সাপ্তাহিকী
|
এ, কে, এম, মহীউদ্দীন
|
|
বাঁচতে হবে আমাদের
13 Apr, 2013
১
বাংলাদেশে এখন যে অবস্থা আমাদের তাতে একেবারে ধ্বংস হয়ে যেতে কি আর বেশি দূর যাবার দরকার হবে? এখনও যদি আমাদের হুঁশ না হয় তবে আর কবে হবে? এখনই যদি আমরা বাঁচার কথা না ভাবি তবে আর কবে ভাববো?
আমরা কি চাই? শান্তি ও একে অপরের সহযোগিতা, না কি নির্মম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিহিংসা? আমাদের কি শান্তির কোণ প্রয়োজন নেই? সহযোগিতার কি কোন ক্ষেত্রই নেই? দেশ ও সমাজের আজকের মহা দুর্যোগের মুহূর্তে এখুনি এ প্রশ্নের জবাব একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ বাঁচার জন্য সময় আমাদের হাতে আর বেশি নেই। এখন হয় আমরা সামান্য আর একটু এগিয়ে গিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাব, না হয় সবাই ফিরে আসব ধ্বংসের পথ ছেড়ে বাঁচার পথে।
আমরা যেখানে পৌঁছে গেছি সেখানে দাঁড়িয়ে কে এই অবস্থার জন্য দায়ী সে প্রশ্ন করারও সময় নেই আমাদের হাতে আজ। কিভাবে আমরা বাঁচতে পারি সেই চিন্তা ছাড়া আর সব চিন্তা এখন অবান্তর হয়ে গেছে এই মুহূর্তে। দায়ী যদি কাউকে করাই লাগে তবে নিঃসন্দেহে এককথায় বলতে হবে কমবেশি সবাই আমরা দায়ী। লোম বাছলে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে। কোন পক্ষেই কেউ বাদ যাবেনা। আরেকজনের দোষ ধরার মতো নৈতিক অবস্থা প্রধান প্রধান কোন পক্ষের কারো নেই। নির্লজ্জতার সর্বনিম্ন স্তরে না নেমে কেউ দাবি করতে পারবেনা যে সে একেবারে পুতপবিত্র।
কার কোথায় কতোটা দোষ সে সম্বন্ধে এতো কথা বলা যায় যে তা শেষ করা অসম্ভব। ভবিষ্যৎ ইতিহাস বলবেও। সান্ত্বনার কথা যে ততোদিনে আমরা অনেকেই হয়তো বিদায় হয়ে যাব দৃশ্যপট থেকে। পিছন থেকে কে কি বলল তা আমাদের কানে পৌঁছাবেনা তখন। কিন্তু এখন দোষ ধরাধরি করে আমাদের ভয়ংকর ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। আমরা তো একেবারে ডুববই এবং সেই সাথে ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদেরও ডোবাবার আয়োজন পাকা করে যাব। তারাও এই পাকে ডুবে আরো ডুবে যাবে।
বাঁচতে হলে আমাদের এখন গোঁয়ার্তুমি ছেড়ে সন্ধির পথেই আসতে হবে। নির্মূল, নিশ্চিহ্ন করার ভাবনা মাথার ভিতর থেকে বের করে দিতে হবে। একটা জিনিস সকলের কাছেই ইতিমধ্যে পরিস্কার যাওয়ার কথা যে এদেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করা যতো সহজ ভেবেছিল অনেকে আসলে সেটা ততো সহজ নয়। ইসলামের দাবিকে উপেক্ষা করে এখানে কোন সমাধান হবেনা। যারা এই সত্যটাকে অস্বীকার করে কিছু করতে চাইবে তারা কেবল পানি ঘোলাই করবে এবং শেষ পর্যন্ত সেই ঘোলা পানি তাদেরই গিলতে হবে। অতএব এখন প্রয়োজন বাস্তব সত্যকে আমলে নিয়ে সবাই মিলে একটা যুক্তিসম্মত, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র যাতে চলতে পারে সেই আয়োজন করা এবং সবাইকে তা মেনে চলার অঙ্গীকার করা।
এটুকু করা এখনও সম্ভব। তবে সে জন্য প্রয়োজন বর্তমানে যে বিপদের মধ্যে আছি আমরা তার ভয়াবহতা ঠিকমত উপলব্ধি করা। যা হচ্ছে তা যে আর মজার খেলা নয় তা স্বীকার করা। আগুনে ঘি আর না ঢেলে বরং আগুন নেভাবার জন্য যার যতটুকু সাধ্য আছে সেই মতো পানি ঢালা। এতে যে রাজী নয় সে নেহাতই বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
সে অবস্থায় অন্যদের কাজ হবে একত্রিত হয়ে এই বদ্ধ উন্মাদকে থামান। দরকার হলে তার হাত পা বেধে ফেলে তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। এ ছাড়া বাঁচার আর কি উপায় আছে? কাজটা মোটেই সহজ বা সুখকর নয়। কিন্তু বাঁচতে হলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা যারা অনুভব করতে পারছে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এই কঠিন ও অপ্রীতিকর কাজটা করাই লাগবে। সময়ের দাবি আজ এটাই। তাদের এখন আর পিছনে ফিরে তাকাবার সময় ও সুযোগ নেই। দুর্ভাগ্য আমাদের যে আজ আমাদের ঘাড়ে এমন একটা কঠিন, বেদনাদায়ক অথচ একান্ত জরুরি দায়িত্ব চেপে বসেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন