আজকের লেখার শিরোনামের বাক্যটি প্রবন্ধকারের নিজের নয়। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের অত্যন্ত কঠিন গলায় করা প্রশ্নের প্রেক্ষিতে শিবির কর্মীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা উত্তরের সারকথা। গত ৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখের প্রথম আলো পত্রিকায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল “তোমরা যারা শিবির করো”(১) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। ভুলতে না পারা একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মগজ ধোলাই হওয়া শিবির কর্মীদেরকে উপদেশ দানের উদ্দেশ্যেই মূলতঃ তাঁর এ লেখাটি। আমার আজকের লেখার উপজীব্যও হলো আধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের লিখিত প্রবন্ধটি।
“তোমরা যারা শিবির করো” লিখাটি এবং লেখার উপর পাঠকদের মন্তব্যগুলিও মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। মন্তব্যকারীদের দু-চার জন ছাড়া সবায় জামায়াতকে ধোলাই করা এ লিখাটির জন্য লেখকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন এবং এ মর্মে আরো লিখতে অনুরোধ করেছেন। ড. জাফর ইকবালের দৃষ্টিতে জামায়াতের অতীত ও বর্তমানের নানান অপকীর্তি নিয়ে লিখাটি সমৃদ্ধ হলেও জামায়াতে ইসলামী নয় ইসলামী ছাত্র শিবির আজকের নিবন্ধটির কলেবরে আবর্তিত হবে।
বেশ কিছুদিন আগে অফিসে যাবার সময় বারান্দায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালকে দুজন শিবির কর্মীর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কুণ্ঠিতভাবে ছাত্রদের একজন তাঁর হাতে দুটি বই তুলে দিলে তিনি সেগুলি সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। বই দুটি খুলতেই ইসলামী ছাত্র শিবির লেখা দেখে তাঁর ছোখ ছানাবড়া হয়ে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে তাঁর সারা শরীরও শক্ত হয়ে গেল। তিনি শুরু করেন জামায়াতের অতীত নিয়ে কথা বলা এবং জামায়াত সম্পর্কে তাঁর কঠোর মনোভাবের কথা। তারপর তিনি তাদেরকে বই দুটি ফেরত দেন। কম বয়সী তরুণ হওয়ার পরও তারা কেমন করে যুদ্ধাপরাধীদের একটা সংগঠনের সদস্য হতে পারলো প্রশ্ন করলে একজন ছাত্র দুর্বল গলায় বলল, ‘স্যার, আমরা তো জামায়াতে ইসলামী করি না। আমরা ছাত্র শিবির করি।’
লেখক লিখার এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেন, তাঁর দীর্ঘ জীবনের সবচেয়ে বিচিত্র ও সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় কী দেখেছেন, কেউ জিজ্ঞাসা করলে তিনি এতটুকু দ্বিধা না করে যা উত্তর দিবেন, তা হচ্ছে ইসলামী ছাত্র শিবির। কেন তিনি এমনটি মনে করেন সেগুলির কয়েকটি কারণ তাঁর প্রবন্ধ থেকে নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
১) তারা এ বয়সে মাতৃভূমিকে ভালোবাসার পরিবর্তে ভালোবাসে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদেরকে।
২) মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার পরিবর্তে তারা অনুপ্রাণিত হয় সেই মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের দ্বারা।
৩) দেশের বড় বড় লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিককে নিয়ে স্বপ্ন না দেখে, সেই বয়সে তারা আনুগত্য মেনে নিয়েছে তাদের যারা একাত্তরে লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর সাংবাদিকদের হত্যা করেছে।
৪) একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরি করার কথা, ষোলোই ডিসেম্বরে স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার কথা, পয়লা বৈশাখে রাজপথে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা যে শুধু এই অবিশ্বাস্য আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে রাখে তা নয়, তারা এগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
৫) যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মান্ধ হতে শেখে।
৬) যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে।
অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের লেখা প্রবন্ধ থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়েই অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করবো। লেখক তাঁর আদর্শ ও বিশ্বাসবোধ থেকে আন্তরিকতার সাথেই যারা শিবির করে তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন। জাতির বিবেক হিসাবে কাজটি করার অধিকারও তিনি রাখেন। তবে অন্য চিন্তার ও মতাদর্শের কাউকে পরামর্শ দিয়ে মনোজগতে আলোড়নের মাধ্যমে মনে পরিবর্তনের ঢেউ সৃষ্টির কৌশলটি তিনি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কঠিন কাজটি করতে হয় কৌশলী ভূমিকার মাধ্যমে পক্ষপাতহীন ও নির্মোহভাবে। আশা করি তিনি তা ভালভাবেই জানেন। তিনি সেই কৌশল গ্রহণ করেছিলেন কিনা পাঠকগণ তাঁর লেখা পড়ে বিচার করবেন।
প্রথমেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মধ্যে পার্থক্য কি তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। লেখক নিজেও সংগঠন দুটির মধ্যে মূলতঃ কোনো পার্থক্য আছে কিনা তা লিখেননি। আমার মনে হয় তাঁর নিকটও পার্থক্যটা পরিস্কার নয়। যার কারণে তিনি শিবির কর্মীকে জামায়াতের সদস্য বলেছিলেন। হয়তোবা তিনিও সাধারণ মানুষের মতো মনে করে থাকেন শিবির হচ্ছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন। অর্থাৎ যেটিই জামায়াত সেটিই শিবির।
‘স্যার, আমরা তো জামায়াতে ইসলামী করি না। আমরা ছাত্র শিবির করি।’- শিবির কর্মীর এ উক্তিটি কি একটা ডাহা মিথ্যা ছিলনা? ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত আমার নিকট তাই মনে হতো। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)'র(২) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি সংশোধিত আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সহযোগী সংগঠন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে সংগঠন দুটো তাদের নিজ নিজ সংগঠনের গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হবে। শুধু তাই নয় ছাত্রলীগের ধারাবাহিক অপকীর্তির দায় এড়ানোর জন্য পূর্বেই খোদ প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।(৩) দলের সেক্রটারী জেনারেল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঘোষণাও দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের অপকীর্তির দায়ভার আওয়ামীলীগ বহণ করবেনা। তারপর থেকেই আমি জামায়াত ও শিবিরের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছি। ছাত্র শিবিরের আলাদা সংবিধান, গঠনতন্ত্র, নেতৃত্ব নির্বাচন এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি বডি আছে। সংগঠনটির জন্মলগ্ন থেকেই এগুলির ভিত্তিতেই তাদের কার্য পরিচালনা করে আসছে। জামায়াতের কর্মসূচী শিবিরের উপর চাপিয়ে দেয়ার সাংগঠনিক কোনো ভিত্তি নেই এবং শিবির তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য নয়। তবে আদর্শিক মিল থাকার কারণে জামায়াত ও শিবির একে অপরকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। যেভাবে ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন না হয়েও এখনও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এবারে উপরোল্লিখিত পয়েন্টগুলি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। পয়েন্টগুলির প্রথম তিনটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা যা পাই তা হলো – ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীদের দেশপ্রেম, অনুপ্রেরণার উৎস এবং আনুগত্যের পাত্রকে অবিশ্বাস্য বিষয় বলে তাঁর নিকট মনে হয়েছে। কারণ তারা বিশ্বাসঘাতকদেরকে ভালোবাসে, মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা নয় তাদের হত্যাকারীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং স্বপ্ন দেখে ও আনুগত্য করে তাদের, যারা হত্যা করেছে বাংলাদেশের কৃতি সন্তানদের।
অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ফরমূলা অনুযায়ী এ প্রজন্মের যারা শিবির করেনা তাদের মধ্য থেকেও অগণিত তরুণ-তরুণী প্রথম তিনটি পয়েন্টের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ তাদের দেশপ্রেম, অনুপ্রেরণার উৎস, আনুগত্য ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদেরকে দোষ দেয়া যাবেনা। কারণ, তাদেরকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেয়া তো হয়ইনা বরং সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাসও পরিবর্তন হয়ে যায়। এ অনৈতিক কাজ করে থাকেন তাঁরাই, অধ্যাপক সাহেব যাঁদেরকে নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ও আনুগত্য করার প্রতীক মনে করেন। এ প্রজন্মের তরুণরা যদি নিরপেক্ষভাবে সবকিছু পর্যালোচনা করে এবং ড.জাফর ইকবাল যা করা সঠিক মনে করেন, তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কি তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে? আর দেশপ্রেম হচ্ছে মনের এমন একটা অবস্থা যা প্রতিটি মানুষের সহজাত ব্যাপার। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই প্রতিটি মানুষের মনে দেশপ্রেম তিলে-তিলে দানা বাঁধতে থাকে এবং পরে তা মহীরুহতে পরিণত হয়। কাজেই আমার পছন্দনীয় আদর্শের সাথে কেউ একমত না হলেই হুট করে কারোর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক না।
বর্তমানে আমাদের দেশে একাধিক রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রধানতঃ দুটি বলয়ে বিভক্ত। গণতন্ত্র, বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রের আলোকে একটি, যেটি নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের প্রকৃত শক্তি হিসাবে দাবি করে। বাংলাদেশের বৃহৎ দল দুটির একটি, আওয়ামীলীগ এ বলয়ে রয়েছে। অপর বলয়টির মূলমন্ত্র হলো গণতন্ত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ। দ্বিতীয় বৃহৎ দল বিএনপির অবস্থান এ বলয়ে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাসহ খেতাব প্রাপ্ত অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ দলে থাকলেও বিরোধী শিবির বিএনপিকে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বিপক্ষ শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হতো ধর্মীয় দলগুলিকে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখার। ফলে জনসাধারণ ঐ প্রচারোণাকে গ্রহনও করতো। উল্লেখ্য চীনা সমাজতন্ত্রের অনুসারীগণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে না থাকলেও তাদেরকে স্বাধীনতার শত্রু হিসাবে অপবাদ দেয়া হয়না। না দেয়ার পেছনে রাজনৈতিক চাতুর্যতা আছে।
জামায়াত যেহেতু বিএনপির সাথে একই বলয়ে আছে, তাই বিএনপির গায়ে স্বাধীনতার শত্রুর প্রলেপ লাগানো হচ্ছে। অথচ অতীতে আওয়ামীলীগও জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে। এ প্রজন্মের তরুণরা, স্বার্থপর ঐ সব স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার ধোঁকাবাজদের মনের বাসনা বুঝতে অক্ষম নয়। সুতরাং বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার গলাবাজ তথাকথিত স্বাধীনতার ধারক-বাহকদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ভুল প্রমাণিত হওয়ার পর যদি তাঁদেরকে ধোঁকাবাজ ভাবে এবং এ প্রজন্মের তরুণদের অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলেও অবাক হবার কিছুই থাকবেনা। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। কিন্তু ড. জাফর ইকবাল তা বুঝতে পারছেন না।
মৃত ব্যক্তিদের বীরত্ব গাঁথা কাহিনী শুনিয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা যায় ঠিকই, কিন্তু তাঁদের অনুসৃত আদর্শ সঠিকভাবে ধারণ ও অনুসরণ করতে না পারলে জনগণের সমর্থন বেশী দিন ধরে রাখা যায় না। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে কথা বলা, আর একে পুঁজি করে রাজনীতি করাই হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসাবে দাবিদারদের একমাত্র কাজ। তাদের ছাত্র সংগঠনগুলিও একই দোষে দুষ্ট। এ প্রজন্মের তরুণরা উদ্ভূত পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারছে বলেই ছাত্র শিবিরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্বঘোষিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির অপপ্রচার এতটাই তুঙ্গে উঠেছে যে, বিবেকবান মানুষদেরকে হতবাক করে দিচ্ছে। অপপ্রচারের মাধ্যমে এমন আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে, মনে হবে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হাত-পায়ের রগ কাটা বিকলাঙ্গদের আহাজারি চলছে এবং এর মূলে রয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির। অথচ বিগত চল্লিশ বছরে প্রতিপক্ষের হাতে ১৪০ জনেরও বেশী শিবির কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আর ২০১৩ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ অতিক্রম করেছে। বিকলাঙ্গদের কথা উল্লেখ না-ই বা করলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের এত সংখ্যক কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা বিরল। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়েছে নিজেরা অঘটন ঘটিয়ে তা শিবিরের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে এবং অতীতেও একই ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ ছাত্ররা যখন ছাত্র শিবিরের কর্মীদের সাথে মেলামেশা করে তখন তারা বুঝতে পারে শিবিরের বিরুদ্ধে ভয়ানক অত্যাচার ও অপপ্রচার চলছে। এ ধরণের কর্ম-কাণ্ডের জন্য ড. জাফর ইকবাল ও তাঁর সাথীদের ব্যাপারে মানুষের মনে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু তা তাঁদের উপলব্ধিতে আসেনা।
ড. জাফর ইকবালের উল্লিখিত বিষয়গুলির পরের তিনটি পয়েন্টের সারমর্ম হলো- এ বয়সে ছাত্র শিবিরের ছেলেরা বিশেষ দিবসে প্রভাতফেরি করা, স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া, রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া থেকে শুধু বিরত থাকেনা এগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। অধিকন্তু মুক্তচিন্তা শেখা, গান গাওয়া, ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগার অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে এবং সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ হতে শেখে। অথচ ড. ইকবালের দৃষ্টিতে এ বয়সে তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবিশ্বাস্য আনন্দে উদ্বেল হওয়ার কথা, তাঁর কথিত আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা এবং মেয়েদের প্রতি সহজ ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা ছিল।
ইসলামী আদর্শের নিয়ম পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্র শিবির পরিচালিত হয়। ফলে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা ঠিক যেভাবে উপরের বিষয়গুলি মানার ব্যাপারে নিয়ম-নীতি করে নিয়েছে শিবির ঠিক সেভাবে পালন করেনা এটা সত্য। সে জন্য তাদেরকে ঐভাবে বিশেষিত করা ঠিক কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। মানুষ হিসাবে ভূল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে কেউই না। ছাত্র শিবিরের কর্মীদের ব্যাপারেও এ কথা সত্য। তবে ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান যাঁদের আছে তাঁরা কখনই শিবির কর্মীদের ব্যাপারে ড. জাফর ইকবালের করা উপরের মন্তব্যের সাথে একমত হবেন না। বরং তাঁরা শিবিরের পক্ষেই মত প্রকাশ করবেন। ড. জাফর ইকবাল মাঝে-মধ্যে কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বাস্তব ঘটনাকে বুঝতে এবং বাঝাতে চেষ্টা করেন। দয়া করে তিনি কি উপরের অনুচ্ছেদের তাঁর মন্তব্যগুলির ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্ কি বলে তা আমাদেরকে জানাবেন?
ড. জাফর ইকবালের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী অথবা তাদের দোসরদের হাতে মৃত্যু বরণ করাতে তিনি আবেগ প্রবণ হতেই পারেন। তবে শুধুমাত্র আবেগ দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না। তিনি বুঝতে পারুন আর না-ই পারুন, ইসলামী ছাত্র শিবির একটি আদর্শিক সংগঠন। কাজেই এ সংগঠনের কর্মীদের সংশোধনের জন্য উন্নতমানের বিকল্প আদর্শের কথা শুনাতে হবে। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। জানিনা তিনি কোন আদর্শের অনুসারী। বিজ্ঞানের উপর লিখা সুন্দর দুটি বই গ্রহণ করার মতো সৌজন্যবোধটুকুও তিনি দেখাতে পারেননি। সত্যই যদি কেউ অন্যকে শুধরাতে চান, তাহলে তাঁকে দরদ ভরা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ঢালাও ভাবে অথবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে নয়, পক্ষপাতহীনভাবে সুনির্দিষ্ট করে ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। আদর্শিক মতপার্থক্য থাকা সত্বেও দেশ গড়ার জন্য বিভেদের পরিবর্তে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির আহবান থাকতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
(১). প্রথম আলো – শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১২
click here
(২). দৈনিক জনকন্ঠ - সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০০৯
click here
(৩). বিডিনিউজ২৪ ডট কম – শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০০৯
click here
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন