সাপ্তাহিকী
|
শরীফ নজমুল
|
|
রানা প্লাযা ট্রাজেডিঃ এ দায় আমাদের কপালের!
04 May, 2013
আমরা এখন দায় গছানোর যুগে আছি। কর্পোরেট পরিভাষায় যাকে বলে “monkey transfer” কিম্বা রবি ঠাকুরের ভাষায় “যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর”। পুলিশের গুলিতে মানুষের মৃত্য কিম্বা হরতালের জান-মাল-অর্থনীতির ক্ষতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন বিরোধী দলের দায়, বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন সরকারের দায়। দায় কার জনগন সেটা বুঝে না, তারা শুধু বুঝে পাটা-পুতায় ঘষাঘষি কিন্তু প্রাণ যায় মরিচের।
সাভার ট্রাজেডির দায় কার? এখানেও একই নিয়মে দোষারপের রাজনীতি চলবে। প্রধানমন্ত্রীর খুবই দৃষ্টিকটু ভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। প্রথম দিন তিনি বলেছেন ভবন আগেই খালি করে ফেলা হয়েছিল, কিছু লোক জিনিষ পত্র বের করতে ভিতরে ঢুকেছেন। সেখান থেকে সাড়ে তিন শ’ র বেশি লাশ আর আড়াই হাজার জীবিত উদ্ধারের পর প্রধান মন্ত্রীর এই উক্তির ব্যাখা কি? তিনি কি তার প্রথম দিনের দেয়া বক্তব্যের দ্বায়িত্ব নিবেন নাকি অস্বীকার করবেন? তিনি বলেছেন আহতদের প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিতসা করাবেন, এটা তিনি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলেছেন নাকি সস্তা জনপ্রয়তা অর্জনের জন্য বলেছেন, তা জানা যাবে শীঘ্রই যদি পত্রিকা গুলি ফলো আপ রিপোর্ট করে। তবে অভিজ্ঞতা আমাদের আশাবাদী হতে সাহস যোগায় না।
যেদিন বিল্ডিং ধসে পড়ে সেদিন ছিল বিরোধী দিলের ৩৬ ঘন্টা হরতালের দ্বীতিয় দিন। দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় জোট সারা দেশ থেকে শর্তাধীন ভাবে হরতাল তুলতে সাত ঘণ্টারও বেশি সময়। রানা প্লাজায় যে শ্রমিক ধ্বংস স্তুপে চাপা পড়েছে তার নিকট আত্মীয়-স্বজন যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হরতালের জন্য রওয়ানা করতে পারে নি, তাদের এই ভোগান্তির দায় কার? হরতাল তুলতে কেন তাদের এত লম্বা সময় লাগবে?
গরীব-দুরভাগা জনগনের ভোগান্তি নিয়ে এদেশের মন্ত্রীদের দ্বায়িত্বজ্ঞান হীন উক্তি নতুন কিছু নয়। লঞ্চ ডুবিতে নিহতদের ছাগল দিয়ে পুনর্বাসন করার ঘোষন কিম্বা আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়া গেছে এরকম কথা আমরা মন্ত্রীদের মুখেই শুনেছি। তবে এই লাইনে সবাইকে টপকে গেছেন আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পিকেটারদের ঝাকুনিতে নয়তলা বিল্ডিং ধসে পড়ে থাকতে পারে এমন মন্তব্য করে তিনি শুধু অসহায় পোষাক শ্রমিকদের উপহাসই করেন নি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভিত্তি ধরেই টান দিয়েছেন। ডিগ্রীতে জ্ঞানি হয়েও মানসিকতায় মুর্খ বলে নিজকে প্রমানিত করেছেন।। ঊনার এই তত্বজ্ঞানের বাণী চিরন্তনীর দ্বায়িত্ব এখন কে নিবে? পিকেটারদের ঝাকুনিতে বিল্ডিং ভেংগে পড়তে পারে এমন কথা বলার পরও কেন তিনি মন্ত্রী তার পদে বহাল? কেন তাকে পাগলা গারদে পাঠানো হয়নি এখনো? এই পাগল মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব তাহলে প্রধান মন্ত্রী নিয়ে ফেলেছেন!
খুব জানতে ইচ্ছা করে ২০০৫ সালে স্পেক্ট্রাম বিল্ডিং ভেংগে পড়বার সাত বছর পার হয়েছে, কেন বিল্ডিং কেটে উদ্ধার করার মত যন্ত্রপাতি নাই? লেজার কাটারের এই যুগে কেন হাতুরী-বাটাল আমাদের সম্বল? শত-হাজার কোটি টাকার অস্ত্র আমরা কিনতে পারি কিন্ত উদ্ধার করবার মত যন্ত্রপাতি কিনতে পারি না? কেন এরকম একটা বিপর্যয়ে দুই দলে একত্র হয়ে কমান্ড সেন্টার খোলা যায় না? কেন মেরিল-প্রথম আলোর নাচ-গানের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়া যায় না?
মাননীয় দুই নেত্রী, আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন এর দ্বায় আপনাদের কাউকে নিতে হবে না। এদেশের জনগন বড় ক্ষমাশীল, বড়ই ভুলোমন। এ দ্বায় আপনাদের নয়, এ দ্বায় আমাদের কপালের, আমাদের অশিক্ষার, আমাদের দারিদ্রের, আমাদের ব্যর্থতার কারন আমরাই বারে বারে আপনাদের নির্বাচিত করি, আমারা আপনাদের ব্যর্থতাকে কপালের দোষ বলে মেনে নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন