সাপ্তাহিকী
|
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
|
|
ধর্মীয় আন্দোলন নাকি জঙ্গি উন্মাদনা !
07 Apr, 2013
হেফাজতে ইসলামের জনৈক হুজুর বললেন-এই রোডে আমাদের গাড়ী ভাড়া না দিলে, রোডে গাড়ী চলতে দিব না । বাস মালিকদের বলছি, এই রোড আপনাদের বাপের রোড নয় । থ বণে গেলাম, হুজুরের মুখে এ কোন ভাষা ! এই ভাষা ধর্মের না রাজনীতির ! না কোথাও ব্যবহৃত ভাষা এটি নয় । আবার একাত্তর টিভির ক্যামেরাম্যান সহ সাংবাদিকদের চট্রগ্রামে হেফাজতের সমাবেশে হামলার প্রশ্নে আমাদের প্রচলিত রাজনীতির নেতাদের মত দক্ষতার সাথে উত্তর দিলেন- এটা ছাত্র লীগের অনুপ্রবেশকারীরা ঘটিয়েছে । আমরা রাজনীতিবিদদের মুখে এই ধরনের মিথ্যাচার শুনে অভ্যস্ত কিন্তু বর্ষিয়ান একজন হুজুরের মুখে এই মিথ্যাচার কেন ? নবী রাসুলের(সাঃ) যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে ওনারা এই ভাবমূর্তি তৈরী করলে ইসলাম মহিমান্বিত হবে নাকি মর্যাদা হারাবে । টিভি সংবাদের বদৌলতে আমারা এসব দেখছি । হেফাজতে ইসলামের নের্তৃত্ব স্থানীয় হুজুরদের মুখে এসব শুনার পর হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিনামা পড়ার আগ্রহ জাগে । পত্রিকা থেকে খুঁজে পড়ে বিস্মিত হয়েছি, আমরা কি জঙ্গি রাষ্ট্রের দিকে হাঁটছি ।
১৩ দফার মধ্যে ৪টি দাবি ব্যতিত বাকী ৯টি দাবিই মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি । স্বাধীনতার ৪২ বৎসর পর দেশ কি মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করার সক্ষমতা হারিয়েছে । নাকি একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পুনরুদ্ধারের শক্তি সামর্থ্য অর্জন করেছে । বিশ্ব বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এ পর্যায়ে কেন প্রশ্ন ওঠবে; এক) প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলন বন্ধ করা । দুই) বর্তমানে চালুকৃত ইসলাম বিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করা । তিন) সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা । চার) দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা ।
অন্যসব দাবির কথা বাদই দিলাম উপরোক্ত দাবিনামা বিএনপি জাতীয় পার্টি কি পড়ে দেখেছেন নাকি পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করেই লংমার্চে সমর্থণ দিয়েছেন । উপরে উদ্বৃত দাবিনামা বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট জোড়ালো হলে বাংলাদেশ কি তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করতে পারবে নাকি বাংলাদেশ পাকিস্থান আফগানিস্থানের পথে হাঁটবে । আর বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কি নারী হিসেবে ওনার ব্যাক্তিগত রাজনীতির কবর রচনা করবেন । হেফাজতে ইসলামকে সমর্থণ দিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন, এতে কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি আছে ! কতটুকু আছে পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের জঙ্গি চেতনার রাজনীতি ! তা সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে । এভাবে চলতে দিলে খুব বেশী দিন লাগবেনা মসজিদ-মন্দির, হাসপাতল, স্কুল-কলেজ, হাটে-মাঠে ও জনবহুল এলাকাতে আত্মঘাতী বোমায় শত-সহস্র মানুষের রক্তাক্ত বলিদানে । যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের রাজনীতিতে ।
শাহবাগের গণজাগরণকে নাস্তিক্যবাদের অভিযোগ সহ অন্যান্য ১৩ দফা দাবিনামার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের লাঠিপেটায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং পুলিশ, হেফাজতে ইসলাম ও ছাত্র লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে একজন ছাত্র লীগ কর্মী নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রিক লংমার্চ শেষ হল । কিন্তু রাজনীতি যে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে তা রাজনীতিকে সামনে এগিয়ে নেবে, না পিছিয়ে দিবে এখনকার বাংলাদেশকে । প্রশ্নটা ওঠছে বিভিন্ন মহলে ।
দেশের প্রচলিত মূলধারার রাজনীতির এই বেহাল দৈনদশায় সচেতন নাগরিক সমাজের অনেকেই উৎকন্ঠা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন । রাজনীতির এই দৈনতা ও জঙ্গিবাদের উত্থানের সম্ভাবনাকে ওড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নাই বলে মনে করছেন । কারন জামাত শিবির চাইবে হেফাজতের ভিতরে ঢুকে পরিবেশ ঘোলাটে করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করতে । আবার ধর্ম ভীরু, স্বল্প ধর্মীয় জ্ঞানের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে ।
দেশের এহেন পরিস্থিতিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়া সম্ভব কিন্তু দায়-দায়িত্ব তাদের, যারা এই ৪২ বৎসর দেশটা চালিয়েছেন । শাসক গোষ্ঠীর নীতিহীন দেশ পরিচালনায় কখনও দেশ তলা বিহীন ঝুঁড়ি আবার কখনও বিশ্ব আসরে দুর্নীতির তালিকায় শীর্ষ স্থানের খেতাব অর্জন করেছে । আইএমএফ বিশ্ব ব্যাংক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঋণকে যথোপযুক্ত ব্যবহার না করে খয়রাতি সহযোগিতা মনে করে লুটেপুটে খেয়েছেন । রাজনীতিকে ভাগ্য তাড়িত ও ধর্মীয় উন্মাদনায় সাজিয়ে জনগণকে প্রতারিত করেছেন । রাজনীতিকে দেশ সেবার মানুষিকতায় না নিয়ে আখের গুছিয়েছেন কমবেশী সবাই । তাই আমাদের রাজনীতির খয়রাতি খাওয়া নেতারা অনৈতিক রাজনীতির মাসুল গুনছেন এখন কওমী মাদ্রাসার মহা খয়রাতিদের রণ হুংকারে ।
লেখকঃ প্রবাসী, জাপান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন