স্থান শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,তারিখ ৭ই মার্চ,সাল ২০১৩,সময় মধ্যরাত ১২.৩০ মিনিট.১সেকেন্ড।চারদিকে পিনপতন নীরবতা,ঝি-ঝি পোকার ডাক আর দু একটি রিক্সার ধীর গতিতে প্যাডেল চাপিয়ে চলার ছন্দ-হীন চলার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।আজকের সভার মধ্যমণি হয়ে আছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাঁদরেল সব নেতৃবৃন্দ,অতিথিও যেমন উনারা,শ্রোতাও ঠিক তেমনি উনারা। কারণ ঐ সব ডাকসাইটে নেতৃবৃন্দ ছাড়া আজকের এই বিশেষ সভাসদে অন্য কারো আগমন অসম্ভব,বলা যায় নিষিদ্ধ রাতের নিষিদ্ধ অতিথিদের এই বিশেষ এক সভা।সভার প্রত্যেকের মুখ বড় গুরু গম্ভীর,মাঝখানে যিনি বসে আছেন,তিনি আর কেউ নন,একসময়ের আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা,তখনকার অভিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,তার ডানে বসে আছেন একসময়ের বাংলার বাঘ বলে খ্যাত শেরে বাংলা এ,কে,ফজলুল হক,বাঁপাশে বসে আছেন মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী,সোহরাওয়ার্দীর একেবারে সামনে যিনি বসে অনবরত সিগারেট এর পাইপ হাতে ভারি চশমার ফ্রেমে চোখ ঢেকে রেখে বসে আছেন তিনি আর কেউ নন,বাংলার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি,শান্তির অমিয় প্রতীক জুলিয় কুড়ি খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,তার ঠিক একটু দূরত্বে সামরিক কায়দায় বসে আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান,বঙ্গবন্ধুর ডানপাশে আছেন বাঙ্গালীর মুক্তিসংগ্রামের সমরনায়ক কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, এর পরপর সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন মুক্তিসংগ্রামের সমরনায়ক কর্নেল আবু তাহের,মেজর জলিল,মেজর মঞ্জুর,শেখ ফজলুল হক মণি।সবাই মাথা নিচু করে গম্ভীরভাবে বসে আছেন,যেন পিন-পতন নীরবতা।কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা।সকলেই বড় বিচলিত এবং অস্বস্তি বোধ করছেন।শেখ মুজিব ক্রমাগত পাইপ টেনে চলেছেন নিবিষ্টমনে।সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল হক চিন্তিত মনে অনবরত হাত কচলে চলেছেন,কর্নেল ওসমানী রুক্ষ-ভঙ্গিতে একবার এদিক সেদিক চেয়ে শেখ মুজিবের চোয়ালে চিন্তার রেখা দেখে মাথা নিচু করে ফেললেন,জিয়া কিছু একটা বলতে গিয়েও আবার চুপ করে গেলেন।আসলে কে এতো সাহস করে বলবে,কারণ সামনে যে বসে আছেন বাংলার সব সিংহ পুরুষরা।
এমনি সময় হন্ত দন্ত হয়ে সভায় আগমন করলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।এরশাদের আগমনে সভার নীরবতা ভেঙ্গে যায়,শেরেবাংলা গর্জে উঠে বললেন,এই তুমি কে? কি করে এখানে এসে ঢুকলে?তুমি এখানে কি চাও?এতো সব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এরশাদ ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে যান।এমন সময় মেজর মঞ্জুর বিনয়ের সাথে জেনারেল ওসমানীকে লক্ষ্য করে বলে উঠেন,স্যার এই এরশাদকে গ্রেপ্তার করে তার বিচার করেন দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধাদেরকে হত্যা,ফাঁসী দেওয়ার জন্য।এবার জিয়া নড়ে-চড়ে বসে বলতে থাকেন,স্যার এই এরশাদ আমার সাজানো-গোছানো দলকে তছ-নছ করে দিয়েছে,আমার লোকগুলোকে ভাগিয়ে নিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেয়।আজ ওর বিচার করেন স্যার,এখানে আপনারা সব নেতৃবৃন্দ আছেন,জাতির পিতাও বসে আছেন,যার ডাকে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এইবার কর্নেল তাহের আর মেজর জলিল বেশ নড়ে-চড়ে বসলেন,বেশ উত্তেজিত হয়ে বললেন,লিডার আগে জিয়াউর রহমানের বিচার করেন,রাজাকারদের পুনর্বাসনের জন্য,আমাদের মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করার জন্য।তাহের বিনয়ের সাথে বললেন,জিয়াকে জিজ্ঞেস করেন,আমার কি অপরাধ ছিলও,কেন আমাকে ও রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করলো?মাওলানা ভাসানী হাতের ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,শান্ত হয়ে বসতে,সবার কথাই শুনা হবে। জেনারেল ওসমানী উসখুস করতে লাগলেন,ভাসানী ওসমানীকেও থামিয়ে দিলেন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আরও একবার শেখ মুজিবের দিকে তাকালেন, তারপর শেরে বাংলা ফজলুল হকের দিকে চেয়ে কি যেন বলতে বললেন।শেরে বাংলা বলতে লাগলেন,আজ বাংলার এই এতো অনৈক্য,এতো হানাহানি,খুন-খারাবী,রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন,স্বজনপ্রীতি,দলবাজি,টেন্ডার-বাজি,মানুষের নিত্য-নৈমিত্তিক অর্থনৈতিক দরিদ্রতা আর প্রান্তিক চাষিদের দুর্ভোগ-আজো আমার মনকে বড় ব্যথিত করে।কি স্বপ্ন একে এই পারে এসেছিলাম,এক অমিত সম্ভাবনার বিশাল ক্ষেত্র বাঙ্গালীর সামনে রেখে এসেছিলাম,অথচ আজও দেখি আমার সেই বাংলা বড় দুঃখী,রাস্তা-ঘাট এখনো ঝরা-জীর্ণ,প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এখনো জনগণের নাগালের বাইরে,মানুষ প্রতিনিয়ত দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য কতনা কষ্ট করে চলেছে,আইনের শাসনের বড় অভাব,যার যা ইচ্ছা,তাই করে বেড়াচ্ছে,এখানে কেউ যেন কোন কিছু দেখ-ভাল করার জন্যও নেই-এই কি ছিলও আমাদের রেখে আসা বাংলার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র?যার যা কাজ,তা ফেলে দিয়ে সবাই যেন নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত,জনগণের কথা,জনগণের কল্যাণের কথা কেউতো ভাবছেনা?খুন,রাহাজানি,গুপ্ত-হত্যা,রাজনৈতিক দলাদলি,বেহায়া-বেলেল্লাপনা সর্বত্র,চুরি,ডাকাতি,রাহাজানি,অর্থনৈতিক দুরবস্থা, এই তো বাংলার নিত্য চিত্র হওয়ার কথা ছিলোনা?দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে,রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে যেন কিছুতেই সহ্য করতে পারতেছেনা,কোমল-মতি ছাত্রদের হাতে অস্র-বারুদ তুলে দিয়ে তাদের কে করা হয়েছে ক্ষমতা আর সিঁড়ি বদলের হাতিয়ার,শিক্ষাঙ্গনগুলো যেন আজ লেখা-পড়ার পরিবর্তে পরিণত হয়েছে একেকটি অস্রের কারখানায়, সর্বত্রই এক আমিত্ব বিরাজমান-যা অতীব ভয়ংকর রূপ ধারণ করে চলেছে,মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে চলে গেছে,আইন-শৃঙ্খলার ক্রমাবনতি,রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা,বিদ্যুতের লাগাতর লোড শেডিং জনজীবন বিপর্যস্ত। এই কি আমরা চেয়েছিলাম? নিজেকে ধিক্কার দিয়েও সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
একের পর এক গুপ্ত হত্যা বেড়েই চলেছে,সরকার এর কোন কূল কিনারা না করে বরং আস্ফালন দিয়ে চলেছে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে চলেছেন,দেশে কোন গুপ্ত হত্যা বলে শব্দ নেই।উদীয়মান তরুণ বুদ্ধিদীপ্ত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুণীকে নৃশংসভাবে বাসায় খুন করা হয়,অথচ প্রশাসন আজো এর কোন কূল-কিনারা করতে পারে নাই।বিরোধীদলের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের নামে নির্বিচারে হত্যা,পুলিশী ও দলীয় মাসলম্যানদের প্রকাশ্যে একশন,যখন তখন যাকে-তাকে ধরার নামে জঙ্গি-সন্ত্রাসী ধূয়া তুলে গোটা প্রশাসনযন্ত্রকে দলীয়ভাবে ব্যাবহারের যথেচ্ছ ব্যাবহার-যা গোয়েবলসীয় থিওরিকেও হার মানায়,রাজনৈতিক আক্রমণের নামে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ-যা সকল নীতি-নৈতিকতাকেও হার মানিয়েছে,আমাদের সকল মানবিক এবং সামাজিক মূল্যবোধের এতো অধঃপতন হয়েছে যে,যা সর্বকালের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। নির্বাচন, সংসদ নিয়ে আজগুবি সব কর্মকাণ্ড, পদ্মা সেতু নিয়ে সীমাহীন কেলেঙ্কারি না সইতে হল-মার্ক নামক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সোনালী ব্যাংকে হরিলুট, সামিট কর্তৃক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে মহা-লুট, আবার একই গ্রুপের দ্বারা বিমানবন্দরের জায়গা কুক্ষিগত করার হীন ষড়যন্ত্র, ঐ একই গ্রুপ ডাইরেক্ট রেজিস্ট্রেশনের সুবাদে শেয়ার মার্কেট থেকে কোটি টাকা লুটে নিয়ে উঠতি বিনিয়োগকারীদের পথের ফকির করে ছেড়ে দেওয়া, হাজী বাবার যোগসাজশে, ডেস্টিনির দ্বারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার- এতো সব কেলেঙ্কারির পর মহাকেলেংকারী যেন লেগেই আছে, যা শতাব্দীর সব দুষ্টু সংস্কৃতিকেও হার মানিয়ে চলেছে, এই সব দেখার যেন কেউ নেই।
একশ্রেণীর মানুষ ক্রমাগতভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠতেছে,সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের করায়ত্ত করার উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।ফলে বাড়ছে খুন,খারাবি আর অনৈতিক কার্যকলাপ,যা সমাজে বিষের ফোড়ার মতো চারিদিকে ছড়িয়ে সবাইকে করতেছে কলুষিত।অপরদিকে সমাজের সবচাইতে নীচের তলার মানুষ,খেটে-খাওয়া প্রান্তিক চাষি হচ্ছে আরও গরীব থেকে ছিন্নমূল মানুষে পরিণত হচ্ছে।এই যে ব্যবধান,এই যে ভয়ংকর এক বৈষম্য যা আমাদের সমাজ বিনির্মাণে এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনে বাধার প্রাচীর হয়ে গড়ে উঠতেছে,সে দিকে কোন নেতা-নেত্রীদের খেয়াল নেই।অথচ এ এমন এক ভয়ংকর অর্থনৈতিক বৈষম্য যা যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় সুপ্ত করে হলেও ধীরে ধীরে প্রলয়ঙ্করী এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় সব কিছু তছ-নছ করে দিতে পারে,যুগে যুগে তাই হয়েছে,আফসোস আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তা থেকে কোন শিক্ষা লাভ করে নাই।এই সুনামি যখন আসবে তখন কি হবে আমাদের এই জাতির অবস্থা?
শেখ মুজিবের কপালে চিন্তার রেখার মাত্রা বেড়েই চলেছে। বড় আক্ষেপ করে বলে উঠলেন,কে বলছিলও রব কে নতুন দল করতে,তা হলে তো বাঙ্গালী নেতৃত্বশূন্য হতোনা।আমার ফিদেল ক্যাস্ট্রো কাপালিক সিরাজুল আলম খানের জন্য আমি অপেক্ষায় বসে আছি।সে আসলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম,কি দরকার ছিলও যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে বিভক্ত করার,এই গুলোকে সঠিকভাবে দেশের কাজে লাগাতে পারলে জাতিকে আজ এই অবস্থার মুখোমুখি হতে হতোনা।ভাসানী আক্ষেপ করে বলতে থাকলেন,মুজিব সেদিন তুমিও অনেক ভুল করেছিলে,ষড়যন্ত্রকারীদের কোপানলে পড়ে তুমিও তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়ে,চাটুকার আর তোষামোদকারী আর মেধাহীনদের কাছে ঠেনে নিয়েছিলে।জেনারেল ওসমানী বলে উঠেন,লিডার আমাকে কি আরেকবার পুশব্যাক করে পাঠানো যায়না,তা হলে সব ঠিক করে দিয়ে আসতাম;;;। মাওলানা বলে উঠেন,শয়তান এমনভাবে খেলা জমিয়েছে জাতির মননে,মগজে,রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন প্রতিহিংসা ঢুকিয়েছে,যে খান থেকে বের হওয়ার পথ বড় বন্ধুর,সহজ কোন পথ খোলাই রাখেনি।জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য কোন সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার মতো কোন দর্শন, কোন আদর্শ জাতির সামনে অবশিষ্ট নেই।কে দেখাবে জাতিকে সঠিক পথ?এইভাবে তো একটি দেশ চলতে পারেনা।আর এখনকার এই সব পুরনো নেতৃত্ব দিয়েও জাতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু তাই বলে এই নেতৃত্বকেও অস্বীকার বা বাইরে রাখা যাবেনা।মুজিব বলতে থাকেন,সবাই মিলে কি এমন চেষ্টা করা যায়না,যাতে এই দুই নেত্রী এবং দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল যাতে গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ রপ্ত এবং চর্চা করে, গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে,সবাই মিলে প্রেশার ক্রিয়েট করে এদেরকে গণতান্ত্রিক হতে বাধ্যকরা হয়-এরকম চেষ্টা অনবরত করে রাখলে একটা ভালো রেজাল্ট, আশা করা যায়, ধীরে-ধীরে সমাজ ও রাজনীতির অভ্যন্তর থেকে গড়ে উঠবে,যাতে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
উপযাচিত হয়ে মার্কিনীদের যারা ঢেকে এনেছে,অতিমাত্রায় ভারত প্রীতি এর কোনটাই আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়,কারণ এমন খেলা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে,সময় থাকতে সকলকে সাবধান হওয়া উচিৎ।
দুই নেত্রীকে এবং দুই রাজনৈতিক দলকে কি আরও একটু গণতান্ত্রিক করা যায়না?
শেখ মুজিবের কপালে চিন্তার রেখা আরো বড় ও লাল হতে থাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে গোটা বাংলাদেশ আজ টাল-মাটাল ও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একপক্ষ স্পষ্টতঃ আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে আর অপর পক্ষ এই বিচারের বিরুদ্ধে।দুই পক্ষই আজ মারমুখী অবস্থানে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। কোন সচেতন, সৎ, চিন্তাশীল, বিবেকবান নাগরিক দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে সঠিক ও সত্য মত প্রকাশ করলেই কোন এক পক্ষ নাখোশ হয়ে তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে, এ যেন জাত-কূল-মান সবই গেলো এমন এক ভয়াবহ অবস্থা আজ জাতিকে গ্রাস করেছে।দীর্ঘ সংগ্রামের বাঙালি জাতির পরীক্ষিত মুক্তি সেনানী আর সময়ের গড্ডালিকা প্রবাহের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলা- জলের রঙ ও পাত্রের আকার ধারণে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আজ এক কাতারে কিংবা তারও নীচে দাড় করানোর হীন এক চেষ্টা উভয় পক্ষ থেকে সমানভাবে লক্ষ্যণীয় দেখে সাধারণ জনগণ ভীত-সন্ত্রস্থ।মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ট মুক্তির দূত ও মহামানব প্রিয় নবীজীকে নিয়ে ঔদ্যত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ – তথাকথিত স্বীকৃত নাস্তিক ও দেবতাকেও হার মানিয়েছে, আর তা নিয়ে অপর পক্ষের রাজনৈতিক ফায়দা ও পক্ষ-বিপক্ষের হিংস্রতা ও আদিম বর্বর যুগেরমতো তান্ডব আর নোংরা রাজনৈতিক খেলা আর খিস্তি-খেউর সকল সভ্যতা-বভ্যতাকে হার মানিয়েছে। ফলে এক পক্ষ অপর পক্ষকে পাখির মতো গুলি করে মারছে, আরেক পক্ষ গুপ্তহত্যা শুরু করে দিয়েছে। এখন আবার শুরু হয়েছে পাল্টা-পাল্টি নাগরিক রক্ষা কমিটি- যা ছিলো মাঠে ও জনসভার ময়দানে গুলি আর হত্যাকান্ড এখন বুঝি ঘরে-ঘরে ঢুকে হত্যাকান্ড চালানোর উলঙ্গ এক প্রতিযোগিতার পথ খোলে দেয়ার অশনি সংকেত-জাতি হিসেবে আতংকিত না হয়ে পারিনা। এতে যেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের ঠনক নড়ছেনা, বরং ভয়ংকর এক বিভক্ত আর প্রতিহিংসার খেলায় মত্ত। কিন্তু এভাবে আর কতো? এইভাবেতো আর একটি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনা। বঙ্গবন্ধুর বুকে আজ বড় কষ্ট আর ব্যথিত হ্রদয় নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন, ভাবছেন কি করে এই দুই নেত্রীকে সমঝোতার টেবিলে আনা যায় ? দীর্ঘ সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু এমন করে বাঙালি জাতির জন্য অসহায় বোধ করেননি বা করার মতো অবস্থার মুখোমুখি হননি। আজ যেন দুই দলের এই দুই নেত্রীর খাম-খেয়ালি আর ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা আর ফিরে আসার উম্মত্ত প্রতিযোগিতার অবিনাশী রাজনৈতিক খেলায় বাঙালি জাতি আজ পুতুলের মতো বড় অসহায় আর আহত ও ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে, ধীরে-ধীরে পলাশীর আম্র-কাননের মতো বাংলার রক্তিম সূর্য আজ ডুবতে বসেছে। কে আছে বাংলার এই দূর্বিসহ অবস্থা থেকে বাঙালি জাতিকে খাদের তলানি থেকে টেনে-টুনে তুলে রাইট ট্রাকে উঠিয়ে হাল ধরবে?
বঙ্গবন্ধু বড় বিচলিত বোধ করতে থাকেন। কতিপয় অর্বাচীন, উগ্র , আর অনভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমাহীন স্বার্থের বলি আজ গোটা বাঙালি- যা আগামী কয়েক দশকে সেই ক্ষত ও ঘা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা সন্দেহ। তার উপর আছে পাশের দেশের যুদ্ধংদেহী নিরন্তর এক পরিবেশের উষ্ণ ছোঁয়া আর সেই সাথে অতি নিকটবর্তী দেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ-বাস্প আমদানীর সুদূঢ় প্রসারী এক খেলা- যে খেলার উর্বর এক স্থান আজ আমার এই বাংলা মা। ভাসানী বড় বিচলিত বোধ করছেন।
বঙ্গবন্ধু ভাবছেন কী পন্থা অবলম্বন করলে এই খেলা থেকে বাঙালি জাতিকে বের করে নিয়ে এসে সুন্দর সহাবস্থানের পরিবেশ বিনির্মান করা যায়? এমনি ভাবনায় ঘুমে অবচেতন হয়ে যাই......।
সারা রাতের প্রচণ্ড খাটুনিতে শরীর বেশ অবশ হয়ে আসছিলো,কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি ভেবে উঠতে পারিনি,হঠাৎ এক বজ্র কণ্ঠের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়,প্রিয় বন্ধু ঘরে ঢুকেই ভিসিডি প্লেয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবের ঐতিহাসিক সেই বক্তব্যের রেকর্ড বাজাতে থাকে,ফুল ভলিউমে, তোমাদের যার যা কিছু আছে,তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো...।বন্ধুটি বলতে থাকে মন যখন খুব খারাপ থাকে,যখন মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ে,শরীরে প্রচণ্ড ক্লান্তি-আর একরাশ অবসাদ ঝেঁকে বশে,তখন শেখ মুজিবের এই বজ্র কণ্ঠের ভাষণ আজও জীবনী শক্তি যোগায়,নতুন করে এই নিঃসঙ্গ প্রবাস জীবনে বাচার স্বপ্ন দেখায়... ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন