সাপ্তাহিকী
|
আব্দুল মান্নান
|
|
ধর্মীয় রাজনীতি, বিপ্লব ও জঙ্গিবাদ
07 Apr, 2013
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের উত্থান ও পতনে রাজনীতি নিয়ন্তা হিসাবে ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে আবার, রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন আদর্শের নীতিমালার আলোকে। আদর্শগুলির মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সকল আদর্শেই কিছু না কিছু ভালো নীতি রয়েছে। পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে আদর্শিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠার কাজ চালু থাকে। আর তা না থাকলে আদর্শের অনুসারীগণ অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়। যা রাজনীতিতে সশস্ত্র বিপ্লব হিসাবে পরিচিত। অপর পক্ষে ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো দল সশস্ত্র সংগ্রাম না করলেও, শুধুমাত্র ধর্মীয়, বিশেষ করে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে ইদানীং জঙ্গিবাদ বলা হচ্ছে। তাহলে ভাববার বিষয় হলো ধর্মীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠায় বিপ্লব ও জঙ্গিবাদের ভূমিকা একই, নাকি আলাদা।
ধর্মীয় রাজনীতি, বিপ্লব, জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য কিছু বিষয়ে আমার ভাবনার জগতে ঘূর্ণন শুরু হয় ২৯/০১/২০১৩ ইং তারিখের প্রথম আলোতে প্রকাশিত জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘সোনা ফেলে আঁচলে গেরো দেবেন না’ শিরোণামে লিখাটির একটা অনুচ্ছেদ পড়ার পর থেকে। এখানে অনুচ্ছেদটি উদ্ধৃত করা হলো। তিনি লিখেছেন - “আমাদের দেশে বহু কালের পুরোনো ধর্মীয় আদর্শ বাস্তবায়নের একটা অপতৎপরতা অনেক দিন থেকেই রয়েছে। এটা খুবই নিম্নমানের শুধু নয়, ক্ষতিকর রাজনৈতিক আদর্শ। ধর্মের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্যকে মূল্য দেওয়া যায়, তার রাজনৈতিক দিককে নয়। ধর্মের আদি শিক্ষায় পবিত্রতা রয়েছে। কিন্তু ধর্ম কোনো সৃষ্টিশীল বিষয় নয়। একটি অনড় ও অপরিবর্তনীয় বিষয়। অন্যদিকে রাজনীতি একটি সৃষ্টিশীল জিনিস। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি খুব বেশি উগ্র হলে তা জঙ্গিবাদে পরিণত হয়। যে লক্ষ্যেই করা হোক, কোনো সমস্যারই জঙ্গিবাদ সমাধান নয়। অনেক সময় অনেকে ভুল করেন, বিপ্লবী রাজনীতি ও জঙ্গিবাদকে এক করে দেখেন। এই দুটি দুই জিনিস”।
উল্লিখিত অনুচ্ছেদ থেকে আমার মতো অনেকেরই মনে যে প্রশ্নগুলির জন্ম নিতে পারে সেগুলি হচ্ছে - ১. ধর্মীয় আদর্শ বাস্তবায়ন কি অপতৎপরতা? ২. ধর্মের শিক্ষা পবিত্র, আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্যও মূল্যবান, তাহলে ধর্মের রাজনৈতিক দিক ক্ষতিকর হবে কেন? ৩. ধর্ম ও প্রচলিত রাজনীতিকে একই পাল্লাতে মাপার অর্থ কি ধর্মের অবমূল্যায়ন করা নয়? ৪. রাজনীতি একটি সৃষ্টিশীল বিষয়, কিন্তু ধর্ম তা নয় বলে কি তিনি ধর্মকে অন্তঃসারশূন্য কিছু একটা বুঝাতে চাচ্ছেন না? ৫. বিপ্লবী রাজনীতিকে জায়েজ করার জন্য জঙ্গিবাদকে অপবাদ দেয়া হচ্ছে কেন?
মনে জন্ম নেয়া উপরোক্ত প্রশ্নগুলির আলোকে পরের কয়েকটি অনুচ্ছেদ সাজানোর চেষ্টা করব। তবে প্রথমেই যে কথাটি বলা দরকার তা হলো, সৈয়দ আবুল মকসুদের লিখার মধ্যে স্ব-বিরোধিতা রয়েছে। তিনি ধর্মের শিক্ষাকে পবিত্র এবং এর দার্শনিক তাৎপর্যকে মূল্যবান বলছেন। অথচ ধর্মীয় আদর্শ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে অপতৎপরতা হিসাবে বিবেচনা করছেন। এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আমার উপলব্ধি তিনি তাঁর লিখার ঐ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুকৌশলে ধর্মভীরু লোকদেরকে ধর্মীয় আদর্শের বাস্তবায়ন তথা ধর্মীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি ভালো করেই জানেন রাজনীতি সকল আদর্শের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। রাজনীতি ব্যতিরেকে আদর্শ প্রতিষ্ঠা স্বপ্নবিলাস ছাড়া আর কিছুই না।
সৃষ্ট প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে ধর্মীয় আদর্শ বাস্তবায়নের অপতৎপরতার বিষয়টি। যাঁরা ধর্মে বিশ্বাস করেন তাঁরা সকলেই একমত যে, ধর্মীয় আদর্শ, সৃষ্টিকর্তা অহীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁরা আরো বিশ্বাস করেন, ধর্মীয় আদর্শ মানব সৃষ্ট অন্যান্য যে কোনো আদর্শের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কাজেই প্রতিটি বিশ্বাসীর দায়িত্ব হলো আদর্শের আওতাভুক্ত বিষয়গুলির বাস্তব রূপ দেয়া। যারা ধর্ম মানেনা, স্বভাবসিদ্ধভাবে তারা ধর্মীয় আদর্শের বাস্তবায়নকে অপতৎপরতা বলে মনে করতে পারে। উপরোক্ত মন্তব্যের জন্য, কেউ যদি জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্ম সম্বন্ধে জানা-শোনার কমতি এবং তাঁর মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তাহলে প্রশ্নকারীকে কি দোষ দেয়া যাবে?
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ধর্মের শিক্ষা পবিত্র, ধর্মের আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্যও মূল্যবান, তাহলে ধর্মের রাজনৈতিক দিক ক্ষতিকর হবে কেন? আমরা স্বাভাবিক নিয়মে একই বৃক্ষে কি দুই রকম ফল হতে দেখি? দেখিনা। প্রকৃতিগতভাবেই একটি বৃক্ষ একই রকম ফল দিতে বাধ্য। ঠিক একইভাবে সৃষ্টিকর্তার দেয়া ধর্মও মানুষের নানান দিকের সমাধান দেয়ার ব্যাপারে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। কাজেই ধর্মীয় শিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা ও দার্শনিক তাৎপর্যের সাথে সাথে ধর্মীয় রাজনীতিও আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এটা নিম্নমানের ও ক্ষতিকর তো নয়ই বরং উন্নতমানের রাজনৈতিক আদর্শ। যুক্তি-তর্ক এবং বাস্তব উদাহরণ সহ তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা সম্ভব। এ জন্য যা দরকার তা হলো, শুধুমাত্র খোলা মন নিয়ে আন্তরিকভাবে তা জানবার চেষ্টা করা। একজন বিশ্বাসী ধর্মীয় রাজনীতির বাইরে অন্য কোনো রাজনীতি করার চিন্তা করতে পারেনা।
তথাকথিত উন্নত অথবা উন্নয়নশীল দেশগুলির রাজনীতির হালচাল দেখে আমাদের মনে প্রতীতি জন্মেছে যে, রাজনীতির অঙ্গন হচ্ছে অধিকাংশ স্বার্থপর রাজনীতিকদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের এবং ক্ষমতা দখলের একটি রুগ্ন মঞ্চ। তাই ধর্ম পালনকারী সৎলোকদের একটা বড় অংশ নেহায়েতই নিজেদের সরলতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করেন। তবে ধর্মে রাজনীতির অবস্থানটা যে ঐচ্ছিক কোনো ব্যাপার নয় তা তাঁদেরকে বুঝাতে পারলে তাঁরাও তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন এবং প্রচলিত রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে শক্ত ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের সমাজে কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি আছেন যাঁরা ধর্মীয় আদর্শে বিশ্বাসী নন। কিন্তু সমাজে তাঁদের স্বরূপ উন্মোচিত হোক তা তাঁরা চাননা। তাই সরাসরি ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে কথা না বলে ধর্মীয় আদর্শকে নিস্তেজ করার জন্য রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসাবে বেছে নেন। ধর্মের যে কোনো অঙ্গকে অস্বীকার করার অর্থ ধর্ম না মানার শামিল তা সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব বুঝতে পারেন কিনা সেটাই আমাদের প্রশ্ন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে তিনি বুঝতেই পারছেননা উল্লিখিত লিখা দ্বারা ধর্মকে হেয় করা হচ্ছে।
তাঁর মতে রাজনীতি একটি সৃষ্টিশীল বিষয়, কিন্তু ধর্ম তা নয়। সে কারণেই তাঁর মতানুসারে ধর্মের অন্তঃসারশুন্যতা নিয়ে মনে চতুর্থ প্রশ্নটি উদয় হয়েছে। তিনি হয়তো সৃষ্টিশীলতা দিয়ে নতুন নতুন চিন্তা-চেতনার আলোকে নবদিগন্ত উন্মোচিত করার ব্যাপারটা বুঝাতে চেয়েছেন। প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন চিন্তার আলোকে ঢেলে সাজানোর সুযোগকে তিনি সৃষ্টিশীল বলতে চাচ্ছেন। অপরপক্ষে তিনি এটিও ইঙ্গিত করেছেন যে, ধর্মীয় রাজনীতি যেহেতু ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা কিনা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এসেছে, ফলে প্রয়োজনে এটির সংস্কারের জন্য কারো কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তাই তিনি ধর্মকে সৃষ্টিশীল মনে না করে অনড় ও অপরিবর্তনীয় বলছেন। ধর্ম সম্বন্ধে সীমিত জ্ঞানই মূলতঃ ঐ রকম ধারণার জন্ম দেয়। সৃষ্টিকর্তা এমন একটি সত্তা যিনি অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত। তাই তাঁর দেয়া দ্বীন বা ধর্ম এবং একই সাথে ধর্মীয় রাজনীতি সকল যুগে প্রয়োগযোগ্য এবং আধুনিক। ধর্মের সহজ সংজ্ঞা হচ্ছে, মানুষের সামগ্রিক জীবন পরিচালনার জন্য সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আসা বিধানাবলী। একজন বিশ্বাসী তাঁর দেয়া আদেশ ও নিষেধ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানতে বাধ্য এবং তা-ই তার জন্য মঙ্গলজনক। এটা সত্য যে, ধর্মের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করা কিংবা বর্জন করাও সম্ভব নয়। তবে যুগোপযোগী হওয়ার কারণে ধর্মীয় বিধানাবলীর সীমারেখার মধ্যে থেকেও স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্মীয় রাজনীতির কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। একনায়কতন্ত্র, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, সাম্যবাদ, সমাজবাদ ইত্যাদির হাত ধরে রাজনীতি এখন খাবি খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালা দ্বারা যুগজিজ্ঞাসার আলোকে যদি রাজনীতিকে দাঁড় করানো হয় এবং তা করা সম্ভব, তাহলে সেটা কি সৃষ্টিশীলতার বাইরের কোনো ব্যাপার হবে? প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, গণতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলির অংশ গ্রহণ এবং কার্যকর ভূমিকা রাখা।
শেষ প্রশ্নটি হচ্ছে বিপ্লবী রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের প্রায়োগিক দিক একই কি না? অর্থের এবং কর্মের দিক থেকে বিপ্লব এবং জঙ্গি সমার্থক নয়। সাধারণভাবে আমরা বিপ্লব বলতে যুদ্ধ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে বুঝে থাকি। কিন্তু বিপ্লবের সুন্দর সংজ্ঞা হচ্ছে, তুলনামূলকভাবে স্বল্প সময়ে ক্ষমতার অথবা সাংগঠনিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তন সাধন।১ তা অর্জনের জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডও সংঘটিত হতে পারে। জঙ্গ শব্দের অর্থ যুদ্ধ বা লড়াই। জঙ্গ শব্দের বিশেষণ হচ্ছে জঙ্গি। জঙ্গির সাথে যুদ্ধ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক থাকলেও ক্ষমতার মৌলিক পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং বিপ্লবের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবে সশস্ত্র বিপ্লবের একটা পর্যায়ে জঙ্গির অনুপ্রবেশ অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং বিপ্লবের মাধ্যমে তথাকথিত প্রগতিবাদীগণ গৌরবান্বিত হয়ে নিজেদের মনে শিহরণ সৃষ্টি করার এবং জঙ্গিবাদী আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় রাজনীতিকে পিছনে ফেলে দেয়ার সুখানুভুতির কোনো কারণ থাকতে পারেনা।
যারা নিজেদেরকে প্রগতিবাদী বলে দাবি করে, তারা নিজেদের অনুকূলে কিছু শব্দ বরাদ্দ করে নিয়েছে। তারমধ্যে বিপ্লবী রাজনীতি একটি। প্রগতিবাদীদের মতে বিপ্লবী রাজনীতি, ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা একটি বসুন্ধরার স্বপ্ন দেখায়। আর তথাকথিত মৌলবাদীদের জন্য বরাদ্দকৃত জঙ্গিবাদের দ্বারা ধ্বংস আর ধ্বংস ছাড়া কিছুই পাবার নেই। ধর্মীয় আদর্শ বা অন্যান্য যে কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য, নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একটি রাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন সাধন হচ্ছে বিপ্লবী রাজনীতি। ধর্মীয় আদর্শের বাস্তবায়নকে জোর করে জঙ্গিবাদ বলার কারণ থাকতে পারেনা। অন্যদিকে ধর্মীয় আদর্শের অনুসারী কোনো দলের অনিয়মতান্ত্রিক পথে ভিন্ন মতাদর্শের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্তভাবে কোনো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো নিশ্চিতভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পক্ষান্তরে স্বঘোষিত তথাকথিত প্রগতিবাদীদের পদলেহনকারী একটা অংশ, বুর্জোয়া বা ধনিক শ্রেণীকে উৎখাতের জন্য একইভাবে যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে থাকে সেটিও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কোনো ক্ষেত্রেই উল্লিখিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
ধর্মীয় রাজনীতি, বিপ্লব, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ বিভিন্ন আদর্শের ধ্বজাধারীগণ নিজ নিজ সুবিধাজনক অবস্থান থেকে ব্যবহার করে এবং কথার মারপ্যাঁচে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের লিখার মধ্যেও সে গন্ধ পাওয়া যায়। কুরআনের পরিভাষা ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্র’ মাধ্যমে তথাকথিত প্রগতিবাদীগণের অনেকে ইসলামে জঙ্গিবাদের তত্ত্বটি আবিস্কার করার চেষ্টা করে এবং তার নেতিবাচক দিকটি সামনে নিয়ে আসে। পক্ষান্তরে বিপ্লবী রাজনীতির অনুসারীগণ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিপ্লব সাধনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং তা ইতিবাচক হিসাবে প্রচার করে। সশস্ত্র সংগ্রাম যে জঙ্গিবাদের অন্য আর একটা রূপ তা তারা স্বীকার করতে না চাইলেও এটাই সত্য।
কুরআনের পরিভাষা ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্’ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। জিহাদ শব্দের শাব্দিক অর্থ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করা। সে প্রচেষ্টা নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য শয়তানের চক্রান্তের সাথে লড়াই হতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রে বিরাজমান অশান্তি দূর করার জন্যেও হতে পারে। অবস্থার প্রেক্ষিতে নিজের নফ্সকে (প্রবৃত্তি) নিয়ন্ত্রণ করা, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাকশক্তির মাধ্যমে অথবা প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে উঠিয়ে নেয়াও জিহাদ হতে পারে। জিহাদ অর্থ শুধুমাত্র ধর্মযুদ্ধ তা ঠিক নয়। আদর্শের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে এবং নীতিভ্রষ্ট হয়ে লক্ষ্যহীনভাবে ধর্ম, জাতি, ভাষা বা অন্য যে কোনো সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে সৃষ্ট জঙ্গি অথবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জিহাদের সংজ্ঞার মধ্যে পড়েনা এবং ঐ সকল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমস্যার কোনো সমাধানও নেই। তবে ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্র’ সীমারেখার মধ্যে থেকে ধর্মীয় রাজনীতির মাধ্যমে বিপ্লব ঘটিয়ে চলমান বিশ্বের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সার্বিক অর্থে ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্’র মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন নয়। বরং আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এর মূল লক্ষ্য।
তথ্যসূত্রঃ
১. http://wiki.answers.com/Q/What_is_revolution
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন