- ব্রিটেনে ১৫ থেকে ৩৪ বছর বয়স্ক মানুষের কোনো সোনালি শৈশব নেই! প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার মতো অকৃত্রিম অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে ঘটেনি! জরিপে সকলে একবাক্যে স্বীকার করেছেন- সুন্দভাবে বেড়ে উঠার জন্য শিশুজীবনে প্রকৃতিবান্ধব অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের শিশুরা প্রকৃতির আলিঙ্গন কি পাচ্ছে? নগর সভ্যতা যেন সমৃদ্ধ শৈশবের সকল আয়োজনকে গোগ্রাসে গিলে ফেলছে।
মনোবিজ্ঞানী ডা. মেহতাব খানম বলেছেন- শিশুদের জন্য উপযোগী এবং সঠিক জীবন চর্চাই হচ্ছে না। এখন আমাদের পরিবারগুলোতে শ্রদ্ধা, স্নেহ-মমতা, সহিষ্ণুতা ও শর্তহীন ভালোবাসার চর্চা নেই। সবাই স্বার্থপরের মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। আগে পরিবারে একে অপরের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিত। পরিবারগুলো ছিলো বাবা-মা, দাদা-দাদু কেন্দ্রিক। গ্রামের সাথে ছিলো নিবিড় সম্পর্ক। বছরে দুই ঈদ ছাড়াও ধান কাটার মৌসুম, শীতের পিঠা-পায়েস উৎসব, বর্ষা ও আম কাঁঠালের উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে যাওয়া হতো। ফলে শিশুরা পারিবারিক সম্প্রীতির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্য ও প্রকৃতির আলিঙ্গন পেত। এখন আধুনিকতার নামে কৃত্তিমতা এসে গ্রাস করেছে আমাদের চিন্তা, চেতনা ও রুচিবোধ। কথা হলো এই সমাজে কি করে বোধসম্পন্ন নাগরিকের জন্ম হবে?
বাবা মায়েরা এখন অতি সচেতনতার নামে তুলোতে করে সন্তানকে মানুষ করতে যেয়ে বোধহীন বেকুব হিসেবে গড়ে তুলছে! এটা করো না, ওটা করো না কত রকম বাধা-বিপত্তি শিশুর জন্য! আবার শিশুটি একটু আধটু ব্যথা পেতে পারবে না, হোঁচট খেতে পারবে না- এমনভাবে তুলোতে করে মানুষ করার চেষ্টাই বিপত্তির কারণ। বরং শিশুদেরকে প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। প্লে ইংল্যান্ড নামের একটি সংগঠন বলেছে-শিশুদের গাছে উঠা বা সাইকেল চালানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ খেলাগুলোতে উৎসাহিত করা উচিত। তাতে একটু আধটু ব্যথা পেলে বা কেঁটে-ছিড়ে গেলেও ক্ষতি নেই। সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শিখবে। বাঁধা-বিপত্তি সম্পর্কে বুঝবে। আরও বুঝতে যে কোনো কিছু অর্জন করা অত সহজ নয়। সবকিছুই কষ্ট করে অর্জন করতে হয়। আমরা করছি তার উল্টোটা।
অভিভাবকেরা সন্তানদের অনেক চাহিদা নগদ টাকা এবং জিনিসপত্র প্রদানের মাধ্যমে পূরণ করে থাকি। একারণে এসব বিষয় তাদের কাছে খুব সহজলভ্য মনে হয়। চাহিবামাত্র অনেক দামি একটা জিনিস সহজে পেয়ে যাওয়ার কারণে এটা তার কাছে যেমন খুব মূল্যবান কিছু মনে হয় না, তেমনি পরবর্তী বায়না পূরণে তার কোনো বিলম্বও সয় না- বরং তার অস্থিরতা বাড়ে। এসব কারণে সবার আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে শিশুর মানসিক চাহিদা কি। সে কি কি চায়, কেন চায়। এখন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে গণনা করা হয়। অথচ এই বয়সে একজন সন্তান উচ্চ মাধ্যমিক সনদ অর্জন করতে সমর্থ হয়। কাজেই তার জানা-বোঝার ব্যাপ্তিও কম বড় নয়। আরো ছোট থেকে যদি বাবা মায়েরা সঠিক জীবন চর্চায় সন্তানদের পারিবারিক অবকাঠামোতে বেড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে তাহলে সে পরিপূর্ণ মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হবে। সন্তানকে পারিবারিকভাবে বন্ধুসুলভ পরিবেশে বাড়ন্তির সুযোগ দিতে হবে। বাবা মা মানে ভয়ের কিছু, খুব সম্মান করতে হবে, খুব ভয় পেতে হবে- এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না এমন হাব-ভাব দেখিয়ে বাবা মা প্রকৃত অর্থে সন্তানের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যায়।
তখন সন্তান বন্ধুত্বের খোঁজে অন্য কোথাও নোঙর ফেলে। কখনোবা অসৎ সঙ্গে নষ্ট হয়। তাই বাবা-মা’কে বিষয়গুলো বুঝতে হবে। তাই বলে আবার সন্তানদেরকে বাইরের বন্ধুদের আলিঙ্গনহীন করে ফেলা যাবে না। মোটকথা আদর, শাসনের মধ্য দিয়েই এমন একটা পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার যেখানে প্রতিটি সন্তান বাবা মায়ের খুব নৈকট্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সাহচর্য পাবে।
শহরের শিক্ষার্থীদের গ্রামে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের একটি আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা নিতে এবং জীবনযাত্রার পার্থক্য অনুধাবনের জন্য চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় চংকিং শহর কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণা দিয়েছে। ছয় মাসের জন্য শিক্ষার্থীরা গ্রামে যাবে এবং সেখানে সেই পরিবেশে কাজ করবে। গাছ লাগাবে পরিচর্যা করবে, ফসল তুলবে ইত্যাদি ইত্যাদি। চায়নারা অবশ্য কলেজ লেভেলের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে। এমন উদ্যোগ আমাদের দেশে নেওয়া যেতে পারে। চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ এমন একটি অনুষ্ঠান করছেন। তবে আমরা যাদের গ্রামের বাড়ি আছে অথবা আত্মীয়তা আছে সেসব স্থানে শিশুদের নিয়ে বেড়াতে তো যেতে পারি। এতেও শিশুরা গ্রাম চিনবে। প্রকৃতির আলিঙ্গন পাবে। গাছ চিনবে, মাছ চিনবে। গাছে চড়তে শিখবে। সাঁতার শিখবে। ফসল কিভাবে হয়, কৃষক কত কষ্ট করে সোনার ফসল ফলায় তা প্রত্যক্ষ করতে পারে। এসব কার্যক্রমের ফলে শিশুর মাঝে মানবীয় গুণাবলী জাগরিত হবে।
আমাদের শিশুরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে ছুটছে। স্কুল থেকে ফেরার পর কোচিং বা প্রাইভেট কোচিংয়ের যন্ত্রণা, রাতে হোমওয়ার্ক। খেলার সুযোগ নেই, বিনোদনের ব্যবস্থা নেই, বাবা-মা ব্যস্ত তাই পারিবারিক বিনোদনের সুযোগ নেই- কি করবে ওরা! অসুস্থ্ প্রতিযোগিতার পাত্র হয়ে নিজেরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তার উপরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই আনন্দদায়ক পদ্ধতি। আছে পড়ার চাপ আর একগাদা বইয়ের বোঝা। কোথায় যাবে ওরা! আমাদের স্কুলের পরিবেশও শিশুবান্ধব নয়। অনেক শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের প্রতি বন্ধুসুলভ নয়। উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের স্কুল এবং শিক্ষা পদ্ধতি আনন্দদায়ক। শিক্ষকেরা বন্ধুসুলভ। ওখানকার স্কুলে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ‘প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যা সমাধানের পারঙ্গমতা’ শেখানো হয়। সেখানে শিক্ষকেরা এমনভাবে শেখায় যার ফলে শিক্ষার্থীকে আর প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয় না। সেখানে অনেক স্কুলের আঙ্গিনায় বাচ্চাদের দিয়ে ফুলের ও সবজির বাগান করানো হয়। সে বাগানের সবজি দিয়ে স্কুলে টিফিন খাওয়ানো হয়। এবার ভাবুন আমাদের দেশে শিশুরা এতসব যাতাকলের চাপে কী করে সুস্থ্য আছে সেটাই আশ্চর্যের বিষয় নয় কি?
শিশুদের জন্য প্রয়োজন সমৃদ্ধ সোনালী শৈশব। আর এজন্য আমরা আর কি কি করতে পারি-
১. শিশুর সাথে বন্ধুত্বপূণূ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
২. বাবা-মা সন্তানের সাথে একান্ত কিছু সময় কাটানো। পারিবারিক আলোচনা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও তাদের স্বপ্নের কথা জানানো। সন্তানের খোঁজ খবর নেওয়া। সন্তানের স্বপ্ন বা ইচ্ছের কথা জানা।
৩. পারিবারিক আত্মীয়-স্বজনদের কাছে নিয়ে যাওয়া। স্বজনদেরকে উপলক্ষ্য আয়োজনে একত্রিত করা। স্বজনদের খোশগল্প সন্তানদের সাথে আলোচনা করা।
৪. সপ্তাহে অন্তত একদিন সপরিবারে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। হতে পারে কোনো বিনোদন পার্ক, কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশ। নিদেনপক্ষে আত্মীয়ের বাড়ী।
৫. সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসাথে খাওয়া, আড্ডা দেওয়া, নাটক, সিনেমা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা।
৬. সন্তানদেরকে দাদা-দাদি, নানা-নানির গল্প শুনানো। নিজেদের ছেলেবেলার গল্প শুনানো। গ্রামের বাড়ির গল্প শুনানো।
৭. বছরে অন্তত দু/একবার সাধ্যমতো ভ্রমণে যাওয়া। হতে পারে পাহাড়ি অঞ্চল- সিলেট, বান্দরবন, চট্টগ্রাম, সমুদ্র- কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, কুয়াকাটা, হাওড়াঞ্চল- সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা। অথবা কোনো পর্যটন এলাকায়।
৮. আম কাঁঠালের মৌসুমে, শীতের পিঠা-পায়েসের উৎসবে, ফসল তোলার মৌসুমে সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া।
৯. সন্তানদের সাঁতার শেখানো, গাছে চড়তে শেখানো, সাইকেল চালাতে শেখানো, পাঠাগারে পাঠানো, গল্পের বই কিনে দেওয়া, বিশেষ দিবসে বই উপহার দেওয়া।
১০. শহরে অনুষ্ঠিত বইমেলা, পিঠামেলা, বৃক্ষমেলা, বর্ষা উৎসব, থিয়েটার নাটক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া।
১১. হাটে বাজারে নিয়ে যাওয়া, বাজার করতে শেখানো, এসবই আমাদের জীবনের অনুষঙ্গ।
১২. সন্তানদের অন্যান্য সহপাঠী-প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের সাথে মিশতে দেওয়া। তবে তারা কার সাথে মিশে কি শিখছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা।
১৩. সন্তানদেরকে জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। মূলত পারিবারিক আলোচনায় সন্তানদেরকে সম্পৃক্ত করলেই এসব বিষয়ে ধারণা পাবে তারা।
১৪. মনে রাখা দরকার, আমরা অনেকেই বাবা-মা হিসেবে সন্তানদের কাছে আদর্শের মডেল হতে পারছি না। সবার আগে একাজটি করা জরুরি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
ই-মেইল :
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন