সাপ্তাহিকী
|
এস এম মুকুল
|
|
আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ
বাংলাদেশে হবেন কে?
09 Mar, 2013
আজকের ঐশ্বর্যমন্ডিত মালয়েশিয়ার বিশাল বিশাল কারম্নকাজের অট্টালিকা, বিপণীবিতান আর দর্শনীয় স্থান বাঙালি শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার আর অন্যান্য পেশাদার মানুষের অক্লান্তô শ্রমের ফসল। মালয়েশিয়ায় শিল্প কারখানার সচল চাকার সাথে এই বাংলাদেশী শ্রমিকদের রক্ত পানি করা পরিশ্রম আষ্টেৃ-পিষ্টেৃ জড়িত। তবু মালয়েশিয়া মালয়েশিয়াই। সে দেশে শ্রম দিয়ে অনেক বাঙালি শ্রমিক এই বাংলাদেশের দিনবদলে নিবেদিত। কি আছে এই মালয়েশিয়ায়? কি ছিলো সেখানে? কীভাবে, কোন যাদুর ছোঁয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ পাল্টে দিলেন মালয়েশিয়ার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি?
আর কি নেই আমাদের বাংলাদেশে? কেন আমরা পারছিনা একটি আধুনিক সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে? কেন, কেন, কেন? এ প্রশ্ন আজ ১৬ কোটি মানুষের মনে ঘোরপাক খাচ্ছে।
১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত মালয়েশিয়া ছিল দারিদ্র্যপীড়িত বৃক্ষমানব দেশ। দারিদ্র্যের সাথে ছিল নিরক্ষরতা আর পশ্চাদমুখিতা। টেংকু আবদুর রহমান প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহুধাবিভক্ত দেশটিতে রোপণ করেন ঐক্যের বীজ। তিনি যে ধারার সূচনা করেছিলেন তা থেকে বিচুøত হননি তাঁর উত্তরসূরি আবদুল রাজ্জাক, টোয়াংকু ইসমাঈল এবং ডা· মাহাথির বিন মোহাম্মদ। শেষোক্তজন আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও রূপকার হিসেবে পৃথিবীতে নন্দিত এবং প্রশংসিত। তাঁর হাত ধরে মালয়েশিয়া পৌঁছে যায় স্বপ্নলোকে।
১৯৮১ সালে ড· মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। নেতা হিসেবে তিনি নির্ভুলভাবে বুঝতে পেরেছিলেন জাতির সাইকি সম্পর্কে। সম্পদের ছড়াছড়িই যে শুধু একটি দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি এমন বিশ্বাস করেননি তিনি। কেননা, তাঁর চোখের সামনেই ছিল অনেক সম্পদশালী দেশের নিঃস্ব হওয়ার উদাহরণ।
মাহাথির পেয়েছিলেন অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত কৃষিনির্ভর একটি দেশ। যা ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা বহু বছর লুণ্ঠনের কেন্দ্রভূমি। তার নেতৃত্বে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সরকারি জমি। জমি বিতরণের পর যখন বিতরণযোগ্য জমি আর রইলো না, আহ্বান জানানো হলো বিদেশি পুঁজির। বারবির মতো বিখ্যাত রাবারের পুতুল, ডানলপের মতো বিশ্বখ্যাত রাবার পণ্য প্রস্তুতকারক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রথমেই বিশাল পুঁজি নিয়ে আসে জনমানুষবিহীন দুর্গম রাবার বনাঞ্চলে। বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দেশে যে কঠোর শর্ত আরোপ করে উৎপাদন আর ব্যবসার নামে, মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে তা দেখা গেল না। কারণ মাহাথিরের ভাষায় মালয়েশিয়ার টেবিলের ওপর দুর্নীতির মাত্রা কম। তাহলে দুর্নীতি কি মালয়েশিয়ায় নেই? অবশ্যই আছে। দুর্নীতিমুক্ত রাজ্য পৃথিবীতে আছে! তবে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি ন্যূনতম পর্যায়ের। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়েই তো মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার দুর্নীতি সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ডকে বাধ্য করেছিলেন তাঁর মন্তôব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে।
রাজনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে মালয়েশিয়ার জোট সরকার দেশের উন্নয়নের দিকে নজর দেয়। শুরম্নতে একমাত্র সম্পদ ছিল কৃষি জমি। সে সময় মালয়েশিয়ায় উৎপাদন খাতের কোনো বিশেষজ্ঞ, পুঁজি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও বাজার বিষয়ে জ্ঞান ছিল না। সে ক্ষেত্রে শিল্পায়নের একমাত্র উপায় ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো। এই বিদেশি বিনিয়োগ থেকে সরকার যদি আর্থিকভাবে লাভবান নাও হয় তাহলে তারা কিছু মনে করবে না যদি শ্রমিকরা কাজ পায়। এ জন্য সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দিয়েছে। একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। এই বিনিয়োগের ফলে মালয়েশিয়া অনেক ক্ষেত্রেই লাভবান হয়েছে। শ্রমিকরা দক্ষ হয়েছে। ব্যবস্থাপনার মান বেড়েছে। অনেকে এখন নতুন পণ্য প্রস্তুত করতে শিখেছে। মালয়েশিয়া এখন উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে শতাধিক বিলিয়ন ডলার আয় করে।
মাহাথির মোহাম্মদ মন্ত্রীদের কাছে ব্যবসায়ী সমাজের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন। ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত সংলাপ চলমান থাকে। তাদের অভিযোগ ও প্রস্তôাব শুনে সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হয়। মালয়েশিয়া যখন স্বাধীন হয় তখন তাদের উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ছিলোনা। এজন্য ব্রিটিশ জনপ্রশাসককে ৩-৫ বছর রেখে দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় দক্ষ কর্মকর্তা তৈরি করেন।
মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা কত বিচিত্র, কত স্বতন্ত্র। ২ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মালয়ি মুসলমান, ২৪ ভাগ চৈনিক, ৭ ভাগ ভারতীয় এবং ৯ ভাগ বিভিন্ন উপজাতীয় গোষ্ঠীর। মালয়েশিয়া এভাবে হাজারো প্রকরণে ছিল বিভক্ত, খন্ডচ্ছিন্ন। সম্পদের নিরিখেও জনসমষ্টি বিভিন্ন মানের। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা ছিল অত্যন্তô প্রকট। সবমিলিয়ে মালয়েশিয়ায় জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্র ছিল সঙ্কুচিত। সেই সঙ্কুচিত ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে মাত্র সাড়ে চার বা পাঁচ দশকে মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব জাতীয় জীবনের সব স্রোতধারাকে সম্মিলিত করে রূপান্তôরিত করেছে স্রোতস্বিনীতে।
কিন্তুু মাহাথির মোহাম্মদ এবং তাঁর পূর্বসূরিদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিলো জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মাহাথির অতীতকে স্মরণে রেখে বর্তমানকে সাজিয়েছেন এবং বর্তমানকে সাজানোর সময় ভবিষ্যতকে সুস্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। ১৯৭৮ সালে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের প্রত্যেকের জন্য যেন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যাপারে মনোযোগী হন। এ লক্ষ্যে বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ ছিল প্রধানত দু’টি- এক· আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা। দুই· বিনিয়োগকারীদের সর্বাধিক সহায়তা নিশ্চিত করা।
তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো আইন-শৃঙ্খলার অস্বাভাবিকতায় কেউ যেন ভীতসন্ত্রস্ত না হয়। বিনিয়োগকারি যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়েন। প্রত্যেকে যেন বিনিয়োগকৃত সম্পদ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। তা তিনি দেশি হোন অথবা বিদেশি। কর্মীদের উশৃঙ্খলতায় যেন কোনোভাবে উৎপাদন বিঘ্নিত না হয়। দুর্নীতির কালো থাবা যেন উৎপাদন ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা সৃষ্টি না করে। তাঁর এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ মালয়েশিয়াকে বাণিজ্যবান্ধব রাষ্ট্রে পরিণত করে। ফলে দেখা যায়, শুধু টিন ও রাবার রপ্তানিকারক পশ্চাৎপদ দেশ যে মালয়েশিয়া মাত্র দু’দশকের মধ্যে ইলেকট্রনিকস, ইস্পাত, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, এমনকি মোটরগাড়ি রফতানিকারক রাষ্ট্রে পরিণত হলো। স্বাধীনতার সময় যে মালয়েশিয়ার অধিকাংশ জনসমষ্টি ছিল বেকার অথবা অর্ধবেকার। মাত্র দু’দশকে সেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত রয়েছেন বিদেশের লাখ লাখ কর্মী। স্বাধীনতার সময় এমনকি পরবর্তী সময়েও যে মালয়েশিয়া প্রায় প্রকম্পিত হয়েছে নিম্নস্তরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। সেই মালয়েশিয়া আজ রূপান্তôরিত হয়েছে একটি সুস্থ, নিরাপদ, উদার, কল্যাণমুখী জনপদে।
শুধু একজনের উদার, আদর্শিক যোগ্য ভিশনারি নেতৃত্ব আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে মালয়েশিয়ানদের জীবন চিত্র।
রাজনৈতিক জীবনের শুরম্ন থেকেই তাঁর দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর মাহাথিরের আগ্রহ ছিল সুগভীর। তাই একটি জাতির উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা তাঁর কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। সরকারি নীতি এবং বেসরকারি বিনিয়োগের মাঝে তিনি একটি সমঝোতা এবং সখ্য গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ মালয়েশিয়ার দ্রুত শিল্পায়নের সহায়ক হয়েছে। তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ আর সহযোগিতায় বেসরকারি খাতকে লাভজনক পর্যায়ে করতে মালয়েশিয়ান বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করেছেন।
কিন্তু কীভাবে দেশকে এতো সমৃদ্ধশালী করলেন? সেটা অনেকের কাছেই প্রশ্ন। জাতির উন্নয়ন রেঁনেঁসার প্রতীক হয়ে তিনি মালয়িদের মনে স্বপ্ন সমৃদ্ধির বীজ বুনে দিলেন। চোখে এঁকে দিলেন ভবিষ্যত মালয়েশিয়ার ছবি। বিশ্বব্যাংক আইএমএফ বা দাতা সংস্থার পরামর্শ এড়িয়ে নিজের চিন্তা-চেতনায় দেশের জন্য যা মঙ্গলকর তাই করেছেন। মালয়েশিয়া মাত্র দুই দশকে অনগ্রসরতার পাতাল থেকে সগর্বে আরোহণ করছে অগ্রগতির পাহাড়ের চূড়ায়। ডা· মাহাথির এই অসম্্ভবকে সম্্ভব করেছেন তাঁর জাতীয় অগ্রগতির স্বপ্ন মালয়েশিয়ার জনগণের চোখে এঁকে দিয়ে। তাঁর আকাশচারিতার স্বপ্ন সমগ্র মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে। বাইশ বছরের শাসনকালে মালয়েশিয়াকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য পুরোদস্তুর তৈরি করে ভিশন ২০২০-এর দ্বারপ্রান্তে দেশকে রেখে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিলেন। একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি যে তিনিই শুধু, পরবর্তীকালে ইতিহাস তা গভীর আগ্রহভরে লক্ষ্য করবে।
মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। তাঁর অভিজ্ঞতার অংশীদার করলেন আমাদের। স্বাধীনতার সূচনালগ্নে মালয়েশিয়া যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, বাংলাদেশ সৌভাগ্যবশত তেমন জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। এ দেশের শতকরা ৯৮ জন বাংলায় কথা বলে। সম-সাংস্ড়্গৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ প্রায় সবাই। আঞ্চলিক ভিন্নতাও কোনো জটিলতা সৃষ্টি করেনি আমাদের মাঝে। অতীতে একসাথে নির্যাতিত হওয়ার বেদনা, মুক্তিযুদ্ধে সমানভাবে ত্যাগ স্বীকার এবং বিজয়ের আনন্দে সমান অংশীদার হওয়ার গৌরবের স্মৃতিও জাতীয় পর্যায়ে সৃষ্টি করেছিল এক ধরনের নিবির আত্মীয়তা। বাংলাদেশ একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি। মুক্তিযুদ্ধের আগুনে ঝলসে সেই ঐক্যতা আরো দৃঢ় ও গভীর হয়েছে। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া যে অবস্থায় ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ তাঁর চেয়ে ভালো অবস্থায় থেকে যাত্রা শুরম্ন করে। কিন্তুু কেন, স্বাধীনতার ৪১ বছর অতিক্রম করার পরও আমরা লক্ষ্যস্থানের ধারে কাছে যেতে পারলামনা? আপাত মনে হয় নেতৃত্বের সঙ্কট ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই প্রধান কারণ। তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এখন মাহাথির মোহাম্মদের মতো একজন নেতার বড্ড বেশি প্রয়োজন। কিন্তু কে নেবে সে দায়িত্ব?
জেগেছে তরম্নণ সমাজ। এখন আর সুযোগ নেই- পশ্চাদপদ রাজনীতির। সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। উদার, আদর্শিক, গণতান্ত্রিক নের্তৃত্ব সৃষ্টি হবেই এবার। কোনো বাঁধা মানবে না এই তরম্নণ সমাজ। এই মোড়্গম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তô নিতে হবে রাজনীতিবিদদের। ড়্গমতা ছাড়তে হবে তরম্নণদের হাতে। জয় আমাদের হবেই।
জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য সরকার এবং উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আগামী ১০ বছরের জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান খাত সৃষ্টি করা প্রয়োজন। দেশের প্রায় ৪ কোটি যুব ও যুব মহিলাকে আয়মূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। সমাজে সবার জন্য কর্ম ও বিনিয়োগ সুযোগের গণতন্ত্রায়ন ঘটাতে হবে।
পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাংলাদেশ এমন একটি গুরম্নত্বপুর্ণ দেশ। চ্ছ। জাতির জনক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘আগামী ৫ বছরে সরকার বাধ্যতামুলকভাবে ৬৫ হাজার গ্রামে বিভিন্নমুখি সমবায় সমিতি চালু করবে’(২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধিনতা দিবসের র্যালীতে)। কিন্তুু রহস্যজনক কারণে, বিগত সরকারগুলো সমবায় সেক্টরকে গুরম্নত্বহীন করে রেখেছে। অথচ এই সমবায়ের মাধ্যমেই দ্রম্নত দেশকে লক্ষ্যস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্্ভব।
জনবহুল বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হলে এর সুফল পাওয়া যাবে শিগগিরই। বাংলাদেশের জনসংখ্যার রয়েছে চারটি স্তôর- বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত। নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনদের কাজের ক্ষেত্র রকমারি। উচ্চবিত্তদের জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। মধ্যবর্তী অবস্থানে মধ্যবিত্ত শ্রেণী আছে উভয় সঙ্কটে। তাদের না আছে উচ্চবিত্তের বিলাসী সুযোগ, তারা না নামতে পারে নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনদের পর্যায়ে। মধ্যবিত্ত এমন একটা শ্রেণী যাদের আছে স্বল্প সম্পদ, জমি, বাড়ি আর শিক্ষা। সম্মানজনক জীবনযাপনে এর কোনোটাই যথার্থ নয়। গ্রামীণ জনপদে সমাজের ওপরের ৫ শতাংশ উচ্চবিত্ত, ৬৭ শতাংশ মধ্যবিত্ত এবং বাকি ২৮ শতাংশ নিম্নবিত্ত আর বিত্তহীনদের অবস্থান। সুতরাং মধ্যবিত্ত শ্রেণী দেশের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভাঙতে হবে মধ্যবিত্তের সীমাবদ্ধতার শেকল। কেননা মধ্যবিত্ত শ্রেণী সমাজের মূল্যবোধের ধারাকে ধারণ এবং লালনের মাধ্যমে একে প্রবাহিত রাখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। সমাজে নতুন মূল্যবোধও জাগরিত হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকেই। বিত্তহীন আর নিম্নবিত্তের শ্রেণীভুক্তরা যোগ্যতার অভাবে সমাজ পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। আর উচ্চবিত্তবান শ্রেণীর মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের দায়ভার এড়িয়ে চলতে চায়। সুতরাং সমাজ, জীবনধারা আর উন্নয়নের স্বার্থে মধ্যবিত্ত শ্রেণীভুক্ত মানুষের শিক্ষা, মেধা ও মননকে কাজে লাগাতে হবে। যোগ্যতাভেদে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সীমাবদ্ধতার জট খুলতে পারলেই সম্্ভাবনার পথ আরো উন্মুক্ত হবে। গতিশীল হবে সমৃদ্ধির জয়যাত্রা।
কে হবেন এই বাংলাদেশের কান্ডারি? বাঙালি জাতির চোখে ও মনে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন এঁকে দিবেন কোন সে জন? আদর্শে দ্বিধাবিভক্ত এই দেশের জনগণকে আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়ে নেতৃত্ব দিবেন কে? আমরা অধীর অপেক্ষায় আছি।
এস এম মুকুল, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন