সাপ্তাহিকী
|
শরীফ নজমুল
|
|
ওরা ইসলাম নামের হীরা খনিতে কাজ করে
07 Apr, 2013
একটা ছবি দেখলাম ফেসবুকে, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ইংরেজী ভুল বানানে “ব্লগার” লিখেছে আর তাই ব্যংগ করে তারা ছবিটি শেয়ার করছেন। দেখে হীরক রাজার দেশের একটা ডায়ালগ মনে পড়ে গেল। হীরার খনির শ্রমিকদের ব্যাপারে হীরকের রাজা বলেছিলেন, “শ্রমিক দের হেয় জ্ঞান করো না, হীরা তো তুলে ওরাই”।
এছাড়া বিভিন্নভাবে এদেরকে হেয় করার চেষ্টা চলছে। কেউ লিখেছেন এরা এতিমখানায় বড় হয়েছে। আপনি যত টাকাওয়ালা হন কিম্বা শিক্ষিত হন, মসজিদে গিয়ে কিন্তু উনাদের পিছনেই নামাজ পড়বেন। বাসায় একটা মিলাদ পড়ানোর জন্য কিম্বা কেউ মারা গেলে তার জানাজা পড়বার জন্য তাদের কাছেই ধর্ণা দিবেন! আর আজ যে ধন-সম্পদ কিম্বা শিক্ষা-চাকুরি-পজিশন পেয়ে আপনি নিজকে বড় (Superior) ভাবছেন, তাদের হেয় জ্ঞান করছেন তা কিন্তু আপনার মৃত্যুতে শেষ হয়ে যাবে। শেষ বিচারের দিন তাদের সম্পদই হয়ত ভারী হবে, তাদের সম্মান এবং আতিথেয়তা দেখে আমরা আফসোস করতে থাকব!
কেউ বলছেন এরা টাকা খেয়ে এখানে এসেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন এত টাকা যোগাড় হলো কোত্থেকে? আসলে আমরা যারা দুনিয়ার পাগল তারা হয়ত ভাবতেও পারিনা দুনিয়ায় টাকা ছাড়া মানুষ কোন কাজ করে। কিন্তু যারা ইসলামের ইতিহাস জানেন, তারা জানে হজরত আবু বকর (রাঃ) কিভাবে তার বাড়ি ফাকা করে সমস্ত সম্পত্তি এনে রাসুল (সাঃ) এর কাছে জমা দিয়েছিলেন। তারা দয়া করে যদি একটু খোজ খবর নেন, এদেশে যত মসজিদ-মাদ্রাসা হয়েছে, তার পিছনে কত টাকা খরচ হয়েছে এবং সেই টাকা কিভাবে এদেশের মধ্যবিত্ত মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষেরা তাদের তাদের বেসিক প্রয়োজন কে অপুর্ণ রেখে আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করছেন।
আজকে যারা রাস্তায় নেমে এসেছে, ওরা হীরা খনির শ্রমিক। বিশ্বের জন্য আল্লাহর দেয়া নেয়ামত ইসলাম-নামক হীরার খনিতে ওরা কাজ করে। তারা এদেশের আলেম সমাজ আর নেহায়েত ইসলাম ভালবাসেন এমন সাধারন মানুষ। আমাদের দৃষ্টিতে ওরা ভদ্র সমাজের বাইরে, ওরা ইংরেজী শিক্ষিত নয়। ওদের আর্থিক অবস্থা হয়ত ভালো নয়। ওদের ব্লগার বানানের ভুল ধরে আপনি-আমি ব্যাংগ করছি। কিন্তু আপনি-আমি কি কোরানের একটি আয়াত ঠিকভাবে বলতে পারব?
কেউ কেউ বলছেন ওরা ইন্টারনেট চিনে না, ব্লগার মানে বুঝে না, হুজুগে আন্দোলন করছে। সেটা হয়ত কিছুটা ঠিক। উনারা ইন্টারনেট চিনত না বলেই হয়ত এতদিন জানতে পারেননি ব্লগ বা ফেসবুকে ইসলাম নিয়ে এতটা নোংরামী হয়, কেউ কেউ তার মুক্তচিন্তার দোহায় দিয়ে আল্লাহ-রাসুল (সাঃ)কে নিয়ে কটুক্তি করে, তাহলে এই নোংরামি হয়ত আরো আগেই বন্ধ হতে পারত।
কেউ কেউ আবার নতুন করে কোরআনের ব্যাখাদাতা হয়েছেন। পবিত্র কোরানের একটি আয়াতের অংশ এনে বলছেন ইসলামের হেফাজতের দ্বায়িত্ব আল্লাহর। কাজেই হেফাজতে ইসলাম ইসলাম হেফাজতের কথা বলে শিরক করছেন। কম্যুনিস্ট নেতা ইনু পর্যন্ত বলছেন আল্লামা শফীর কাছে ইসলাম শিখতে হবে না।
অবশ্যই আল্লাহ ইসলাম কে হেফাজত করবেন যেভাবে তিনি যুগ যুগ ধরেই করে এসেছেন। আল্লাহ কিন্ত সবার রিজিক দাতা কিন্তু আমরা ঘরে বসে কিন্তু খাবার পাইনা, সেজন্য মেহনত করতে হয়। সেরকম আল্লাহ অবশ্যি ইসলাম কে হেফাজত করবেন তবে তার পদ্ধতিও তিনি ঠিক করবেন। যুগে যুগে মুসলমান-মুজাহিদরা জীবন দিয়ে, পরিচর্যা করেই ইসলাম কে টিকিয়ে রেখেছেন। এজন্যই ইসলামের ওপর আঘাত আসলে তা প্রতিরোধের জন্য বের হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দেখুনঃ সুরা তাওবা , আয়াত ৩৮।
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।“
এবং সে পরীক্ষায় পাশ করেই খাটি মুসলিম হতে হয়।
দেখুনঃ সুরা আনকাবুত, আয়াত ২-৩
“মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।“
আজকে হয়ত দেখে নেবার দিন, কে আছে ইসলামের পক্ষে আর কে ইসলাম বিরোধী চক্রে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাসীর দাবী কে সামনে এনে সাধারন মানুষের আবেগকে পুজি করে একটি ভয়ংকর চক্র আল্টিমেটলি এই আন্দোলনকে ইসলামের মুখোমুখি দাড় করিয়েছিল আর তাইতো ইসলামের এই শ্রমিকদের নেমে আসতে হয়েছে রাস্তায়। শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরের আন্দোলন দেখে কিম্বা ফেসবুকে কয়েক হাজার লাইক দেখে আর মিডিয়ার কল্যাণে দিন-রাত লাইভ টেলিকাস্ট দেখে আমরা কিন্তু ভুলে গেছিলাম এই দেশ মুসলমানদের। দাড়িওয়ালা মুরুব্বী এখানে লাঞ্ছিত হওয়া শুরু করেছেন, একটি প্রাইভেট বিশবিদ্যালয়ে জুম্মার নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা ছিল ইসলাম নির্মুলের সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ তা বুঝা যায় বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকে আল্লাহর সাথে দেব-দেবীকে সমান করে দেখানোর মাধ্যমে। আজকে আমরা হেফাজতে ইসলামের কাছে কৃতজ্ঞ তারা মনে করিয়ে দিয়েছে, দেখিয়ে দিয়েছে, এই দেশ ইসলামের, এই দেশ মুসলমানদের। মুসলমানদের এই জাগরন যেন ইসলামের বিজয় আনে, দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, মহান আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন