সাপ্তাহিকী
|
এ, কে, এম, মহীউদ্দীন
|
|
কত কোটি মানুষকে আসামি বানাতে চায় সরকার?
20 Apr, 2013
দেশের কতো মানুষকে তারা আসামি বানাতে চায় সরকার? কতো ঘরকে তারা পুরুষ শূন্য করতে চায়?
গ্রামে, গ্রামে, মহল্লায়, মহল্লায় হাজার মানুষ আজ আসামি। গ্রামের পর গ্রাম, মহল্লার পর মহল্লা পুরুষ শূন্য। পুলিশ আর সরকার দলীয় সহযোগী সন্ত্রাসীদের আতংকে ঘরছাড়া তারা। এমন গ্রাম, মহল্লা এবং মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। কোথাও একটা কিছু হয়, আর অমনি সরকার হাজার, হাজার মানুষকে আসামি বানিয়ে ফেলা হয় এবং আসামি ধরার নামে শুরু হয় অভিযান। এভাবে চলতে থাকলে মনে হয় অল্পদিনেই এদেশে এ ধরনের আসামি ও ঘরছাড়া পুরুষের সংখ্যা কোটি থেকে কোটি কোটিতে ঠেকে যাবে এদেশে। জানিনা সরকারের লক্ষ্য কতো। দেশের কতো মানুষ আসামি ও ঘরছাড়া হলে তাদের প্রয়োজন পুরন হবে? আট কোটি? দশ কোটি?
সরকার কি মনে করে কোটি কোটি মানুষকে আসামি ও ঘরছাড়া করতে পারলেই তারা বাচতে পারবে? সাময়িক কিছু সুবিধা হলেও এসব করে বাচতে তারা পারবেনা। কেউই কখনো পারবেনা। লজ্জাস্কর ও করুন ভাবে তাদের বিদায় হতে হবে। কিন্তু তার আগে দেশটার সর্বনাশটা তারা করে যেতে পারবে ঠিকই। দেশের মানুষের দুশ্চিন্তা এখানেই।
অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার মানুষকে আসামি বানানোর কৌশলটা একেবারে অনৈতিক ও একান্ত নিচু মনোবৃত্তির। তবে কৌশলটা বেশ সুবিধাজনক ঠেকে সরকারের কাছে। পুলিশের জন্য তো এটা পোয়াবারো। কাচা পয়সা দিয়ে পকেট ভরে ফেলার বসন্তকাল তাদের জন্য। কিন্তু সবসময় এ কৌশল কাজে লাগেনা। বরং হিতে বিপরিত হয়। দেশের মানুষকে নিরাপত্তা ও স্বস্তি দেবার বদলে যদি তাদের ঢালাওভাবে হয়রানি ও বিপদ্গ্রস্থ করা হয় তাতে সরকারই নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনে। সরকার বুঝুক আর না বুঝুক তারি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যে।
অনেক এলাকাই আছে এমন আজ যেখানে পুলিশ যেতে সাহস পাচ্ছেনা। গেলেই সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিরোধ হচ্ছে। পুলিশ মার খেয়ে ফিরে আসছে। মহিলারা পর্যন্ত ঝাঁটা হাতে তাড়া করছে। এমপিরা তাদের এলাকায় যেতে সাহস পাচ্ছে না। পুলিশের হয়রানি ও জুলুমে এদেশের মানুষ বহুদিন থেকেই তাদের প্রতি ভয়ানক ক্ষুব্ধ। এখন তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কেবল। মানুষ দেখছে পুলিশ কেবল অভদ্র, অশালীন ও দুর্নীতিপরায়ণ নয়, পুলিশ একটা দলের বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। দলের বাহিনী বললেও বোধ হয় ভুল হয়। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সহযোগী বাহিনী বললেই মনে হয় ঠিক হয়।
পুলিশের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারন মানুষ রাষ্ট্রের কাছ থেকে কখনো কোণ প্রতিকার পায়নি। মানুষ তাই আর এখন পুলিশের বাড়াবাড়ি, জুলুম ও বিশেষ দলীয় আচরণ সহ্য করতে রাজী নয়। অত্যাচারী রাষ্ট্রকেও চিনে ফেলেছে মানুষ । এখন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে নিজেদের সাধ্যমতো নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।
পুলিশের প্রতি এই যেখানে মানুষের মনোভাব সেখানে পুলিশ দিয়ে সরকার আর বেশি কিছু করতে পারবে না। পুলিশের জুলুমবাজ ও দলবাজ চরিত্র ছাড়া নৈতিক মনোবল বলে আর কিছু নেই। একটু মার খেলে এ ধরনের মানুষ ভয়ও পেয়ে যায় তাড়াতাড়ি। যে পুলিশকে সরকার তাদের শক্তি ও সাহসের ভিত্তি ভেবেছিল সেই পুলিশই তাদের লাঞ্ছনা ও বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ানোর অবস্থা হয়ে যেতে আর খুব একটা বাকি আছে বলে মনে হয়না।
সরকার যা করছে এবং তার প্রতিক্রিয়া যা দেখা যাচ্ছে তাতে সরকারের কর্তৃত্বের পরিধি দিনদিন কমছে বই বাড়ছে না। এর চূড়ান্ত পরিনতিতে এমনও হতে পারে যে সরকার একটা সময় বাস্তবে কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। নেতৃত্বও আজ ঢাকার হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছে। দেশের মানুষ আগের মতো আর কেবল ঢাকার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাচ্ছেনা। ঢাকা এবং ঢাকার মানুষই আসল এই দিন মনে হয় শেষ হবার পথে। দেশের মানুষ এখন নিজের নিজের এলাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে শিখে ফেলেছে। প্রয়োজন মোতাবেক স্থানীয় বিকল্প নেতৃত্বও গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এই নেতৃত্ব ঢাকাকে আর সম্ভ্রম করেনা। এই নেতৃত্ব ঢাকার অবাধ্য হতেও দ্বিধা করেনা। ঢাকার একচেটিয়া কারবারি আর মনে হয় চলবে না বাংলাদেশের বুকে। আমাদের চারিদিকে জমাট অন্ধকারের মধ্যে এটা একটা উজ্জ্বল আলোর রেখা।
চালাক মানুষদের একই সাথে ভয়ংকর নির্বোধও হতে দেখা যায়। আল্লাহতা’আলাই এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। না হলে চালাক মানুষদের দৌরাত্মে অন্য মানুষদের বাচার আর উপায় থাকত না। বর্তমান সরকারের লোকজনদের সম্মন্ধে এটা বেশ ভালই খাটে। তারা চালাকি করতে করতে সাথে সাথে এতোসব নির্বুদ্ধিতার কাজও করে গেছে যে এখন তাদের অবস্থা সেই রাজার মতো যে উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আর খুব খুশীমনে ভাবছে যে সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে আছে এবং সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে। মতলবি পারিষদ ও চাটুকারদের নয়, বরং শিশুর সহজ ও সরল দৃষ্টি ভাল জানে রাজার অবস্থাটা আসলে কি। দেশের অগনিত মানুষের মনের মধ্যে এই শিশুটি যে এখনো বেচে আছে এ কথাটা সরকারের লোকজন কোনদিন ভেবে দেখেছিল বলে মনে হয়না।
কতো মানুষকে সরকার জেলে জায়গা দিতে পারবে? মাঠ, প্রান্তর সব জেলখানা বানিয়ে ফেলতে হবে। কোটি কোটি এই সব আসামিদের পাহারাই বা দেবে কিভাবে? পাহারা দেবার লোক কি বাইরে থেকে ধার বা ভাড়া করে নিয়ে আসবে? জানিনা কিভাবে একটা সরকার ভাবতে পারে এতো মানুষকে এভাবে উৎপীড়ন করেও তারা সহজে পার পেয়ে যাবে। সামনে তাদের দিন আরো কঠিন না হয়ে উপায় নেই এটা বোধ হয় নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে সাথে সাথে দেশের মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যাবে। সবচেয়ে দুঃখ ও দুর্ভাবনার কথা এটাই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন