সাপ্তাহিকী
|
শরীফ নজমুল
|
|
হলমার্ক কে আরো ঋন দেবার চিন্তাঃ চোর পুনর্বাসন সরকারের অগ্রাধিকার!!
30 Mar, 2013
সুধারামের গল্পটি পড়েছিলাম ছোট কালে, আপনাদেরও হয়ত পড়া আছে। সুধারাম ছিল নেহায়েত বোকা ধরনের কিশোর। একদিন গ্রামের একদল ছেলে মোড়লের পুকুর পাড়ে পিকিনিক করতে গিয়েছে। রান্না করার জন্য চুলা বানানোর প্রয়োজনে পুকুর পাড়ে মাটি কাটছিল। সুধারাম ভাবল এরা নিশ্চয় পুকুর চুরি করার জন্য সিদ কাটছে। সে দৌড়ে গিয়ে মোড়ল কে খবর দিল যে কিছু ছেলে তোমার পুকুর চুরি করবে বলে সিদ কাটছে। তার এই বোকার মত কথাটা গ্রামে চাউড় হতে সময় লাগল না। তার বয়সী ছেলে-মেয়ে তার নামে ছড়া বানিয়ে ফেললঃ
সুধারাম বুদ্ধিমান সাবধানে থেক
নাকে মুখে ছিপি এটে বুদ্ধি ধরে রেখ।
সুধারাম বোকা হলেও এতটুকু বুঝত যে চুরি একটি খারাপ কাজ এবং চোর ধরিয়ে দিতে সে সাহায্য করেছিল। সে পুকুর পাড়ে চুলা বানানোর জন্য মাটি কাটা আর ঘরের সিদ কাটবার মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেনি আইকিউ এর অভাবে। কিন্তু যারা চোরকে চুরির পুরস্কার হিসাবে আরো সম্পদ এনে দেয় তার হাতে তুলে দেয় তাকে কি বলবেন? বোকা না চালাক? নাকি অতি দয়ালু নাকি চোরের সর্দার?
হলমার্কের তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অর্থ অম্নত্রীর মন ভরেনি। কি বেকুব, মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। কেন বাবা, বাংলাদেশের মানুষ কি এত গরীব নাকি? আমি দেই লাখ কোটি টাকার বাজেট আর ওরা কিনা চুরি করল মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি? আর মিডিয়া বেকুবের মত চিল্লাচিল্লি শুরু করল। আর ওরা চোর হলেও মানুষ ভাল। তিন হাজার কোটি টাকা তো তারা তো একাই খায় নি। কতজন কে ভাগ দিয়েছে, সেটা তো আর মুখ ফুটে বলা যায় না! তাতে সম্পদের সুষম বন্টন হয়েছে। যার দেশের সেবা করে জীবন পাত করছেন তাদের অ কিছু পাওনা হয়েছে। তো জনগনের চুরি না করলে তারা ভাগ দিবেন কিভাবে? আর নেতারা বা একটু নুন-ডাল-ভাত খেয়ে বাচবেন কিভাবে?
অথচ মিডিয়ার চাপে এই দোস্তদের জেলে ভরতে হয়েছে। মনে বেজায় কষ্ট। তাই জাতি কে বাংলা পরীক্ষায় বসিয়ে একজনকে জামিন দিয়ে বের করে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সামলানো যায়নি। উচ্চ আদালতে চোখ রাঙ্গাগানিতে তাকে আবারো ঢুকাতে হয়েছে। কিন্তু যারা নুন খেয়ে খেয়েছেন হলমার্কের, তারা বন্ধুর দুর্দিনে কি চুপ করে বসে থাকতে পারে? তাইতো উনারা চিন্তা করছেন হলমার্ক কে আরো ঋণ দেয়ার কথা। নীচের খবরটি হয়ত আনেকেই দেখেছেন।
“অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বুধবার (২৭ মার্চ, ২০১৩) সাংবাদিকদের জানান, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ হল-মার্কের কর্মকর্তাদের জামিনে মুক্তি দেয়ার ও প্রতিষ্ঠানটিকে আবারো ঋণ দেয়ার চিন্তা করছে সরকার”। সুত্রঃ আরটিএনএন।
আসলে উনারা চোর হলেও মানুষ ভাল। যা খেয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় ভাগ দিয়েই খেয়েছেন। তাছাড়া তারা জনগনের টাকা মেরেছেন, কোন নেতাদের টাকা মারেন নি। জনগনের বাড়ি যেয়ে যেয়ে চুরি করেন নি কিম্বা রাস্তায় ধরে পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা আদায় করে নি। জনগন তাদের যে বাড়তি টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছিল সেটাই শুধু সিস্টেম করে মেরে দিয়েছে। সেটা ছাড়াও জনগন চলতে পারে, নাহলে এটা তারা ব্যাংকে রেখেইছিল বা কেন? জনগনের কাছে অনুরোধ দয়া করে আপনার টাকা (যদি কিছু থাকে) দয়া করে সোনালিই ব্যাংকে রাখুন। হল্মার্ক কে ঋণ দেবার জন্য আরো ফান্ড প্রয়োজন!
সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দয়ার শরীর। শুধু বলতে ইচ্ছে করে “আপনারা দয়া করে নাকে-মুখে ছিপি এটে দয়া ধরে রাখুন”। এঈ অপাত্রে দয়া প্রদর্শনের ফলে জনগনের জান কাহিল হয়ে যাচ্ছে!!!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন